29-11-2021, 07:19 PM
আমি আমার ফোন থেকে ডায়াল করেই ওর হাতে দিলাম।
-হ্যালো।
-কি রে তুই কেমন ছেলে একটা ফোন করলি না কালকে। বড়মাকে ভুলে গেছিস।
-আমি মিত্রা, বড়মা।
-ওই মর্কটটা কোথায় রে। দে তো কানটা মুলে।
-দেবো।
-না থাক। ওর অনেক চাপ । বুঝি, কিন্তু মন মানে না।
-সত্যি বড়মা, গিয়ে তোমাকে সব বলবো।
-কেনো রে, আবার কি হলো।
-সে অনেক কথা।
-ওর কাকার শরীর ভাল আছে তো।
-হ্যাঁ।
-ওই নে তোর দাদা চেঁচাচ্ছে, কে ফোন করলে, সত্যি কি মিনষেরে বাবা, একটুও সহ্য হয় না।
মিত্রা হো হো করে হেসে ফেললো।
-হাসিস না হাসিস না। ৪০ বছর ঘর করা হয়ে গেলো, হারে হারে চিনেছি।
-দাদাকে দাও।
-ধর। হ্যাঁ, ও কি আমার সঙ্গে কথা বলবে না প্রতিজ্ঞা করেছে।
-ও তো আমার সামনে বসে আছে।
-ওর গলাটা একটু শোনা না।
-তোমাকে পরে দিচ্ছি।
-আচ্ছা।
-হ্যালো।
-দাদা আমি মিত্রা।
-হ্যাঁ বলো মা। তোমরা কেমন আছ।
-ভাল নেই।
-কেনো।
-সে অনেক কথা, আপনাকে যে জন্য ফোন করছি।
-আগে বলো ওখানকার সবাই ভালো তো।
-হ্যাঁ এখানকার সবাই ভালো আছে, আমরাও ভালো আছি।
-বলো কি বলছিলে।
-আজ থেকে আপনি অফিসে যান, আমি ইসমাইলকে বলে দিয়েছি, ও আপনাকে, মল্লিকদাকে নিয়ে যাবে। আর যাদের যাদের আপনার দরকার তাদের তাদের আপনি ডেকে নিন, শুক্রবার আমি আর অনি সকালে কলকাতা যাবো।
-কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে মনে হচ্ছে।
-মিথ্যে কথা আপনাকে বলবো না। হয়েছে।
-কি হয়েছে বলো।
-আপনি অফিসে গেলেই বুঝতে পারবেন। বাকিটা পরে ফোন করে আপনাকে বলবো।
-ঠিক আছে।
-ওখানে কিছু হয়েছে।
-না।
-সত্যি কথা বলছো।
-হ্যাঁ।
-নাও ছোটর সঙ্গে কথা বলো।
-কিরে কোমন আছিস।
-ভালো, তুমি কোমন আছ।
-ভালো, ওই ছাগলটা কোথায়।
-আছে এখানেই, নাও কথা বলো।
আমি ছোটমা বড়মার সাথে কথা বলে মোবাইল রাখলাম। মিত্রা এরমধ্যে দুধটা খেয়ে নিয়েছে, আমি বললাম, চোখ মুখের অবস্থা দেখেছিস, যা একটু জল দিয়ে আয়, ওরা নিচে দাঁড়িয়ে আছে, ওদের ওপরে ডাকি, তুই এসে ওদের সামলাবি, আমি নীচে গিয়ে একটু কথা সেরে আসবো কয়েক জনের সঙ্গে।
-কাদের সঙ্গে।
-ও তুই বুঝবি না।
-আমি মালিক বুঝবো না।
-হেসে ফেললাম, নীপা আছে তাই কিছু বললাম না।
-সরি।
-এখুনি চলে আসিস। নীপা একরাউন্ড চা হবে। আমি একা নয় সবার জন্য।
-ঠিক আছে।
-ওদের ওপরে পাঠিয়ে দাও।
মিত্রা নীপার সঙ্গে ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেলো, সিঁড়িতে ধুপ ধাপ আওয়াজ
-ম্যাডাম আপনি চলে যাচ্ছেন নাকি, অনাদির গলা পেলাম।
-কেনো।
-এক মিনিট একটু আসুন।
-যাচ্ছি।
অনাদি এসে ফোনটা আমায় দিলো, কথা বল।
-কে।
কথা বললো না।
-হ্যালো।
-অনিবাবু, আমি নিরঞ্জন বলছি, জেলা সভাধিপতি।
-হ্যাঁ হ্যাঁ, সেদিন নার্সিংহোমে আপনার সঙ্গে দাদা আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন।
-ঠিক ধরেছেন। শুনুন, অমিতাভদা ফোন করেছিলেন।
-দাদা! আপনাকে! কেনো?
-আপনার কি কোনো প্রবলেম হয়েছে।
-উঃ দাদাকে নিয়ে আর পারা যায় না।
-শুনুন আমি সব শুনেছি, অমল ওখানে গেছে, কোন সমস্যা হলে ওকে একবার ফোন করবেন। টেনসন নেবেন না।
-ধন্যবাদ দাদা।
-রাখছি।
-আচ্ছা।
-অনাদিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিলাম। এই নিয়ে চারবার ফোন হলো।
-মানে।
-প্রথমে অমলদাকে ফোন করে সব জানলো, তারপর আমাকে ফোন করে সব জানলো, তারপর তোর সঙ্গে কথা বলতে চাইলো।
-কে ফোন করেছিলো। মিত্রা বললো।
-আবার কে এখানকার জেলা সভাধিপতি, দাদা ফোন করে ডিটেলস জানাতে বলেছে। উঃ দাদাকে নিয়ে আর পারা যাবে না। তুই আবার এলি কেনো।
-অনাদি ডাকলো।
-যা তুই, তাড়াতাড়ি আয়। অনাদি ওদের ডাক।
-অনাদি ওদের সকলকে ওপরে ডাকলো। সিঁড়ির মধ্যে হুড়ুম দুড়ুম আওয়াজ। ঘর ভরে গেলো, বাসু আমার পাশে এসে বসলো, চিকনাকে রুখতে পারলাম না, আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
-ওঃ তুই না।
-প্রথমে গুরুমাকে তারপর তোমাকে করলাম। গুরু তুমি কি খেলা খেললে।
-কেনো।
-কিছুই তো বুঝি না, অমলদা বোঝালো।
অমলবাবু এগিয়ে এলেন, ওনার হাতে হাত রাখলাম।
-অনাদি আপনাদের ডেকে এনে আমাকে সারপ্রাইজ দিলো।
-না।
-মানে।
-ওর নামে রিটন কমপ্লেইন জমা পরেছিলো। আমরা সেটা ওকে জানাতে ও বললো, আজ চলে এসো তাহলে দেখতে পাবে।
-কে করেছিলো।
-এই যে শ্রীমান। দিবাকরের দিকে তাকালো।
-তোর কি হয়েছে বল তো। দিবাকরকে বললাম।
দিবাকর মাথা নীচু করে বসে আছে, বিকেলে একবার আয় তোর সঙ্গে আমি পারসনালি কথা বলবো।
দিবাকর মাথা দোলালো।
অমলবাবু বললেন, সেই রিটেন কমপ্লেইন দেখলে আপনারও মাথা খারাপ হয়ে যাবে। পার্টির কিছু ডেকোরাম আছে, আমরা তা মেনে চলি। বাধ্য হয়ে অনাদির এগেইনস্টে স্টেপ নিতে হতো। যাক এখন ব্যাপারটা অনেক সহজ হলো, আপনার জন্য পার্টির ওপর মহল পর্যন্ত জানানো হয়ে গেলো, অনাদি এখন সেফ।
-কত কি না ঘটছে। চিকনা তোর পাওনাগন্ডা আমি মেটাবো, এই মুহূর্তে নয় আমায় এক সপ্তাহ সময় দে।
-এক সপ্তাহ কেনো, তুই একবছর সময় নে।
নীপা চা-এর ট্রে নিয়ে ঢুকলো, পেছনে মিত্রা।
-নীপা, চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো, তারপরই জিভ বার করে ফেললো, মিত্রাকে দেখে।
-ষাঁঢ়ের মতো চেঁচাচ্ছ কেনো।
-আমি আছি কিনা।
-তুই আছিস সবাই দেখতে পাচ্ছে, সঞ্জয় বললো।
-তুই এর মধ্যে ঢুকলি কেনো। কথাটাতো আমার সঙ্গে……
-গলা টিপে দেবো।
-সঞ্জয়।
-থাম তোরা, যেন সাপে নেউলে। আমি বললাম।
অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, এবার পার্টিটা হোক।
সকলে হৈ হৈ করে উঠলো। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসলো।
-উঃ শালারা যেন গরুর পাল। আস্তে করে কানের কাছে এসে বললো, কিরে মিত্রা শুনতে পায় নি তো।
-না মনে হয়।
মিত্রা সকলের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো।
আমার কাছে এসে বললো, রাতে বাঁশ বাগানে।
অনাদি কথাটা শুনলো।
-ঠিক আছে তাই হবে ম্যাডাম।
-টাকা আমি দেবো।
-অনির অনারে পার্টিটা আমরা দেবো বলেছিলাম। অনাদি বললো।
বাসু হাসতে হাসতে বললো, আমি অনাদিকে এ ব্যাপারে সাপোর্ট করছি।
-ঠিক আছে, তোরা ৪০ ভাগ দে মিত্রা ৬০ ভাগ দিক, কিছু খসা না। অনেক তো আছে।
-অনি খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি। মিত্রা বললো।