Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
#76
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই দেখি বাইকের আওয়াজ, হেডলাইটটা প্রথমে ক্ষীণ তারপর উজ্জ্বল হলো, আমি অশ্বত্থ তলায় বসে আছি। বাইকে দুজন আরোহী, চাঁদের আলোয় যেটুকু দেখতে পাচ্ছি, চিকনা আর সঞ্জীব বলে মনে হচ্ছে, ওরা আমায় দেখতে পাচ্ছে না, তারপর অনি অনি বলে চিৎকার করলো, আমি সাড়া দিলাম।
তাড়াতাড়ি আয় ভাই, জীবনে এখনো অনেক কিছু পাওয়ার আছে, মরতে চাই না। ওদের গলার স্বরে যে কাকুতি মিনতি ছিল, তা শুনে আমি হেসে ফেললাম।

আমি ধীর পায়ে ওদের কাছে এলাম। আমি খালি বসার অপেক্ষা, চিকনা বাইক ছোটালো রুদ্ধশ্বাসে আমি মাঝখানে সঞ্জীব আমার পেছনে, গুম হয়ে আছে।

মিনিট তিনেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম, দেখলাম খামারে একটা জটলা, আমি গাড়ি থেকে নামতে চিকনার গলার শব্দ পেলাম, খিস্তি বাদে যা যা বিশ্লেষণে আমাকে আবাহন করার দরকার তাই করলো, সঞ্জীবও বাদ গেলো না, নীপা আরো গলা চড়িয়ে যা নয় তাই বললো, আমি মাথা নীচু করে শুনে গেলাম, কোন উত্তর দিলাম না। অনাদি খালি কাছে এসে আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললো, চল ঘরে চল।
আমি ঘরে এলাম। আমার পেছন পেছন ওরা সবাই এলো।

সবাই কেমন গুম হয়ে আছে। চিকনা ঘরের সোফায় মাথা নীচু করে বসে আছে, আমি নিস্তব্ধতা ভেঙে চিকনার কাছে একটা সিগারেট চাইলাম। চিকনা উঠে এসে আমার পা ধরে ফেললো, এ কি করছিস তুই। না অনি সত্যি বলছি আমি ভুল করে ফেলেছি।

আমি ওর হাত ধরে দাঁড় করালাম, তুই ভুল করিস নি, ঠিক করেছিস।
-আমি তোকে অনেক বাজে বাজে কথা বলেছি।
-না তুই একটুও বাজে কথা বলিস নি। তোর জায়গায় আমি থাকলেও তোর মতো ব্যবহার করতাম।
চিকনা চোখ মুছছে।
-তোরা আমাকে ভীষণ ভালবাসিস, তাই তো, তোদের আমাকে হারাবার ভয়, তাই তো।
চিকনা মাথা দোলাচ্ছে, সঞ্জীব অপরাধীর মতো আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
-ওরে শ্মশানটা পবিত্র জায়গা। ওখানে ভয়ের কিছু নেই, ভয় করলেই ভয়।
-শালা অনাদিটার জন্য। তখন বাসুর দোকানে যাওয়ার ব্যাপারটা ফাইন্যাল করলেই সব লেটা চুকে যেতো।
-তুই ওখানে কি বাল ছিড়লি এতোক্ষণ বল।
আমি হেসে ফেললাম।
অনাদি মুখ নীচু করে হাসছে। দোষ করলি তুই, ঝাড় খাচ্ছি আমি, দেখছিস তো।
-সেগো মারানি, পার্টি করছে। তোর জন্য অনিকে আমি……
নীপা চায়ের মগ নিয়ে ঘরে ঢুকলো। গম্ভীর কোন কথা না বলে ট্রেটা রেখে চলে গেলো। বুঝলাম, চিকনার মতো ওরও চোখ ছল ছল করছে।
অনাদি সবাইকে চা ঢেলে দিলো। চা খাওয়া হলো, আমি মেলার খবর নিলাম, শুনে মনে হচ্ছে বেশ বর ফাংশন হবে, অনাদি মেলা কমিটির সেক্রেটারি, সঞ্জয় অনাদির অধস্তন, বাসু প্রসিডেন্ট। আমি অনাদিকে বললাম, হ্যাঁরে প্রেসিডেন্টের তো কোন কাজ কর্ম নেই তোদের প্রোগ্রামে।
-আছে, তবে হাল্কা।
-ওই জন্যই তো বাসু ওই পোস্টটা নিয়েছে। চিকনা বললো।
বাসু হাসছে, আমিও হাসছি।
-তোকে কি পোস্ট দিয়েছে।
-ফাংশন।
-আরি বাবা এ তো গুরু দায়িত্ব।
-আমি সঞ্জয়কে দিয়ে দিয়েছি, বলেছি এই দায়িত্ব তুই নে আমি মাঠের দায়িত্বে থাকবো।
-মাঠের আবার কি দায়িত্ব।
-দেখবি কাল, জুয়ার বোর্ড বসবে, ভাকুর ঠেক বসবে আরো কতো কি হবে। হাতের সুখ করতে হবে কাল।
-যে রকম আমায় করে ফেলছিলি আর একটু হলে।
চিকনা অপরাধীর মতো চোখ করে বললো, তুই আর ওই কথা মনে করাস না।
-হ্যাঁরে দিবাকর কোথায়?
-ও শালা কলকাতায় গেছে, কি ইন্টারভিউ দিতে। চিকনা বললো।
-ও থাকবে না কালকে।
-হ্যাঁ, একটু হামবড়াক্কি ভাব করতে হবে না। দেখবি কাল খালি স্টেজের পাশে, মেয়েদের পেছন পেছন ঘুর ঘুর করছে।
-ও এখনো বিয়ে করে নি।
-সকালে যে মেয়েটা এসেছিল ওটাকে পটানোর ধান্ধা করছে, ভানুকে জিজ্ঞাসা করবি ডিটেলস পাবি। তোকে তো ও দুচোখে দেখতে পারে না। সেদিন তুই তো বাজার থেকে চলে এলি, আমায় বললো, অনিকে দেখে অতো আদিখ্যেতার কি আছে। দিলাম শালা বাপ তুলে। শুর শুর করে কেটে পরলো। ও তোকে একদম সহ্য করতে পারে না।
-ওর একটা জেলাস কাজ করে সব সময়। বাসু বললো।
-সব সময় খিস্তি দিস না, বয়স হয়েছে তো।
-দেখ অনি খিস্তির কি মহিমা কাল বুঝতে পারবি।
হাসলাম। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, কাল বাসুকে আমার সঙ্গে একটু ছাড়বি।
-হ্যাঁ, তুই ওকে নিয়ে স্যারের চশমা আনতে যাবি তো।
-হ্যাঁ। ও থাকা যা না থাকাও তা। সঞ্জয় বললো।
-তাড়াতাড়ি চলে আসিস। আজকে যে খেল দেখালি তুই ।
হাসলাম।
-হাসিস না, জানিস গত সপ্তাহে হাঁড়ি পারার একটা মেয়ে ঘাস কাটতে গেছিলো ওখানে, ওকে ভূতে ধরেছিলো। গুনিনকাকার কাল ঘাম ছুটে গেছে, ভূত তাড়াতে।
-দূর, যত সব আজগুবি, কই আমাকে তো ভূতে ধরলো না।
-জানিনা, তোর সঙ্গে তর্ক করে পারবো না।
-নারে অনি আমিও শুনেছি ব্যাপারটা, বিশ্বাস হয় না তবু বিশ্বাস করি। বাসু বললো।
আমি মিট সেফের কাছে উঠে গেলাম, মানি পার্টস থেকে কুড়ি হাজার টাকা বার করলাম। সঞ্জয় আর বাসুকে ভাগ করে দিয়ে বললাম, ব্যালেন্সটা আমায় বলিস কাল দিয়ে দেবো।
ওরা না গুণেই টাকাটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো।
আমি বললাম, গুণে নে।
সঞ্জয় আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, তুই কি কম দিবি।
-না। তবু টাকা পয়সার ব্যাপার গুণে নে।
-না থাক, বাড়িতে গিয়ে গুণবো।
ওরা চলে গেলো।

আমার শ্মশানে যাওয়াটা যে খুব অন্যায় হয়েছে, রাতে খেতে বসে তা বুঝলাম, কাকীমা স্নেহের বকাবকি করলো, সুরমাসি মুখে কিছু না বললেও, ভূতের গুণাগুণ বিচার করলো, নীপা বার কয়েক সুরমাসির দিকে বিরক্তিপূর্ণ ভাবে চাইলো, কাকাও অনেক কথা বললো, বোঝালো, আমি বোবার শত্রু নেই, এই ভাবে গোগ্রাসে গিলে চলে এলাম। বসা মানে কথা বাড়বে। সোজা নিজের ঘরে এসে খাটের পাশে গোছানো আমার কাপড় গেঞ্জি পরে টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম।

আমি ঘুমোই নি, ঘুমোনোর ভান করে পরেছিলাম, নীপা ঘরে এলো, তার কাজ সারছে, আর খালি ফুঁপিয়ে যাচ্ছে, আমি কোন কথা বললাম না, তারপর নীপা দরজাটা ভেজিয়ে বাইরে চলে গেলো, আমি বুঝলাম, আজ বহুত গজব হয়ে গেছে, এ ভুলের সংশোধন আমাকেই করতে হবে, শ্মশান নিয়ে এতো কুসংস্কার এই গ্রামের মানুষের মধ্যে আছে, তা কল্পনার অতীত, বেশ মনে পরে একবার কাকার কাছে বেধড়ক মারও খেয়েছিলাম। কি করবো, নীপা বাইরে শোবে এটাও মেনে নিতে পারছিনা।
 
বিছানা ছেড়ে উঠলাম, দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলাম, নীপা ওর বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে ফুলে ফুলে কাঁদছে। আমার ভীষণ হাসিও পাচ্ছে, আবার করুণাও হচ্ছে, একটা ছোট্ট ব্যাপার নিয়ে এতো বড় একটা ঘটনা ঘটতে পারে আমার জানা ছিলো না। অনাদি যদি ফোনটা না করতো, তাহলে কিছুই হতো না।

আমি দরজাটা আস্তে করে খুলে নীপার পাশে গিয়ে বসলাম, ওর পিঠে হাত রাখলাম, ফোঁপানিটা আরো বেড়ে গেলো, আমি ওর পাশে শুয়ে জোর করে ওকে বুকে টেনে নিলাম। ও আমার বুকে মুখ ঢাকলো। আমি ওকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরে উঠে বসলাম, তারপর পাঁজাকোলা করে তুলে ঘরে খাটের ওপর শোয়ালাম, নিজে নিজেই বলে উঠলাম,

-কি ভারীরে বাবা, এইটুকু একটা মেয়ে এতো ভারি হতে পারে আমার জানা ছিল না। যাক ফাঁকতালে কোলে চড়া হয়ে গেলো।
আমি কথাটা এমন ভাবে বললাম, নীপা ফিক করে হেসে ফেললো, তরাক করে উঠে বসে আমার বুকে দুচারটে ঘুসি মারলো।
আমি ওর হাত দুটো ধরে হাসতে হাসতে বললাম, বুকটা ভেঙে গেলে আর শুতে পারবে না।
-যাও আমার শোবার দরকার নেই।
জিভ দিয়ে চু চু চু করে বললাম ও কথা বলতে নেই। দেখো দেখিনি অতো সুন্দর মুখটা কেমন ভাতের হাঁড়ির পেছনের মতো লাগছে।
নীপা আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো, দাঁত বসালো, আমি উঃ করে উঠলাম, নীপা আমার গেঞ্জিটা তুলে দাঁত বসানো জায়গাটায় হাত বোলাচ্ছে,
-জুতো মেরে গরু দান।
নীপা আমার দিকে তাকালো। তুমি ভীষণ স্বার্থপর। নিজেরটা ছাড়া কারুর কথা ভাবো না।
-আরি বাবা আমি ভগবান নই, আমিও অন্যায় করতে পারি…..
-তুমি কেনো ওখানে গেছিলে।
-ভালো লাগে বলে।
-তোমার ভালো লাগার আর কোন জায়গা নেই।
-না।
-দিনের বেলা মানুষ যেতে ওখানে ভয় পায় আর তুমি রাতে…..
-আচ্ছা বাবা, আর হবে না, এবার গেলে তোমরা জানতেও পারবে না।
-আমার গা ছুঁয়ে কথা দাও, তুমি আর যাবে না।
-আমি তোমার গা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করার পর যদি যাই তাহলে কি হবে।
-আমি মরে যাবো।
-আর আমি ঢোল বাজিয়ে লোককে বলে বেরাবো নীপা মরিয়া গিয়া প্রমাণ করিলো সে মরে নাই।
-উঃ তোমাকে নিয়ে পারা যাবে না।
মেঘ কাটলো, নীপাকে বললাম, জলের জগটা নিয়ে এসো, আকন্ঠ জল খাই।
-জল খেলে পেট আই ঢাঁই করবে করার সময়।
আমি ওর দিকে তাকালাম, নীপা কোমর দুলিয়ে চলে গেলো মিটসেফের কাছে, জলের জগটা নিয়ে এলো, জল খেলাম, নীপা জলের জগটা নিচে নামিয়ে রেখে আমার পাশে বসলো।
-খুব ছোট বেলার একটা কথা মনে পরে যাচ্ছে, জানো নীপা।
-কি।
-তোমার মেঘনাদ পন্ডিতকে মনে পরে।
-হ্যাঁ।
-আমরা শেষের এক বছর পরেছিলাম।
-আমাদের খুব মারতো। একদিন সন্ধ্যে বেলা কাকার সঙ্গে দেখা করতে এলো, আমি তখন ঐ বাড়ির বারান্দায়, বসে পরছিলাম, খুব জোর পেচ্ছাপ পেয়েছে, কিন্তু নিচে নামা যাবে না, কাকাতো আছেই তার ওপর পন্ডিত মশাই, কি করা যায়, পা টিপি টিপে, বারান্দার কোনায় গেলাম, দেখলাম মেঘনাদ পন্ডিত ঠিক চালের তলায় দাঁড়িয়ে, দিলাম মুতে, চাল থেকে জল গড়িয়ে মেঘনাদ পন্ডিতের গায়ে, মেঘনাদ পন্ডিত হঁ হঁ করে উঠলো দেখলে আমার সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দিলে, কাকা অবাক হয়ে বললেন, কে। কে আবার এতগুলো বেড়াল পোষো কেনো বলতো, ওদের খাওয়ার খরচতো আছে।

নীপা হেসে কুটি কুটি খাচ্ছে, একবার আমার গায়ে ঢলে পরে একবার বিছানায় শুয়ে পরে, হাসির চোটে ওর বুক কাঁপছে, আমি ওর কাঁপা বুকের দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে গেলাম।
-তুমি এতো দুষ্টু ছিলে।
-দুষ্টু বললে ভুল হবে, সেই মুহূর্তে আমার কিছু করার ছিল না।
নীপা আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো, অনিদা তুমি তখন খুব রাগ করেছিলে তাই না।
-একদম নয়।
-আমি তোমার সমস্ত কথা বাইরে দাঁড়িয়ে শুনেছি। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তো……
আমি নীপার মাথাটা ধরে আমার ঠোঁট দিয়ে ওর ঠোঁট চেপে ধরলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 21-11-2021, 07:33 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)