Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
#91
অনাদি ধরেই বললো কি হয়েছে বল।
-তুই কোথায়।
-কাজ গোছাচ্ছি।
-মানে।
-মেলার চারিদিকে নজরদারি বারালাম।
-ঠিক আছে, চিকনা কোথায়।
-ও মেলার বাইরে আছে।
-আচ্ছা। শোন তুই একবার, মিত্রার কাছে যা, ওখানে দিবাকর আছে।
ওর পেছনে পাশে, চার পাঁচজন আছে।
-তুই গিয়ে মিত্রার সঙ্গে বোস ওর সঙ্গে খেজুরে গল্প কর, আমার সম্বন্ধে যা তা বল, কালকের শ্মশানের গল্প কর, আমি দিবাকরকে এই মাত্র শ্মশানের গল্প দিয়েছি। ওর মুখটা লক্ষ্য রাখবি তাহলে সব ধরতে পারবি, ও একঘন্টার মধ্যে মেলা থেকে বেরিয়ে যাবে বলছে, ওকে যে ভাবেই হোক তুলে আনবি আমার কাছে। মিত্রা যেন একটুও বুঝতে না পারে।
-ঠিক আছে। তুই পাঁপড় ভাজা জিলিপি খাবি।
-খাব। মিত্রার জন্য নিয়ে যা। চিকনা কোথায় এখন।
-বললাম তো মেলার বাইরেটা সামলাচ্ছে।
-ওর ফোন বন্ধ, মনে হয় ব্যাটারি নেই।
-ঠিক আছে দেখছি।
বাসু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তোকে কত চিন্তা করতে হয়। এখন মনে হচ্ছে তোর প্রেম করা উচিত, বিয়ে করা উচিত নয়।
হেসে ফেললাম, কেনো।
-বিয়ে করলে বউকে সময় দিবি কখন।
-তোর বউ মেলায় এসেছে।
-এসেছে।
-দেখালি নাতো।
-সময় পেলাম কোথায়। যা ঝড় চলছে।
-মিত্রার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিতে পারতিস এক ফাঁকে।
-গেছিলাম তখন। আলাপ করিয়ে দিয়েছি।
-ভাল করেছিস।
ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রার ফোন।
-এখনো এলি না।
-আসছি। এতটা পথ হেঁটে যেতে হবে তো।
-অনাদি পাঁপড় আর জিলিপি নিয়ে এসেছে।
-খা।
-তুই না এলে খাব না।
-পাগলামো করিস না, ওরা মন খারাপ করবে।
-কালকে তোর শ্মশানে যাবার গল্প শুনছি।
হাসলাম।
-আচ্ছা এই মেলা ছেড়ে তোর শ্মশানে যেতে ভালো লাগলো।
-মা বাবার কথা ভেবে মনটা খুব খারাপ লাগলো, তাই চলে এলাম।
-সরি আমি না জেনে তোকে হার্ট করলাম। তুই আয়।

ফোনটা কেটে দিলাম। কিছু ভাল লাগছে না। চল কলেজ ঘরের বারান্দায় গিয়ে বসি। আমি, বাসু কলেজ ঘরের বারান্দায় বসলাম, চিকনার ফোন সরি গুরু, আমি ব্যবস্থা করেছি, তবে মনে হয় কাজ হবে না, নীপাদের নাচ শেষ হলো, ম্যাডাম গ্রীনরুমে যাচ্ছে, দিবাকর হেসে হেসে ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলছে, শুয়োরের বাচ্চা আবার হাত মেলাচ্ছে, অনাদি ওর কাঁধে হাত রেখেছে, ঠিক আছে বস আর মিনিট দশেক, রাখি।
বাসু আমার দিকে তাকলো।
-কিরে আমি কি বাইরে গিয়ে বসবো।
-বোস। আমি এখানে আছি জানাবি না, তুই অনাদি আগে ফেস কর, তারপর ওকে এখানে নিয়ে আয়। আমি মোবাইল অফ করছি।
-আচ্ছা।
-সিগারেটের প্যাকেটটা দিয়ে যা।
বাসু সিগারেটের প্যাকেটটা দিয়ে বেরিয়ে গেলো। মাথা গরম করলে চলবে না, যা হবার তা হয়ে গিয়েছে, এখন কাজ উদ্ধার করতে হবে। হঠাত চেঁচামিচির শব্দ, বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম, এই জ্যোৎস্না রাতেও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, দিবাকরের কলার ধরে হির হির করে টেনে আনছে ওরা, হয়তো দুচার ঘা দিয়েও দিয়েছে, দিবাকারের সঙ্গে জোর ধস্তা ধস্তি চলছে, চিকনার গলা শুনতে পেলাম, বেশি বাড়াবাড়ি করবি না, আমার পরিচয় তোকে নতুন করে দেবার নেই, কেটে টুকরো টুকরো করে মালঞ্চের জলে ভাসিয়ে দেবো। মাছের খাবার হয়ে যাবি।
আমার বুকটা দুরু দুরু করে উঠলো। এ কি বলছে চিকনা।
অনাদি ঠান্ডা মাথায় খালি বলছে, তোকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে চল, সব বুঝতে পারবি।

কাছাকাছি এসে অনাদি বাসুকে জিজ্ঞাসা করলো, অনি কোথায়। আমি দেখতে পাচ্ছি বাসু অনাদিকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে সব বলছে, অনাদি ঘাড় নাড়ছে। অনাদি একবার কলেজ বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো। তারপর ঘাড় নাড়লো।
টেস্ট রিলিফের বাঁধের ওপর ওরা বসেছে, প্রায় আধঘন্টা ধরে কি কথা হলো বুঝতে পারলাম না, কোন চেঁচামেচি নেই, দিবাকর অস্বীকার করছে মনে হয়। বাসু এগিয়ে আসছে কলেজ বাড়ির দিকে, বুঝতে পারলাম, আমার সঙ্গে কথা বলবে, বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাসু আমায় বললো, বল তুই কি করবো।
-ও সব অস্বীকার করছে।
-হ্যাঁ।
-এক কাজ কর, ওর মোবাইলটা রেখে দে, আর আজ ওকে বাড়ি যেতে দিবি না। ওকে এখানে কোথাও নজর বন্দি করে রাখ, কাল ৯ টায় আমার ঘরে নিয়ে আয়, তারপর দেখি কি করা যায়।
-আচ্ছা।
আমার কথা মতো কাজ হলো। এক চোট চেঁচামেচি হলো। তারপর কয়েকজন দিবাকরকে নিয়ে চলে গেলো। আমি তাদের চিনতে পারলাম না, চেহারা দেখে খুব ভাল লোক মনে হচ্ছে না।
অনাদি এলো।
-তুই সত্যি মহান।
-কেনো।
-এই মোবাইলটা নিয়ে কি করবো।
-আছে অনেক কাজ আছে। সঞ্জয় কোথায়।
বাসুর ফোন বেজে উঠলো। বাসু আমার দিকে তাকিয়ে বললো নীপা।
-কথা বল।
-কি হয়েছে নীপা।
-চিকনাদাকে ফোন করলাম, ধরে ছেড়ে দিল, ওখানে কিসের চেঁচামিচি হচ্ছে বাসুদা।
চিকনা মোবাইল বার করে দেখে কল হয়ে পরে আছে। এক হাত জিভ বার করে ফোন টা কাটলো।
-কই কিছু হয় নি তো।
-হয়েছে, তুমি মিথ্যে বলছো।
-সত্যি নীপা তুমি বিশ্বাস করো।
-অনিদা কোথায়। ওর মোবাইল স্যুইচ অফ কেনো।
-তা তো বলতে পারবো না, ও তো তোমাদের কাছে গেলো।
-না। অনিদার কিছু হয়েছে। চিকনাদা কাকে মারছিলো।
-চিকনা কাউকে মারে নিতো।
-না। তুমি সত্যি কথা বলো। আমি প্রচন্ড চেঁচামিচির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি এখানে তোমাদের কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। তোমরা কোথায়।
-তুমি বিশ্বাস করো।
-দেখো মিত্রাদি মন খারাপ করছে, আমার খুব খারাপ লাগছে।
-তুমি পাঁচ মিনিট সময় দাও আমরা যাচ্ছি।
-আচ্ছা, ঠিক পাঁচ মিনিট।
চিকনার দিকে ফিরে বললো, গান্ডু মোবাইলটা বন্ধ করতে পারিস না।
-সত্যি বলছি তখন উদোম কেলাচ্ছিলাম দিবাকে, অনেক দিন হাতের সুখ করি নি, খানকির ছেলের ওপর অনেক রাগ জমে ছিল, বিশ্বাস কর খেয়াল ছিল না, শুয়োরের বাচ্চার কি গরম, থানা দেখাচ্ছিল।
আমি চিকনার কথায় কান দিলাম না সঞ্জুকে বললাম, তুই আমার একটা উপকার কর, ওর মোবাইল থেকে, যা রেকর্ডিং আছে আমার মোবাইলে কপি কর।
-দাঁড়া কপি কর বললেই হবে, মালটা আগে দেখি।
অনাদি আমার দিকে তাকলো, বুঝলো দিবাকরের সেট নিয়ে আমি কি করবো, সেটটা ওর হাতে দিল।
-আরে শালা এই সেট পেল কোথা থেকে রে, এ তো ই সিরিজের মাল। ওর তো এলজির মাল ছিল। আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো, তুই জানলি কি করে ওর সেট থেকে কপি করা যাবে।
-কাল সব বলবো।
-তুই কপি করে নিয়ে আয়। অনাদি, বাসু , আমি এগিয়ে যাচ্ছি তোরা পেছনে আয়।
-আচ্ছা।
বাসুর দিকে তাকিয়ে বললাম, নীপাকে একবার ফোন কর, ওরা কোথায় আছে।
বাসু ফোন করলো বললো স্টেজের সামনে আছে।
আমরা তিনজনে এলাম, মিত্রা নীপা ছাড়াও, আরো দুচারজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমায় দেখে মিত্রা মুখটা ঘুরিয়ে নিলো, নীপা গম্ভীর কথা বলছে না।
আমি কাছে গিয়ে মিত্রার কাঁধে হাত রাখলাম, রাগ করিস না, তুইতো……
-একবারে কথা বলবিনা, মাথাটা নীচু করে নিল। তুই তোর মতো এনজয় করলি আমি আমার মতো এনজয় করলাম, দুজনে একসঙ্গে এনজয় করতে পারলাম না। ওর চোখের পাতা ভারি হয়ে এলো।
আমি ওর থুতনিটা ধরে তুললাম, এইতো আমি চলে এসেছি, চল ঘুরবো। মিত্রা মাথা তুললো, ওর ভাসা ভাসা চোখের ভাষা বদলে গেলো, তোর কি হয়েছে, মুখটা এরকম কেনো।
-কোথায়।
-না তোর কিছু একটা হয়েছে।
-তুই বিশ্বাস কর।
-না তোর মুখ বলছে কিছু একটা হয়েছে।
নীপা আমার দিকে তাকালো। তারপর চিকনার দিকে। চিকনা দা।
চিকনা ত ত করছে, বিশ্বাস কর কিছু হয় নি।
-অনাদি দা।
অনাদি মুখ ঘুরিয়ে নিল।
-ওখানে ভাকু নিয়ে একটা……
ভাকু মানে, মিত্রা নীপার দিকে তাকালো।
নীপা মিত্রার কানে কানে কি বললো, মিত্রা মুচকি হাসলো।
-এখানে এসেও তোর গন্ডগোল করার ইচ্ছে জাগলো।
-না মানে…..আমরা তিনজনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি, চিকনার মালটা খেয়ে গেছে। যাক এই যাত্রায় রক্ষা পেয়ে গেলাম, সবাই ঘন্টাখানেক মেলায় মজা করে ঘুরলাম, ছোলার পাটালি, পাঁপড়, ছোলাসেদ্ধ, জিলিপি, কখনো নীপা ব্যাগ থেকে টাকা বার করে দাম মিটিয়েছে, কখনো মিত্রা দিয়েছে, আমার পারতপক্ষে কোনো খরচ হোলো না। চিকনা নীপার পেছনে সব সময় টিক টিক করে গেলো, মাঝে মাঝে সঞ্জয় আর চিকনার দ্বৈরথ হলো। মাঝে তো চিকনা খিস্তিই দিয়ে দিল সঞ্জয়কে মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো, তারপর মিত্রার অনুরোধে, চিকনা আর সঞ্জয় নীপা আর মিত্রাকে ভাকু কি জিনিষ দেখাতে নিয়ে গেলো, জুয়ার বোর্ড দেখিয়ে নিয়ে এলো।
বাড়ি ফিরলাম রাত প্রায় এগারোটার সময়, অনাদিকে বললাম, কাল সকাল সাড়ে নটায়, আসামিকে হাজির করিস, হ্যারে ওরা আবার ছেলেটাকে মারধোর করবে নাতো।
-আরে না না, ওর বাড়িতেই নিয়ে গেছে, কাল নিয়ে আসবে। তোকে ও নিয়ে ভাবতে হবে না। মাঝখান দিয়ে কালকের পার্টিটা নষ্ট হয়ে গেলো।
-কিচ্ছু নষ্ট হয় নি। কালকেই হবে। এবার পাওয়ার গেম খলবো। কালকে দেখতে পাবি।
সঞ্জুর দিকে তাকিয়ে বললাম, সব কপি করেছিস ঠিক ঠিক করে।
-হ্যাঁ।
-গুরু একটা ভুল কপি হয়ে গেছে।
-কি বল।
-শেলির সঙ্গে দিবাকরের একটা সেক্স সিন লোড হয়ে গেছে, কিছুতেই ডিলিট করতে পারলাম না।
অনাদি হেসে বললো, শালা এতোক্ষণ বলিসনি কেনো।
-বলার সময় দিলি কোথায়।
অনাদি মোবাইলটা তোর কাছে রেখে দে, অবশ্যই খোলা রাখবি, সব ফোন রিসিভ করবি, কোনো কথা বলবি না। এই ফোনের রেকর্ডিং থেকে আরো মশলা পাবো, আর কাল অতি অবশ্যই মোবাইলটা নিয়ে আসবি। অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। ওরা চলে গেলো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 27-11-2021, 01:03 PM



Users browsing this thread: