30-11-2021, 05:56 PM
অমলবাবু আমাদের কথা শুনে হাসছেন। চা পর্ব শেষ হলো, ঠিক হলো, বাঁশ বাগানেই রাতে পিকনিক হবে। অমলবাবুকে বললাম, যদি অসুবিধে না থাকে তাহলে সপরিবারে বিকেলে চলে আসুন, যাদের সঙ্গে আনা যাবে বলে মনে করবেন তাদেরও সঙ্গে আনুন। অমলবাবু, আমার কথায় সায় দিলেন, অবশ্যই আসবো। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, কখন থেকে শুরু হবে তোরা ঠিক কর।
-সবাই কিন্তু বউকে নিয়ে আসবে, জমিয়ে আলাপ করা যাবে, আড্ডাও মারা যাবে। মিত্রা বললো।
চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো আমার যে কোনটাই নাই।
-কোনটাই নেই মানে।
বউও নেই প্রেমিকাও নেই।
সঞ্জয়ের দিকে তাকালাম।
চিকনা বুঝতে পেরেছে। হাসতে হাসতে বললো, ওর একখানা আছে।
-তোকে বলেছে। সঞ্জয় খেপে গেলো না।
আমি মুচকি হাসলাম।
-ও আসবে না। আমার দিকে তাকিয়ে সঞ্জয় বললো।
অনাদি বললো শা…….। সরি ম্যাডাম।
-দেখ না, যদি হয় ভালো লাগবে। আমি বললাম।
অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি একটা রিকোয়েস্ট করবো তোদের, রাখবি।
-বল।
-আমি দুপুরবেলা ঘন্টা তিনেক ঘুমোবো, আর টানতে পারছি না।
-তোকে কেউ ডিস্টার্ব করবে না।
ওরা সবাই একে একে চলে গেলো।
নীপা সব গুছিয়ে গাছিয়ে নিলো। মিত্রাদি এবার স্নান করবে তো।
মিত্রা আমার দিকে তাকালো। পুকুরে!
-হ্যাঁ, ওটাই বাথটাব।
-সাঁতার কাটবো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই একেবারে পুকুর ধারে যাবি না।
নীপা মুখ নীচু করে হাসলো।
-তুই হাসলি কেনো।
নীপার আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা চোখে বললো, কারণ আছে।
আমি বললাম, ঠিক আছে যাবো না।
ওরা ওদের জিনষপত্র গুছিয়ে গাছিয়ে চলে গেলো।
মিটসেফের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকাটটা নিয়ে এলাম, টান টান হয়ে বিছানায় শুলাম, আঃ কি আরাম, প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। দেবাশীষকে একটা ফোন করলাম, ও রিলায়েন্সের সি ই ও, সন্দীপকে ফোন করে অফিসের খবর নিলাম, ও তো ফোন ছাড়তেই চায় না, খালি বললাম দাদা এসেছেন কিনা, ও বললো এসেছে কিরে যেন বাঘের বাচ্চা, গলার স্বর পর্যন্ত চেঞ্জ, সুনীতের চেলুয়াগুলো, এই দশদিনে যারা রাজ করেছিলো, তারা সব শুয়োর হয়ে গেছে। ঠিক আছে গিয়ে সব শুনবো, আমি জীবনের প্রথম একটা মাইলস্টোনে পৌঁছলাম, বেশ ভালো লাগছিল, জানিনা পরে আমার কপালে কি লেখা আছে। আরো কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবকে ফোন করলাম, ক্লান্তি সারা শরীরে, কখন ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই। একটা নরম হাতের স্পর্শে চোখ খুললাম, একটা প্রতিমার মতো মুখের ছবি আমার চোখের সামনে, আমায় দেখে মিটি মিটি হাসছে, সিঁথিতে লালা সিঁদুর কপালে সিঁদুরের টিপ, পরনে লাল পাড় শাড়ি, আমার কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ওঠ অনেক বেলা হলো, ধড়ফর করে উঠে পরলাম, মিত্রা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম, এখানে এগুলো পেলো কোথা থেকে, তারপরে ভাবলাম হয়তো নিয়ে এসেছে। যা স্নান করে আয়, খিদে পেয়েছে। আমি টাওয়েলটা নিয়ে বেরোতে যেতেই, মিত্রা আমার হাত চেপে ধরলো।
-বললিনা কেমন লাগছে।
হাসলাম।
-কাকীমা দিলো। পরলাম।
-আমি স্নান করে এখুনি আসছি, কাপড় ছাড়বি না।
-আচ্ছা।
আমি বেরিয়ে এলাম।
নীপা ঘাটে জামা কাপড় কাচছিল, আমি পাশ কাটিয়ে নেমে গেলাম, নীপা একবার আমার দিকে তাকালো, অন্য সময় হলে নীপাকে বলতাম, এখন যাও, বললাম না, গামছাটা, কাঁছা দিয়ে বেঁধে জলে ঝাঁপ দিলাম, বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটলাম, নীপা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, এ কয়দিন জলে নেমেছি, তবে পারে বসেই স্নান করেছি। তুমি সাঁতার জানো।
-তোমার কি মনে হয়।
-তাহলে পারে বসে বসে স্নান করতে যে।
-জলে নামতে ভালো লাগতো না। ইশারায় বললাম চলে এসো।
ও জানলার দিকে ইশারা করলো, আমি হেসে ফেললাম।
-তুমি ওপারে যেতে পারবে।
আমি সাঁতরে ওপারে চলে গেলাম, তারপর সাঁতরে এপারে উঠে এলাম, গাটা ভাল করে মুছে, নীপাকে বললাম,
-ও দিকে তাকাও।
নীপা মুখ ভেঙচি কাটলো।
-সব তোলা রইলো সুদে আসলে তুলে নেবো।
নীপা মুচকি হাসলো, মুখে বলাই সার, এবারে আর হচ্ছে না।
-কাকীমাকে বলো খাবার বারতে, ওরা আবার সবাই চলে আসবে।
-চলে আসবে না, এসে গেছে।
-তার মানে!
-দেখো না গিয়ে বাইরের বারান্দায়, মাল পত্র আসতে আরম্ভ করেছে।
-তুমি এসো আমি রেডি করে দিচ্ছি।
-না এক সঙ্গে খাবো।
-আমার একটু দেরি হবে।
-তাহলে তোমার কাজ শেষ হলে ডেকো।
-কেনো। তোমরা……
আমি কোন কথার উত্তর দিলাম না।
-অমনি রাগ হয়ে গেলো।
আমি ঘরে এলাম।
মিত্রা বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কার সঙ্গে কথা বলছে, আমায় দেখেই বললো, ওই তো অনি এসেছে।
-কে।
-কথা বল।
-অনিবাবু।
-আরে দাদা আপনি, বলুন।
-ওয়াইজ ডিসিসন।
-এভাবে বলবেন না।
-সত্যি বলছি অনি, তোমার মাথাটাযে কি, তুমি আমার প্রফেসনে এলে অনেক বেশি সাইন করতে পারতে।
-পরের জন্মে হবে দাদা।
-তুমি জন্মান্তরবাদ বিশ্বাসী।
-কিছুই বিশ্বাস করি না, আবার সব বিশ্বাস করি। মিত্রা আমায় ইশারায় বলছে রাখ রাখ। আপনি এখন কোথায়।
-মুম্বাই।
-কলকাতায় কবে আসছেন।
-দেখি, আগামী মাসের প্রথমে।
-ঠিক আছে দাদা।
-আচ্ছা।
-ওঃ তুই হেজাতেও পারিস।
-আফটার অল তোর বিয়ে করা বর।
-কচু।
-তার মানে।
-সে বলবো খন তোকে একদিন। আমি কাউকে বিয়ে করিনি, আমায় বিয়ে করেছিলো।
-এর আগেও তুই এই কথাটা একবার বলেছিলি। আয় ঘরে আয়।
আমি ঘরে এলাম, মিত্রা আমার পেছন পেছন ঢুকলো। আমি আলনা থেকে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করলাম। দেখলাম মিত্রা ঘরের দরজায় খিল দিচ্ছে।
-কিরে।
ওর চোখে মুখে দুষ্টুমি।
-তুই কাপড় ছাড়তে বারণ করেছিলি কেনো।
-একটু দাঁড়া।
-না। আগে বল। আমার কাছে এগিয়ে এসে, টাওয়েলে হাত রেখেছে।
-ছাড়। বলছি।
-ছাড়ব না।
-ঠিক আছে ধরে দাঁড়া যেন না খুলে যায়।
আমি আলমাড়ির কাছে গেলাম, আলমাড়ির মাথার থেকে চাবিটা নিলাম, আলমাড়িটা খুললাম, অনেকদিন আগে ওই বাক্সটাতে হাত দিয়েছিলাম, কত দিন হবে, প্রায় দশ বছর, যেদিন কলকাতায় পড়াশুনার জন্য গেলাম, বাক্সটা বার করে আনলাম, মিত্রা বুঝতে পেরেছে, ও আমার টাওয়েল থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছে, আমি ওকে বাক্সটা খুলে মায়ের ছবিটা দেখালাম, ও হাতজোড় করে প্রণাম করলো, তারপর হাতে নিয়ে মাথায় ঠেকালো, এটা নিয়ে যাব।
-মায়ের এই একটাই ছবি আছে।
-ঠিক আছে এই দায়িত্বটা আমি নিলাম।
-কি দায়িত্ব নিলি।
-এই ছবির থেকে অনেকগুলো ছবি করবো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
মায়ের বাক্সের মধ্যে, একটা সোনার চেন ছিলো, ওটা বার করলাম। সেটা সোনা বলে এখন আর বোঝা যায় না। কেমন পেতল পেতল দেখতে হয়ে গেছে, মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো। চোখদুটো ছলছলে,
-এটা পরার যোগ্যতা আমি এখনো অর্জন করিনি বুবুন, তুই মন খারাপ করবি না, আমি ঠিক সময়ে তোর কাছ থেকে এটা চেয়ে নেবো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। ওর চোখ মিথ্যে কথা বলছে না।
-ওটা তুলে রাখ।
আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার কাঁধে হাত রাখলো, তুই রাগ করলি না।
-না।
-মন খারাপ করলি না।
আমি চুপচাপ।
-আমার দিকে তাকা।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
-আমার চোখে চোখ রাখ।
-আমি জানি, তবে এও তোকে বলছি, আমি তোর ছাড়া আর কারুর নয়। অন্য কেউ হলে নিয়ে নিতাম, কিন্তু তোর মার জিনিষ, তোকে দেখে তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করতে শিখেছি, তুই আমার ওপর রাগ করলি না।
-সত্যি বলছি।
-এটা আমার, সম্পূর্ণ আমার, এটা তুই কাউকে কোনো দিন দিবি না।
-সেইজন্যই তো বার করেছিলাম।
-দে আমি তুলে রাখি। তোকে যখন চাইবো তুই আমাকে দিবি।
মিত্রা খালি মায়ের ছবিটা বার করে নিলো, বাক্সটা নিজে হাতে যেখানে ছিলো সেখানে তুলে রাখলো। আমি আলমারিটা বন্ধ করলাম।
-তোর বাবার কোনো ছবি নেই।
-আছে।
-কোথায়?
-বাবা-মার একসঙ্গে একটা ছবি আছে, কলকাতায় আমার ফ্ল্যাটে।
-ঠিক আছে।
-কি ঠিক আছে।
-সব কথা ছেলেদের বুঝতে নেই।
-আচ্ছা। এবার পাজামা পাঞ্জাবী পরে নিই।
-পর।
-তুই কাপড় ছাড়বি না।
-না।