09-11-2021, 09:48 AM
“আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে।“
প্রতি কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে, ছোটবেলায় মায়ের মুখে শোনা এই গানটা কামুর মনে পড়ে। তাদের রাজস্থানী ঘরানার সমাজে মহিলাদের গান গাওয়া “অপশগুন” বলে মনে করা হতো তাই তার বাঙালী মা খুব নীচু গলায় গুনগুন করে সুর ভাঁজতেন। পরে কলেজে কলেজে এই গান বহুবার শুনেছে, কিন্তু মার মতো মিষ্টি গলা আর কারোরই মনে হয় নি।
আজও ছাদে জলট্যাঙ্কির পাশে মিলিটারি রাম আর শুয়োরের গুর্দার ভুজিয়ে নিয়ে বসে এই গানটাই গুনগুন করে গাইছিলো কামু। ইচ্ছে ছিলো বিপ্লবকে একটু খাইয়ে চাঙ্গা করে দেবে। কি দুবলা হয়ে গেছে ছেলেটা; আর মানসিকভাবেও কেমন জবুথবু হয়ে গেছে। থার্ড ডিগ্রী প্রয়োগ করেছিলো সন্ত্রাস দমন দপ্তরের গোয়েন্দারা। রাষ্ট্রদোহিতার কেসে একদম নির্মম এবং নৃশংস হয়ে যায় ওরা। নেহাত তার একজন প্রাক্তন বস এখন ওই দপ্তরে আছেন; তাকে ধরে এবং রজতকান্তিবাবুর সুপারিশে সালটানো গেছে বিপ্লবের কেসটা।
লম্বা একটা সিপ টানলো কামু। বিপ্লবকে নিয়ে মীনা দরজা বন্ধ করতেই বুঝে গেলো কামু, আজ রাতে স্বামীকে একটু বেশী কাছে পেতে চায় মীনা। কাবাব মেঁ হাড্ডি বনতে সেও চায় না। চট করে শুয়োরের মাংসের ভুজিয়া নিজেই বানিয়ে, লক্ষীপুজোর প্রসাদের দু’চারটুকরো আপেল, বোতল, জল আর গ্লাস নিয়ে ছাদে চলে আসলো কামু। জলট্যাঙ্কির পাশের এই জায়গাটা তার খুব প্রিয়। শেষ হেমন্তে উত্তরবঙ্গে একটা হালকা ঠান্ডা পড়ে যায়। নীচের থেকে মিলিটারি স্লিপিং ব্যাগ আর একটা পাতলা চাদর নিয়ে এসে গুছিয়ে বসলো সে। ঘুম পেয়ে গেলে আর নীচে যাবে না। এই স্লিপিং ব্যাগের ভিতর ঢুকে বরফের মধ্যেও শুয়ে থাকা যায়।
বেশ নেশা হয়ে গেছে কামুর। একটু গরমও লাগতে শুরু করেছে নেশার চোটে। গা থেকে জামাটাও খুলে ফেললো। হাতের রেডিয়াম ঘড়িতে দেখলো, সবে রাত দশটা। কিন্তু এই ছোট শহর এর মধ্যেই ঘুমোতে চলে গেছে। অধিকাংশ বাড়ীরই আলো নিভে গেছে। দু’চারটে স্ট্রীট লাইট টিমটিম করে জ্বলছে। আজ বুঝি চাঁদ দায়িত্ব নিয়েছে চারপাশ আলোকিত রাখার। একটুও মেঘ নেই, সারা আকাশ জুড়ে তাই অসংখ্য তারার মেলা। রুপোর থালার মতো চাঁদটা ঝকঝক করছে। সারা ছাদ জুড়ে খেলা করছে বালিকার শ্বেত ওড়নার মতো জ্যোৎস্না। আলোর ঝর্ণাধারায় ধুয়ে যাচ্ছে চরাচর। কোনো বাড়ীর ট্রানজিসটর থেকে ভেসে আসছে বিবিধ ভারতীর গান -
“চাঁদ কো কেয়া মালুম চাহতা হ্যায় উসে কোই চকোর।
ও বেচারা দুর সে দেখে করে না কোই শোর।“
এ গান যেনো তারই জীবনকথা। তার আর মীনার। সত্যিই তো, চাঁদের মতো সুন্দরী মীনাকে, চকোরের মতোই দুর থেকেই ভালবেসেছে কামু। বিপ্লবের থেকে অনেক বেশী। কিন্তু স্বভাবলাজুক সে কোনোদিনই মুখ ফুটে উচ্চারণ করতে পারে নি তার মনের কথা। তাই তো বিপ্লবের নিবেদিত প্রেম স্বীকার করে নেয় সদ্য যুবতী মীনা। আসলে বিপ্লবের উত্তাল ভালবাসার সামনে হার মেনেছিলো তার নীরব প্রেম। তাইতো সে দুর থেকেই দেখেছে আর মনের ভিতরেই চেপে রেখেছে তার বেদনা, কাউকেই বুঝতে দেয় নি।
চোখটা একটু জড়িয়ে এসেছিলো কামুর। হঠাৎ যেনো দেখতে পেলো ছাদের আলেসেতে এসে দাড়িয়েছে এক নারী। নেশার ঝোঁকে ভুল দেখছে সে! চোখটা ভালো করে কচলে নিলো। নাঃ, ওই তো পরিস্কার দেখা যাচ্ছে, লালপেড়ে সাদা সাড়ী পড়া এলোকেশী এক নারী। আরেঃ, মীনাই তো আজ লালপেড়ে সাদা সাড়ী পড়েছিলো। কিন্তু সে কি করে এই সময়ে এই ছাদে আসবে? কেনোই বা আসবে? সে হয়তো এখন শুয়ে আছে স্বামীর কন্ঠলগ্না হয়ে। স্বামীর আদরে সোহাগে মাখামাখি হয়ে আছে তার সারা শরীর।
তাহলে কি এই কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে নেমে এসেছেন মা লক্ষী! তাকে আশীর্বাদ দিতে। এত নেশার মধ্যেও হাসি পেয়ে গেলো কামুর। তার মতো দুর্ভাগাকে আশীর্বাদ দিতে এই ধরাধামে অবতীর্ণা হলেন মা লক্ষী, বটতলার লেখকের কল্পনাতেও এই গাঁজাখুরি গল্প আসবে না। তাহলে, তাহলে….
হঠাৎই শুনতে পেলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সেই রহস্যময়ী। না, আর কৌতুহল চেপে রাখা যাচ্ছে না। টলমল পায়ে এগিয়ে গেলো কামু। পিছন থেকে কাঁধে হাত রাখতেই ঘুড়ে দাড়ালো সেই নারী। চোখ তুলে একবার দেখেই তার খোলা রোমশ বুকে মাথা রেখে বলে উঠলো, “আমায় একটা বাচ্চা দেবে কামুদা?”
প্রতি কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে, ছোটবেলায় মায়ের মুখে শোনা এই গানটা কামুর মনে পড়ে। তাদের রাজস্থানী ঘরানার সমাজে মহিলাদের গান গাওয়া “অপশগুন” বলে মনে করা হতো তাই তার বাঙালী মা খুব নীচু গলায় গুনগুন করে সুর ভাঁজতেন। পরে কলেজে কলেজে এই গান বহুবার শুনেছে, কিন্তু মার মতো মিষ্টি গলা আর কারোরই মনে হয় নি।
আজও ছাদে জলট্যাঙ্কির পাশে মিলিটারি রাম আর শুয়োরের গুর্দার ভুজিয়ে নিয়ে বসে এই গানটাই গুনগুন করে গাইছিলো কামু। ইচ্ছে ছিলো বিপ্লবকে একটু খাইয়ে চাঙ্গা করে দেবে। কি দুবলা হয়ে গেছে ছেলেটা; আর মানসিকভাবেও কেমন জবুথবু হয়ে গেছে। থার্ড ডিগ্রী প্রয়োগ করেছিলো সন্ত্রাস দমন দপ্তরের গোয়েন্দারা। রাষ্ট্রদোহিতার কেসে একদম নির্মম এবং নৃশংস হয়ে যায় ওরা। নেহাত তার একজন প্রাক্তন বস এখন ওই দপ্তরে আছেন; তাকে ধরে এবং রজতকান্তিবাবুর সুপারিশে সালটানো গেছে বিপ্লবের কেসটা।
লম্বা একটা সিপ টানলো কামু। বিপ্লবকে নিয়ে মীনা দরজা বন্ধ করতেই বুঝে গেলো কামু, আজ রাতে স্বামীকে একটু বেশী কাছে পেতে চায় মীনা। কাবাব মেঁ হাড্ডি বনতে সেও চায় না। চট করে শুয়োরের মাংসের ভুজিয়া নিজেই বানিয়ে, লক্ষীপুজোর প্রসাদের দু’চারটুকরো আপেল, বোতল, জল আর গ্লাস নিয়ে ছাদে চলে আসলো কামু। জলট্যাঙ্কির পাশের এই জায়গাটা তার খুব প্রিয়। শেষ হেমন্তে উত্তরবঙ্গে একটা হালকা ঠান্ডা পড়ে যায়। নীচের থেকে মিলিটারি স্লিপিং ব্যাগ আর একটা পাতলা চাদর নিয়ে এসে গুছিয়ে বসলো সে। ঘুম পেয়ে গেলে আর নীচে যাবে না। এই স্লিপিং ব্যাগের ভিতর ঢুকে বরফের মধ্যেও শুয়ে থাকা যায়।
বেশ নেশা হয়ে গেছে কামুর। একটু গরমও লাগতে শুরু করেছে নেশার চোটে। গা থেকে জামাটাও খুলে ফেললো। হাতের রেডিয়াম ঘড়িতে দেখলো, সবে রাত দশটা। কিন্তু এই ছোট শহর এর মধ্যেই ঘুমোতে চলে গেছে। অধিকাংশ বাড়ীরই আলো নিভে গেছে। দু’চারটে স্ট্রীট লাইট টিমটিম করে জ্বলছে। আজ বুঝি চাঁদ দায়িত্ব নিয়েছে চারপাশ আলোকিত রাখার। একটুও মেঘ নেই, সারা আকাশ জুড়ে তাই অসংখ্য তারার মেলা। রুপোর থালার মতো চাঁদটা ঝকঝক করছে। সারা ছাদ জুড়ে খেলা করছে বালিকার শ্বেত ওড়নার মতো জ্যোৎস্না। আলোর ঝর্ণাধারায় ধুয়ে যাচ্ছে চরাচর। কোনো বাড়ীর ট্রানজিসটর থেকে ভেসে আসছে বিবিধ ভারতীর গান -
“চাঁদ কো কেয়া মালুম চাহতা হ্যায় উসে কোই চকোর।
ও বেচারা দুর সে দেখে করে না কোই শোর।“
এ গান যেনো তারই জীবনকথা। তার আর মীনার। সত্যিই তো, চাঁদের মতো সুন্দরী মীনাকে, চকোরের মতোই দুর থেকেই ভালবেসেছে কামু। বিপ্লবের থেকে অনেক বেশী। কিন্তু স্বভাবলাজুক সে কোনোদিনই মুখ ফুটে উচ্চারণ করতে পারে নি তার মনের কথা। তাই তো বিপ্লবের নিবেদিত প্রেম স্বীকার করে নেয় সদ্য যুবতী মীনা। আসলে বিপ্লবের উত্তাল ভালবাসার সামনে হার মেনেছিলো তার নীরব প্রেম। তাইতো সে দুর থেকেই দেখেছে আর মনের ভিতরেই চেপে রেখেছে তার বেদনা, কাউকেই বুঝতে দেয় নি।
চোখটা একটু জড়িয়ে এসেছিলো কামুর। হঠাৎ যেনো দেখতে পেলো ছাদের আলেসেতে এসে দাড়িয়েছে এক নারী। নেশার ঝোঁকে ভুল দেখছে সে! চোখটা ভালো করে কচলে নিলো। নাঃ, ওই তো পরিস্কার দেখা যাচ্ছে, লালপেড়ে সাদা সাড়ী পড়া এলোকেশী এক নারী। আরেঃ, মীনাই তো আজ লালপেড়ে সাদা সাড়ী পড়েছিলো। কিন্তু সে কি করে এই সময়ে এই ছাদে আসবে? কেনোই বা আসবে? সে হয়তো এখন শুয়ে আছে স্বামীর কন্ঠলগ্না হয়ে। স্বামীর আদরে সোহাগে মাখামাখি হয়ে আছে তার সারা শরীর।
তাহলে কি এই কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে নেমে এসেছেন মা লক্ষী! তাকে আশীর্বাদ দিতে। এত নেশার মধ্যেও হাসি পেয়ে গেলো কামুর। তার মতো দুর্ভাগাকে আশীর্বাদ দিতে এই ধরাধামে অবতীর্ণা হলেন মা লক্ষী, বটতলার লেখকের কল্পনাতেও এই গাঁজাখুরি গল্প আসবে না। তাহলে, তাহলে….
হঠাৎই শুনতে পেলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সেই রহস্যময়ী। না, আর কৌতুহল চেপে রাখা যাচ্ছে না। টলমল পায়ে এগিয়ে গেলো কামু। পিছন থেকে কাঁধে হাত রাখতেই ঘুড়ে দাড়ালো সেই নারী। চোখ তুলে একবার দেখেই তার খোলা রোমশ বুকে মাথা রেখে বলে উঠলো, “আমায় একটা বাচ্চা দেবে কামুদা?”