11-11-2021, 10:19 AM
ছোটবেলায় ধাঁধা তৈরি ও ধাঁধা সলভ করার খেলা খেলতাম আমরা।
অনেক সময় অনেক বড়রাও, দাদু, ঠাকুমা, দিদি, দাদা গোছের লোকেরাও এই খেলায় যোগ দিত। তো এরকমই এক অফ পিরিয়ডে কলেজের এক স্যার চক দিয়ে বোর্ডে একটা লম্বামতো লাইন টানলেন তারপর আমাদের বললেন কোনভাবে এই লাইনটিকে স্পর্শ না করে এই লাইনটিকে ছোট করতে হবে। আমরা অনেকেই চেষ্টা করলাম, লাইন না স্পর্শ করে, না মুছে, কিভাবে ছোট করা যায়! কিন্তু না কোনওভাবে বিষয়টা মাথায় এল না! শেষে আমরা পারছি না দেখে স্যার নিজে ওটা সলভ করে দিলেন। উনি একটা চক দিয়ে ওই লম্বা লাইনটার পাশে আর একটা ওর চেয়েও লম্বা লাইন টানলেন আর বললেন দেখো এবার আগের লাইনটা ছোট হয়ে গেছে। আমরাও খেয়াল করে দেখলাম একদম ঠিক, আগের লাইনটার পাশে একটা বড় লাইন ড্র করে দেওয়াতে আগের লাইনটা ছোট লাগছে ওটার তুলনায়। সবাই ধন্য ধন্য করলাম স্যারের বুদ্ধির.......
শৈশবের সেই ধাঁধার ক্লাসে যখন আমরা সবাই স্যারের উইটের প্রশংসায় ফেটে পড়ছি, তখন হঠাৎ আমাদেরই মাঝ থেকে একটি বেঁটে করে গেঁড়েপাকা ছেলে উঠে দাঁড়িয়েছিল, ভীষন শান্ত কিন্তু দৃঢ়গলায় স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিল,
-স্যার এটাতে তো পাশে একটা বড় লাইন টানা হল মাত্র, কিন্তু আগের লাইনটা ছোট হল না তো!
স্যার একটু থমকে গিয়ে বলেছিলেন,
-ইয়ে মানে, হ্যাঁ, মানে না, সে হয়নি বটে কিন্তু আগের লাইনটি ছোট তো লাগছে!
ছেলেটি আবার বলেছিল
-সে আমাদের চোখের ভুল স্যার।
আসলে ভুলটা শুধু চোখের নয়! মনেরও, যেটা সেদিন ওই বন্ধুটির চোখে পড়েছিল, আমাদের আজও পড়ে না। সেদিন স্যার চলে যাওয়ার পর সবাই মিলে সেই ছেলেটির যুক্তির খিল্লি উড়িয়েছিলাম। কিন্তু যোগাযোগ থাকার জন্য জানি সেই ছেলেটি তার আইডিওলজি নিয়ে আজও ভীষণ সুখী, আমাদের চেয়ে আজও ভীষণ কমপ্লিট ও। অনেক বছর হল জব পাচ্ছে না এক বন্ধু, কষ্টেই থাকে, এই কষ্টটা দ্বিগুন লম্বা হয়ে যায় যখন দেখে আশেপাশের বন্ধুরা চাকরি করছে। ভীষণ মনকষ্ট নিয়ে একদিন ভোরবেলা একা পার্কে হাঁটছিল এই বন্ধুটি হঠাৎ কলেজের সেই ছেলেটার সঙ্গে দেখা। কি রে অরিঘ্ন হেব্বি চাপে আছিস মনে হচ্ছে, কী কেস? পুরনো বন্ধুকে দেখতে পেয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় আমাদের কলেজের সেই পুরনো গেঁড়েপাকা ছেলেটি! এখনো সেই তরতাজা ছটফটে ভাবটা রয়ে গিয়েছে তার। অরিঘ্ন পুরো ব্যাপারটা নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলে, বলে, সবাই চাকরি পাচ্ছে, আর আ..
অরিকে থামিয়ে দিয়ে ও বলল
-তোর প্রবলেমটা কি? তোর চাকরি না পাওয়া! নাকি বন্ধুদের চাকরি পাওয়া! যা মনে হচ্ছে
আজ যদি সব বন্ধুদের চাকরি চলে যায় তুই এতটা কষ্ট পাবি না আর? বলেই হা হা হা করে হেসে উঠল! আমরাও ভেবে দেখলাম অনেকটাই ঠিক! আমার বন্ধুরা যখন বেকার ছিল তখন অরিঘ্নর এতটা খারাপ লাগত না! অরি ওকে বলল,
- আচ্ছা তুইও তো বেসরকারি ফার্মে লিখিস টিখিস শুনলাম তা তুই এত রিল্যাক্স কি করে?
আবার হাসতে হাসতে বলল,
-নিজের পাশে লম্বা আর একটা লাইন দেখে নিজেকে ছোট ভাবা বন্ধ করে দে, দেখবি তুইও পুরো কুল।
আমার সেই ছোটবেলার কলেজের স্যারের করা ধাঁধার প্রশ্ন আর তার উত্তরের সঙ্গে আমাদের জীবনের কী মিল! আমরা প্রথমে কোন কিছু অর্জন করি নিজের চেষ্টায়, তারপর সেটা নিয়ে প্রথমে কিছুটা খুশিও হই, দেন কামস দ্য কম্পারিজন, তুলনা, ব্যস গল্প শেষ। যেই আমরা নিজের অবস্থার সাথে অন্যদের অবস্থার তুলনা শুরু করে বড় হতে চাই অমনি নিজেকে ছোট, অসম্পূর্ণ মনে হতে থাকে আমাদের। আমাদের পাশের লম্বা লাইনটা আমরাই সব সময় টানি। হয়ত আমার বাড়িতে ২১ ইঞ্চির একটা টিভি আছে, বেশ বড়, দারুণ ছবি আমার এতেই বেশ ভালোভালো বিনোদন হচ্ছে কিন্তু যেই পাশের ফ্ল্যাটে রবীনদা ৩২ এর একটা এল ই ডি কিনে আনলেন অমনি আমার টিভিটা আমার কাছে ছোট মনে হতে শুরু করল...
পাশে একটা লম্বা লাইন টানলেই আগের লাইনটা ছোট হয় না, ছোট মনে হয় মাত্র! নিজের নিজের সফলতা ও বিফলতাগুলোকে কারও সঙ্গে তুলনা না করে নিজে উপভোগ করুন নিজে শোধরান, ব্যস দেখবেন ভালো আছেন, খুব ভালো আছেন।
অনেক সময় অনেক বড়রাও, দাদু, ঠাকুমা, দিদি, দাদা গোছের লোকেরাও এই খেলায় যোগ দিত। তো এরকমই এক অফ পিরিয়ডে কলেজের এক স্যার চক দিয়ে বোর্ডে একটা লম্বামতো লাইন টানলেন তারপর আমাদের বললেন কোনভাবে এই লাইনটিকে স্পর্শ না করে এই লাইনটিকে ছোট করতে হবে। আমরা অনেকেই চেষ্টা করলাম, লাইন না স্পর্শ করে, না মুছে, কিভাবে ছোট করা যায়! কিন্তু না কোনওভাবে বিষয়টা মাথায় এল না! শেষে আমরা পারছি না দেখে স্যার নিজে ওটা সলভ করে দিলেন। উনি একটা চক দিয়ে ওই লম্বা লাইনটার পাশে আর একটা ওর চেয়েও লম্বা লাইন টানলেন আর বললেন দেখো এবার আগের লাইনটা ছোট হয়ে গেছে। আমরাও খেয়াল করে দেখলাম একদম ঠিক, আগের লাইনটার পাশে একটা বড় লাইন ড্র করে দেওয়াতে আগের লাইনটা ছোট লাগছে ওটার তুলনায়। সবাই ধন্য ধন্য করলাম স্যারের বুদ্ধির.......
শৈশবের সেই ধাঁধার ক্লাসে যখন আমরা সবাই স্যারের উইটের প্রশংসায় ফেটে পড়ছি, তখন হঠাৎ আমাদেরই মাঝ থেকে একটি বেঁটে করে গেঁড়েপাকা ছেলে উঠে দাঁড়িয়েছিল, ভীষন শান্ত কিন্তু দৃঢ়গলায় স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিল,
-স্যার এটাতে তো পাশে একটা বড় লাইন টানা হল মাত্র, কিন্তু আগের লাইনটা ছোট হল না তো!
স্যার একটু থমকে গিয়ে বলেছিলেন,
-ইয়ে মানে, হ্যাঁ, মানে না, সে হয়নি বটে কিন্তু আগের লাইনটি ছোট তো লাগছে!
ছেলেটি আবার বলেছিল
-সে আমাদের চোখের ভুল স্যার।
আসলে ভুলটা শুধু চোখের নয়! মনেরও, যেটা সেদিন ওই বন্ধুটির চোখে পড়েছিল, আমাদের আজও পড়ে না। সেদিন স্যার চলে যাওয়ার পর সবাই মিলে সেই ছেলেটির যুক্তির খিল্লি উড়িয়েছিলাম। কিন্তু যোগাযোগ থাকার জন্য জানি সেই ছেলেটি তার আইডিওলজি নিয়ে আজও ভীষণ সুখী, আমাদের চেয়ে আজও ভীষণ কমপ্লিট ও। অনেক বছর হল জব পাচ্ছে না এক বন্ধু, কষ্টেই থাকে, এই কষ্টটা দ্বিগুন লম্বা হয়ে যায় যখন দেখে আশেপাশের বন্ধুরা চাকরি করছে। ভীষণ মনকষ্ট নিয়ে একদিন ভোরবেলা একা পার্কে হাঁটছিল এই বন্ধুটি হঠাৎ কলেজের সেই ছেলেটার সঙ্গে দেখা। কি রে অরিঘ্ন হেব্বি চাপে আছিস মনে হচ্ছে, কী কেস? পুরনো বন্ধুকে দেখতে পেয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় আমাদের কলেজের সেই পুরনো গেঁড়েপাকা ছেলেটি! এখনো সেই তরতাজা ছটফটে ভাবটা রয়ে গিয়েছে তার। অরিঘ্ন পুরো ব্যাপারটা নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলে, বলে, সবাই চাকরি পাচ্ছে, আর আ..
অরিকে থামিয়ে দিয়ে ও বলল
-তোর প্রবলেমটা কি? তোর চাকরি না পাওয়া! নাকি বন্ধুদের চাকরি পাওয়া! যা মনে হচ্ছে
আজ যদি সব বন্ধুদের চাকরি চলে যায় তুই এতটা কষ্ট পাবি না আর? বলেই হা হা হা করে হেসে উঠল! আমরাও ভেবে দেখলাম অনেকটাই ঠিক! আমার বন্ধুরা যখন বেকার ছিল তখন অরিঘ্নর এতটা খারাপ লাগত না! অরি ওকে বলল,
- আচ্ছা তুইও তো বেসরকারি ফার্মে লিখিস টিখিস শুনলাম তা তুই এত রিল্যাক্স কি করে?
আবার হাসতে হাসতে বলল,
-নিজের পাশে লম্বা আর একটা লাইন দেখে নিজেকে ছোট ভাবা বন্ধ করে দে, দেখবি তুইও পুরো কুল।
আমার সেই ছোটবেলার কলেজের স্যারের করা ধাঁধার প্রশ্ন আর তার উত্তরের সঙ্গে আমাদের জীবনের কী মিল! আমরা প্রথমে কোন কিছু অর্জন করি নিজের চেষ্টায়, তারপর সেটা নিয়ে প্রথমে কিছুটা খুশিও হই, দেন কামস দ্য কম্পারিজন, তুলনা, ব্যস গল্প শেষ। যেই আমরা নিজের অবস্থার সাথে অন্যদের অবস্থার তুলনা শুরু করে বড় হতে চাই অমনি নিজেকে ছোট, অসম্পূর্ণ মনে হতে থাকে আমাদের। আমাদের পাশের লম্বা লাইনটা আমরাই সব সময় টানি। হয়ত আমার বাড়িতে ২১ ইঞ্চির একটা টিভি আছে, বেশ বড়, দারুণ ছবি আমার এতেই বেশ ভালোভালো বিনোদন হচ্ছে কিন্তু যেই পাশের ফ্ল্যাটে রবীনদা ৩২ এর একটা এল ই ডি কিনে আনলেন অমনি আমার টিভিটা আমার কাছে ছোট মনে হতে শুরু করল...
পাশে একটা লম্বা লাইন টানলেই আগের লাইনটা ছোট হয় না, ছোট মনে হয় মাত্র! নিজের নিজের সফলতা ও বিফলতাগুলোকে কারও সঙ্গে তুলনা না করে নিজে উপভোগ করুন নিজে শোধরান, ব্যস দেখবেন ভালো আছেন, খুব ভালো আছেন।