Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
মন কেমন করা গ্রীষ্মের দুপুরে পাশাপাশি মা-মেয়ে শুয়ে
ঝুমুর, তুই তো শুধু আমার মেয়ে নোস, তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ডও বটে। তোকে না বলার মতো কিছু নেই আমার। তবু কোনও বিষয় মনের মণিকোঠায় রেখে দিতেই বেশি ভাল লাগে। তবুও তোকে যা বলব সেটা যেন শুধু তোর মনের লকারেই থেকে যায়। এটা শুধু তিতিরমাসি জানে, আর কেউ নয়, বার তুই জানবি!
তিতিরমাসি মায়ের কলেজের বেস্ট ফ্রেন্ড, ঝুমুর জানে
একটু থেমে ভ্রমর শুরু করে, আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। আমাদের পুরনো বাড়িটার নাম ছিল শিশিরকুঞ্জ। আমাদের ঘরগুলো ছিল রাস্তার দিকে, যেখানে একটা ব্যালকনি ছিল। এখন প্রোমোটারের হাতে পড়ে ফ্ল্যাট হয়ে গেছে
সেখানে আমি কলেজ থেকে ফিরে কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতাম। এক দিন দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই দেখি, রোগা চেহারার ফর্সা একটা ছেলে আমাদের বাড়ির কিছুটা আগে সাইকেল থেকে নেমে পড়ে, তার পর ব্যালকনির দিকে তাকাতে তাকাতে সাইকেল নিয়ে হেঁটে চলে যায়, তার পর একটু দূরে গিয়ে সাইকেলে উঠে পড়ে। পরে বুঝলাম, আমাকে বেশি ক্ষণ দেখার জন্যই এই ব্যবস্থা। শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া কোনও দিনই সে কিছু করেনি
প্রথম দিকে চোখে চোখ পড়লে ভয় পেয়ে ভেতরে চলে যেতাম। কিন্তু কিছু দিন পর ভয় কেটে গেল। লজ্জা পেয়ে ব্যালকনি থেকে চলে গেলেও আবার কিছু ক্ষণ পর ব্যালকনিতে আসতাম। দেখতাম সে চলে গেছে। এক অদ্ভুত শূন্যতা আমায় গ্রাস করত। ছেলেটাকে বেশ দেখতে ছিল, জানিস। চোখ দুটো খুব গভীর
বুঝতে পারছিলাম, আমি একটা বাঁধনে বাঁধা পড়ে যাচ্ছি। এক দিন তিতিরকে সব বললাম। মজার ব্যাপার হল, তিতির বা অন্য কেউ যখন আমার সঙ্গে থাকত, তখন আর দিকে তাকাতই না
এক দিন সে বাড়ির সামনে দিয়ে সাইকেলটা নিয়ে আমার দিকে তাকাতে তাকাতে যাচ্ছে, হঠাৎ একটা রিকশা এসে হুড়মুড়িয়ে ওর গায়ে পড়ল, বেচারা তো সাইকেল নিয়ে চিৎপটাং। আমি তো হেসে উঠেছিলাম। পরে অবশ্য মনে হয়েছিল, হাসাটা ঠিক হয়নি। বেচারা কোনওক্রমে উঠে খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলে গেল। পরের দুদিন পাত্তা নেই। দুদিন পর দেখলাম, অন্য একটা ছেলে ওকে সামনের রডে বসিয়ে সাইকেল চালিয়ে চলে গেল। বুঝলাম, হিরোর চোট লেগেছে। যাকে আমি ভাল করে চিনি না, তার জন্য কষ্ট হচ্ছিল! ঠাকুরকে বললাম, ওকে ভাল করে দাও
আমি তো বাইরে খুব একটা বেরোতে পারতাম না, বাবা পছন্দ করতেন না। ওই বিকেল পাঁচটা ছিল এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়। প্রায় দুবছর আমাদের নির্বাক সিনেমা চলল। নাইন, টেন, মাধ্যমিক সব শেষ হয়ে গেল। হঠাৎ কী হল কে জানে, ওর আর কোনও পাত্তা নেই। আমার তখন দিশেহারা অবস্থা
জেঠু-কাকুদের সঙ্গে বাবার বনিবনা হচ্ছিল না, তা ছাড়া বাবার চাকরির জায়গাটা ছিল বেশ দূরে। তাই বাবা চাকরির জায়গার কাছাকাছি একটা ফ্ল্যাট কিনে পেললেন। এর পর বাবা যে দিন বললেন, সামনের সপ্তাহে আমরা এখান থেকে চলে যাব, সে দিন মনে হচ্ছিল নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। বাড়িটা, বিকেল পাঁচটা, এই ব্যালকনিটা আর সেই ছেলেটা... সব কিছু চিরতরে হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি, এটা ভাবলেই কান্না সামলাতে পারছিলাম না। খুব চাইছিলাম জানিস, যাওয়ার আগে এক বার অন্তত ওর সঙ্গে যেন দেখা হয়, তা হলে ওর নামটা যে ভাবেই হোক জেনে যাব
সে সুযোগ আর পাইনি। আর ফিরে এল না। কী যে ঠিক হল সেটা জানতে না পারার জন্যই দুঃখটা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছিল। বার বার মনে হচ্ছিল, বড় অসুখ বা দুর্ঘটনা হয়নি তো?
বাচ্চা মেয়ের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন ভ্রমর। নিজেকে কেমন যেন অসহায় লাগছিল ঝুমুরের। পঁচিশ বছর আগের অচেনা অপরিচিত এক জনের জন্য এত মায়া, এত কষ্ট! কে এই ছেলেটি! ভ্রমর আর কিছু বলেননি, ঝুমুরও প্রশ্ন করেনি
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 22-11-2021, 12:35 PM



Users browsing this thread: 9 Guest(s)