Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
#68
সকলের টেবিলে মিষ্টি আসলো। বাসু অনাদি মিত্রাকে একা পেয়ে অনেক কথা বলার চেষ্টা করলো, মিত্রা কিছু উত্তর দিলো, বাকিটা আমায় দেখিয়ে দিলো, মিত্রা নীপার দিকে তাকিয়ে বললো, নীপা আমার ব্যাগটা দাও তো। নীপা মিত্রার ব্যাগটা এগিয়ে দিলো, ব্যাগ খুলে নীপা, একটা মোবাইল বার করলো।
এই নে তোর মোবাইল।
আমি হাতে নিলাম। দেখলাম সঞ্জয়ের চোখ জুল জুল করছে।
-এত দাম দিয়ে কিনলি কেন।
-তুই মোবাইল আনতে বলেছিস, দামের কথা কিছু বলিস নি তো।
-তা বলে।
মিত্রা মাথা নীচু করে মিষ্টি ভেঙে খাচ্ছে, পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম আমার মোবাইল নেই, আমার চোখ মুখ দেখে চিকনা বললো, মোবাইল তো।
-হ্যাঁ।
-আমার পকেটে।
-তোর পকেটে মানে।
-তুই যখন কেবিনে গেলি তখন আমার হাতে দিলি, তারপর ফোন বেজে উঠলো, ধোরলাম, কে হিমাংশু না কে ফোন করেছিল। পরে ফোন করুন বলে কেটে দিয়েছি, তারপর দেখলাম অনবরত ফোন আসছে, বন্ধ করে পকেটে রেখে দিয়েছি।
সঞ্জয় চেঁচিয়ে উঠলো গা…..বাসু ওর মুখটা চেপে ধরলো, সরি বলে সঞ্জয় হেসে ফেললো, অতর্কিত এই ঘটনায় মিত্রা, নীপা মাথা নীচু করে ফিক ফিক করে হাসছে।
-তোলা থাকলো। চিকনা বললো। এ অপমান আমি সইবো না, মনে রাখিস।
-হ্যাঁ হ্যাঁ।
আমি তাকালাম। ওরা থেমে গেলো।
সঞ্জয়কে বললাম ওই মোবাইল থেকে কার্ডটা এই মোবাইলে ভরে দে। পকেট থেকে আর একটা সিম বার করে বললাম, এই সিমটা এতে ভরে দিয়ে নীপাকে দে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, চার্জ দিয়ে নিয়ে এসেছিস।
-হ্যাঁ।
-চা খাবি।
-হ্যাঁ।
-হাসলাম।
-হাসছিস কেনো।
-এমনি।
চিকনার দিকে তাকাতে, দুটো এক্সট্রা বলা হয়ে গেলো।
-দাদা মল্লিকদা কি করছেন।
-দাদা এখানের সকলকে ফোন করে ফেলেছেন। সব চলে এলো বলে। মিত্রা বললো।
-মানে।
-মানে আর কি, তুই জিজ্ঞাসা করবি।
-আমি।
-হ্যাঁ।
-তুই সম্পাদক, আর আমি জিজ্ঞাসা করবো।
মিত্রা আস্তে করে আমার হাতে চিমটি কাটলো। থেমে গেলাম। কানের কাছে মুখটা নামিয়ে এনে বললো, নীপা আছে, তুই একটু বাইরে চল, কথা আছে। আমি ওর দিকে তাকালাম, মিত্রা আমার চোখের ইশারা বুঝতে পারলো।
চা খাওয়া হতে সঞ্জয়ের কাছ থেকে মোবাইলটা নিলাম।
সঞ্জয় গদ গদ হয়ে বললো, গুরু অনেক দিনের শখ ছিল একটু ঘাঁটবো, ঘাঁটা হয়ে গেলো।
-কি।
-ব্ল্যাক বেরি।
-ও।
তুই এক কাজ কর, নীপাকে একটু এই মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেমটা শিখিয়ে দে, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি, নীপাকে ইশারায় বললাম তুমি একটু বসো।

মিত্রাকে নিয়ে বাইরে এলাম। মিত্রার গাড়ির কাছে গেলাম। ইসমাইল ছিলো গাড়ির দরজা খুলে দিলো। আমি মিত্রা গাড়ির ভেতরে বসলাম। সবাই দেখছে, দেখুক, এখন আমার আর কিছু যায় আসে না।
ইসমাইল বললো কোথায় যাবেন।
-কোথাও না। তুমি খেয়েছো।
-হ্যাঁ স্যার। ওই বাবু খাইয়েছেন জোর করে।
-আচ্ছা। তুমি একটু চা খেয়ে এসো।
-আচ্ছা স্যার।
ইসমাইল চলে গেলো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, তোকে আজ খুব মিষ্টি দেখতে লাগছে।
-তাই। যাক তুই সুন্দর বলেছিস, আমার ভাগ্যটা ভালো।
-শোন, হিমাংশু কাল রেজিষ্ট্রির ডেট ঠিক করেছে, আমি ওকে অনেক বার বারণ করেছিলাম, ও শোনে নি, কি সব প্রবলেম আছে বললো, তুই ওর সঙ্গে কথা বলে নে, তোকে এই মুহূর্তে কলকাতা নিয়ে যেতে চাই না, কিন্তু আমার কিছু করার নেই, তুই বরং সই সাবুদ করে কাল চলে আয়।

হিমাংশুকে ফোন করলাম, প্রথমেই ও কাকার কথা জিজ্ঞাসা করলো, ওকে সব বললাম, ও একি কথা বললো। মিত্রাকে বললাম, দাদাকে সব কথা বলেছিস।
-দাদা সব জানে।
-মিঃ ব্যানার্জী।
-ও বলেছে তুই যা করবি তাই হবে।
-তোরা সব আমার ঘারে ঠেলে দিচ্ছিস কেনো, নিজেরা কিছু কর।
-তুই বইতে পারিস তাই।
কথা বাড়ালাম না। বললাম, ঠিক আছে। যাবো
বাসু জানলায় টোকা দিলো, বললো ভেতরে ডাকছে, অপারেশন হয়ে গেছে।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে নার্সিং হোমের ভেতরে এলাম।
 
এখনো কেবিনে দেয় নি। সবাই নিচে চলে এসেছে, মিঃ রঙ্গনাথন আমাকে ডাকলেন, বললেন, সব ঠিক আছে, আমি যা করার করে দিয়েছি। তবে কাকাকে চশমা নিতে হবে। দীর্ঘদিন ক্যাটারাক থাকার ফলে, চোখটা একটু কমজোরি হয়ে গেছে, ও নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। বাহাত্তর ঘন্টা পরে ওরা পাওয়ার এবং চশমা দেবে। আমি বললাম, ভয়ের কিছু নেই তো। উনি বললেন একেবারে নয়, তবে বয়স হয়েছে, এটাতো আপনাকে মানতে হবে, আমি ওনার কথায় সম্মতি দিলাম, আর একটা কথা এই কদিন স্নান করা চোখে-মুখে জল দেওয়া চলবে না, আর দুপুরের দিকে উনি ছেড়ে দেবেন কাকাকে

কেবিনে এলাম, কাকাকে স্বাভাবিক দেখলাম, ছোটমা কাকাকে বললেন এই যে অনি এসেছে।
আমি কাকার কাছে গেলাম, কাকার চোখ ব্যান্ডেজ করা আছে, কালো চশমা লাগানো। আমার গায়ে মাথায় হাত বোলালেন, হাত দুটো থর থর করে কাঁপছে, ঠোঁটটা নড়ে উঠলো, কোন কথা বলতে পারলেন না। নিজের খুব খারাপ লাগছিলো, কিন্তু শক্ত হোলাম, এই সময় ভেঙে পরলে চলবে না। আমার একপাশে নীপা আর একপাশে মিত্রা। কাকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, বললাম, এরা তোমায় বিকেলে ছেরে দেবে বলেছে।

বাইরে বেরিয়ে এলাম। মল্লিকদা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, কি হে শক্তিমান, লুজ হয়্যা যাইতেছ মনে হইতাছে, হাসলাম, ব্যাশ বুইঝা ফালাইছি, বড়মা আমার হাতদুটো ধরে বললেন, দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি বড়মার দিকে তাকালাম। আমার ভাগ্যটা সত্যি খুব ভালো, না হলে এদের মতো এতো বড় বড় লোকজন আমার পাশে থাকবে কেনো। চোখ দুটো জ্বালা জ্বালা করছে।

কেবিনের বাইরে বেরোলাম, মিত্রা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে, অনাদিরা সব কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, আমাকে দেখে এগিয়ে এলো, কেমন আছেন স্যার, এখন ঠিক আছে, পায়ে পায়ে করিডোর দিয়ে এগিয়ে এলাম, ওরা আমার পেছন পেছন এলো। নার্সিং হোমের বাইরে এসে দাঁড়ালাম। চিকনাকে বললাম একটা সিগারেট বার কর, চিকনা একটা সিগারেট দিলো, কোন কথা বললো না। আমি অনাদিদের সব বললাম, নীপা কখন এসে পাশে দাঁড়িয়েছে জানি না। অনাদি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো, ম্যাডাম অনি কয়েকদিন পরে গেলে হতো না।
মিত্রা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
-অনি আমাদের বল ভরসা, ও থাকলে কোন কাজ আমাদের কাছে কঠিন বলে মনে হয় না।
মিত্রা মাথা নীচু করে আছে, ওরা জানে না, মিত্রারও একি অবস্থা।
বাসু বললো, ও তো আজ গিয়ে কাল আবার ফিরে আসছে। আমরা…..
চিকনা আর সঞ্জয় বললো কয়েক ঘন্টার তো ব্যাপার আমরা পালা করে….
-সেটা নিয়ে তো ভাবছি না। যদি কোন প্রবলেম হয়।
-গোরার গাড়িটা রেখে দে। এখানে নিয়ে চলে আসবি।
মিত্রা বললো আমার গাড়িটা রেখে যাবো।
অনাদি বলে উঠলো পাগল নাকি, আপনার গাড়ি পাহারা দেওয়ার আবার লোক ঠিক করতে হবেগাঁইয়া ভূত সব।
ভানু বললো ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
নীপা বললো, অনাদিদা, দাদা যখন বলছেন যাক না, আমি তো আছি।
-হ্যাঁ তোকেই তো সব করতে হবে, আমরা সব পাহারাদার।
-স্যারকে বলেছিস
-বলিনি, বলবো।
-দেখ, স্যার তোকে ছাড়া এই মুহূর্তে কারুর কথা পাত্তা দেবে না।
-সব বুঝলাম, কিন্তু আমি না গেলে হবে না।
নীপা বললো, তুমি যাও অনিদা, আমি বলছি, সব সামলে নেবো, তুমি দেখবে, আর না হলে তোমার নাম করে ভয় দেখাবো, তাতেই কাজ হয়ে যাবে।
সবাই নীপার কথায় হো হো করে হসে ফেললো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘির শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপা্ধ্যায়)) - by MNHabib - 13-11-2021, 05:39 PM



Users browsing this thread: