27-11-2021, 11:42 AM
আমার একমাত্র বৌয়ের নাম সুচেতনা। ছেলের নাম উৎসব। আট বছরের বিবাহিত জীবন। তিন জনের ছোট্ট সংসার। মোটামুটি শান্তিপূর্ণ বলা যায়।
মাস ছয়েক আগে, তখন অফিসে অডিট চলছিল, অনেক দেরিতে ফিরেছি। শরীর-মন ক্লান্ত। রাতে বিছানায় শুয়েও ঘুম আসছিল না। এ পাশ-ও পাশ করছিলাম। সুচেতনা বিছানায় আমার পাশে বসে মোলায়েম গলায় জিজ্ঞেস করল, “কী গো, তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ? কপালটা টিপে দেব? তোমার আরাম লাগবে।”
সুচেতনা ওর নরম আঙুল দিয়ে আমার কপাল টিপতে শুরু করল। আমার চোখ বুজে এল। হঠাৎ সুচেতনা বলল, “তোমাকে না জানিয়ে একটা কাজ করে ফেলেছি। জানি তুমি রাগ করবে।”
আমার ঘুমের আবেশ পলকে উধাও। বললাম, “কী করেছ সু?”
সু আমার বৌয়ের আদরের ডাকনাম। লাজুক মুখে সুচেতনা বলল, “অনলাইনে এক জোড়া জুতোর অর্ডার দিয়েছি।”
আমার উৎকণ্ঠার অবসান হল। বললাম, “ভালই করেছ। সামনেই তো পুজো, এখন অফার দিচ্ছে সর্বত্র।”
“সেই জন্যই তো কিনলাম। মোবাইলে দেখে এত পছন্দ হয়ে গেল যে অর্ডার করে দিলাম। কাল ডেলিভারি। ডেলিভারির সময় তো তুমি অফিসে থাকবে। তাই বলছিলাম টাকাটা এখনই দিয়ে দাও।”
“কাল সকালে দিয়ে দেব। কত?”
টাকার অ্যামাউন্ট শুনে আমার মূর্ছা যাওয়ার জোগাড়। মেজাজ হারিয়ে ফেললাম। গলা তুলে বললাম, “মানে! জুতো কেনার জন্য এত টাকা বাজে খরচা! আমার কি চুরির টাকা? কত ধানে কত চাল বোঝো? শোনো জুতোর পিছনে এত টাকা খরচা করার ক্ষমতা আমার নেই— স্পষ্ট বলে দিলাম।”
গলার আওয়াজটা এতটাই উঁচু হয়ে গিয়েছিল যে বিছানার ধারে শুয়ে থাকা উৎসব ঘুমের মধ্যেই কেঁপে উঠল। আমার কপালে সুচেতনার নরম আঙুল আর নেই। আমি চোখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে আছি। হঠাৎ কান্নার আওয়াজে আমার হৃদয় চুরমার হয়ে গেল। আমার সুচেতনা কাঁদছে। ফুঁপিয়ে কান্না। আমি সহ্য করতে পারলাম না। সুচেতনার কাঁধে আমার ডান হাত রাখলাম। সুচেতনা হাত সরিয়ে দিল। কান্না দ্বিগুণ হল। সুচেতনাকে দু’হাত দিয়ে কাছে টানার চেষ্টা করলাম। ব্যর্থ হলাম। কী বলব বুঝে উঠতে পারলাম না।
সুচেতনা কান্নাভেজা গলায় বলতে লাগল, “আমি আর কখনও তোমার কাছে কিছু চাইব না। জুতোর অর্ডার আমি আজই ক্যানসেল করে দেব। আমি খালি পায়ে ঘুরে বেড়াব। আমার জন্য তোমাকে আর টাকা খরচ করতে হবে না।”
মনে মনে বললাম, ‘তুমি টাকা খরচ না করলে আমি বেঁচে যাব। তাজমহল না পারি, এই বাড়িটা দোতলা করে ফেলব।’
মুখে বললাম, “অফিসের নানা ঝামেলায় মাথার ঠিক নেই। আমাকে এ বারের মতো ক্ষমা করো। আমি তোমাকে আর এ ধরনের কথা বলব না। তুমি জুতোর অর্ডার ক্যানসেল কোরো না।”
সুচেতনা কোনও উত্তর দিল না। কান্নার শব্দও আর নেই। আমার পাশে শুয়ে পড়ল। আমি সুচেতনাকে কাছে টেনে নিলাম। সুচেতনা বাধা দিল না।
সত্যি সুচেতনার রুচির প্রশংসা করতে হয়। জুতো এত সুন্দর হতে পারে, আমার অজানা ছিল। কী মোলায়েম আর নরম। বলছে হরিণের চামড়া। এ সব জুতো পায়ে না পরে সাজিয়েও রেখে দেওয়া যায়। সুচেতনা জুতো পরে বারান্দা দিয়ে হাঁটতে লাগল। আর মুখে খুশির অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলল, “কেমন লাগছে গো দেখতে?”
আমি সুচেতনার মিষ্টি মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে বললাম, খুব ভাল লাগছে। সুচেতনা খুব খুশি হল। জুতো জোড়ার স্থান হল সিঁড়ির নীচের ছোট্ট কুঠুরিতে অন্যান্য জুতোর সঙ্গে। তিন প্রস্থ খবরের কাগজ জড়িয়ে পলিথিনের ভিতরে ঢুকিয়ে রেখে দিল পরিত্যক্ত ছোট কাঠের সেফের মধ্যে। আমি বললাম, “তুমি জুতো পরবে না?”
হেসে উত্তর দিল সুচেতনা, “পরব। বিশেষ অনুষ্ঠানে পরব।”
বিশেষ অনুষ্ঠান এল প্রায় মাস চারেক পর। অফিসের বড় সাহেবের বিবাহবার্ষিকীতে সস্ত্রীক নেমন্তন্ন। না গেলে প্রমোশন আটকে যেতে পারে।
মাস ছয়েক আগে, তখন অফিসে অডিট চলছিল, অনেক দেরিতে ফিরেছি। শরীর-মন ক্লান্ত। রাতে বিছানায় শুয়েও ঘুম আসছিল না। এ পাশ-ও পাশ করছিলাম। সুচেতনা বিছানায় আমার পাশে বসে মোলায়েম গলায় জিজ্ঞেস করল, “কী গো, তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ? কপালটা টিপে দেব? তোমার আরাম লাগবে।”
সুচেতনা ওর নরম আঙুল দিয়ে আমার কপাল টিপতে শুরু করল। আমার চোখ বুজে এল। হঠাৎ সুচেতনা বলল, “তোমাকে না জানিয়ে একটা কাজ করে ফেলেছি। জানি তুমি রাগ করবে।”
আমার ঘুমের আবেশ পলকে উধাও। বললাম, “কী করেছ সু?”
সু আমার বৌয়ের আদরের ডাকনাম। লাজুক মুখে সুচেতনা বলল, “অনলাইনে এক জোড়া জুতোর অর্ডার দিয়েছি।”
আমার উৎকণ্ঠার অবসান হল। বললাম, “ভালই করেছ। সামনেই তো পুজো, এখন অফার দিচ্ছে সর্বত্র।”
“সেই জন্যই তো কিনলাম। মোবাইলে দেখে এত পছন্দ হয়ে গেল যে অর্ডার করে দিলাম। কাল ডেলিভারি। ডেলিভারির সময় তো তুমি অফিসে থাকবে। তাই বলছিলাম টাকাটা এখনই দিয়ে দাও।”
“কাল সকালে দিয়ে দেব। কত?”
টাকার অ্যামাউন্ট শুনে আমার মূর্ছা যাওয়ার জোগাড়। মেজাজ হারিয়ে ফেললাম। গলা তুলে বললাম, “মানে! জুতো কেনার জন্য এত টাকা বাজে খরচা! আমার কি চুরির টাকা? কত ধানে কত চাল বোঝো? শোনো জুতোর পিছনে এত টাকা খরচা করার ক্ষমতা আমার নেই— স্পষ্ট বলে দিলাম।”
গলার আওয়াজটা এতটাই উঁচু হয়ে গিয়েছিল যে বিছানার ধারে শুয়ে থাকা উৎসব ঘুমের মধ্যেই কেঁপে উঠল। আমার কপালে সুচেতনার নরম আঙুল আর নেই। আমি চোখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে আছি। হঠাৎ কান্নার আওয়াজে আমার হৃদয় চুরমার হয়ে গেল। আমার সুচেতনা কাঁদছে। ফুঁপিয়ে কান্না। আমি সহ্য করতে পারলাম না। সুচেতনার কাঁধে আমার ডান হাত রাখলাম। সুচেতনা হাত সরিয়ে দিল। কান্না দ্বিগুণ হল। সুচেতনাকে দু’হাত দিয়ে কাছে টানার চেষ্টা করলাম। ব্যর্থ হলাম। কী বলব বুঝে উঠতে পারলাম না।
সুচেতনা কান্নাভেজা গলায় বলতে লাগল, “আমি আর কখনও তোমার কাছে কিছু চাইব না। জুতোর অর্ডার আমি আজই ক্যানসেল করে দেব। আমি খালি পায়ে ঘুরে বেড়াব। আমার জন্য তোমাকে আর টাকা খরচ করতে হবে না।”
মনে মনে বললাম, ‘তুমি টাকা খরচ না করলে আমি বেঁচে যাব। তাজমহল না পারি, এই বাড়িটা দোতলা করে ফেলব।’
মুখে বললাম, “অফিসের নানা ঝামেলায় মাথার ঠিক নেই। আমাকে এ বারের মতো ক্ষমা করো। আমি তোমাকে আর এ ধরনের কথা বলব না। তুমি জুতোর অর্ডার ক্যানসেল কোরো না।”
সুচেতনা কোনও উত্তর দিল না। কান্নার শব্দও আর নেই। আমার পাশে শুয়ে পড়ল। আমি সুচেতনাকে কাছে টেনে নিলাম। সুচেতনা বাধা দিল না।
সত্যি সুচেতনার রুচির প্রশংসা করতে হয়। জুতো এত সুন্দর হতে পারে, আমার অজানা ছিল। কী মোলায়েম আর নরম। বলছে হরিণের চামড়া। এ সব জুতো পায়ে না পরে সাজিয়েও রেখে দেওয়া যায়। সুচেতনা জুতো পরে বারান্দা দিয়ে হাঁটতে লাগল। আর মুখে খুশির অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলল, “কেমন লাগছে গো দেখতে?”
আমি সুচেতনার মিষ্টি মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে বললাম, খুব ভাল লাগছে। সুচেতনা খুব খুশি হল। জুতো জোড়ার স্থান হল সিঁড়ির নীচের ছোট্ট কুঠুরিতে অন্যান্য জুতোর সঙ্গে। তিন প্রস্থ খবরের কাগজ জড়িয়ে পলিথিনের ভিতরে ঢুকিয়ে রেখে দিল পরিত্যক্ত ছোট কাঠের সেফের মধ্যে। আমি বললাম, “তুমি জুতো পরবে না?”
হেসে উত্তর দিল সুচেতনা, “পরব। বিশেষ অনুষ্ঠানে পরব।”
বিশেষ অনুষ্ঠান এল প্রায় মাস চারেক পর। অফিসের বড় সাহেবের বিবাহবার্ষিকীতে সস্ত্রীক নেমন্তন্ন। না গেলে প্রমোশন আটকে যেতে পারে।