Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
একটা ব্যক্তিগত কাজে গত সপ্তাহে ব্যান্ডেল স্টেশনে বসে ছিলাম দুপুরবেলা। ট্রেনের খবর হতেই হেলতে দুলতে গিয়ে ট্রেনে উঠলাম। দুপুরবেলার ডাউন ট্রেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বেশ ফাঁকা। পুরো কম্পার্টমেন্ট জুড়ে আমি; আর দুজন মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রলোক। খুব সম্ভবত তারা একই ফ্যামিলির। চুপ করে জানলা দিয়ে বাইরে দেখছি। ট্রেন হুগলি ঢুকতে একটি স্বল্প বয়স্কা এবং স্বল্পবসনা তরুণী উঠলো ট্রেনে। কানে ইয়া গাবদা একটা মাথাজোড়া হেডফোন; চোখে মার গঙ্গা ঝিলিক ঝিলিক সানগ্লাস; পরনে টি'শার্ট-শর্টস আর টি'শার্টের বুকে লেখা- "Hi! I am dangerous."
মনে মনে ভাবলাম- খারাপ কিছু লেখা নেই।


এবার আমাদের মতো কিছু কিছু মানুষের যেমন মুরগির লেগ পিস; পাঁঠার লেগ পিস পছন্দ হয়! আমরা তা নিয়ে ফ্যাসানাইজেশন করি.. ঠিক তেমনি কিছু কিছু মানুষের মহিলাদের 'লেগ পিস' বড় পছন্দের। তারা তা দেখেই দিন গুজরান করে। কখনো বেশি ফ্যাসনাইজেশন করে ফেললে অল্প আধটু; ছোট খাটো রেপ-টেপ হয়! অবশ্য তাদের দোষ কি? মেয়েরা অভাবে লেগ পিস দেখাবেই বা কেন? এই যদি কেএফসি'র মালিকের কাছে গিয়ে কোনো মুরগি নিজের লেগ পিস দেখায়! সে কি আর বেঁচে ফিরবে? এই জন্যেই বলে মেয়েদের কমন সেন্স কম। বিশেষ করে আমাদের জেনারেশনের। তো পাশের কাকু মেয়েটির পা জেরক্স করতে ব্যস্ত! ঠিক সেই সময় চন্দননগর থেকে উঠলো এক কমলা-কালো লজেন্স বিক্রেতা দাদু। পরনে আধ ময়লা সাদা জামা; নিচে আধ ময়লা ধুতি। পায়ে একটা শতচ্ছিন্ন হাওয়াই চপ্পল। দাদু উঠতে গিয়েই গেটের সামনে রাখা কিছু ঝুড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে লজেন্সের প্যাকেট'টা হাত থেকে ছিটকে গিয়ে সব পড়ে একাকার অবস্থা। নিজেই কুড়োলেন সব; দিয়ে 'আই লজেন, আই লজেন' করতে করতে ওপার থেকে ঘুরে আমাদের দিক'টা এসে বসলেন।
দাদুর পায়ের দিকে চোখ পড়তে চমকে উঠলাম! সাদা হাওয়াই চপ্পল'টা রক্তে ভিজে পুরো লাল! দাদু নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে; চটি'টা খোলবার চেষ্টা করছেন। আমি আর থাকতে পারিনি। পকেটে রুমাল ছিল; ব্যাগ থেকে জলের বোতল'টা বের করে সোজা দাদুর পায়ের কাছে বসে গেছি; ট্রেনের তলাতেই! দাদু অপ্রস্তুতে। মুখে খালি বলছেন- "আমায় দাও। আমায় দাও। বাবা তুমি বসো। পায়ে হাত দিও না।" দেখলাম শীর্ণ পায়ের দুটো আঙুলের মাঝে চামড়া'টা 'হাঁ' হয়ে আছে। গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে.. বেরিয়েই যাচ্ছে!
ঠিক সেই সময় পিছন থেকে অবাক করা মেয়েলি কণ্ঠস্বর- "দাদা! তুমি রুমাল দিয়ে চেপে রাখো। আমার ব্যাগে ব্যান্ড এইড থাকে। বার করছি। একটু চেপে রাখো।" আমি একবার মেয়েটা'কে দেখলাম; একবার দাদু'কে। পাশের যে মাঝ বয়সী লোকটি এতক্ষন বুভুক্ষু আরশোলার মতো মুখ করে মেয়েটির পা প্রদক্ষিণ করছিল সূর্যের মতো; তিনিই প্রেগন্যান্ট তিমির মতো মুখটা করে বললেন- "বয়স হয়েছে। এখনো ট্রেনে ট্রেনে ঘুরে বেড়াও কেন। চোখের মাথাটা তো এক্কেবারে খেয়েছো।"
খিস্তি আমি দি না। তখনও তাই মুখ দিয়ে বেরোয় নি।

মেয়েটি ব্যাগ ওল-ঢাল করে তিনখানা ব্যান্ড এইড খুঁজে আমার পাশেই বসে পড়লো নোংরা ট্রেনের তলায়! সেই ভদ্রলোক এবার মজা পেয়েছেন! যতই হোক শর্টস পরা মেয়ে বসলে কি লোভনীয় দেখতে লাগে বলুন দিকি? এই লোভ যদি আপনার না থাকে; আপনি মাইরি পুরুষই নন! তো আমি দাদুর দুটো আঙ্গুল ধরেছি; মেয়েটি জল দিয়ে ধুচ্ছে। ধুয়ে ক্রস করে ব্যান্ড এইড লাগাচ্ছে। পরপর তিনটে। বেশ বুঝতে পারছি শরীরের জোর না থাকায় দাদু একটু একটু কাঁপছেন। আমার ব্যাগে কোনো খাবার ছিল না। এ'দিকে দাদু নামবেন বেলুড়। এই অবস্থায় নামবেন কি করে? মেয়েটি ব্যাগ থেকে একটা কেক বার করে দাদু'কে দিল। দাদুও খাবে না; মেয়েটিও ছাড়বে না। বেলুড় আসতে আমি দাদু'কে ধরে গেটের সামনে নিয়ে গেলাম। জিগ্গেস করলাম- "স্টেশন থেকে কদ্দুর যাবে জেঠু?" দাদুর একগাল হেসে উত্তর- "এই পাশেই। অন্যদিন হেঁটে যাই। আজ টোটো করে নেব। তোমরা না থাকলে না.. লজেন খাবে? একটা খাও?" মেয়েটি শুনেই পাশ থেকে- "দাদা। আপনি নামবেন না। আমার লিলুয়ায় বাড়ি। আমি দাদুকে বেলুড়ে নেমে টোটো করে দিয়ে পরের ট্রেন ধরে নেব।"
দাদু হাঁ হাঁ করে উঠল- "না না। শোনো; আমি এবার পারবো। তোমরা আর কষ্ট করো না।"
মেয়েটি শুনলে তো?

বেলুড় স্টেশন যখন ট্রেনটা ছাড়ছে..
পরিষ্কার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি- একটা জেনারেশন 'Z'; আর একটা প্রায় ভেঙে পড়া বিস্মৃত হতে চলা জেনারেশনের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে; খুব আস্তে আস্তে।
যেন "আমি আছি তো! আমায় ভরসা করো একটু। তোমার কিচ্ছু হবে না" গোছের ঠেকনা দেওয়া ভালোবাসা; জড়িয়ে ধরা শ্রদ্ধা; নিশ্চিন্ত আশ্রয়।

আমরা আজকালকার জেনারেশন'কে বড্ড শেখাই জানেন তো? অহেতুক তাদের খরচের খাতায় ফেলে দি; অহেতুক।
তারা যে কিছুই পারে না তা নয়; তারা 'গুড ফর নাথিং' নয়..
তারা 'বেস্ট ফর এভরিথিং'। তারা সব পারেনা; কিন্তু যেটা পারে সেটা মন দিয়ে পারে। স্বার্থত্যাগ করে পারে।

আজও বাসে অসুস্থ বোধ করলে এই জেনারেশন'ই জায়গা ছেড়ে দেবে।
আজও এই জেনারেশনের তৈরি করা মিম দেখেই আপনি হো হো করে হাসবেন।
আজও ফেসবুকে আপনি মন খারাপের কথা লিখলে; এই জেনারেশনের কেউ এসেই জিজ্ঞেস করবে- "কি হয়েছে দি?"

সেক্স চ্যাট; দু-চার লাইন সাহিত্য লিখে ইনবক্সে মেয়েদের খোঁচানো; বডি শেমিং- এসবের বাইরেও কিন্তু একটা জেনারেশন তৈরি হয়ে আসছে...
সবসময়েই কি সবকিছু খুঁজে পেতে গেলে একজোড়া চোখ লাগে? একটা মনও লাগে; অল্প বিবেক লাগে।
তাই না?

" ধন্য তোমার স্বার্থপরতা, ব্যস্ত তুমি তোমাকে ঘিরেই;
নাম না জানা 'তুমি' গল্পে; পার্শ্বচরিত্র আমি অগোচরেই। "


[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by dada_of_india - 16-11-2021, 08:42 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)