Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
প্লেনে উঠেই গার্লফ্রেন্ড বলল, “তুমি নাকি আমার জন্য সব করতে পারবে ? আমি বললাম “অবশ্যই”।

গার্লফ্রেন্ড বলল, ” তাহলে এই প্লেনের মধ্যে হকারি করো দেখি।”
গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে বেলুনের মতন গর্বে যেমন বুক ফুলে উঠেছিলো, প্লেনে হকারির কথা শুনে ঠিক সেইভাবেই চুপসে গেলাম।

জীবনে কেউ শুনেছেন, প্লেনে হকারি করা যায়?
গার্লফ্রেন্ডকে বললাম ” ইয়ে মানে এর থেকে কঠিন কিছু থাকলে বলো( ভাব নিয়ে)। এটা তো খুব সহজ কাজ”।

গার্লফ্রেন্ড বলল ” আগে এটাই করে দেখাও।
যতো সুন্দর করে করবে ততোই বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় এগিয়ে আসবে।
নাহলে কিন্তু অন্য কাউকে নিয়ে গিয়ে বাবার সাথে পরিচিত করিয়ে দিবো”।
সম্রাট শাহজাহান যদি প্রেমের জন্য তাজমহল বানাতে পারে। আমি প্রেমের জন্য হকারি করলে কি মহাভারত অসুদ্ধ হবে ?

এছাড়া গার্লফ্রেন্ড সরাসরি কলিজাতে হাত দিয়েছে। নিজের সম্মান বাঁচাতে সীট থেকে উঠে হকারি করতে যাবো….,
এমন সময় মনে হলো কলকাতার বাসে যারা হকারি করে তারা নানা রকম জিনিস বিক্রি করে।
কিন্তু এই প্লেনে আমি কি বিক্রি করবো। গার্লফ্রেন্ড কে বললাম ” ইয়ে মানে হকারি করতে তো জিনিসপাতি লাগে।
আমার কাছে তো কিছুই নেই”।
গার্লফ্রেন্ড আমার কথা শুনে ওর হাতের ব্যাগটা থেকে একটা ব্রাশের পাতা বের করে দিলো। গুণে দেখলাম সেখানে ১২ টা ব্রাশ।
ব্রাশ গুলো হাতে নিয়ে উঠে যেই দাঁড়াতে যাবো ঠিক তখনি গার্লফ্রেন্ড বলল …
” যদি ঠিকমতন হকারি না করতে পারো কি হবে বলেছি ,মনে আছে” তো?
আমি হকারদের মতন হাতে ব্রাশের পাতা পেঁচিয়ে বললাম “হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে”।
কিছুটা সময় নিয়ে ভাবতে লাগলাম কিভাবে লোকাল বাসে হকাররা হকারি শুরু করে।

তারপর ব্রাশ গুলো হাতে নিয়ে হকারি শুরু করে দিলাম।
” ডিয়ার ভাই ও বোনেরা, আপনাদের কি দাঁতের সমস্যা? ঠিকমতন দাঁত ব্রাশ করেন না বলে দাঁতে ময়লা জমে গেছে?

দাঁতের গোড়ায় পোকা হয়ে দিন দিন দাঁত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?
মুখের দুর্গন্ধে চারপাশের মানুষের সাথে ঠিকমতন কথা বলতে পারছেন না?
তাহলে এক্ষুনী সংগ্রহ করুন * স্থান লিভারের এই মূল্যবান ব্রাশ।
সকালবিকাল দুবার এই ব্রাশ করে দাঁত মাজলে আপনার দাঁত হবে চকচকে ফকফকে”।
তারপর ব্রাশের পাতা থেকে একটা ব্রাশ বের করে হাত উঁচু করে সবাইকে দেখিয়ে বললাম “দাম মাত্র দশ টাকা, দশ টাকা”।
প্লেনের মানুষজন আমার দিকে এলিয়েন দেখার মতন করে তাকিয়ে আছে।
গার্লফ্রেন্ডের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

গার্লফ্রেন্ডের ভয়ে আবার বলা শুরু করলাম।
“আমার দাদা ছিলেন বিখ্যাত হকার কালু দালাল, তিনি সারাজীবন ট্রেনে হকারি করেছেন।
তারপর তার ছেলে লাল দালাল ছিল আমার বাবা।উনি সারাজীবন বাসে হকারি করছে।
আমি লাল শেখের ছেলে ধলা দালাল তাই প্লেনে হকারি করি।”
দেখি পিছন থেকে একটা বয়স্ক মহিলা আমাকে ডাকছে।

কাছে যাবার সাথে সাথে উনি আমাকে দশ টাকা দিয়ে হাতের ব্রাশ টা নিয়ে নিলো।
তারপর এক বয়স্ক সাদা লোক আমাকে ডাকলো।

উনার কাছে এগিয়ে যেতেই উনি বলল ” হ্যালো মিঃ ধলা দালাল ( ইংরেজরা বাংলা উচ্চারণ করলে যেমন হয়)।
আমি বললাম ” ইয়েস স্যার”। উনি বললেন ” টোমার আইডিয়া আমার খুব পছন্দ হইয়াছে।
টুমি একমাত্র হকার যে প্লেনে হকারি সূচনা করিয়াছ। যদি নোবেল কমিটি এইরকম মানব সেবায় নোবেল দিতো।
টাহলে আমি টোমার নামে ওদের কাচে সুপারিশ করতাম “। আমি খুশিতে বললাম ” থ্যাংকইউ স্যার”।
তারপর উনি বললেন ” আমাকে দুইটা * স্থান কোম্পানির ব্রাশ দাও”তো ?
সাথে সাথে ব্রাশের পাতা থেকে দুইটা ব্রাশ খুলে উনার হাতে দিয়ে দিলাম।
এরমধ্যে দেখি দুইজন এয়ার হোস্টেজ আমার দিকে দৌড়ে আসছে। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেলো।

ভগবান! আজ নিশ্চিত ওরা আমাকে প্লেন থেকে নিচে ফেলে দেবে।
ঠিক তখনি হঠাৎ করে আমার গার্লফ্রেন্ড এগিয়ে এসে ছোট বাচ্চার মতন করে আমাকে বলল ” লক্ষী সোনা এমন করে না,
চলো চলো সীটে বসো। মানুষ খারাপ বলবে বাবু”। গার্লফ্রেন্ডের এতো সুন্দর ব্যবহার দেখে অবাক হয়ে গেলাম।
কিন্তু সেই অবাক আর বেশিক্ষণ থাকলো না যখন সে প্লেনের সবাইকে উদ্দেশ্য করে ইংরেজিতে বলল …
” আপনারা সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার স্বামী একজন মানসিক রোগী।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ওকে আমেরিকা নিয়ে যাচ্ছি”।
এবার দেখি প্লেনের সবাই আমার দিকে মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এয়ার হোস্টেজ গুলার মুখ ও দেখার মতন ছিল।

একজন এয়ার হোস্টেজ এগিয়ে এসে আমার হাতে একটা ললিপপ দিয়ে বলল, “এটা খাও, অনেক মিষ্টি।”
তারপর প্লেনে আমার আর কোনো সমস্যা হয়নি। গার্লফ্রেন্ড ও খুশি আমিও খুশি।
কিন্তু কোলকাতায় ফিরবার পর এয়ারপোর্টে বিশাল ভিড় দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।

পাশের একজন কে বললাম ভাই এতো ভিড় কিসের?
লোকটি বলল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নাকি কোন দেশ থেকে কোলকাতায় সরাসরি আসছে, তাই এতো ভিড়।
আমি নিজের মতন একা একা হেঁটে যেইনা এয়ারপোর্ট থেকে বের হচ্ছি। দেখি সবার হাতে আমার ছবি।
কেউ কেউ আমার ছবিতে মালা দিয়েছে। কেউ কেউ আমার ছবির নিচে লেখেছে দেশের গর্ব, জাতীর গর্ব মিঃ ধলা হকার।
চোরের মতন এয়ারপোর্ট থেকে পালিয়ে বাসায় এসে শুনি কোন হারামজাদা যেন আমার প্লেনে হকারির ভিডিও নেটে ছেড়ে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশের হকাররা আমাকে স্বাগতম জানাতে এয়ারপোর্ট গিয়েছিল।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by dada_of_india - 19-11-2021, 06:52 PM



Users browsing this thread: 22 Guest(s)