10-11-2021, 01:00 PM
হোটেলে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধে গড়িয়ে গেছে | আবার বসেছি আমাদের একান্ত নিভৃত সেই জায়গাটিতে | ছেলেটিকে চা দিতে বলে দুজনে বসে গল্প করে চলেছি, অস্তগামী সূর্যকে সাক্ষী রেখে |
-“কাল তোমায় অনেক কথা জিজ্ঞাসা করবো ভেবেছিলাম | এমন রেগে গেলে যে করতেই পারলামনা |”
-“আচ্ছা, আর রাগ করবনা | বলো ?”
-“কবে থেকে লেখো ?”
-“খুব ছোটবেলাতে | তখন সবে ‘রামের সুমতি’, ‘বিন্দুর ছেলে’ পড়েছি, ছোটদের শারদীয়াগুলি আগ্রহ নিয়ে পড়েছি, রবীন্দ্র রচনাবলী থেকে হাস্যকৌতুক গুলি পড়েছি – ভীষণ ইচ্ছা হত নিজেও একটু লিখি | লিখেও ফেলেছিলাম, সবাইকে তখন দেখাই | জানি, খুব হাস্যকর হিজিবিজি কিছুই নিশ্চই লিখেছি, একটা শিশু আর কিই বা লিখবে ? সবাই পরিহাস করেছিলো | নিজের অতি সামান্য সৃষ্টিতে অপমান একটা শিশুরও ভালো লাগেনা | আমি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম লেখা থেকে, এমন কি সাহিত্য থেকেও | বাড়িতে দাদা দিদিরা ভালো লেখেন, তাঁদের শব্দ ভান্ডার আমার চেয়ে কয়েক গুন বেশি, আমি সারা জীবন চেষ্টা করে গেলেও তাঁদের পর্যায়ে নিজেকে উন্নীত করতে পারবনা জানতাম | আমার ভাষা দুর্বল, বাংলা খাতা লাল দাগে দাগে ভরে যায় – আমি কিনা লিখবো ?
বাড়ির সন্ধ্যার আড্ডায় কত গুরুগম্ভীর প্রসঙ্গ আসতো – রাজনীতি, আধ্যাত্মিকতা | লেখাও হত, লেখা পড়াও হত, সে শব্দের ভান্ডারে সাঁতরাতে সাঁতরাতে দম বন্ধ লাগতো, বাক্যের কোথায় আরম্ভ, কোথায় তার শেষ, আমার সীমিত ক্ষমতায় তার হিসাব নিকাশ করতেও ছিলাম অক্ষম |”
-“এত অভিমানে সব ছেড়ে দিলে ?”
-“হ্যা, তাই | তখন মনে হয় সেভেন বা এইটে পড়ি | বাংলা সেকেন্ড পেপার এর পরীক্ষা চলছে | রচনা এসেছে, রচনা বই দেখে কিছু মুখস্ত করাও নেই | আমি নিজের মতন করে লিখছি, কথার ভাষার মতন করেই আমার লেখার ভাষা চলছিলো, কঠিন কিছুই নেই | জানি, ২০ র মধ্যে ১০ পেলেই আমি ধন্য | পাশে এসে আমাদের স্যার দাঁড়ালেন | ভীষণ অস্বস্তি হয় তখন | টুকছিনা, কিছুনা – আমার পাশে এসে দাঁড়াবার দরকারটা কি স্যারের ? আমি লিখছিলাম | স্যার চুপ করে দাঁড়িয়ে | উনি বাংলার শিক্ষকও নন | কিছুতেই নড়ছেন না পাশের থেকে | আমি বারবার স্যারের দিকে তাকাচ্ছিলাম দেখে উনিও বুঝতে পারলেন আমার অস্বস্তি | সরে গেলেন | খাতাটা জমা নেওয়ার সময়ে স্যার আমার পিঠে হাত রেখে বললেন, “ভারী সুন্দর লিখিস তো তুই |” রচনাতে নম্বর কত পেয়েছিলাম মনে নেই, কিন্তু সেদিন স্যারের ওই কথা শুনে আমার চোখে জল এসেছিলো, নতুন বৌদি |”
ও আমার হাতটা চেপে ধরলো | বললো, “তারপর ?”
“একটু লিখেছি | কলেজে দুজন ভীষণ ভালো বন্ধু ছিল | লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের কে আমার লেখা পড়াতাম | জানি, অত্যন্ত অপরিনত লেখা, কোনো অর্থবাহী লেখাই নয়, কিন্তু আমার দুই বন্ধুর খুব ভালো লাগতো পড়তে, অন্ততঃ ওরা তাই বলতো আমায় | কলেজে পৌছালেই জিজ্ঞাসা করতো, লেখা কই রে ? ভারী ভালো লাগতো তখন |”
“বাড়ির কেউ জানেন তুমি লেখো ?”
“না”
“আমায় কাকিমা বলেছিলেন তোমার চিঠি নাকি piece of literature?”
আমি চুপ করেই ছিলাম |
“ছাত্রজীবনে প্রেম করনি ? প্রেম করলে দেখতে লেখা আরো কত সুন্দর হত !” নতুন বৌদি বললো |
“প্রেম করলাম কই ?”
“হাসলে যে ?”
“কিছু না, ভীষণ ছোট্ট একটা encounter, একটু ভালো লাগা, লাগতে না লাগতেই ছেড়ে যাওয়া – সেটা প্রেম ছিলনা | Just a collection of few innocent sweet moments |”
“লেখনি সেটা ?”
“চেষ্টা করেছিলাম | লিখতে গিয়ে শুধু গান আর গান মনে আসতো | গানের চোটে গল্প আর এগুচ্ছিলো কই ? কিন্তু, পরে দেখলাম, এতো মজা মন্দ নয় ? রবীন্দ্রনাথের গানের মতন এত সুন্দর ন্যাশনাল হাইওয়ে থাকলে আর চিন্তা কোথায় ? একটু স্টিয়ারিং টা ধরে রাখলেই গাড়ি এগিয়ে যাবে |”
-“কাল তোমায় অনেক কথা জিজ্ঞাসা করবো ভেবেছিলাম | এমন রেগে গেলে যে করতেই পারলামনা |”
-“আচ্ছা, আর রাগ করবনা | বলো ?”
-“কবে থেকে লেখো ?”
-“খুব ছোটবেলাতে | তখন সবে ‘রামের সুমতি’, ‘বিন্দুর ছেলে’ পড়েছি, ছোটদের শারদীয়াগুলি আগ্রহ নিয়ে পড়েছি, রবীন্দ্র রচনাবলী থেকে হাস্যকৌতুক গুলি পড়েছি – ভীষণ ইচ্ছা হত নিজেও একটু লিখি | লিখেও ফেলেছিলাম, সবাইকে তখন দেখাই | জানি, খুব হাস্যকর হিজিবিজি কিছুই নিশ্চই লিখেছি, একটা শিশু আর কিই বা লিখবে ? সবাই পরিহাস করেছিলো | নিজের অতি সামান্য সৃষ্টিতে অপমান একটা শিশুরও ভালো লাগেনা | আমি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম লেখা থেকে, এমন কি সাহিত্য থেকেও | বাড়িতে দাদা দিদিরা ভালো লেখেন, তাঁদের শব্দ ভান্ডার আমার চেয়ে কয়েক গুন বেশি, আমি সারা জীবন চেষ্টা করে গেলেও তাঁদের পর্যায়ে নিজেকে উন্নীত করতে পারবনা জানতাম | আমার ভাষা দুর্বল, বাংলা খাতা লাল দাগে দাগে ভরে যায় – আমি কিনা লিখবো ?
বাড়ির সন্ধ্যার আড্ডায় কত গুরুগম্ভীর প্রসঙ্গ আসতো – রাজনীতি, আধ্যাত্মিকতা | লেখাও হত, লেখা পড়াও হত, সে শব্দের ভান্ডারে সাঁতরাতে সাঁতরাতে দম বন্ধ লাগতো, বাক্যের কোথায় আরম্ভ, কোথায় তার শেষ, আমার সীমিত ক্ষমতায় তার হিসাব নিকাশ করতেও ছিলাম অক্ষম |”
-“এত অভিমানে সব ছেড়ে দিলে ?”
-“হ্যা, তাই | তখন মনে হয় সেভেন বা এইটে পড়ি | বাংলা সেকেন্ড পেপার এর পরীক্ষা চলছে | রচনা এসেছে, রচনা বই দেখে কিছু মুখস্ত করাও নেই | আমি নিজের মতন করে লিখছি, কথার ভাষার মতন করেই আমার লেখার ভাষা চলছিলো, কঠিন কিছুই নেই | জানি, ২০ র মধ্যে ১০ পেলেই আমি ধন্য | পাশে এসে আমাদের স্যার দাঁড়ালেন | ভীষণ অস্বস্তি হয় তখন | টুকছিনা, কিছুনা – আমার পাশে এসে দাঁড়াবার দরকারটা কি স্যারের ? আমি লিখছিলাম | স্যার চুপ করে দাঁড়িয়ে | উনি বাংলার শিক্ষকও নন | কিছুতেই নড়ছেন না পাশের থেকে | আমি বারবার স্যারের দিকে তাকাচ্ছিলাম দেখে উনিও বুঝতে পারলেন আমার অস্বস্তি | সরে গেলেন | খাতাটা জমা নেওয়ার সময়ে স্যার আমার পিঠে হাত রেখে বললেন, “ভারী সুন্দর লিখিস তো তুই |” রচনাতে নম্বর কত পেয়েছিলাম মনে নেই, কিন্তু সেদিন স্যারের ওই কথা শুনে আমার চোখে জল এসেছিলো, নতুন বৌদি |”
ও আমার হাতটা চেপে ধরলো | বললো, “তারপর ?”
“একটু লিখেছি | কলেজে দুজন ভীষণ ভালো বন্ধু ছিল | লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের কে আমার লেখা পড়াতাম | জানি, অত্যন্ত অপরিনত লেখা, কোনো অর্থবাহী লেখাই নয়, কিন্তু আমার দুই বন্ধুর খুব ভালো লাগতো পড়তে, অন্ততঃ ওরা তাই বলতো আমায় | কলেজে পৌছালেই জিজ্ঞাসা করতো, লেখা কই রে ? ভারী ভালো লাগতো তখন |”
“বাড়ির কেউ জানেন তুমি লেখো ?”
“না”
“আমায় কাকিমা বলেছিলেন তোমার চিঠি নাকি piece of literature?”
আমি চুপ করেই ছিলাম |
“ছাত্রজীবনে প্রেম করনি ? প্রেম করলে দেখতে লেখা আরো কত সুন্দর হত !” নতুন বৌদি বললো |
“প্রেম করলাম কই ?”
“হাসলে যে ?”
“কিছু না, ভীষণ ছোট্ট একটা encounter, একটু ভালো লাগা, লাগতে না লাগতেই ছেড়ে যাওয়া – সেটা প্রেম ছিলনা | Just a collection of few innocent sweet moments |”
“লেখনি সেটা ?”
“চেষ্টা করেছিলাম | লিখতে গিয়ে শুধু গান আর গান মনে আসতো | গানের চোটে গল্প আর এগুচ্ছিলো কই ? কিন্তু, পরে দেখলাম, এতো মজা মন্দ নয় ? রবীন্দ্রনাথের গানের মতন এত সুন্দর ন্যাশনাল হাইওয়ে থাকলে আর চিন্তা কোথায় ? একটু স্টিয়ারিং টা ধরে রাখলেই গাড়ি এগিয়ে যাবে |”