09-11-2021, 08:04 PM
একটি সত্য ঘটনা
এটা আজ থেকে দশ বছর আগের কথা ( হিসাব করলে এগারো হবে আমি সিনেম্যাটিক ভঙ্গি করলাম) । সালটা 2010 । পড়ি ক্লাস সিক্সে। কলেজ ছুটি হলেই আমার একমাত্র গন্তব্যস্থান হতো মাসির বাড়ি।
প্রত্যন্ত অজপাড়া গাঁ বললে যা বোঝায় ঠিক তেমন আমার মাসির বাড়ি। দশ পা হাটলে একটা পুকুর কিংবা ডোবা চোখে পড়বে। সবার বাড়িতেই হাঁস মুরগি গরু আছে। গ্রামে দুইতলা বাড়ি কয়েকটা থাকলেও বেশিরভাগ বাড়িই মাটির তৈরি। আমার মেসো সবে তিন বছর হলো ইট দিয়ে একতলা বাড়ি বানিয়েছে ।
2010 এর শীতকাল। প্রতি বারের মতোই শীতকালে আমি গেছি মাসির বাড়ি। সারা বছর এই প্রাণহীন শহরে থাকার পর গ্রামে গিয়ে সবুজ দেখে চোখ জুড়িয়ে আসতো । সকাল হলেই পাখির কিচিরমিচির তো আছেই আর আছে হাঁস মুরগির ডাক। এসব শহরে শোনা যায় না।
তো এই গ্রামেই ঘটলো ঘটনাটা। শীতকালের রাত। চারিদিকে কাঁপুনি দিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। অন্ধকার টা নামলো ঝুপ করে। রাতে খেয়ে দেয়ে আমার মতোই সবাই লেপের ভিতর ঢুকে গেছে। আমি ঘুমাতাম দিদির কাছে।
আমাদের তিনটে বাড়ি পরে একটা মাটির বাড়ি। দুই ছেলে দুজনেরই বিয়ে গেছে। সন্তান হয়নি। বাবা মা সাথেই থাকেন। রাত ঠিক 2:00 এর পর বড়ো ছেলের ঠান্ডা লেগে ঘুম ভেঙে গেল। দেখলো গায়ের কম্বলটা পায়ের কাছে পড়ে আছে। কম্বলটা টেনে নিজের গায়ে দিয়ে স্ত্রীর গায়ে দিতে গিয়ে অন্ধকারেই দেখতে পেলো স্ত্রীর চোখ জ্বলছে। ভয়ে ভিরমি খেল লোকটা। কাঁপা হাতে বালিশের পাশে রাখা টর্চলাইট জ্বালিয়ে বউয়ের মুখের উপর ফেলতেই দেখলো বউয়ের গলায় গামছা বাঁধা। এঁটে আছে পুরো। আর তার জন্য বউয়ের চোখ দুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। স্বামীর শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা একটা স্রোত বয়ে গেল। হাত থেকে টর্চলাইট পড়ে গেল। আঁতকে উঠে খাট থেকে পড়ে গিয়ে ঘরের একটা কোনায় গিয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো। ভয়ে কথা বন্ধ হয়ে গেছে তার। মুখ দিয়ে একটা স্বর ও বার হচ্ছে না।
কতক্ষণ পর জানি না , স্ত্রী উঠে পাশের বেড়া দিয়ে আলাদা করে রাখা রান্নাঘরে গিয়ে একটা চ্যালা কাঠ আনলো। চোখ তার এখনও সেই বাইরে বেরিয়ে আছে। গলায় গামছার ফাঁসটা এখনও বর্তমান। চুলোর ঘর থেকে কাঠটা এনে ঘরে ঢুকে স্বামীকে উদ্দোম মাদ্ধম পেটাতে শুরু করলো। এবার গায়ে প্রচন্ড জোড়ে কাঠের মার পড়তেই স্বামী চিল্লিয়ে উঠলো “ মা বাঁচাও, বাঁচাও আমায়, „
সঙ্গে সঙ্গে পাশের ঘর থেকে ছোট ভাই এলো। খাটের উপর পড়ে থাকা টর্চলাইট এর আলোয় দেখলো তার বৌদি তাঁর দাদাকে মারছে। সে ঠেকাতে গেল। বৌদি দেওরকেও মারতে শুরু করলো। দুই ভাই বাচাও বাঁচাও বলে পাড়া জাগিয়ে দিল। দুজনকে বেধড়ক পেটানোর পর বউটা খালি উঠোনে ওই শীতের মধ্যে নগ্ন পায়ে নাচতে শুরু করলো। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আশেপাশের সবাই গিয়ে দেখলো বউ গোবর দিয়ে লেপে দেওয়া উঠোনে নাচছে। কয়েকজন সাহস করে থামাতে গেলে তাদেরকে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো। ভয়ে আর কেউ যেতে সাহস পেল না। কেউ একজন পাশের ওঝার খবর দিল।
ভোর পাঁচটার দিকে আমাকে মাসির ছোট ছেলে ডেকে তুললো। আমার থেকে সাত আট বছরের বড়ো হবে। ওর সাথেই রোজ নিম ডাল দিয়ে দাতন করতে করতে খেজুর গাছের তলায় খেজুর কুড়োতে যেতাম। তা আমি মনে করি সেইজন্য ডাকছে। আমি ঘুম থেকে উঠতেই বললো, “ শিগগির দেখবি চল। „
এই কথাটাই আমার কাছে যথেষ্ট ছিল যেকোন জায়গায় যাওয়ার জন্য। আমি দৌড়লাম দাদার পিছন পিছন। তিনটে বাড়ি পরেই ওদের উঠোনে গিয়ে দেখি বউটা নাচছে। আমি ভয়ে দাদার পিছনে লুকিয়ে পড়লাম । সেই দৃশ্য দেখে এতোটাই ভয় পেয়ে কাঁপছিলাম যে দাদা আমাকে নিয়ে চলে আসতে বাধ্য হলো।
পরে সেই দাদার কাছেই শুনলাম ছটার দিকে ওঝা এলো। ওঝা এসে কয়েকবার ঝাড়ু দিয়ে মারলো। বউটা শান্ত হয়ে এলে দোয়া পড়ে কয়েকবার ফু দিলো। তারপর শুইয়ে দিতে বললো। তারপর এরকম আর কিছু আমি শুনিনি আর দেখিওনি। আর সেই নাঁচ কখনো ভুলতেও পারি নি ।