Thread Rating:
  • 106 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) সমাপ্ত :---
মিষ্টি মূহুর্ত 5

Update 1 

“ ধুম মাচালে , ধুম মাচালে ধুম --- একটু জোরে চালা না।  „ সুর তাল হীন হেঁড়ে গলায় আকাশ গান গাইছে ।

আজ আকাশের কলেজের প্রথম দিন। যতদিন না মা একটা বাইক কিনে দেওয়ার অনুমতি দিচ্ছে ততদিন সুচির স্কুটিতেই যাওয়া আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আকাশ । সেই কথামত সুচি তৈরি হয়ে আকাশের লিভিংরুমে অপেক্ষা করছিল।

আকাশ সেজেগুজে যখন ঘর থেকে বেরিয়েছিল তখন আকাশের উপর থেকে সুচির চোখ সরছিল না। ফর্সা চওড়া কঠিন মুখে সদ্য গজিয়ে ওঠা লোম সেভিং করা। মাথার চুল পিছন দিকে আঁচড়ানো। গায়ে আছে একটা কালো হাফ হাতা জামা। হাতার বাইরে আকাশের বাইসেপ ফুলে আছে। চামড়ার বেল্ট গলিয়ে একটি টাইট জিন্স আছে পায়ে। জামাটা সেই জিন্সের ভিতর ইন করা । আর বামহাতে আছে একটা ঘড়ি। টাইটেন কিংবা রোলেক্স কোম্পানির মতো বিখ্যাত কোম্পানির ঘড়ি নয় এটা। ফুটপাত থেকে একটা পাতি কোম্পানির ঘড়ি সুচি উপহার দিয়েছিল। এটা সেই ঘড়ি।

আকাশের এই রুপ দেখে সোফাতে বসেই সুচির মনটা এক অজানা আনন্দে ভরে উঠছিল। কিন্তু এই অজানা আনন্দটাই কিছুক্ষণ পরে সুচির দুঃখের কারন হয়ে উঠলো। কেন এই ছেলেটাকে দেখলে ভালো লাগে ? কেন এতো আপন মনে হয় ? কেন মনে হয় আরও একটু দেখি এই অসভ্য ছেলেটাকে ?

নিজেকে সামলে নিয়ে সুচি বলেছিল , “ চল , না হলে জ্যামে আটকে পড়বো। „

আকাশ কলেজে আসার আগে সকালের খাবার খাওয়ার সময় এই গানটাই শুনেছিল । তাই সুচির স্কুটিতে বসে , প্রথম দিন কলেজ যাওয়ার আনন্দে গত ছয় মিনিট ধরে সুচির কানের কাছে এই গানটাই গেয়ে চলেছে আকাশ । তাও পুরো গানটা গাইলে একটা কথা ছিল। কিন্তু সে শুধু  “ ধুম মাচালে „ এই দুটো শব্দ অনবরত বলে চলেছে ।

আকাশের হেঁড়ে গলায় এই গান শুনে বিরক্ত হয়ে রেগে গিয়ে সুচি বললো ‚ “ পারলে নিজে এসে চালা । তখন বুঝবি এই ট্রাফিক কাটিয়ে চালানো কত মুশকিল । „

সুচির রাগের জন্য আকাশের উৎসাহে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়লো না। সে বললো ‚ “ শুনেছি কলেজে নাকি খুব raging হয় ! তার উপর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সবথেকে বেশি হয়। আমাদের কলেজেও হয় নাকি ? „

“ হয় । তবে খুব কম আর গোপনে। তবে তোর সাথে কিছু হবে না । „

“ কেন ? „

“ কারন আমি। আমার জন্য তোকে কেউ ragging করার সাহস পাবে না । „

আকাশ বুঝলো সুচি যেহেতু M.Com এ পড়ে তাই সে সিনিয়র। আর সিনিয়র দের আশেপাশের কাউকে Ragging করে না কেউ ।

এরপর রাস্তার লোকজন , গাড়ি , দোকানপাট দেখতে দেখতে পৌছে গেল কলেজে। কলেজের পার্কিংয়ে সুচি স্কুটি টাকে পার্ক করতে করতে বললো ‚ “ চল তোকে তোর ক্লাস দেখিয়ে দিই। আর খবরদার এখানকার ক্যান্টিনের খাবার খাবি না। শুনেছি পাশের দোকানে বিক্রি না হলে ওরা পরের দিন এখানকার ক্যান্টিনে সেই বাসি খাবার দিয়ে যায়। „

সুচির স্কুটি পার্কিং করার সময় আকাশ কলেজটাকে ভালোভাবে দেখছিল। আগে বাবার সাথে একবার এসছিল। তখন বাবার অফিস যাওয়ার তাড়াহুড়োয় ভালো ভাবে দেখা হয়নি কলেজটাকে। এখন তাই খুটিয়ে দেখতে লাগলো। মোট তিনটে বিল্ডিং। দুটো মেরুন রঙের আর একটা নীল রঙের। বাইরে থেকে কতলা সেটা আন্দাজ করা মুশকিল কিন্তু উচ্চতা দেখে মনে হচ্ছে চার থেকে পাঁচ তলা হবে। চারিদিকে দেবদারু , নারকেল , শিমুল গাছে ভর্তি। আর কি কি গাছ আছে সেগুলো দেখার আগেই সুচি বললো ‚ “ কি রে, চল ! তোকে তোর ক্লাসরুম দেখিয়ে দিই । „

“ হ্যাঁ চল। „

তারপর একটা মেরুন রঙের বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়লো দুজনে। আকাশ এটা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছিল যে আশেপাশের উচু ক্লাসের ছাত্ররা সুচিকে দেখে সরে যাচ্ছে ‚ “ তোকে দেখে এরা সব সরে যাচ্ছে কেন ? „

“ কারন আমি প্রত্যেক বছর ফাংশনে নাচি তাই। „

সিড়ি দিয়ে সেকেন্ড ফ্লোরে উঠে দুটো প্যাসেজ পার হতেই সুচি বললো ‚ “ কলেজ শেষ হলে পার্কিংয়ের ওখানে দাড়াবি। আর যদি আমাকে দেখতে না পাস তাহলে একটা ফোন করিস। „

“ ঠিক আছে। „

আকাশকে ক্লাসে ছেড়ে দিয়ে সুচি উপরের তলায় নিজের ক্লাসে চলে গেল। আকাশ ক্লাসরুমে ঢুকে দেখলো কলেজে যেমন কাঠের বেঞ্চ থাকে এখানে সেরকম নেই। সিড়ির মত ধাপ ধাপ করা , আর সেই ধাপে সিমেন্ট দিয়ে বেঞ্চের লোহার পা গুলো পোতা আছে। ঠিক যেমন 3 ididots সিনেমায় দেখায় ।

আকাশ মাঝের দিকে একটা বেঞ্চে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে এসে আকাশের পাশে বসলো। আকাশের একটা আলাদা অনুভূতি হলো। এতো বছর কোএড কলেজে পড়েছে আকাশ। কিন্তু কখনো কোন মেয়ের পাশে বসে ক্লাস করেনি । মন খুশি হয়ে মুখে একটা লাজুক ভাব এলেও মেয়েটাকে পছন্দ না হওয়ায় আর কোন অনুভূতি হলো না আকাশের। পরপর তিনটে ক্লাস হলো। মাঝে দশ কুড়ি মিনিট এর বিরতি। এর মাঝে দুজন ছেলে আর একজন মেয়ের সাথে পরিচয় হলো আকাশের। আকাশ বুঝলো যে সবাই একটা ছোট দল বানানোর চেষ্টা করছে টিকে থাকার জন্য। এটা ক্লাস ইলেভেনেও হয়েছিল। যে মেয়েটা পাশে বসে আছে তার নাম নন্দিনী। আর বাকি দুটো ছেলে বন্ধুর নাম প্রভাকর আর কৃষ্ণ। খুব সহজে এক দিনেই একটা ছোট দলের সদস্য হয়ে গেল সে।

আকাশ আরও একটা জিনিস উপভোগ করলো। সেটা হলো একটানা সাতটা ক্লাস কলেজে হয়না। একটা ক্লাসের পর হয়তো দেখা গেল তিনটে ক্লাস ফাকা। প্রথম দিনেই কলেজের হাওয়া আকাশের মুখে বুকে ছুয়ে গেল।

টিফিন ব্রেক হলে আকাশ বাইরে এসে ঘুরতে লাগলো। ঠিক সেই সময় সুচি আরও একজন মেয়েকে নিয়ে এসে আকাশের সামনে দাড়ালো। মেয়েটাকে বললো ‚ “ এ হলো আকাশ। আমার বন্ধু। আমরা একই বিল্ডিংয়ে থাকি। „

শুধু এইটুকু পরিচয় দিয়ে সুচির মন খচখচ করতে লাগলো। যেন আরও কিছু একটা বলার আছে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথাটাই যেন বলা হয়নি। এই মন নিয়েই আকাশকে বললো ‚  “ এ হলো বৈশাখী। আমার একমাত্র বন্ধু। আরও একজন আছে সে আসেনি। „

“ হাই। „ বলে আকাশ হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়াল । বৈশাখী মুখে হাসি নিয়ে আকাশের বাড়ানো হাত ধরে হ্যান্ডশেক করে বললো ‚ “ অনেক শুনেছি তোমার কথা সুচির কাছে। „

“ কি শুনেছো ? „

সুচির দিকে ফিরে ঠোটের হাসি আরও বড়ো করে বৈশাখী বললো ‚ “ একটা ছেলে আছে যাকে দেখলেই মারতে ......

বৈশাখীর কথা শেষ হওয়ার আগেই সুচি রেগে গিয়ে বললো ‚ “ থাক ওসব কথা। আগে কিছু খেয়ে নিই চল । „

তারপর তিনজন মিলে বাড়ি থেকে আনা টিফিন ভাগ করে খেতে খেতে কথা বলতে লাগলো। বৈশাখীর বাড়িতে কে কে আছে ? আকাশের বাড়িতে কে কে আছে ? টিফিন খাওয়ার পর আরও দুটো একটা ক্লাস করে আকাশের ছুটি হয়ে গেল । কৃষ্ণ বললো ‚ “ শুনেছি প্রথম প্রথমই নাকি এতো সিরিয়াস ক্লাস হয়। তারপর একটু পুরানো হয়ে গেলেই কোন স্যারের দেখা পাওয়া যায় না। „

ঠিক তিনদিন পর আকাশের সাথে গৌরবের দেখা হলো। দুটো লেকচারের মাঝে এক ঘন্টা ছুটি থাকায় সুচি নিচে নামতে নামতে দেখলো আকাশ সিড়িতে বসে কৃষ্ণের সাথে গল্প করছে । সুচি কে উপরের তলা থেকে আসতে দেখেই আকাশ কৃষ্ণের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল। আকাশ দেখলো সুচির সাথে বৈশাখী আর একটা ছেলে আছে। সুচি আকাশের পাশে এসে বসতেই আকাশ দেখলো সেই ছেলেটাও সুচির পাশে এসে বসলো। সুচি এসে বসতে বসতে বললো ‚ “ ক্লাস নেই ? „

“ না , এখন নেই। দু ঘন্টা পর একটা আছে। আজ আর নেই। „

“ এ কে ?  „ সুচিকে আকাশের সাথে এতো খাতির করে কথা বলতে দেখে গৌরব প্রশ্ন করলো।

আকাশ আর সুচি দুজনেই একসাথে গৌরবের দিকে ফিরে তাকালো। তারপর গৌরবের প্রশ্নের উত্তরে সুচি বললো ‚ “ এ আকাশ। আমরা একই সোসাইটিতে থাকি। এ বছর BBA নিয়ে ভর্তি হয়েছে। „

“ ও হাই । আমি গৌরব। সুচির সাথে একই সেমেস্টারে পড়ি। „

গৌরবের কথায় আকাশও হেসে হাই  বলে দিল। পরবর্তী প্রায় এক ঘন্টা এবং টিফিন ব্রেকে কথা বলে আকাশ বুঝলো যে গৌরব সুচিকে পছন্দ করে। এটা গৌরবের হাবভাবেই বোঝা যাচ্ছে। আকাশ গৌরবের ব্যাপারটা খুব উপভোগ করলো। মনে মনে বললো ‘ ও , এই ব্যাপার। এখানে এসে প্রেম করা হচ্ছে। জেঠু কে বলতে হচ্ছে তো ব্যাপারটা ! ‚

কলেজ শেষ হলে সুচি পার্কিং থেকে স্কুটি বার করলো। গৌরবও নিজের কেনা পালসার বাইকটা বার করলো। সুচি স্কুটি স্টার্ট দিতে দিতে আকাশ সুচির পিছনে বসে পড়লো। ঠিক সেই সময় গৌরব নিজের বাইকটা নিয়ে সুচির পাশে এসে দাড়ালো। সাথে বৈশাখী ও এলো। বৈশাখী রোজ বাসে করে যাতায়াত করে। তাই বন্ধুদের বিদায় জানাতে এখানে এসছে। সুচি স্কুটি স্টার্ট দিতে বৈশাখী বললো , “ কালকে আসবি তো ? „

“ হ্যাঁ আসবো । „

তারপর দুই বান্ধবীর মধ্যে আরও কথা শুরু হলো। ওদের কথায় আকাশের খেয়াল নেই। আকাশের মাথায় তখন এক দুষ্টু বুদ্ধি উকি দিল। আকাশ দেখলো গৌরব একভাবে ওরই দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সুচির কোমরটা ভালো করে ধরলো। আকাশ দেখলো গৌরবের মুখভঙ্গি বদলে গেছে। আকাশ গৌরবকে রাগানোর জন্য সুচির কোমর আরও ভালো করে জড়িয়ে ধরলো। বাইকে উঠলে বয়ফ্রেন্ড কে গার্লফ্রেন্ড যেভাবে জড়িয়ে ধরে ঠিক সেইভাবে পেটের সামনে দিয়ে বেড় দিয়ে আকাশ সুচির কোমর জড়িয়ে ধরলো। আকাশ স্পষ্ট দেখতো পেলো গৌরবের চোখে আগুন জ্বলছে। এদিকে বৈশাখীর সাথে কথা শেষ হতেই সুচি গৌরবকে বায় বলে স্কুটি চালিয়ে দিল।

কিছুদুর যাওয়ার পর আকাশ এতক্ষণ চেপে রাখা হাসিটা আর চাপতে পারলো না । হা হা করে হাসতে হাসতে বললো , “ আমি তোর কোমর ধরেছি বলে তোর বয়ফ্রেন্ডের মুখ দেখেছিলি ? „

“ আমার বয়ফ্রেন্ড ? „

“ হ্যাঁ ওই গৌরবদা। „

“ ও আমার বন্ধু। বয়ফ্রেন্ড না। „

“ তাহলে ও রেগে যাচ্ছিল কেন ? সত্যি বল না ! আমি কি জেঠু কে বলে দেবো নাকি ! „

“ তুই থামবি ! বললাম তো গৌরব আমার বন্ধু। এর বেশি কিছু না। ও রেগে যাচ্ছিল কারন ও আমাকে পছন্দ করে। হয়েছে এবার ! „

আকাশ মুচকি হাসলো কিন্তু আর কিছু বললো না। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে সুচি দেখলো বৈশাখী বেশ কটা মেসেজ করেছে। মেসেজ খুলে প্রথম মেসেজ দেখলো । বৈশাখী লিখেছে ---- তুই লক্ষ্য করেছিস কি না জানি না ! আমরা যখন ফিরছিলাম মানে পার্কিংয়ে দাড়িয়ে আমি আর তুই কথা বলছিলাম তখন আকাশ গৌরবকে রাগাচ্ছিল। তোর কোমরে হাত দিয়ে আকাশ বসে ছিল। আর গৌরব এতে রেগে যাচ্ছিল। আমার মনে হলো যেন আকাশ ওটা ইচ্ছা করে করছিল।

সুচি এটার রিপ্লাইতে লিখলো --- হ্যাঁ আমিও লক্ষ্য করেছিলাম।

বৈশাখী --- তাহলে তুই আকাশকে কিছু বললি না কেন ?

সুচি --- কি বলবো ?

বৈশাখী --- বা রে ! ও তোর কোমর জড়িয়ে ধরলো। আর তুই কিছুই বললি না ?

সুচি --- ও আমার ছোটবেলার বন্ধু। তেমন কিছু না ।

বৈশাখী --- এ কেমন বন্ধু রে ! বন্ধুরা কবে থেকে কোমর জড়িয়ে ধরতে শুরু করলো ? আমি হলে তো ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিতাম।

এর রিপ্লাইতে সুচি কিছু লিখলো না। কিছু লেখার মতো নেই যে ! শুধু কোমরে হাত কেন ? আকাশ তো তাকে কোলেও তুলেছে। সেটা সুচি বৈশাখী কে কিভাবে বলবে ? আর যখন আকাশ তাকে এইভাবে বন্ধু হিসাবে গায় হাত দেয় তখন সুচির সবথেকে বেশি ভালো লাগে। এটাই বা সে কি করে বলবে ?

সুচিকে রিপ্লাই না দিতে দেখে বৈশাখী লিখলো --- হ্যাঁ রে , সত্যি বলতো ! তুই কি আকাশকে ভালো টালো বাসিস নাকি ?

আবার সেই প্রশ্ন। যে প্রশ্ন এতদিন সুমির মুখেই সীমিত ছিল সেটা এখন কলেজ বান্ধবীর মুখেও শুনলো। বৈশাখীর কাছে প্রশ্নটা শুনে সুচির বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। সুচি লিখলো --- ও একটা বাচ্চা ছেলে। বয়সে ছোট। ভাবলি কি করে তুই এইসব ?

মেসেজ পড়ে কারোর মনের খবর কখনোই জানা যায় না। তার বুকের ভিতর যে কি উথাল পাথাল হচ্ছে সেটা দেখা যায় না। বুকের ভিতরের কষ্টটা কখনোই অনুভব করা যায় না। সুচির মেসেজ দেখে বৈশাখী বুঝলো সুচি রাগ করেছে। তাই আর কোন কথা বাড়ালো না।

এতোদিন যে প্রশ্নটার থেকে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল সেটা বৈশাখীর কাছে শুনে বুকটা বারবার মুচড়ে উঠছিল। ভীষন ভারী কিছু একটা যেন বুকের উপর চেপে আছে। আর সেই ভারী জিনিসটা তাকে নিশ্বাস নিতে দিচ্ছে না। সুচি খাটের উপর বসে চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিজের কষ্টটাকে প্রশমিত করার চেষ্টা করছিল। ঠিক তিন চার মিনিট পর ফোনে আরও একটা মেসেজ ঢোকার আওয়াজে সুচির হুশ ফিরলো। ফোনটা খুলে দেখলো গৌরব মেসেজ করেছে। গৌরব লিখেছে --- আকাশ তোমার কে হয় ?

সুচি --- হঠাৎ এরকম প্রশ্ন কেন ? ও আমার ফ্রেন্ড । একসাথে বড়ো হয়েছি আমরা।

গৌরব --- তাহলে ও যখন তোমার কোমরে হাত দিয়ে বসলো তখন ওকে কিছু বললে না কেন ? আর আমি একটু হাত ধরলেই তুমি রেগে যাও কেন ?

সুচি --- তুমি বুঝবে না গৌরব। তোমার বোঝার ক্ষমতা নেই।

এরপর গৌরব আর কথা বাড়ালো না। সুচিকে বেশি ঘাটানো গৌরব পছন্দ করে না। এতদিন অল্প অল্প করে সুচির কাছে এগিয়ে এসেছে সে। কলেজে আরও অনেক চ্যাংড়া ছেলে আছে যারা সুচিকে পছন্দ করে। কয়েকজন তো সুচির উপর ক্রাশ পর্যন্ত খেয়েছে। এইসবই গৌরব ভালো করে বুঝতে পারে। কিন্তু কাউকেই সুচির ত্রিসীমানায় আসতে দেয়নি গৌরব। শুধু একবার একটা সুযোগের অপেক্ষায় বসে আছে গৌরব। কিন্তু সেই সুযোগ একবারও সুচি দেয়নি। এখন যদি আকাশের নামে বাজে কথা বললে সুচি রেগে যায় তাই আর গৌরব কথা বাড়ালো না।

কিন্তু এদিকে সুচির হৃদয় পুরো কাঁদো কাঁদো অবস্থা। চোখের জল খুব কষ্ট করে আটকে রেখেছে। কেন এমন হচ্ছে ? বারবার একই প্রশ্ন কেন তাকে করা হচ্ছে ?

ঠিক সেই সময় সুমি অফিস থেকে ফিরে এসে ঘরে ঢুকলো। ঘরে ঢুকে বোনের মুখ দেখে জিজ্ঞাসা করলো , “ কি হয়েছে ? ওইভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেন ? „

“ না , কিছু না। কখন ফিরলি ? „

“ এইতো । „

রাতে খাটে শুয়ে আকাশ ভাবলো ‘ সুচি প্রেম করছে। ওকে একবারও বলেনি। ‚ তারপর কিছুক্ষণ পর কল্পনা শক্তিটাকে আরও বড়ো করে সুদূর ভবিষ্যতে পাঠিয়ে ভাবলো ‘ একদিন সুচির বিয়ে হবে। চলে যাবে এই সোসাইটি থেকে। ‚ সঙ্গে সঙ্গে এক অজানা নাম হীন ব্যাথা আকাশ নিজের বুকে অনুভব করলো। কিন্তু এই ব্যাথার কোন কারন সে খুঁজে পেল না।

পরের দিন থেকে সুচি লক্ষ্য করলো আকাশ আর আগের মতো ইয়ার্কি মারছে না। সেই sense of humor টা কোথাও উধাও হয়ে গেছে। এটা চললো প্রায় এক মাস। একদিন কলেজ থেকে ফিরে সুচি স্কুটিটাকে বিল্ডিংয়ের সামনে স্ট্যান্ড করালো। আকাশ স্কুটি থেকে নেমে মাথার উপর বিকালের নীল আকাশ দেখতে লাগলো। সুচি স্কুটিটাকে বন্ধ করে বিল্ডিংয়ে ঢুকতে যাচ্ছিল। আকাশকে ওইভাবে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সুচি বললো, “ কি দেখছিস ? „

উদাস মনে আকাশ বললো, “ দেখছি না । ভাবছি । „

“ কি ভাবছিস ? „

“ শুনবি ? „

“ হ্যাঁ। বললে কেন শুনবো না ? „

সুচির উত্তর পেয়ে আকাশ বললো, “ হাসবি না তো ? „

সুচি ভুরু কুচকে বললো, “ হাসবো কেন ? „

বহুদিন পর আকাশ এগিয়ে গিয়ে সুচির হাত ধরলো , “ চল পার্কে গিয়ে বসি। „ বলে সুচির হাত ধরেই আকাশ সুচিকে সোসাইটির বাচ্চাদের পার্কে নিয়ে যেতে লাগলো। পার্কের পাশে এখন বাচ্চারা খেলছে। এক সময় আকাশও এই মাঠ দাপিয়ে বেড়াতো। আকাশ সুচিকে পার্কের ভিতর নিয়ে গিয়ে একটা বেঞ্চের সামনে এসে সুচির হাত ছেড়ে দিয়ে নিজে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা বেঞ্চে বসলো। সুচিও পাশে বসতেই আকাশ বললো , “আগে বল মজা করবি না তো ? „

সুচি এবার একটু বিরক্ত হয়েই বললো, “ মজা কেন করবো ? „

“ আমার কথা শুনে ইয়ার্কি মারবি না। হাসবি না বল „

সুচি সেই বিরক্তি বজায় রেখে বললো “ তুই আগে বল তো কি হয়েছে ? „

আকাশ কিছুক্ষণ নিচে সবুজ ঘাসের দিকে তাকিয়ে থাকার পর একটা বড়ো নিশ্বাস ফেলে বললো ----- “ কিভাবে বলবো সেটাই ভাবছি। সেদিন গৌরবদা কে দেখে মনে হয়েছিল ও তোকে ভালোবাসে। তখন ব্যাপারটা নিয়ে ইয়ার্কি করলেও রাতে ওটা আর ইয়ার্কি মনে হচ্ছিল না।

কিছুক্ষন থেমে আকাশ আবার বলতে শুরু করলো ---- কিভাবে বোঝাই বলতো ! মানে সেদিন প্রথম আমার মাথায় আসলো যে তুই বিয়ে করে আমায় ছেড়ে চলে যাবি । সবাই বিয়ে করে। তুইও করবি। আমার থেকে বড়ো তুই। তাই তোর বিয়ে আমার আগে হবে । তারপর বছরের পর বছর আমাদের দেখা হবে না। হয়তো জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে তোকে ভুলেও যাবো । এটাই তো স্বাভাবিক।

আকাশের শেষের কথাটা শুনে সুচির মনে হলো কেউ যেন তার বুকে চাবুক মারলো। সিমেন্টের বেঞ্চে বসেই সুচি কেঁপে উঠলো। আকাশের সেদিকে খেয়াল নেই। সে একবার মাটিতে গজিয়ে ওঠা ঘাসের দিকে তাকিয়ে, কখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে, কখনো পাশের শিমুল গাছের পাতার মাঝে কিছু একটা খোজার দৃষ্টি নিয়ে তার মনের কথা বলে চললো কেন সে এতদিন চুপচাপ হয়ে গেছিল ? সেটাই সুচিকে বলছে ----- আমরা ছোট বেলা থেকে একসাথে আছি। মা একবার বলেছিল তুই নাকি আমার জন্মের দিন থেকে আমার সাথে আছিস। ভাবতেই কেমন একটা কষ্ট হচ্ছে যে তোকে ছাড়া জীবন কাটাতে হবে। আমার জীবনের প্রত্যেকটা দিনে তুই আছিস। একদিন থাকবি না, মাসের পর মাস থাকবি না, বছরের পর বছর তোর দেখা পাবো না। ভাবতেই কেমন একটা ফাকা ফাকা লাগছে। কেমন একটা কষ্ট হচ্ছে সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। জানি না আমার কথা শোনার পর তোর কেমন হচ্ছে ! তোরও কি এখন কষ্ট হচ্ছে ?

আকাশ একটানা এতোগুলো কথা বলে সুচির দিকে তাকালো। সুচি চোখের পলক ফেলছে না। তাকিয়ে আছে সামনের দিকে শূণ্যদৃষ্টি নিয়ে। আর থেকে থেকেই কেঁপে কেঁপে উঠছে। আকাশের কথা শেষ হতেই সুচি উঠে দাড়ালো। উঠে পার্কের বাইরে যেতে লাগলো।

সুচির ভিতরে কি উথাল পাথাল হচ্ছে সেটা আকাশ বুঝতে না পারলেও আকাশের ভিতর যে কষ্ট হতে শুরু করেছে সেটা সুচি বুঝতে পারলো। আর বুঝতে পারলো বলেই আকাশের কথা আর শুনতে পারলো না।

সুচির এইভাবে উঠে যাওয়া দেখে আকাশ মনে করলো ‘ সুচি হাসছে। ‚ আর তাই হাসি লোকানোর জন্য উঠে চলে গেল। কিন্তু সুচি হাসছে না। আর কবে হাসতে পারবে সেটা সে জানে না। পার্কের বাইরে এসে কোথায় যাচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। তার পা তাকে নিয়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ আকাশ যা বললো সেটা বিশ্বাস হচ্ছে না। অবিশ্বাস করার কিছুই নেই , বরং এটাই তো স্বাভাবিক। তবুও সুচির মন আকাশের স্বীকারোক্তি বিশ্বাস করতে পারছে না।

সুচি কখন তিন তলার সিড়ি ভেঙে উপরে উঠে এলো সেটা সে বুঝতে পারলো না। ফ্ল্যাটের বেল বাজাতে সুচির মা দরজা খুললেন , “ কিরে , আজ এতো দেরি হলো ? „

প্রশ্নটা সুচির কানে গেল না। সুচি সোজা বাথরুমে ঢুকে ওয়াশবেসিন খুলে মুখে দুই বার জলের ঝাপটা দিয়ে ওয়াশ বেসিনের দেওয়ালে লাগানো আয়নায় নিজেকে দেখলো। সুচি দেখলো আয়নার ভিতর যে সুচি আছে তার মুখে এক ফোটা জল লেগে নেই। সুচিকে একভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়নার ভিতরের সুচি বললো ---- আকাশ তো স্বীকার করে নিল যে ও তোকে ভালোবাসে। তুই কবে স্বীকার করবি ? একদিন তুই ওকে ছেড়ে চলে যাবি এটা ভেবেই ওর এখন কষ্ট হতে শুরু করেছে। কিন্তু তুই তোর নিজের কষ্টটা কবে স্বীকার করবি....

আয়নার ভেতরের সুচির কথা আরও চলতো কিন্তু সুচির মায়ের কথায় সুচির হুশ ফিরলো , “ এতক্ষণ ভিতরে কি করছিস ? শরীর খারাপ মনে হচ্ছে ? „

হুশ ফিরতেই সুচি আয়নায় দেখলো তার দুই গাল বেয়ে চোখের জল বার হচ্ছে। আর বুকের ভিতরটা জ্বালা করছে। সঙ্গে সঙ্গে আরও দুবার জলের ঝাপটা দিয়ে চোখের জল ধুয়ে ফেলে বাইরে চলে এলো। বাইরে বার হতেই সুচেতা দেবী প্রশ্ন করলেন , “ শরীর খারাপ মনে হচ্ছে ? „

“ না মা , ওই চোখে কি একটা পড়েছিল। তাই ! „

মাকে মিথ্যা বলে ঘরে এসে ভিতর থেকে দরজা দিয়ে দিল। খাটে শুয়ে বুকের যন্ত্রণা সহ্য করতে লাগলো। ভিতর থেকে দরজা দিয়ে দেওয়ায় সুচেতা দেবী জিজ্ঞাসা করলেন , “ এই সময়ে দরজা দিলি কেন ? ডাক্তার ডাকবো ? „ মেয়ের আচরণে সুচির মার দুঃশ্চিন্তা হতে লাগলো।

“ আমাকে একা থাকতে দাও । „

সুচেতা দেবী আর কিছু বললেন না। আধ ঘন্টার মধ্যে সুমি অফিস থেকে চলে এলো। বোনকে নিজের স্কুটি দিয়ে দেওয়ায় এখন বাসে করেই যাতায়াত করতে হয়। তাই ফিরতে একটু দেরি হয় আজকাল। সুমি ফিরতেই সুচেতা দেবী গলায় উদ্বেগ আর চিন্তা মিশিয়ে বললেন , “ দেখতো কলেজ থেকে ফিরে ভিতর থেকে দরজা দিয়ে দিয়েছে। শরীর খারাপ করলো কি না বুঝতে পারছি না ! „

এই অসময়ে আবার কি হলো। সুমি হাতমুখ ধুয়ে দরজায় টোকা দিয়ে বললো , “ এই দরজা খোল। কিছু হয়েছে ? „

সুচি এসে দরজা খুলতেই সুমি দেখলো বোনের দুই গাল বেয়ে চোখের জলের দাগ। আর চোখে জল চিকচিক করছে। সঙ্গে সঙ্গে সুমি ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিল। বোনকে নিয়ে খাটে বসে জিজ্ঞাসা করলো , “ কিছু হয়েছে ? কলেজে কেউ খারাপ ব্যবহার করেছে ? নাম বল তার। „

দিদিকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে সুচি বললো , “ দি আমি পারবো না। আমি পারবো না । „

“ কি পারবি না। কাঁদছিস কেন এইভাবে ? কেউ কি তোকে কিছু বলেছে ? বল আমায় । „

কিছুক্ষণ ফুপিয়ে কেঁদে শান্ত হয়ে সুচি দিদিকে আকাশের স্বীকারোক্তিটা বললো। সব শুনে সুমি পুরো থ হয়ে গেল। সুমি ভেবেছিল এটা একতরফা ভালোবাসা। এখন দেখছে এটা দুতরফেই। শুধু আকাশ বুঝতে পারছে না এটা ভালোবাসা। বোনকে কি বলে শান্ত করবে সেই ভাষা সুমি খুজে পেল না।

বেশ কিছুক্ষণ দিদিকে জড়িয়ে ধরে থাকার পর সুচি দিদির কোলে মাথা রাখলো । সুচির চোখের জলে সুমির চুড়িদার ভিজে যেতে লাগলো। সুচি বললো , “ আমি স্বিকার করলে সব শেষ হয়ে যাবে দি। আমাদের বন্ধুত্বটাও শেষ হয়ে যাবে। আমি পারবো না ওকে ছাড়া থাকতে ! আমি বন্ধুত্বটা হারাতে পারবো না। „

বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সুমি বললো , “ ভালোবাসা পরীক্ষা নেয় সুচি। সাথে অসহ্য যন্ত্রণাও দেয়। তুই জানিস এখন তোকে কি করতে হবে। আর কাঁদিস না। চোখতো ফুলিয়ে ফেলেছিস। „ বলে বোনের চোখের জল মুছিয়ে দিতে লাগলো। কিন্তু সুমি জানে যে এই চোখের জল মোছা তার ক্ষমতা নেই।

দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে সুচেতা দেবী সব শুনলেন । সব শুনে তারও চোখ ঝাপসা হয়ে এলো । যেদিন তার স্বামী বড় মেয়েকে ডেকে নিয়ে সুচিকে বোঝাতে বলেছিল। সেদিনও ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি সব শুনেছিলেন। কতো মা এইভাবে নিজের সন্তানের কষ্টের নিরব সাক্ষী হন তার হিসাব মনে হয় ভগবানও রাখেন না।

পরের দিন সকালে আকাশ সুচির ঘরে এসে দেখলো যে সুচি চুপচাপ একদিকে পাশ ফিরে শুয়ে আছে , “ কি রে , কলেজ যাবি না ? „

“ না , ভালো লাগছে না। তুই যা। „

“ তুই না গেলে আমি যাবো কি করে ? „

“ বাসে যা । „

“ বাসে চাপা আমার অভ্যাস নেই। চল না। তোর কি শরীর খারাপ ? „ বলে এগিয়ে এসে খাটে বসে সুচির কপালে হাত ঠেকালো । না ! তেমন কিছু তো না। তারপর গলার নিচে হাত দিল। গায়ের তাপ তো ঠিকই আছে।

সুচি আকাশের পরিক্ষা নিরিক্ষা দেখছিল। যেই সুচির গলার নিচে আকাশ হাত দিল অমনি সুচি গর্জে উঠে বললো, “ আমাকে একা থাকতে দিবি ? „

সুচির রাগের কোন কারন আকাশ বুঝতে পারলো না। আকাশ নিজের ঘরে এসে লিভিংরুমের সোফায় বসে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো , “ এইজন্য বলেছি একটা বাইক কিনে দাও। দুর্ঘটনা সবার সাথেই ঘটতে পারে। চার চাকা চালালেও এক্সিডেন্ট হয় আবার বাইক চালালেও হয় । „

স্নেহা দেবী ছেলের কথা বুঝতে পেরে বললেন, “ সকাল সকাল চেঁচাচ্ছিস কেন ? „

“ সুচির শরীর খারাপ তাই ও কলেজ যাবে না। এবার আমি কি করে যাবো ? „

“ কি হয়েছে সুচির ? „

“ ওর ভালো লাগছে না তাই কলেজ যাবে না । „

“ তোকেও কলেজ যেতে হবে না। বাড়িতে বসে থাক। „

আকাশ এবার রেগে গিয়ে গলার স্বর উপরে তুলে বললো , “ তাহলে বাইক কিনে দেবে না ? „

আকাশের মা গলার স্বর তার থেকেও বেশি উপরে তুলে বললেন, “ না , দেবো না । „

মায়ের দৃঢ়কন্ঠে না বলে দেওয়ায় আকাশ মিইয়ে গেল। কিন্তু সে বাইক নিয়েই ছাড়বে । এই সিদ্ধান্ত থেকে কেউ তাকে টলাতে পারবে না।

পরের দিনও সুচি কলেজ গেল না। তাই আকাশ বাবাকে বললো ওকে কলেজে পৌঁছিয়ে দিয়ে আসতে। শুভাশীষ বাবু ছেলেকে কলেজ দিয়ে অফিস চলে গেলেন। এদিকে দুদিন সুচি কলেজ না আসায় আকাশ কলেজে ঢুকতেই বৈশাখী তাকে আটক করলো। আকাশ দেখলো সাথে গৌরবও আছে। আকাশকে জাগুয়ার থেকে নামতে দেখে বৈশাখী জিজ্ঞাসা করলো , “ এটা কি তোমাদের ? „

“ হ্যাঁ আমাদের। আমি , বাবা আর সুচি একসাথে গিয়েছিলাম পছন্দ করতে। সে অনেক বছর আগের কথা। „

সুচির কথা বলতেই গৌরবের চোখ জ্বলে উঠলো। একসাথে গাড়ি পছন্দ করতে গিয়েছিল শুনেই আকাশের উপর রাগ হতে লাগলো। নিজেকে শান্ত রেখে গৌরব জিজ্ঞাসা করলো , “ ও এলো না আজ! „

“ না , ওর ভালো লাগছে না। কেন ভালো লাগছে না জানি না । „

বৈশাখী এবার গলায় উদ্বেগ মিশিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “ শরীর খারাপ করেছে ? „

“ না শরীর খারাপ করেনি। গায়ে হাত দিয়ে দেখেছি। শরীর তেমন গরম নেই । „

আকাশ সুচির গায়ে হাত দিয়ে জ্বর মেপেছে । কথাটা শুনেই গৌরবের মুখ রাগে পাথরের মত শক্ত হয়ে গেল। এই ছেলেটাকে কলেজের একটা কোনায় নিয়ে গিয়ে আচ্ছা করে ধোলাই দেওয়ার ইচ্ছা হলো গৌরবের। কিন্তু সেটা করা যাবে না। কারন গৌরবের থেকে আকাশ লম্বা। আর গৌরব জিমে গিয়ে যে শরীর বানিয়েছে সেটা আকাশ জন্মানোর সময় উপহার হিসাবে পেয়েছে । দেখা গেলো আকাশকে শায়েস্তা করতে গিয়ে সে নিজেই শায়েস্তা হয়ে বসে আছে। তাই আকাশকে একটু শাসিয়ে দেওয়ার ইচ্ছাটা চেপে রাখলো ।

ক্লাসে ঢুকে প্রথম ক্লাসটা করার পরেই একটা নতুন অচেনা মেয়ে এসে বললো , “ বসতে পারি ? „

মেয়েটার গলার স্বর আকাশের কাছে খুব মিষ্টি মধুর কামনাময়ীর মতো লাগলো , “ হ্যাঁ নিশ্চয়ই। „ মেয়েটাকে বেশ সুন্দর দেখতে। এতদিন এরকম এক সুন্দরীকেই তো সে খুঁজছিল। দৈহিক গঠন চোখের দৃষ্টি কাড়ার মতো। আকাশ প্রথম কথা বলবে কি না ভাবছিল । তারপর ভাবলো ‘ যখন নিজে এসে বসেছে তখন নিজেই কথা বলবে। ‚

পরের ক্লাস শেষ হওয়ার পর মেয়েটা বললো , “ হাই আমি লাবনী। লাবনী বণিক। „

“ আমি আকাশ মিত্র। তুমি আকাশ বলেই ডাকতো পারো। „

লাবনী একটু হাসলো । আকাশ কারন বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো , “ হাসছো কেন ? „

মেয়েটা মুখে সেই হাসিটা বজায় রেখে বললো , “ আমাকে কিন্তু কয়েকজন লাব বলে ডাকে। তুমি ডেকো না যেন । „

আকাশ বুঝলো মেয়েটা বেহায়া। কিন্তু মেয়েটা নিজে থেকে এসে কেন আলাপ করলো সেটা আকাশ বুঝতে পারলো না । আকাশ হেসে বললো , “ তা আমাকে সেই কয়েক জনের মধ্যে হতে গেলে কি করতে হবে ? „

“ সে অনেক লম্বা রাস্তা। মনের রাস্তা তো ! তাই একটু কঠিন । „

আকাশ আর পারলো না এই মেয়ের সাথে কথা চালাতে । তাই চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ পর লাবনী বললো , “ তোমাকে আজ গাড়ি করে আসতে দেখলাম। অথচ রোজ তুমি তোমার দিদির সাথে আসো। বুঝলাম না ঠিক। তোমার দিদির কি শরীর খারাপ ? „

আকাশ অনেক কিছুই বুঝলো। আকাশ বুঝলো যে আজ গাড়ি থেকে নামতে দেখেই লাবনী ভাব জমাচ্ছে। আর এও বুঝলো যে সুচি কে সে দিদি ভেবে বসেছে , “ ওওও সুচি। ও আমার দিদি না। বন্ধু বলতে পারো। হ্যাঁ ওর আজ কলেজে আসার ইচ্ছা হচ্ছিল না তাই বাবা অফিস যাওয়ার আগে আমাকে দিয়ে গেলো। „

এদিকে আকাশের বাবার অফিসে সঞ্জয়ের আজ জন্মদিন। অফিসের সব কর্মচারীকে একটা লাড্ডুর প্যাকেট গিফ্ট দেওয়া হয়ে গেছে। বিকালের দিকে সঞ্জয় আকাশের বাবাকে বললো , “ আপনাকে কিন্তু এবার যেতেই হবে পার্টিতে। প্রত্যেক বছর না করে দেন । „

আকাশের বাবা হেসে বললেন , “ আমায় ক্ষমা করো সঞ্জয়। ওইসব পার্টিতে গিয়ে আমি কিছু খেতে পারবো না। আমি খাই না ওসব। „

“ আরে আমিও তো খাই না। বন্ধুদের দিয়ে দিই। ওরাই খায়। „

“ তবুও সঞ্জয়। রাত করে ফিরলে তোমার বৌদি ঘরে ঢুকতে দেবে না। রাতে গাড়িতেই ঘুমাতে হবে তখন । „

সঞ্জয় হা হা করে হেসে বললো , “ তাহলে আমার পছন্দ মতো একটা গিফ্ট আমাকে দিতে হবে কিন্তু ! „

আকাশের বাবার দুঃশ্চিন্তা হতে লাগলো। তিনি ভাবলেন ‘ এ আবার কি ফ্যাসাদ। কি না কি চেয়ে বসে ! , মুখে সেই দুঃশ্চিন্তা  না ফুটিয়ে হাসি বজায় রেখে বললেন , “ কি চাই বলো ? „

“ অনেক দিন ধরে বলবো বলবো করছি কিন্তু বলতে পারছিলাম না। আজ বলেই ফেলছি। আপনার সাথে এই বন্ধুত্ব আমি সম্পর্কে পরিনত করতে চাই। আমার মেয়ের সাথে আপনার ছেলের বিয়ে দিয়ে একটা আত্মীয়ের সম্পর্ক গড়তে চাই আমি । „

আকাশের বাবার মুখের হাসিটা আরও বড়ো হয়ে উঠলো। সঞ্জয় এই হাসিটাকে ব্যাঙ্গের হাসি ভাবলো। সঞ্জয়ের হাবভাব বুঝতে পেরে আকাশের বাবা বললেন , “ খারাপ ভেবো না। কিন্তু একটা সমস্যা আছে। তোমার বৌদি মানে আমার স্ত্রী ছোটবেলায় আকাশের কুষ্ঠি এক পুরোহিতকে দেখিয়ে ছিল। সেই পুরোহিত আকাশের ভবিষ্যৎ বিচার করে বলেছিল যে আকাশের বিয়ে যদি 23 বছর বয়সে না দিই তাহলে সে কখনোই সুখি হতে পারবে না। তাই আকাশের মা প্রতিঙ্গা করলো যে আকাশের বিয়ে তেইশ বছরেই দেবে। বুঝছ এবার! সমস্যাটা কোথায়! পারবে গোধূলির কম বয়সে বিয়ে দিতে ? „

সঞ্জয় সব শুনে থ হয়ে গেল। কিন্তু একটু ভেবে দেখলো ‘ এ আবার কি সমস্যা! এই বিশাল সম্পত্তি পাওয়ার জন্য এটাও করতে পারি আমি ‚ । এই সব ভেবে নিয়ে সঞ্জয় বললো , “ আমার মেয়ে বিদেশ থেকে পড়াশোনা করছে। ওপেন মাইন্ডেট মেয়ে। বয়স কোন সমস্যাই নয়। „

আকাশের বাবা যেন হাতে চাঁদ পেলেন। তিনি এতদিন ভাবছিলেন ‘ এই যুগে শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারের কোন বাবাই তার মেয়েকে এতো কম বয়সে বিয়ে দেবে না। তার উপর ছেলের বয়স 23 । ‚ এটা ভেবেই তিনি চিন্তিত ছিলেন যে আকাশের 23 বছর বয়স হতেই অনেক হাঙ্গামা সহ্য করতে হবে তাকে। এখন সেই সমস্যার এইভাবে নিস্পত্তি হবে সেটা ভাবেন নি।

আকাশের বাবা এখন ভাবলেন ‘ যদি পরে সঞ্জয় মত বদলায় তাই এখনই কথা দিতে হবে। ‚ আকাশের বাবা বললেন , “ আমি তোমাকে কথা দিলাম সঞ্জয়। আমার ছেলের বিয়ে তোমার মেয়ের সাথেই হবে। „
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 10 users Like Bichitro's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) চলছে :--- - by Bichitro - 08-11-2021, 09:30 AM



Users browsing this thread: 152 Guest(s)