Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
সুচেতনা নির্দিষ্ট দিনে সময়ের আগেই সাজগোজ কমপ্লিট করে সাধের জুতো জোড়া পরার জন্য সিঁড়ির নীচের কুঠুরিতে ঢুকে গেল। কিছু ক্ষণ পর সেখান থেকে আর্তনাদ শোনা গেল। আমি ভয় পেয়ে ছুটে গেলাম সিঁড়ির নীচে। সেখানে গিয়ে দেখলাম, আমার সুসজ্জিতা বৌ দুহাতে দুটো জুতো ধরে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে। দেখলাম, দুটো জুতোই নেংটি ইঁদুরে কুচি কুচি করে কেটে নতুন ডিজ়াইন করে দিয়েছে। হুঙ্কার দিল সুচেতনা। বলল, তোমার জন্যই আমার সাধের জুতো জোড়ার আজ এই হাল। কত দিন বলেছি ইঁদুরের উৎপাত বেড়েছে, বিষের ব্যবস্থা করো। শুনেছ এক বারও?
আত্মপক্ষ সমর্থনে বললাম, বিষ দিয়ে ইঁদুর মারলে মরা ইঁদুর খুঁজে পাওয়া যাবে না। পচে গন্ধ উঠবে, পোকা হবে ঘরে থাকা যাবে না।
ঘরে থাকতে না পারলে বাপের বাড়ি গিয়ে থাকতাম। কিন্তু আমার যে এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল, এর কী হবে? আমি জুতোজোড়া পরে কাউকে দেখাতেই পারলাম না। এতগুলো টাকা আমার জলে গেল।
আমিও নিজেকে সামলাতে পারলাম না, টাকাটা তোমার না আমার? তোমার জুতোর টাকায় একটা একান্নবর্তী পরিবারের এক সপ্তাহ চলে যায়। তোমার মতো বেহিসেবি মেয়ের জন্য আমার জীবনটা জ্বলে গেল।
কী বললে তুমি?
যা বলেছি ঠিকই বলেছি। তোমার তো কোটিপতি ব্যবসাদার দেখে বিয়ে করা উচিত ছিল। তোমার আনলিমিটেড শখ পূরণ করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি আর একটা পয়সাও খরচ করতে পারব না। এর পর তুমি যা কিনবে, তোমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে নেবে।
একদম বাবা-মাকে টেনে আনবে না। আমার শখ-আহ্লাদ পূরণ করতে পারবে না তো বিয়ে করেছিলে কেন? বিয়ের আগে তো ফোন করে করে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলে। তখন বুঝতে পারিনি তুমি কী জিনিস! ভাল করে শুনে রাখো, এই জুতো আমি আবার কিনব। সেই জুতোর দামও তোমাকে মেটাতে হবে।
কঠিন হলাম, অসম্ভব! তোমার সঙ্গে আর থাকা যাবে না। তুমি যেখানে খুশি যেতে পারো। আমি ডিভোর্স করব।
আমি কালই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। তোমার সঙ্গে আমার কোর্টেই দেখা হবে। তোমার হাড়ে দুব্বো গজাতে না পারি তো আমার নাম সুচেতনাই নয়।
কাল কেন? আজই চলে যাও। দেখি তোমার কত মুরোদ!
কোনও উত্তর না দিয়ে সুচেতনা ঘরের মধ্যে চলে গেল। আমি একাই বড়সাহেবের বিবাহবার্ষিকীতে যোগ দেওয়ার জন্য গৃহত্যাগ করলাম
রাতে ফিরে বিছানায় শুয়ে অনুভব করলাম, আমি আর সুচেতনা দুই ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা। বড়সাহেবের পার্টিতে পেগ দুই মদ পেটে পড়ার জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। উঠে দেখলাম, সুচেতনা বিছানায় নেই। ভাবলাম কিচেনে গিয়েছে। কিংবা মর্নিং ওয়াকে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলাম না। উৎসবও নেই। মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে সুচেতনাকে ফোন করলাম। সুচেতনা ফোন ধরেই বলল, আমি বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি। উৎসবকেও নিয়ে যাচ্ছি। আর ফিরব না।
বলেই ফোনটা কেটে দিল সুচেতনা। আমি বহু বার ফোন করলাম। এক বারও ধরল না
সাত দিন অতিক্রান্ত। সুচেতনার দেখা নেই। ফোন করলেও রেসপন্স নেই। শুধু রিংটোন বেজে যায়। আমি শ্বশুরবাড়ির পথ ধরলাম না। জেদ আমারও কম নয়। আমার রুটিন তৈরি করে নিলাম। সকালে পাঁচুর দোকানে চা-বিস্কুট। তার পর নিজে রাঁধা সেদ্ধ ভাত। অফিস যাত্রা, অফিস ক্যান্টিনে টিফিন, রাতে সুনীলের দোকান থেকে রুটি-তরকা
বিয়ের আগের একটা মধুর অভ্যেস ফিরিয়ে এনেছি। এখন ফ্রিজ-ভর্তি বিদেশি মদ। নিয়ম করে প্রতিদিন খাই। বিন্দাস লাইফ। মাঝে মাঝে স্বপ্নে সুচেতনা এসে ডিস্টার্ব করে। মন খারাপ করে দেয়
আমার বন্ধু দুলালের সঙ্গে কথা বললাম। দুলাল উকিল। আমার কেস হিস্ট্রি শুনে দুলাল বলল, ডিভোর্স ছাড়া উপায় নেই। ওই রকম দজ্জাল মহিলার সঙ্গে ঘর করার কোনও মানেই হয় না, বলে মিনিট খানেক কী যেন ভাবল। তার পর বলল, তোর সুস্মিতাকে মনে আছে? আমার মাসতুতো বোন সুস্মিতা, মানে সুমির কথা বলছি।
বললাম, কেন মনে থাকবে না। তোর বাড়িতে কত বার দেখেছি। শ্যামবর্ণা রোগাটে চেহারা। চোখ দুটো খুব সুন্দর।
সুমি আর রোগা নেই। আর গায়ের রংও ফর্সা হয়ে গিয়েছে। দেখতেও চমৎকার।
হঠাৎ সুমির কথা কেন?
সুমির কপালটাও তোর মতো। বিয়ের পর মদ্যপ স্বামীর অত্যাচারে ডিভোর্স নিতে বাধ্য হল। এখন একটা বেসরকারি অফিসে চাকরি করে। তুই সুমির সঙ্গে কথা বল।
কেন? সুমি কী করবে?
তোর ভাল বন্ধু হবে। তোর সুখ দুঃখ ভাগ করে নেবে।
আমি দুলালের কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না। চুপ করে থাকলাম
দুলাল বলল, সামনের রবিবার আমার বাড়িতে তোর নেমন্তন্ন। ওই দিন সুমি নিজে হাতে রান্না করবে। তুই এলে আমি খুশি হব।
বললাম, ঠিক আছে। আমি রবিবার যাব।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 27-11-2021, 11:44 AM



Users browsing this thread: 17 Guest(s)