Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
হংসধ্বনি

 
রবিবারের দুপুর। রান্না হয়ে গেছে, স্নান -পুজোর পালাও শেষ। খাওয়া দাওয়াটা হয়ে গেলেই হতো, কিন্তু সেই বেয়াক্কেলে মানুষটা সেই যে চা জলখাবার খেয়ে বাজারের ব্যাগটা সাঁ করে নামিয়ে দিয়ে আড্ডা মারতে বেরিয়ে গেল... দেড়টা বাজতে যায়, এখনও ফেরার নাম নেই।
বেজার মুখে জানলার পাশে বসে মোবাইলে ফেসবুকটা খুললেন শিখা। ভাগ্যিস ফেসবুকটা ছিল! নইলে সময় কাটানোই সমস্যা হতো।
একটু স্ক্রল করতেই দেখেন মিষ্টি রাঙাদি আর সোমদার ছবি পোস্ট করে "হ্যাপি অ্যানিভার্সারি বাবা মা" লিখেছে। ইস! মনেই ছিল না। ভাগ্যিস ফেসবুকটা ছিল। রাঙাদিকে ফোন করতে যাবে, দেখে মিথিলেশ কমেন্ট করেছে "অনেক শুভেচ্ছা দুজনকেই। সুস্থ থাকো, ভাল থাকো।" দেখেই, গা টা জ্বলে গেল শিখার! বাড়ি ফেরার নাম নেই। এদিকে ফেসবুক করা হচ্ছে।
উফ! কেন যে এই একুশে নভেম্বর টা এসেছিল! নাহলে তো মিথিলেশের সাথে দেখাই হতো না। সোমদার পাশের বাড়িতে ভাড়া থাকত মিথিলেশরা তখন। আর সেই থেকেই... চোখে চোখে কথা... সেইসময় যা হতো আর কি! রাঙাদির বাসরঘরে গানের লড়াই হচ্ছিল, সেখানেও "হামে তুমসে প্যার কিতনা" শুনে শিখার মনে হয়েছিল গানটা ওর জন্যেই গাওয়া হচ্ছে!
সেই দুহাজার সালের ঘটনা। শিখা তখন ঊনিশ! সে কি বুক ধড়ফড়! পেটের মধ্যে যেন হাজার প্রজাপতি! বৌভাতের দিন সে কি টেনশান! নামও জানতেন না... বাসরঘরে সবাই 'পাপান' বলে ডাকছিল! যদি... সে না আসে... যদি ওর দিকে না তাকায়... এইসব লাবডুব নিয়েই গেছিলেন।
মিথিলেশ ছিলেন। আর, পরিবেশন করছিলেন। রাঙাদির শ্বশুরমশাই বাড়িতে ভিয়েন বসিয়েছিলেন। এই এত্ত বড় বড় পাশবালিশের মতো ল্যাংচা হয়েছিল বাড়িতে। অতবড় ল্যাংচা কখনও খাননি শিখা। তাই এমনিতে মিষ্টি না খেলেও একেবারে দুটো চেয়েছিলেন। মিথিলেশ আরও দুটো দিয়ে দিয়েছিলেন। চারটে ল্যাংচা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন শিখা, তখন টিস্যু পেপার... না না, তখন তো 'ন্যাপকিন' বলত সবাই, তাতে নিজের ল্যান্ডলাইন নাম্বারটা লিখে এনেছিলেন মিথিলেশ। পানমশলা ভরে। দুদিন পরে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন করেছিলেন শিখা। কত লজ্জা, ভয় যে জয় করতে হয়েছিল ওই দুটো দিনে... মিথিলেশ অনুযোগ করে বলেছিলেন ওঁর অপেক্ষার কথা ওই দুদিন ধরে।
সে এক দিন ছিল!
আর এখনও একটা সময়!
মাঝেমাঝে শিখার মনে হয় এতবছর একসাথে থাকার ফলেই হয়ত সবকিছু এত পানসে লাগে ওঁর। বিয়ে হলো... বাড়ির সবাই খুশি মনে মেনেও নিলেন। দুজনেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নিজেদের জীবন নিয়ে। এভাবেই কেটে গেল কতদিন। আর, বড্ড একঘেয়েও হয়ে গেছে যেন সবকিছু। মিথিলেশের তো কিছুই এসে যায় না আজকাল! নইলে দেড়টা বেজে গেল, এখনও...
টিং টিং!
ভাবতে ভাবতেই কলিং বেলের আওয়াজ। এই এতক্ষণে আসার ইচ্ছে হল!
ইচ্ছে করেই হেলেদুলে গিয়ে দরজা খুললেন শিখা।
ধাঁ করে ঘরে ঢুকে গেলেন মিথিলেশ। তারপর একবারও না তাকিয়ে বলে উঠলেন "খেতে দাও, খিদে পেয়েছে।"
বেজার মুখে রান্না করা ভাত, ডাল, উচ্ছে ভাজা, আলু-ফুলকপির তরকারি আর চিকেন সাজাচ্ছেন, হঠাৎ টের পেলেন লোকটা রান্নাঘরে ঢুকেছে। ঘুরে দেখার আগেই টুক করে বেরিয়েও গেল। সিগারেট খাবার জন্য দেশলাই চুরি করল বোধহয়!
টেবিলে খাবারের থালাটা রেখে নিজের খাবারটাও নিয়ে এলেন। প্রথম প্রথম মিথিলেশকে একাই খেতে দিতেন, নিজে পরে খেতেন শিখা। কিন্তু শাশুড়ি মা বলেছিলেন একইসাথে খাবার নিয়ে নিতে। বেশ গল্প করে করে খাওয়া যায়! বড় ভাল মানুষ ছিলেন... অকালেই চলে গেলেন...
কিন্তু সেই একজন না এলে খাবেন কি করে?
"কই গো?" বলে ডাকতে যাবেন, দেখেন মিথিলেশ ঢুকছেন, দুহাতে দুটো প্লেট।
তাতে ইয়াব্বড় ল্যাংচা, দুটো করে...
সেই পাশবালিশের মতো!
"এটা কি?"
বলে ভ্যাবলার মতো তাকালেন শিখা, বরের দিকে!
"উফ, এখনও সেইইই রকম তাকানো! তাই তো সেই জিনিসটাই দিলাম... মনে নেই তোমার? "
"কোত্থেকে পেলে?" লজ্জা আর আনন্দ মিলেমিশে গেছে এক্কেবারে...
"খুঁজলে ভগবান পাওয়া যায় ম্যাডাম, তো সামান্য ল্যাংচা! পানমশলা আনি নি কিন্তু..." হাসতে হাসতে বলেন মিথিলেশ।
চোখে চোখ রাখলেন শিখা। একুশ বছর কেটে গেল! একুশটা বছর...
কত রাগ- অভিমান...
তবু এখনও কেমন আচ্ছন্নের মতো ভালবাসা...
ওই চোখে আজও সানাইয়ের সুর...
ধ্যাত! নিজের মনেই লজ্জা পেয়ে হেসে ওঠেন শিখা...
হংসধ্বনির সুর লাগা সেই হাসিতে... আজও... ভাবেন মিথিলেশ

Heart Heart
 

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 23-11-2021, 01:52 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)