Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
#67
পায়ে পায়ে ভেতরে গেলাম। করিডোরের সামনের ঘরটাই এস-৬ কেবিন। কালকে কেবিনের পয়সা আমার কাছ থেকে নেয়নি তো! যাক এখন এই নিয়ে ভাবতে চাইলাম না, কাকা বিছানার ওপর হেলান দিয়ে শুয়ে আছে, কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত তোলা। কাকীমা বললেন, তোর কাকাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে গেলো, বললো ৯.৩০ মিনিটে অপারেশন, কাকীমা আমার হাত দুটো মুঠো করে ধরলেন, ও অনি……কাকীমার চোখে জল।
-কাঁদছ কেনো। সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখবে কাকা এবার চশমা ছাড়াই দেখতে পাবে। এখানে কাঁদতে নেই, লোকে কি ভাববে।
 
অনাদি বললো, অনেক দিন আগে এই রুমটায় ঢুকেছিলাম, মানসদাকে দেখতে, এটা ভিআইপিদের রুম।
আমি ঘরের চারিদিকে একবার চোখ বোলালাম, ঘরের ডেকোরেশন তাই বলে। কিন্তু অমিতাভদারা গেলেন কোথায়, বললেন কাল রাত থেকে এসে বসে আছেন। ঘরটা এসি, বেশ ঠান্ডা লাগছে, কাকা কেমন গুটি সুটি মেরে গেছেন, রুম সার্ভিস বেলটা বাজালাম, সঙ্গে সঙ্গে একজন নার্স এসে হাজির, ইংরাজীতেই তাকে বললাম, এসিটা একটু বন্ধ করে দিতে, মেয়েটি বললো, কমিয়ে দিচ্ছি স্যার বন্ধ করা যাবে না। ঠিক আছে। মেয়েটি এসির টেম্পারেচার বাড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো।
 
পাঁচু ছুটতে ছুটতে ঘরে এলো, অনি অনি চল চল পঙ্খীরাজ গাড়ি করে কারা যেন এসেছে, তোকে খোঁজা খুঁজি করছে, বুঝলাম সাহেবরা এসেছেন, কাল চলে এসেছেন, তাহলে এতো দেরি, নীপা আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছে, চিকনাকে দেখতে পেলাম না, অনাদি এবং বাসু সঙ্গে আছে।
কাকাকে বললাম, দাঁড়াও আমি আসছি। কাকা বললেন যাও।
 
আমি ঘরের বাইরে এলাম, দেখলাম রঙ্গনাথন ওদের সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন, সামনে মল্লিকদা, সবার পেছনে মিত্রা। মিত্রার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম, কপালে ডগ ডগ করছে সিঁদুর, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, একটা সাদা চিকনের সালোয়ার পরেছে, মনে হচ্ছে কোন বুটিক থেকে আনানো, সচরাচর এগুলো চোখে পরে না, ওকে আজ সৌম্য শান্ত দেখাচ্ছে, ওর উগ্রতা আজ উধাও, সেজেছে, কিন্তু সেই সাজার মধ্যে মনোহরিনী ব্যাপার আছে।
-আয়া পরসি। মল্লিকদা বললেন।
নীচু হয়ে প্রণাম করলাম। আমার দেখা দেখি, সকলে প্রণাম করলো।
-অনি, লাইফে প্রেথম প্রেণাম পেলাম তোর কাছ থেকে।
-প্রেথম না প্রেথ্থম। বাঙাল ভাষাটাও সঠিক ভাবে বলতে পারো না।
সবাই হেসে উঠলো।
-দিলি তো ।
আমি সবার সঙ্গে একে একে পরিচয় করিয়ে দিলাম, মিত্রা নীপাকে কাছে টেনে নিল, ছোটমার দিকে তাকিয়ে, নীপার গালে হাত দিয়ে বললো কি মিষ্টি দেখতে। বড়মা আমার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, কিরে এরি মধ্যে মুখটা কেমন যেন শুকিয়ে গেছে। আমি বললাম এই শুরু করলে আবার, এই জন্য আসতে বারণ করেছিলাম, ঠিক আছে ঠিক আছে আর বলবো না। ছোটমা চোখে মুখে কথা বলছেন, নীপার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বললেন এখানে এসেও সখী জুটিয়ে নিয়েছো।
হাসলাম।
ভেতরে গেলাম, কাকা, কাকীমা, সুরমাসির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম, ওরা সকলে সকলের কুশল বিনিময় করলো, মিত্রা সবার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। ওরা প্রণাম কেউ নিতে চায় নি, মিত্রাও ছাড়ে নি। শেষে অমিতাভদা বললেন, অনি যেমন আপনাদের ছেলে ও তেমনি আপনাদের একটা মেয়ে। ও যখন প্রণাম করতে চাইছে ওকে করতে দিন।
 
আমি বললাম এবার চলো, এখানে বেশি ভীড় করে লাভ নেই। নার্সিং হোমের অন্যান্য পেসেন্ট পার্টিরা আজ যেন কেমন অচ্ছুত, সবার কনসেনট্রেসন, যেন আমাদের দিকেকরিডোরে বেরিয়ে এলাম, মিঃ রঙ্গনাথন আমায় ছুটতে ছুটতে এসে বললেন, স্যার আপনার একটা ফোন আছে।
-আমার!
-হ্যাঁ, স্যার, মিঃ ব্যানার্জী করেছেন।
-মিঃ ব্যানার্জী!
রঙ্গনাথনের সঙ্গে মিত্রার চোখাচুখি হলো। আমি লক্ষ্য করলাম।
ফোনটা এসে ধরলাম।
-হ্যালো।
-অনি
-হ্যাঁ।
-তুমি খুব রাগ করে আছো মনে হচ্ছে।
-কেনো।
-সরি আজ আমি তোমার পাশে থাকতে পারলাম না।
-তাতে কি হয়েছে।
-আরে না না….
-আপনাকে কে খবর দিলো?
-মিত্রা কাল আমায় সব বলেছে।
-এই ফোন নম্বর পেলেন কোথায়?
-হাসলেন, এটা আমার নার্সিং হোম।
-তাই নাকি।
-বাঃ বাঃ তাহলে তো….
-হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি ওদের সমস্ত ব্যবস্থা করতে বলে দিয়েছি। তোমায় একটুও টেনসন করতে হবে না।
-না না আমি টেনসন করছি না।
-শোন আমি ওদের সব বলে দিয়েছি, কলকাতা থেকে মিঃ রঙ্গনাথনকে পাঠিয়েছি, উনি কাকাবাবুর অপারেশন করবেন। তোমার কাছে আমি অনেক ঋণী, এটুকু ঋণ আমায় শোধ করতে দাও। মিঃ ব্যানার্জীর গলাটা ভারী হয়ে এলো।
-এ আপনি কি বলছেন।
-না না, সাক্ষাতে সমস্ত কথা বলবো।
-ঠিক আছে।
-একেবারে রাগ করবে না।
-আচ্ছা।
ফোন রাখলাম।
অনাদিকে বললাম, দাদাদের জন্য একটু খাবার ব্যবস্থা কর।
 
আনাদি আমার দিকে তাকালো। আমি কেবিনে গেলাম, কাকাকে নিয়ে যাবার তোড়জোড় চলছে, পোষাক পরানো হয়ে গেছে। কাকা আমাকে ডাকলেন, সোফায় সবাই লম্বা হয়ে বসে আছে। আমি কাকার কাছে গেলাম, কাকা আমার হাত দুটো চেপে ধরলেন, অনি এতোদিন শিক্ষকতা করেছি, তোদেরও পড়িয়েছি, রক্তের সম্পর্ক সবচেয়ে বড় সম্পর্ক, আজ অনুভব করছি, তার থেকেও বড় সম্পর্ক আছে, তুই তা প্রমাণ করলি, কাকা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, কাকাকে সান্তনা দেবার ভাষা আমার নেই, চারিদিকে চোখ ঘোরালাম, থম থমে পরিবেশ, কাকীমা, সুরমাসি, নীপা কাঁদছে, মিত্রার একটা হাত নীপার কাঁধে
 
ট্রলি এসে গেছে, ওরা কাকাকে নিয়ে যাবে।
আমি বললাম, এবার তোমরা সবাই বাইরে গিয়ে বসো, ওরা ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেলো, নার্সকে কাছে ডেকে আস্তে করে বললাম, কাকা ইংরাজী ভাল বোঝেন, কিন্তু ফ্লুএন্টলি বলতে পারেন না, আপনারা একটু সাহায্য করবেন। নার্স মাথা দোলালো।
 
ওরা কাকাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে চলে গেলো।
আমি কাকীমার দিকে তাকিয়ে বললাম, চলো কিছু খেয়ে নিই।
মিত্রা বললো, চলো ওপরে একটা রুম ঠিক করা আছে, ওখানে গিয়ে বসি
-তোরা যা আমি একটু খাবার ব্যবস্থা করে আসি।
-ও অনি, আমরা খাবার নিয়ে এসেছি। বড়মা বললেন।
বড়মার দিকে তাকালাম।
-হ্যাঁরে, কাল রাতে করেছি।
-তোমরা কি রাতে ঘুমোও টুমোও নি।
-হ্যাঁ।
-করলে কখন।
-মিত্রা আর ছোট করেছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, মিত্রা নীপার হাত ধরেছে শক্ত করে
-তুই বিশ্বাস কর…..
-ঠিক আছে আমি ওদের একটু খাবার ব্যবস্থা করে আসি।
-আচ্ছা।
-দাদা গেলেন কোথায়।
-ঐ তো রিসেপসনে বসে আছে। মিত্রা বললো।
-ওদের ডেকে নিয়ে যাও।
মল্লিকদা, দাদা রিসেপসনে বসে আছেন। দাদা কার সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। আমি কাছে যেতে বললো, একটু ধর, হ্যাঁ বল।
-কি খাবে।
-একটু চা বিস্কুট।
-বড়মা খাবার নিয়ে এসেছেন।
-হ্যাঁ , হ্যাঁ কালকে ওরা কি সব করছিল। তুই খাবি না।
-গ্রামের ছেলেগুলো এসেছে ওদের একটু দেখে আসি।
-যা, তাহলে।
-একটু মিষ্টি পাঠিয়ে দিই।
-সুগার ফ্রি।
-না । মনে হয় পাব না। তবু দেখছি।
-আন। দাদা আবার ফোনে কথা বলতে শুরু করলেন।
-আমারে জিজ্ঞাসা করলি না। মল্লিকদা বললেন।
-তোমারটা আমি জানি।
মিত্রাকে বললাম, তোমরা ওপরে গিয়ে বসো, আমি আসছি।
-ঠিক আছে।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম।
অনাদি সমস্ত ব্যবস্থা করেছে, বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলাম, তিনটে গাড়ি, তার মধ্যে একটি গাড়ি আবার সরকারী তকমা মারা, মানে এখানে এসে ফোন টোন করা হয়ে গেছে। আমাকে দেখেই চিকনা এগিয়ে এলো, -গুরু তোমার পায়ের ধুলো একটু দাও।
অন্যান্য যে ছেলে গুলো এসেছিল, ওরা মুখের দিকে তাকায়, ওরা সব শুনে ফেলেছে, আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, একটা সিগারেট খাওয়া না।
চিকনা ছুটে চলে গেলো। অনাদি কাছে এলো, বাসু আমার ছায়া সঙ্গী, পচা, সঞ্জয় আমার কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি চোখে আমায় দেখছে। ভানু কোথায় রে? আমি বললাম। অনাদি বললো আশে পাশে আছে কোথাও। চিকনা একটা প্যাকেট নিয়ে এসেছে।
-এক প্যাকেট। সঞ্জয় বললো।
-এই শুরু করলি। আমি বললাম।
-আচ্ছা আচ্ছা পরে হবে।
-হ্যাঁ ঠেকে গিয়ে।
-ঠিক আছে।
একটা সিগারেট নিয়ে চিকনার হাতে প্যাকেটটা দিলাম। সঞ্জয় বললো, দে একটা।
-না।
-কেনো।
গুরুর প্রসাদ। এখন নয় ফেরার সময়। এখন বিড়ি খা।
অনাদিকে বললাম, তুই বাইরেটা সামাল দে, আমি ভেতরটা সামাল দিই। আর শোন দাদা আর মল্লিকদার জন্য কিছু সুগার ফ্রি মিষ্টির ব্যবস্থা কর।
অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, সুগার ফ্রি, পাবো তো।
বাসু বললো, স্টেশনের ধারে মা লক্ষীতে পাবি
-ফান্ড আছে তো। অনাদি মাথা নাড়লো, শেষ হলে চেয়ে নিস।
-আচ্ছা।
অনাদি চিকনাকে সঙ্গে নিতে চাইলো, চিকনা বললো আমি গুরুর পাশে আছি, তুই সঞ্জয়কে সঙ্গে নিয়ে যা।
-ও বললো ঠিক আছে।
চিকনাকে বললাম, চ একটু চা খাই।
আমি চিকনা, পাঁচু, পচা, বাসু সবাই। চিকনা চায়ের কথা বললো, ভদ্রলোক বললেন, একটু অপেক্ষা করুন, বানিয়ে দিচ্ছি।
বাসু বলল, হ্যারে অনি ওই ভদ্রমহিলা ওই কাগজের মালিক।
-হ্যাঁ।
আর অমিতাভদাকে দেখলি, উনি এডিটর।
সত্যি কথা বলতে কি, আমার বিশ্বস হচ্ছে না।
না হওয়ারি কথা। ওর মধ্যে একটা ব্যাপার আছে, দেখন দরি নেই।
একেবারে খাঁটি কথা বলেছিস। কোটি কোটি টাকার মালিক…..
-কোটি টাকা নয়, ঠিক এই মুহূর্তে ওর এ্যাসেটের ভ্যালু হাজার কোটি টাকা।
-কি বলছিস।
-ঠিক বলছি।
-কি সাধারণ।
অনাদি আর সঞ্জয় এলো। অনাদি বললো তোরা বাইরে দাঁড়িয়ে কেন?
-এমনি।
-চল ভেতরে চল।
-কেবিনের ভেতরে এসে বসলাম।
অনাদি বললো, এটা।
-দিয়ে আয়।
অনাদি সঞ্জয়ের দিকে তাকালো।
-তুই যা গুরু। ওখানে সব…..
অনাদি বেরিয়ে গেলো।
-হ্যাঁরে দুটো করে মিষ্টি বলনা, সকলে খাই। আমার মুখ থেকে কথা সরলো না, তার আগেই, চিকনা অর্ডার দিলো। দেখলাম, অনাদির সঙ্গে নীপা আর মিত্রা আসছে। আমি উঠে দাঁড়ালাম, বাসুও আমার দেখা দেখি উঠে দাঁড়ালো, অনাদি হাত দেখালো, বুঝলাম, বিশেষ কিছু নয়, ওরা ভেতরে এলো।
-কি হলো।
মিত্রাদি বললো তোমার কাছে আসবে।
-ও এসো।
আমার পাশ থেকে বাসু উঠে গেলো। মিত্রা আমার পাশে বসলো, আর একপাশে নীপা বসলো। টেবিলের অপজিটে বাসু, অনাদি সঞ্জয়, চিকনা একটা চেয়ার টেনে এনে বসলো।
আর একটা টেবিলে ওরা সবাই বসলো।
-খেয়েছো।
নীপা বললো, ছোটমা জোর করে লুচি আলুর দম খাইয়েছে।
-মিত্রাদি।
-মিত্রাদিও খেয়েছে।
-কি মিষ্টি খাবি।
-নিয়ে আয়। চিকনাকে ইশারা করতে ও বলে দিলো।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘির শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপা্ধ্যায়)) - by MNHabib - 13-11-2021, 09:54 AM



Users browsing this thread: