Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
# অন্য_রূপকথা

 
"দিদি, মাস্ক লাগবে? সূতির মাস্ক... দুদিকে দুরকম ডিজাইন। লাগবে, দিদি?"
অফিস থেকে ফিরছিলাম। এই সময়টা বড্ড খিদে পায়... এখন একটু ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলছি, তাই হনহন করে বাড়ি ফিরছিলাম। "মাস্ক চাই?" শুনেও ফিরে তাকাইনি তাই। আসলে আগে এইধরনের মাস্ক পরলেও, কোভিড হবার পর থেকে এন -৯৫ মাস্ক পরি আমি। তাই, পাত্তাও দিই নি।
আসলে, তাকাইও নি।
হঠাৎ দেখি, আমার পাশ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সেই মাস্ক বিক্রেতা। একটি বাস এসে থামছে স্টপেজে, সেই দিকেই...
কেন জানি না, হয়ত হাঁটার ভঙ্গিমার জন্যেই চোখ চলে গেল পায়ের দিকে
একটি পা স্বাভাবিক। আরেকটি পায়ের পাতা নেই।
পায়ে জুতো নেই।
পায়ের নিচে খোয়া ওঠা রাস্তা। এবড়োখেবড়ো। স্টোনচিপ উঠে আসা।
কালো- রোগা টিংটিঙে ছেলেটি। হাতে একটা প্লাস্টিকের বাস্কেটে মাস্কের বান্ডিল। থেমে থেমে, হেলে দুলে হাঁটছে।
থমকে গেলাম।
যশোর রোড... গাড়ি...ধূলো... সব কেমন আবছা লাগছিল।
পেটের আগুন... কী মারাত্মক! পায়ের যন্ত্রণাকেও অগ্রাহ্য করা যায় অবলীলায়...
আমার পায়ে অসুবিধা নেই, তবু, ভারাক্রান্ত হৃদয়... নিজেকে যেন টেনে টেনে নিয়ে গেলাম ছেলেটির কাছে।
"কত করে মাস্ক?"
"পনেরো টাকা করে দিদি। সব সূতির। এই যে, দুদিকে দুরকম পিরিন্ট!"
হাতে যে 'টা উঠল, তুলে নিলাম। ডিজাইন বা প্রিন্ট, দেখিনি। ছেলেটির কাছে মেয়েদের জন্য ওই 'টাই মাস্ক ছিল।
আমার ব্যাগে থাকা একটি নোট ধরিয়ে হাঁটা লাগিয়েছি, পিছন থেকে "দিদি, দিদি, দিদি..." শুনে ফিরে তাকাতেই হলো।
মাস্ক -ভাইটির গলা।
মাথা নিচু। হাতে 'টি ভাংতি।
"দিদি, আপনার টাকা।"
"ওটা থাক... কিছু খেয়ে নিও..." ভাঙাচোরা গলায় বলেছিলাম আমি। খুব আবেগে কথা আটকে যায় আমার। ছোটবেলার অভ্যেস।
"না না দিদি। খুচরোটা রেখে দিন। আর নইলে আরো দুটো মাস্ক নিন... দাদার জন্য... তাহলে পুরোপুরি হয়ে যাবে।"
বুঝলাম, ছেলেটি 'দয়ার দান' নিতে চায় না।
আলাপ জমালাম।
ছেলেটির নাম শিবশঙ্কর। বাড়ি বারাসাতে। মায়ের সাথে ভাড়া থাকে। মা অন্ধ। অ্যাকসিডেন্টে ছেলেটির এই অবস্থা। একটি পায়ের পাতা নেই
জুতো নেই ছেলেটির। ওদের পায়ের বিশেষ জুতোর অনেক দাম। হাওয়াই চটি সারাতে সারাতে আর তাপ্পি মারার অবস্থায় ছিল না। তাই আজ রাগ করে ফেলে দিয়েছে।
বাড়ি ভাড়া নশো টাকা। এখনও সাড়ে তিনশো টাকা লাগবে।
একবেলা খায় ছেলেটি। রাতে। সকালে চা - পাঁউরুটি, দুপুরেও চা- পাঁউরুটি।
তবু, আমার "ভাই, কিছু খাবে?" আহ্বান অগ্রাহ্য করে বলতে পারে "পরে একদিন খাব দিদি। ওই যে আরেকটা বাস আসছে, স্টপেজটায় যাই।"
চলে যাবার আগে এই ছবিটা তুললাম।
ছেলেটি রোজ ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে মাস্ক। মোটামুটি সন্ধ্যেবেলা থেকে মতিঝিল কলেজের সামনে যে মিও আমোরের আউটলেটটি আছে, সেখানে থাকে।
ওইদিকে যারা থাকো বা যাতায়াত করো... কিছু কিনবে ছেলেটির কাছ থেকে? প্লিজ? না কিনলে যে এমনি এমনি দান নেবে না। পা নেই, তবু মন আছে যে ছেলেটির। মান আছে যে!
আর কিছু লিখতে পারছি না আজ। শুধু ভাবছি... কী অদ্ভুত আমাদের দেশ, আমাদের সমাজ! কিছু লোক অন্যের টাকা চুরি করে পকেট ভরায়, দেশ ছেড়ে চলে যায়...
আর কিছু মানুষ... পাইপয়সার হিসেবটুকুও দিয়ে দেয়। আত্মসম্মানের জন্য।
বুকের মধ্যে জমাট বাঁধা কষ্ট...তবু... বড় টইটুম্বুর আমি আজ...
"সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে..."
(নির্লজ্জের মতো বলছি... না কিনলেও যদি লেখাটা শেয়ার করো, বা পরিচিত মানুষদের বলো... মতিঝিল কলেজের পাশে, মিও আমোরের আউটলেটের কাছে...ছেলেটির নাম শিবশঙ্কর...একটা পায়ের পাতা নেই...পায়ে জুতো নেই....ছেলেটার বাড়ি ভাড়া বাকি....)

Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 09-11-2021, 05:28 PM



Users browsing this thread: 18 Guest(s)