Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
করুনাধারা
দিপ্বানিতা

আজকাল দুপুর বেশ খানিকটা গড়ালে তবে ভাত খান আরতি। তাহলে সন্ধ্যের খাবার ঝামেলাটা এড়ানো যায়। নইলে দুপুর আর রাতের খাবারের মাঝে এত খিদে পায় যে শরীর অস্থির করতে থাকে। হাতের সেলাই গুলো শেষ করতে মন বসে না ওঁর।

অবশ্য সেলাই করেই বা কি হবে! কেউ তো ছোঁয়া লাগা কিছু নেবে না, কি ভাইরাস না কি এসে শেষ করে দিল একেবারে। এই   যে উনি এক বাড়ি বাচ্চা দেখার আয়ার কাজ করতেন, ওই বাড়ি  থেকেই ওঁকে যেতে বারন করে দিয়েছে। এমন ভাইরাস, এ নাকি রাস্তায় বেরোলেই ধরবে। আর তার থেকে চারপাশের মানুষগুলোর ছড়াবে। ওঁর থেকে মিমলির যদি কিছু হয়! ছোট্ট মানুষ!  এই কথা ভেবেই মাইনের টাকাটাও চাইতে পারেননি। তাও পাশের বাড়ির গোবিন্দ রেশন এনে দিল একদিন গেল হপ্তায়, তাই সেদ্ধ ভাত টুকু জুটে যাচ্ছে।  কিন্তু সে ও ফুরিয়ে এলো প্রায়। তারপর কি হবে, ভাবতেই বুক টা কেমন খাঁ খাঁ করে ওঠে।
বহু বছর ধরেই বাচ্চা দেখার কাজ করেন আরতি। ভগবান তো নিজের সন্তান দেননি, তাই অন্যের সন্তানকেই বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন উনি বরাবর। আজকাল ক্লান্ত লাগে খুব। কিন্তু উপায় নেই। মাসে মাসে যে কটা টাকা জমাতেন একজনের কাছে, বছর ছয়েক আগে সেই কোম্পানিতে তালা পড়েছে। সেই কোম্পানির মালিকেরা সবাই নাকি জেল হাজতে। আর...শেষ সঞ্চয়টুকু খুইয়ে আবার আয়ার কাজ ধরেছেন আরতি। সত্যি বলতে কি, কাজ টা ওনার ভালো লাগে খুব। বাচ্চাদের গায়ে একটা আলাদা গন্ধ থাকে...ওদের মুখের হাসিতে একটা আলাদা আলো থাকে...।
বুক ভেঙে দীর্ঘশ্বাস আসে আরতির। মিমলিটার জন্য খুব মন খারাপ লাগছে! দুষ্টু ও হয়েছে মেয়েটা। বিকেল হলেই ঝুঁটি বেঁধে পাউডার লাগিয়ে বেউ বেউ নিয়ে যেতে হয়। এখন তো ও ও বেরোতে পারছে না...মাম্মাম আছে অবশ্য কাছে, তাতে মেয়ে একটু ভাল থাকতে পারে। নইলে বৌদির তো অফিস থাকে সারাক্ষণ।  আহা, বৌদির ও নিশ্চয়ই ভাল লাগছে মেয়ের কাছে কাছে থেকে। মায়ের মন...ওঁর ই যদি মিমলিকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয়, তাহলে বৌদির না জানি কত কষ্ট হতো রোজ।
বিকেল শেষ হয়ে আসছে। এবার সন্ধ্যে দিতে হবে। সংস্কার। নইলে ঈশ্বর আর কি ই বা করতে পারেন...চারিদিকে এত অনাচার, পাপের বোঝা পৃথিবীতে...। এই ভাইরাস না কি, এত সেই পাপের ই ফল।
শুধু এই খিদের জ্বালা টা যদি না থাকত...।
'আরতি পিসি? ও আরতি পিসি?' হঠাৎ আওয়াজ  শুনে তাকান আরতি। দেখেন গাড়ি থেকে নামছে একজন।
'উফ, তুমি কোথায়? এই যে এদিকে এসো, মা তোমার জন্য পাঠালেন,এই যে এগুলো তুলে রাখো...'
এক নজর তাকিয়ে থাকলেন আরতি আগন্তুকের দিকে। এই উঁচু লম্বা ছেলেটা কে রে বাবা! আর কতটা চাল ডাল এসব এনেছে!
'কি হলো, পিসি? আমাকে চিনতে পারছ না? আরে আমি তো রাজা। দাশগুপ্তদের ছেলে। তুমি তো আমার ছোটবেলায় আয়া পিসি ছিলে। এখন আমাদের পাশের বাড়ির বাচ্চাটাকে যত্ন করো? আমাকে ভুলেই গেলে তুমি? একটু যেন অভিমান করে বলে রাজা।
সেই রাজা! জন্মের প্রায় পর থেকে আট নয় বছর বয়স পর্যন্ত ওকে দেখতেন আরতি। তারপর ছেলে হোস্টেলে চলে গেল। এখন তো বাইরে কোথায় থাকে শুনেছিলেন! ওর মা, মানে বৌদিই তো মিমলির মাকে ওঁর কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন ওঁর কাছে বাচ্চা রেখে নিশ্চিন্তে থাকা যায়...নইলে যা দিনকাল!
'এসো বাবা এসো, এমন দিনে এলে..কিছু যে মুখে দেবে সে উপায় নেই...' কিন্তু কিন্তু করে বলেন উনি।
'আরে পিসি, এরকম বোলো না...আমি আরো আগেই আসতাম। কিন্তু বাইরে থেকে এসেছি বলে চোদ্দদিন বাড়িতে ছিলাম। তাই আগে আসতে পারিনি। শোনো, এটা রাখো তো...' বলে বিছানায় একটা খাম রাখল রাজা।
টাকা নাকি! না না! চাল টাল এনেছে এই অনেক...আবার টাকা...
ওনার মুখ দেখেই কিছু বুঝে থাকবে ছেলে, হেসে বলল 'শোনো, না করবে না! তুমিই না বলতে আমি "রাজা" না, তোমার "মহারাজা"...তা আমি আজ হুকুম করছি, মহারাজের হুকুম, এটা তোমাকে নিতেই হবে। আর...এটা কিন্তু আমার নিজের টাকা, আমি পড়াশুনা করি বলে পাই, ছেলের টাকায় না বলতে নেই, কেমন?' বলে উঠে দাঁড়াল ছেলে।
টাকা কটা দরকার ও ছিল! কয়েকটা ওষুধ কেনার আছে। গোবিন্দকে বললেই এনে দেবে  তাই কিছু না বলে চুপ করে রইলেন আরতি।
চলে যেতে গিয়েও রাজা ঘুরে এলো একবার। 'পিসি, আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেবে না? সেই ছোটবেলার মতো? আর শোনো, তারপর সাবান দিয়ে হাত টা ধুয়ে নিও কিন্তু...'
চোখটা ঝাপসা লাগছে খুব...সেই নিয়েই ছেলের মাথায় হাত রাখলেন আরতি। বাইরে কি দাবদাহ...কিন্তু ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে যেন...। হয়ত একেই বলে অপত্য...।
ঘরে এসে গুনগুন করে উঠলেন দু কলি গান  'জীবন যখন শুকিয়ে যায় করুণাধারায় এসো...'
গাড়িতে উঠতে উঠতে তখন রাজা ভাবছে, যাক, স্টাইপেন্ডের টাকাটা এতদিনে একটা ভাল কাজে লাগল.... যে মানুষগুলোর জন্য বেড়ে ওঠা...তাঁরা ভাল না থাকলে হয়?
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by dada_of_india - 30-11-2021, 08:11 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)