28-11-2021, 08:29 PM
(27-11-2021, 11:45 AM)ddey333 Wrote: পেরিয়ে গেল আরও সাত দিন।
বিছানায় শুয়ে আছি। চোখে ঘুম নেই। পুরনো দিনের সুখস্মৃতি মনে পড়ছে। সুচেতনার দিকে তাকালাম। নাইট বালবের হালকা আলোয় দেখলাম সুচেতনা ঘুমোচ্ছে। হঠাৎ আমার দু’চোখ জলে ভরে গেল। কাঁদলে মানুষের মন হালকা হয়। যন্ত্রণা কমে। কিন্তু আমার যন্ত্রণা কমল না। দেওয়ালে টাঙানো রাধাকৃষ্ণের একটা ক্যালেন্ডার আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। শ্রীকৃষ্ণ রাধার মান ভঞ্জনের জন্য কত কী করেছেন। আর আমি সুচেতনার মান ভঞ্জনের জন্য কিছু করতে পারব না?
উঠে বসলাম। বিছানা ছেড়ে নেমে এগিয়ে গেলাম সুচেতনার কাছে। সুচেতনার ফর্সা পায়ের পাতাগুলো দেখা যাচ্ছে। এখন গভীর রাত। কোথাও কেউ নেই। কেউ কিছু দেখতে পাবে না। সুচেতনার পা দুটো জড়িয়ে ধরে বলে ফেললাম, “আমি ভুল করেছি। তুমি আমায় ক্ষমা করো।”
আরও কী কী বললাম জানি না। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জলও সুচেতনার গায়ে পড়ল। সুচেতনাও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। মিনিট দুয়েক কান্নার পর সুচেতনা বিছানা থেকে নীচে নেমে আমায় প্রণাম করল। আমি কিছু বলার আগেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নার গতি বাড়াল। আমি নতুন করে সুচেতনাকে আবিষ্কার করলাম।
বিছানায় পাশাপাশি দু’জনে। আমাকে জড়িয়ে ধরে সুচেতনা বলল, “কেলটি ধুমসি মেয়েটার জন্য মদ ধরেছ! কী আছে ওই ডিভোর্সির? তোমার বিয়ে করার এত শখ? ছেলে-বৌকে পথে বসাতে চাও? তোমার লজ্জা করে না? মদ আর ওই মেয়েটার পিছনে কত টাকা খরচা করেছ? আমার জুতোর চেয়ে কম টাকায় হয়ে গিয়েছে তো সব? আর ডিভোর্স পাওয়াবে কে? তোমার প্রাণের বন্ধু দুলাল উকিল? সে-ই তো তোমার আর তার বোনের নামে হাজার হাজার কেচ্ছা কেলেঙ্কারি শোনাত আমাকে ফোন করে, যাতে আমি আর না ফিরি। তোমাকে ডিভোর্স পাওয়াতে ওর সুবিধে হয়। আমাকে আর কী বোঝাবে, তোমার দৌড় আমি জানি না! আমি হঠাৎ ফিরে আসায় সবার বাড়া ভাতে ছাই পড়ে গেল!”
আমি কোনও উত্তর দিলাম না। আজ আমি শ্রোতা।
সুচেতনা চুপ করলে বললাম, “কালই কিন্তু তুমি অনলাইনে নতুন জুতোর অর্ডার দিয়ে দেবে। আমি অফিস থেকে ফিরে তোমাকে টাকা দিয়ে দেব।”
উত্তরে সুচেতনা কিছু বলল না। ওর ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটের খুব কাছে এগিয়ে এল।
এখানে সুচেতনার তাঁর স্বামীর প্রতি ভালোবাসার চেয়ে অধিকার বোধ বেশি দেখলাম। কিন্তু লোকটার তাঁর স্ত্রীর প্রতি সম্মান এবং ভালোবাসা লক্ষ্য করলাম। জানিনা সমাজ কি দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিচার করে। কিন্তু পুরুষ মানুষই সর্বদা দায়ী হবে এটা জরুরী নয়। বেকার অথবা অপেক্ষাকৃত কম রোজগার সম্পন্ন স্বামী এবং চাকুরী জীবী স্ত্রীর কোন গল্প থাকলে শোনাবেন।