Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
জীবনের অন্য পৃষ্ঠা - কামদেব
#29
[২৬]

শ্রাদ্ধ নিয়ম ভঙ্গ সব একই দিনে হল। দিবাকর একাই সব খরচ করেছে। নেমন্তন্ন যা করার দাদাই করেছে। বেশি লোকজনকে বলা হয়নি। বিজুদা এসেছিল, বেলাবৌদিকে বলা হলেও আসেনি। রত্নাকরের বন্ধুদের মধ্যে উমানাথ ছাড়া আর কাউকে বলা হয়নি। রত্নাকর নীরব দর্শক। বাবুলাল প্রোমোটার সব সময়ে ছিল। কটাদিন গমগম করছিল শূণ্য বাড়িতে আবার রত্নাকর একা। পেনশন বন্ধ, হাতে টাকা যা ছিল কলেজে ভর্তি হতেই সব প্রায় শেষ। যেন অকুল পাথারে পড়েছে রত্নাকর। অসীম শূণ্যতার মাঝে দাঁড়িয়ে রত্নাকর উপলব্ধি করল, মা তার জীবনে কতখানি জায়গা জুড়ে ছিল।
কলেজ থেকে বাসায় ফিরে খা-খা ঘরের দিকে তাকিয়ে বুকের মধ্যে হাহাকার করে ওঠে।
নীচে দুটো দোকান ছিল একদিন দেখল তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। দেখার আরও বাকী ছিল। একদিন কলেজ থেকে ফিরে দেখল বাড়ি ভাঙ্গা হচ্ছে। সেকি তার মালপত্তর? চোখে জল এসে গেল। মুন্না সিং এসে বলল, ভাইয়া কই ফিকর নেহি। আপকা সমান জায়গা মত আছে।
জায়গামত মানে? আমার বই-পত্তর অনেক জরুরী কাগজ।
সব আছে আপনি উঠেন। মুন্না সিং বাইকে উঠতে বলল।
রত্নাকর দেখল আশেপাশে কেউ নেই। অসহায় চোখে বাইকের পিছনে চেপে বসে। তার সারটিফিকেট কাগজ পত্র কোথায় নিয়ে গেছে এরা? বাইক ছুটে চলেছে দ্রুত গতিতে। পাড়া ছাড়িয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা পর একটা নির্মীয়মান চারতলা ফ্লাটের নীচে বাইক থামল। মিস্ত্রি মজুররা কাজ করছে। সিড়ি দিয়ে উঠে দেখল, দোতলায় একটা ঘরের দরজায় তালা ঝোলানো। তালা খুলে ঘরে ঢুকে দেখল অসম্পুর্ন মেঝতে পড়ে আছে তার টিনের স্যুটকেস। ঘরের এক কোনে গাদা দেওয়া তার বিছানা।
ঘর পরসন্দ হইসে? মুন্না জিজ্ঞেস করল।
কি বলবে রত্নাকর? খাট আলমারি কিছুই নেই। জানলায় পাল্লা নেই, বাথরুমই বা কোথায়?
মুন্না সিং আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল, যতদিন ঐ ফ্লাট শেষ না হবে আপনি নিশ্চিন্তে এখানে থাকবেন। ঘরের একদিকে দরজা খুলে বলল, এইটা বাথ্রুম আছে। একেবারে এটাচ।
খাট আলমারি?
দেববাবু আপনার দাদার কাছে আছে। ইখানে অত জায়গা নেই।
চাবি হাতে দিয়ে মুন্না সিং চলে গেল। রত্নাকর দরজা বন্ধ করে স্যুটকেস খুলে বসে। বালাজোড়া ঠিক জায়গায় আছে। জিনিস পত্র গোছাতে গিয়ে একটা কার্ড হাতে পেল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে মনে পড়ল বাসের সেই মহিলা কার্ডটা দিয়েছিল।
The Relief Society, huge income part time service, hale & healthy 20 to 40 male/female Contact. সেই মহিলার মুখটা মনে করার চেষ্টা করে। কবেকার কথা সেকি মনে থাকে? রঞ্জা ম্যাডাম কি যেন নাম বলেছিল? কার্ডটা স্যুটকেসে রেখে ঘরের একপাশে বিছানা করে। কলেজ পাড়ার থেকে যতদুরে এখান থেকে ততটাই কি একটু কম দূরে হবে। চেনাজানা পরিবেশ থেকে দূরে ভালই হল। কি খাচ্ছে কি না খাচ্ছে কেউ দেখতে আসবে না। করুণা করে আহা-উহু করবে সে বড় অসহ্য। জানলার নীচে দুটো বোতল কিছুটা জল আছে। রত্নাকর জল ফেলে দিয়ে বাথরুমে গিয়ে জল ভরতে গিয়েও ভরল না। দরজায় তালা দিয়ে নীচে নেমে এল। একজন মহিলাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, খাবার জল কোথায় আছে?
মহিলাটি আরেকজন মহিলাকে ডাকল, এ ময়না দেখত বাবু কি বুইলছে?
ময়না এসে জিজ্ঞেস করে, পানি লাগবে? দে আমাকে লিয়ে আসছি।
তুমি আমাকে দেখিয়ে দাও আমি নিয়ে নিতে পারব।
অন্য এক মহিলা একটু দূর থেকে বলল, ময়না তু দেখাই দে ক্যানে, বাবু বুতল ছাড়বেক নাই। সবাই খলবলিয়ে হেসে ঊঠল।
বেশ মজায় আছে এরা। রত্নাকর ময়নার পিছন পিছন হাটতে থাকে। ময়না জিজ্ঞেস করে, তু ইখানে থাইকবি?
হ্যা কেন?
ইকটা বিটা ছ্যইলা থাকলে মনে জুর থাকে। তুর কেউ নাই?
প্রশ্নটা শুনে রত্নাকরের মন উদাস হয়। নিজেকে জিজ্ঞেস করে, তার কেউ কি আছে? থাকার মধ্যে ছিল এক মা। দাদা নামে মাত্র দাদা। রত্নাকর বলল, মা ছিল, মারা গেছে।
কুনো চিন্তা করবিনা, আমরা আছি।
এই অবস্থায় ময়নার আশ্বাস বেশ ভাল লাগে। উপর থেকে একজন মিস্ত্রি হাক পাড়ে এই ময়না গপ্পো করলে চলবে?
হুই দেখ নল, আমরা উখানকার পানি খাই। পাড়ার লুকেরাও উখান থিকে পানি লিয়ে যায়।
ময়না দ্রুত চলে গেল। কি সুন্দর ফিগার রত্নাকর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। সারাদিন কিইবা খায় অথচ শরীর যেন শিল্পীর ছেনিতে সযত্নে খোদাই করা। সস্তার শাড়ি জড়ানো তাতেই কি চমৎকার দেখতে লাগছে। মটর বাইকের শব্দ হতে তৎপরতা শুরু হয়ে গেল। বাবুয়া এসেছে, তাকে দেখে এগিয়ে এল। পার্স থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল, এখুন এটা রাখুন।
রত্নাকর টাকা নিতে অস্বীকার করে। বাবুয়া কিছুটা অপ্রস্তুত। টাকাটা ব্যাগে ভরে জিজ্ঞেস করল, দেববাবু আপনার আপনা ভাই আছে না?
হ্যা আমরা এক মায়ের পেটের ভাই।
বাবুলাল অবাক হয় কেমন দাদা আর তার কেমন ভাই!বাবুলাল হাক পাড়ে, এই মানিজার।
ওপাশ থেকে একজন বাঙালী ভদ্রলোক এগিয়ে এল। বাবুয়া বলল, আমার ভাই আছে কিছু দরকার হলে বন্দোবস্ত করে দিবেন। মিট্যি তেল আছে তো? রত্নাকরের দিকে তাকিয়ে বলল, অসুবিধা হলে ওকে বলবেন। ফটফটিয়ে চলে গেল বাবুয়া। আমাকে বলল ভাই। রত্নাকরের লোকটাকে খারাপ লাগেনা। শুনেছে লোকটা এক সময় খুন খারাপি করত। দেখে মনে হল বেশ নরম মনের মানুষ। বাবুয়া চলে যেতে মিস্ত্রিদের মধ্যে গুমোটভাবটা কেটে গেল।
সন্ধ্যে হতে হাত মুখ ধুয়ে মিস্ত্রিরা একে একে চলে গেল। পঞ্চাদার দোকানে গিয়ে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট হবে না। ঘরে বসে পড়াশুনা লেখালিখি করা যাবে। কিছুক্ষন পরে লক্ষ্য করে জানলা দিয়ে ধোয়া ঢুকছে। নীচে নেমে দেখল ওরা রান্না চাপিয়েছে। রত্নাকরকে দেখে ময়না জিজ্ঞেস করে, হেই বাবু তুই রাতে খাইবেক নাই?
রত্নাকরের ভাল লাগে ওদের কথা বুঝতে অসুবিধে হয়না। তাকে দেখাশোনার লোকের অভাব হবেনা। অহঙ্কার নেই একে অপরকে ছাপিয়ে যাবার ইচ্ছে নেই এককথায় মুখোসহীন কতকগুলো মানুষ। রত্নাকর বলল, আরেকটু রাত হোক তারপর হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসব।
সবাই হো-হো করে হেসে উঠল। রত্নাকর কারণ বুঝতে পারেনা। ময়না বলল, হোটেলে তুকে ঠকায়ে সব পয়সা লিয়ে লিবে। ময়না হাত দিয়ে দেখায়, একটুস টুকু ভাত দিল দশ টাকা লিল।
রত্নাকর বুঝতে পারে এদের কাছে স্বাদের চেয়ে পরিমাণের গুরুত্ব অনেক বেশি। নীচু হয়ে দেখে কি রান্না করছে? ময়না বলল, আমার কাছে খাবি? পাঁচ টাকা লাগবেক।
ধন্দ্বে পড়ে যায় রত্নাকর। কেমন খেতে হবে কে জানে। রাজি হয়ে যদি শেষে খেতে না পারে ওদের অসম্মান করা হবে।
এড়াবার জন্য বলল, আরেক দিন খাবো।
আজকে এতটুস খা পয়সা লাগবেক নাই। ময়না গম্ভীরভাবে বলল।
ঠিক আছে রান্না হয়ে গেলে আমাকে বলবে। আমি উপরে আছি।
নিজের ঘরে চলে এল রত্নাকর। হ্যারিকেনের আলোয় কার্ডটা দেখে, রিলিফ মানে ত্রান।
হিউজ ইনকামের দরকার নেই মাস গেলে চার-পাচশো যথেষ্ট। কিন্তু কাজটা কি হতে পারে? কোথাও বন্যা-টন্যা হলে যদি যেতে হয় তার পক্ষে কলেজ কামাই করে কিভাবে সম্ভব? আবার বলছে পার্ট টাইম, তাহলে? কতদিন আগে দিয়েছিল এখনো কি কাজ খালি আছে? একবার ফোন করে দেখলে হয়। গেলেই তাকে কাজ দেবে বা কাজ দিলেই তাকে করতে হবে তাতো নয়।
দরজায় হাসি মুখে এক থালা ভাত নিয়ে দাঁড়িয়ে ময়না। ভালই হল খেতে না পারলে ফেলে দেবে। রত্নাকর উঠে ময়নার হাত থেকে থালাটা নিয়ে বলল, তুমি যাও সকালে থালা দিয়ে আসব।
খেয়ে লিবি, ফ্যালাই দিস না।
রত্নাকর চমকে ওঠে, মনের ভাষা পড়তে পারে নাকি? কোমর দুলিয়ে চলে গেল ময়না। কি সুন্দর তেল চকচকে চামড়া। সারাদিনের ধুলো কাদার মালিন্য এতটুকু স্পর্শ করতে পারেনি। বেশ লাগে চেয়ে চেয়ে দেখতে। সভ্যতার কামনা লোলুপ দৃষ্টি ওদের মনে কোনো দাগ ফেলতে পারেনা।
খেতে খারাপ লাগছে না। অবশ্য ক্ষিধের মুখে সবই ভাল লাগে। হিউজ ইনকামের কথা ঘুরে ফিরে আসছে মনে।
সকাল হতেই মিস্ত্রী মজুরের হাকাহাকিতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। কাল রাতের কথা ভেবে হাসি পেল। এদের মধ্যেই জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া যায়। ফ্লাটের কাজ শেষ হলেই অন্যত্র চলে যাবে এরা।
মনিটরে নজরে পড়ল সিকদারবাবু আসছে। পুলিশি পোশাকে নয় সাদা পোশাকে। আন্নামা অফিসে এসে বসলেন। অফিসের পাশেই আন্নামার বিশ্রাম ঘর। সেখানে বসে মনিটরে সারা বাড়ীর কোথায় কি হচ্ছে বসে বসে নজর রাখেন। মিনিট পাচেক কথা হয় সিকদার বাবুর সঙ্গে। বারবার এসপি সাহেবের কথা বলছিল আন্নামা জিজ্ঞেস করেন, কৌন কাহাকে রহনেওয়ালা? সিকদারবাবু সব খবর জোগাড় করতে পারেনি বলল, এ হারামী বাধাকপি আছে।
আম্মাজী হেসে অভয় দিলেন, বাধাকপি ফুলকপি সব তিনি ম্যানেজ করে ফেলবেন। কাহা কাহা তক পোউছ হ্যায় তার ইঙ্গিত দিলেন।
সিকদার অবিশ্বাস করেনা। আম্মাজী অত্যন্ত প্রভাবশালী তার পরিচয় আগে পেয়েছে। তার আগে যে ওসি ছিল এখন নাকি কোন ভাগাড়ে বসে চালাকি করার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করছে। সিকদার বসে উস্খুশ করে।
ফোন বেজে উঠতে রিসিভার কানে লাগিয়ে আম্মাজী 'হ্যালো স্যার' বলে চোখের ইশারায় সিকদারকে চলে যেতে বললেন। সিকদার বেরিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, অফিসের দরজায় লালবাতি জ্বলছে। তার মানে এখন প্রবেশ নিষেধ। মাঝে মাঝেই এরকম ফোন আসে। এরা কারা অনেকভাবে চেষ্টা করেও জানতে পারেনি। আম্মাজী জানতে পারলে মূল্য দিতে হতে পারে ভেবে বেশিদুর এগোবার ভরসা হয়নি। আম্মাজী শুনেছে দক্ষিন ভারতীয় কিন্তু চমৎকার বাংলা বলেন। উজ্জ্বল চোখজোড়া ছাড়া কিছুই দেখা যায়না, বয়স অনুমান করা কঠিন। নানা অলৌকিক বিদ্যা জানেন সবাই বলাবলি করে। সিকদারবাবু সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেলেন।
কলেজে বেরোবার আগে নম্বর দেখে ফোন করল রত্নাকর। ওপাশ থেকে মহিলা কণ্ঠে আওয়াজ এলো, হ্যালো?
রিলিফ সোসাইটি?
আপনি নম্বর কোথায় পেলেন?
এরকম প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলনা রত্নাকর। কি বলবে? যা সত্যি তাই বলল, না মানে এক ভদ্রমহিলা রাস্তায় আমাকে একটা কার্ড দিয়েছিলেন।
কি জানতে চান বলুন?
আমার কাজের খুব দরকার। মানে আমাকে কি করতে হবে?
এক মিনিট। কিছুক্ষন পর ওপাশ থেকে বলল, আজ চারটের সময় আসুন।
রত্নাকর কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল।

[২৭]

অনার্স ক্লাস শেষ, আর দুটো ক্লাস আছে। মোবাইলে সময় দেখল, এখন বাসে উঠলে তিন-সাড়ে তিনটের মধ্যে পৌছানো সম্ভব। চারটের সময় যেতে বলেছে, ভাবছে যাবে কিনা? বাস দেখে উঠে পড়ল। ছবিদির সঙ্গে এইখানে দেখা হয়েছিল। বাসে লোক ওঠানামা করছে কম। দুপুর বেলা তেমন ভীড় হয়না। কোথায় নামতে হবে জানা নেই। সেই মহিলা স্যাণ্ডিদের বাড়ী ছাড়িয়ে চলে গেছিলেন। কণ্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করলে কি বলতে পারবে? এইতো স্যাণ্ডিদের ফ্লাট। কিছুক্ষন পর মনে হল ছাড়িয়ে আসেনি তো? উঠে গেটের কাছে গিয়ে কনডাকটরকে জিজ্ঞেস করতে বলল, দেরী আছে, বসুন। রত্নাকর আবার জায়গায় এসে বসল। হঠাৎ কনডাকটর হাক পাড়ে, আশ্রম আশ্রম। রত্নাকরের দিকে তাকিয়ে নামতে ইশারা করে। হুড়মুড়িয়ে নেমে পড়ল। কোথায় আশ্রম? তাকিয়ে দেখল বিশাল চারতলা বাড়ী। নীচে সারি সারি গাড়ী পারকিং করা।
একজন পথচারিকে জিজ্ঞেস করতে ঐ বাড়ীটিই দেখিয়ে দিল। সিড়ি খুজে উপরে উঠে দেখল বিশাল হল। জনা তিরিশেক মহিলা পুরুষ চোখ বুজে ধ্যান করছে। দেওয়ালে জপমালা হাতে মাথায় ঝুটি বাধা এক মহিলার ছবি। হঠাৎ নজর আটকে যায়, রঞ্জনা সেন না? হ্যা-হ্যা স্যাণ্ডির মাসী রঞ্জনা সেন। এতো বড়লোকের জায়গা, হতাশ হয় রত্নাকর। গায়ে সাদা এ্যাপ্রণ মুখ কাপড়ে ঢাকা, চোখ আর কপাল দেখা যাচ্ছে। একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, কাউকে খুজছেন?
কি জন্য এসেছে বলতেই মহিলা রত্নাকরের আপাদ মস্তক চোখ বুলিয়ে একটা ঘর দেখিয়ে দিল। হলের পাশ দিয়ে সেই ঘরে উকি দিয়ে দেখল জনা কয়েক নারী-পুরুষ বসে। এরাও মনে হয় তারই মত চাকুরি প্রার্থি? ঢুকবে কি ঢুকবে না ভাবছে এমন সময় সেই রকম সাদা এ্যাপ্রন গায়ে একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, রিপোর্ট করেছেন? ঐ ঘরে রিপোর্ট করে আসুন। পাশেই আরেকটা ঘরে ঢুকে দেখল টেবিলের ওপাশে একজন মহিলা। ইঙ্গিতে বসতে বলল।
মহিলা নাম বয়স শিক্ষাগত যোগ্যতা কনট্যাক্ট নম্বর লিখে নিয়ে বলল, পাশের ঘরে বসুন। ভাল করে জল খান। বাথরুম পেলে আমাকে এসে বলবেন।
ম্যাডাম আমি জল আনিনি।
মহিলা মিষ্টি করে হেসে বলল, ঘরেই জল আছে।
ইতিমধ্যে একজন মহিলা এসে বলল, বাথরুম যাবো। ঐ ঘর সংলগ্ন একটি বাথরুম দেখিয়ে দেওয়া হল। রত্নাকরের জল পিপাসা পেয়েছিল। ঘরে ঢূকে ফিলটার হতে ঢক ঢক করে জল খেল। বেশ ঠাণ্ডা জল।
নিজের বিশ্রাম ঘরে বসে আম্মাজী মনিটরে চোখ রেখে দেখছেন। এক মহিলা বাথরুম করতে বসেছে। ঘন বালে ঢাকা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা। এক ঘেয়েমী ক্লান্তি এসে গেছে। একটা সিগারেট ধরালেন। আম্মাজী কারো সামনে সিগারেট খান না। অলসভাবে ধোয়া ছাড়ছেন। উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আপাদ মস্তক দেখে আপন মনে হাসলেন। বাঙালিদের মধ্যে এরকম ফিগার কোথায়? ঘড়ি দেখলেন, সাড়ে-চারটে বাজে। পাঁচটায় হলঘরে যেতে হবে। হঠাৎ মনিটরে চোখ আটকে যায়। ঝুকে দেখতে থাকেন, মেল পারসন। ওয়েপন মেজারমেণ্ট করলেন, ২৫/২৬ সিএম। লার্জ পেনিস। একী বাঙালী? সেভ করে রাখলেন।
রত্নাকর বাথরুম সেরে বেরোতে তাকে মেডিকেল টেস্টের জন্য পাঠানো হোল। সেখানে একজন মহিলা ডাক্তার সুচ ফুটিয়ে কিছুটা রক্ত নিল। আগের জায়গায় ফিরে আসতে বলল, কিছু বলবেন?
এবার কি করব?
ব্লাড দিয়েছেন?
হ্যা ব্লাড নিয়েছে।
তাহলে বাড়ি যান। সিলেক্ট হলে খবর দেওয়া হবে।
একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
মহিলা মুখ তুলে তাকালো। রত্নাকর জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা কাজটা কি?
ইউ হ্যাভ টু সার্ভ দেম হু আর এ্যাফ্লিক্টেড।
হঠাৎ মৃদু গুঞ্জন শুরু হল আম্মাজী আসছেন। রত্নাকর প্যাসেজের একপাশে সরে দাড়ালো। সন্ন্যাসিনীর বেশ, চোখ অর্ধ নিমিলীত, কপাল চন্দন চর্চিত। ধীরে ধীরে হলঘরে প্রবেশ করে দেওয়ালে ছবির পাশে একটা বেদীতে বসলেন। একটু আগের কোলাহল মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গেল। কেমন যেন ঝিমুনি আসে। রত্নাকরের মনে হল আর দাঁড়ানো ঠিক হবেনা। সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে একেবারে রাস্তায়।
সন্ধ্যে হয় হয়। বাসের জন্য অপেক্ষা করে। বাস যাত্রী এই অঞ্চলে কম, প্রায় সবারই নিজের গাড়ী আছে। বাসে উঠে আগের কথাগুলো ভাবার চেষ্টা করে। কেমন চাকরি কি করতে হবে? এ্যাফ্লিক্টেড মানে পীড়িত বা আর্ত। তাদের সেবা করতে হবে। ইণ্টারভিউটাও অদ্ভুত তেমন কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল না। রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত নিল। একবার বাথরুম করল ব্যস? এখন বুঝতে পারছে তার আসাটাই ভুল হয়েছে। বাস থেকে নেমে অটো ধরতে হয়। রত্নাকর হাটতে শুরু করল। দুটো ক্লাস করা হল না বাসভাড়া গেল মনটা এমনিতেই খারাপ। খুব ক্ষিধে পেয়ে গেছে। যাবার পথে হোটেলে ঢুকে খেয়ে নেবে কিনা ভাবতেই ময়নার কথা মনে পড়ল। এক্টুস ভাত দিল দশ টাকা লিল। হাটার গতি বাড়িয়ে দিল। চোখে জল চলে এল। মায়ের কথা মনে পড়ে। যখন থাকবো না কি হবে তোর? বউয়ের জন্য একজোড়া বালা রেখে গেছে। বউয়ের আশা করেনা, মায়ের দেওয়া স্মৃতি বিক্রির কথা চিন্তা করতে মনের সায় পায়না।
ময়নারা রান্না শুরু করে দিয়েছে। সন্তর্পনে উপরে উঠে গেল। পোশাক বদলে লুঙ্গি পরল। বোতল নিয়ে ঢক ঢক করে জল খেয়ে শুয়ে পড়ে। চোখ ছাপিয়ে জল এসে পড়ে। কিছুক্ষন পর মনে হল কেউ বুঝি দরজায় ঠক ঠক করল। এখানে আবার কে এল? লুঙ্গি ঠিক করে উঠে দরজা খুলে দেখল ময়না দাঁড়িয়ে আছে। আঁচলে ধরা একটা গেলাস। জিজ্ঞেস করে, ছা খাবি?
রত্নাকর কথা বলতে পারেনা। ঠোটে ঠোট চেপে নিজেকে সংযত করে কিন্তু চোখের জল সামলাতে পারেনা। ময়না আঁচল দিয়ে চোখ মুছিয়ে বলল, কান্দিস ক্যানে?
রত্নাকর হেসে হাত বাড়িয়ে চা নিল। ময়না বলল, ঘুমাস না। ভাত হলি দিয়ে যাব। পাঁচ টাকা না দু-টাকা দিলেই হবে।
ময়না তোমার বিয়ে হয়নি?
কেন হবেক নাই? বিয়া করিছি মরদ ছিল, হারামীটা আবার সাঙ্গা কইরল। তাড়ায়ে দিলম। হেসে বলল, ঘুমাস না কিন্তু। ময়না চলে গেল।
খোলা জানলার ধারে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে মনে হচ্ছে সব দুঃখ গ্লানি যেন ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাচ্ছে। ময়নার কথায় মন আচ্ছন্ন। এ্দের কত সরল জীবন যাত্রা, আপনাতে আপনি বিভোর কারো সাতে পাচে থাকেনা। গতরে খেটে জীবিকা নির্বাহ করে। রাস্তাঘাটে কখনো সাওতালকে ভিক্ষে করতে দেখেছে মনে করতে পারেনা। তথকথিত ভদ্রলোকেরা কেন যে এদের শান্ত জীবনে হামলা করে ভেবে পায়না।
রত্নাকর উপন্যাসটা নিয়ে বসল। লিখতে লিখতে রাত বাড়তে থাকে। কোনো দিকে খেয়াল নেই। ময়না পাশে এসে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, কোনো শব্দ করেনা পাছে লেখায় বিঘ্ন ঘটে। শাড়ির গন্ধে রত্নাকর মুখ তুলতে ময়নাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, কখন এসেছো? তোমার খাওয়া হয়েছে?
তুকে দিয়ে খাবো।
রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, তুমি আমার জন্য এত করছো কেন? আমাকে তো ভাল করে চেনোই না?
একটা মানুষ না খাই থাকলে খাওয়া যায়? তুই পারবি?
ময়না চলে গেল, সারা ঘরে ছড়িয়ে দিয়ে গেল একরাশ ভাললাগা। তৃপ্তি করে খেয়ে বাথ রুমে গিয়ে থালা ধুয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমে চোখ জড়িয়ে এল।
পঞ্চাদার দোকানে আড্ডা চলছে। রতির কথা কারো মনেই নেই। পঞ্চাদা একসময় জিজ্ঞেস করে, রতির কি হল? ওকে দেখিনা।
শুভ বলল, রতি এখন বড়লোক। বাবুয়া ওকে ফ্লাট দিয়েছে।
ফালতূ কথা বলিস কেন? তুই দেখেছিস? বঙ্কা প্রতিবাদ করে।
পঞ্চাদা গালে হাত দিয়ে বসে ভাবে জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। একদিন তাকেও ভুলে যাবে যখন থাকবেনা। উমা একটু খোজ খবর নিত। সেও চ্যারিটি নিয়ে মেতে আছে এখন। দোকানে কমই আসে, আসলেও বেশিক্ষন থাকেনা।
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল, রত্নাকর উঠে বসে। কিসের যেন গোলমাল হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করে। মনে হচ্ছে নীচ থেকে আসছে। ঘুম চোখে লুঙ্গিটা কোনোমতে জড়িয়ে দরজা খুলল। হ্যা নীচেই, পুরুষের গলা পাওয়া যাচ্ছে। ময়নার প্রতি কৃতজ্ঞ মন রত্নাকর নীচে নেমে এল। রত্নাকর স্তম্ভিত, একটি মেয়েকে দুজন ছেলে পাজাকোলা করে নিয়ে যেতে উদ্যত। মেয়েটি বলছে, আতে বাইরে যাবো না, ছাড় কেনে। রত্নাকরের মাথায় আগুণ জ্বলে উঠল। সে একটি ছেলের হাত চেপে ধরে বলল, এই ছাড়ো ছাড়ো। মেয়েটিকে মাটিতে ফেলে দিয়ে ফুসে ওঠে, এই বোকাচোদা তুই কেরে?
একদম মুখ খারাপ করবে না।
কি করবি রে? ছেলেটি গালে চড় মারতে উদ্যত হলে রত্নাকর খপ করে হাত চেপে ধরল।
হাত ছাড়াতে চেষ্টা করে কিন্তু বজ্র মুঠিতে ধরা হাত ছাড়াতে না পেরে বলল, এই বোজো আয়তো।
ব্রোজ বলে ছেলেটি পিছন থেকে রত্নাকরের কোমর ধরে টানতে থাকে। ময়না শুয়ে ছিল উঠে এসে পিছনের ছেলেটির হাত চেপে বলল, একজনার সাথে দুইজন কেনে? টানাটানিতে জীর্ণ লুঙ্গি ছিড়ে খুলে যেতে রত্নাকর বেসামাল হয়ে ছেলেটির হাত ছেড়ে দিল। ছেলে দুজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বাইকে চেপে পালিয়ে গেল। ময়না সামনে উলঙ্গ রত্নাকরের ঝুলন্ত ল্যাওড়ার দিকে অবাক চোখে দেখে কয়েক মুহূর্ত, রত্নাকর অস্বস্তি বোধ করে। সম্বিত ফিরতে ময়না এদিক-ওদিক দেখল। সবাই হা-করে চেয়ে আছে। দ্রুত নিজের আচল দিয়ে রত্নাকরের দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, তু উপরে চল কেনে। রত্নাকরের কোমর জড়িয়ে ধরে উপরে ঘরে নিয়ে গেল। তারপর কোমরে জড়ানো শাড়ির বাকীটা খুলে রত্নাকরের হাতে দিয়ে বলল, তাড়াতাড়ি কর কেনে।
রত্নাকর হা করে তাকিয়ে থাকে। ময়নার পরনে কেবল জামা আর পেটিকোট। ময়না ফিক করে হেসে বলল, কি দেখছিস? শাড়ীটা দিবি নাকি উদলা হয়ে থাকব?
রত্নাকর ম্লান মুখে বলল, আমার আর লুঙ্গি নেই।
ময়নার মুখটা করুণ হয়ে যায়। তারপর মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, তুই কেনে লিচে নামতে গেলি?
আমি ভাবলাম বুঝি কেউ তোর উপর।
আমারে তোর খুপ পছন্দ? ময়না হেসে বলল, ঠিক আছে শাড়ীটা পরে ঘুমা কাল দিয়ে দিবি।
ওরা ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল?
রত্নাকরের প্রশ্নে হতবাক ময়না বাবুটা কি বুইলছে? মাগী লিয়ে কি করে জানেনা? তারপর উদাস গলায় বলল, মেয়ে মানুষের শরীল তাদের শত্রু। তুই ঘুমা কেনে। ময়না নীচে চলে গেল।
রত্নাকর ভাবে বেশ সুন্দর বলল তো কথাটা। নিজের শরীরই নিজের শত্রূ।
খবর পেয়ে পরদিন সকালে বাবুলাল সিং এসেছিল। রত্নাকরকে ডেকে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে বলল, ভাইয়া কিছু হলে আমাকে খবর দেবেন। তারপর ফুলমণিকে ডেকে একটা চাবি দিয়ে বলল, শোন আজ থেকে উপরে এই ঘরে তোরা শুবি। নীচে শোবার দরকার নেই।
বাবুয়া লোকটি বেশ বুদ্ধিমান। সে বুঝতে পেরেছে গোলমালের কারণ কি? সেটা বুঝেই মেয়েদের নিরাপদ আস্তানার ব্যবস্থা করে দিল। রত্নাকরের পাশের ঘরে ওদের থাকার ব্যবস্থা হল।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবনের অন্য পৃষ্ঠা - কামদেব - by stallionblack7 - 27-04-2019, 10:37 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)