05-11-2021, 06:39 PM
চতুর্থ পর্ব
“রিমঝিম গিরে সাওয়ান
সুলাগ সুলাগ যায়ে মন
ভীগে আজ ইস মৌসম মে
লগি কয়্সী ইয়ে আগন”
নতুন বৌদিকে বলছিলাম, “মনে করো আমি লিপিকে পাশে নিয়ে চলছি আর গাইতে গাইতে চলেছি দুজনে” | ও বললো, “কবে যে লিপি আসবে ? তখন যদি এই দিনরাত ‘নতুন বৌদি’, ‘নতুন বৌদি’ করবার রোগটা সারে |”ওর চোখের দিকে তাকালাম | বললাম, “রোগটা সেরে গেলে তোমার ভালো লাগবে?” আমার কথার কোনো উত্তর দেয়নি ও |
কি বিপদটাই না ঘটালাম| নতুন বৌদি’র হাতে আমার পিছনে লাগবার একটা মোক্ষম অস্ত্র তুলে দিলাম ? তা ছাড়া উপায়টাই বা কি ছিল ? নিজের পছন্দর উপরে আস্থা রেখে লিপি’র জন্য শাড়ি কিনবো, সেটা পারবনা | নতুন বৌদি’র সাহায্য ছাড়া সেটা হওয়া সম্ভব ছিলনা |
ও বারবার জানতে চাইতো লিপির ব্যাপারে | আমি একটু এড়িয়ে চলতাম প্রসঙ্গটা | জানতো আমার পেটের থেকে সহজে কথা বেরবেনা, তাই অনেক কায়দা কানুন করতো কথা বার করতে | এমনকি ব্ল্যাক মেলও করতো, “মেজদাকে বলে দেবো, যদি আমাকেও না বলো |” আবার চকলেট দেবো ইত্যাদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিরস্ত করতাম |
একটা ছুটির দিনে ঘুম থেকে উঠে বালিশের পাশে একটা ছোট্ট চিরকুট পেলাম | লেখা আছে, “মনে হয় লিপিকে প্রেমপত্র লিখে অনেক রাত করে ঘুমিয়েছো | তাই জাগালামনা | ব্রেকফাস্ট তৈরী আছে, মুখটা ধুয়ে খেয়ে নাও |” মুখটা ধোবার আগে চিরকুটের পিছন দিকে লিখে দিলাম, “নিদ্রামগ্ন পুরুষ মানুষের ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশের অধিকার তোমায় কে দিলো ?” চিরকুট খানি সাবধানে গুঁজে রাখলাম নতুন বৌদি যে বইটা তখন দুপুরে বসে পরতো, সেই পেজ মার্ক এরই ভিতর করে | পরদিন আবার সেই চিরকুটে লেখা, “আবার যদি দেরি করে ওঠ, কাতুকুতু দেবো |” লিখে দিলাম, “ঘোরতর বিপদ হতে পারে কাতুকুতু দিলে | নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে আমার হাতটা তোমাকে কোথায় অসাবধানে স্পর্শ করে ফেলবে, তখন আমায় দোষ দিওনা যেন | আমি বলে দেবো, আত্মরক্ষায় করেছি |”
বেশ জমত এই খেলাটা | আজকালকার লোক হলে এস-এম-এস এ খেলাটা খেলতে পারতাম, তখন এবং আমাদের বহু আগের যুগেও দেওর-বৌদি’র এহেন খেলাগুলি হত চিরকুটের মাধ্যমে | খেলতে বাধা কোথায় ? নতুন বৌদি আমার খেলার সাথী তো বটেই | আর সেই সঙ্গে আমার বন্ধু, আমার দোসর, কখনো বা অভিভাবিকা, যেন সাক্ষাত মা জননী |
আমি কি জানতাম, এই মা জননী প্রসঙ্গে একদিন নতুন বৌদি’র প্রাণে অজান্তে ব্যথা দিয়ে ফেলবো ? রাতে খুব বৃষ্টি চলছিলো, ঘরে ফ্যান চলছে, জানালা দিয়ে বাদলের পাগলা হাওয়া আসছে | আরাম করে ঘুমিয়ে আছি | সকালে দেখি, আমার গায়ে একটা পাতলা চাদর, ফ্যানটা অনেক কম করে চালানো | বললাম, “আজকাল দিব্যি রাতের বেলাতেও বিনা অনুমতিতে ঘরে এসে পর ?”
ও একটু সিরিয়াস ছিল কেন জানি | আমি বললাম, “একেবারে সাক্ষাত মা জননীর মতো গায়ে সযত্নে চাদর গায়ে দিয়ে দিয়েছে ?”
“ঠান্ডা লেগে গেলে তো ফ্যাঁচফঁচ করবে |”
আমি সকাল সকাল বেদম দুষ্টুমি’র মুড এ ছিলাম | বলেই দিলাম, “আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে একটা বিশেষ স্থানের স্পর্শ না দিয়েই মা জননী হলে ?”
নতুন বৌদি উত্তর করেনি | কি ব্যাপার ? আমার রসিকতার মাত্রা ছাড়ানোয় ও রাগ করেছে ? এ তো হবার কথা নয় ? কানমলা, চড় চাপড়, গাট্টা – এগুলি খাবারই কথা ছিল | আমি কাছে গেলাম | ওর চোখে জল, গম্ভীর হয়ে নিজের কাজ করে চলেছে | বললাম, “রাগ করলে ?” আমার কোনো কথার উত্তর করলনা | আমি কাছে ডাকতে ও হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো | “মা জননী আমি হতে পারিনি | ও কথা ভাবলেই আমার ভীষণ কষ্ট হয়, ছোট ঠাকুরপো | কিন্তু তোমার মুখেও সেই এক কথা ? যখনি কলকাতায় যাবো, সে একদিনের জন্য হলেও তোমার জেঠি, দিদি, আমার মাসী শ্বাশুড়ি – সব এক কথা বলে যাবে, কবে ছেলেপুলে হবে, এখনো কেন হলনা ? আমার সাথে আর কি কোনো কথা নেই কারোর | আমি এখনো মা হতে পারিনি দেখে আমার নিজের মনের ভিতরে বুঝি কোনো কষ্ট নেই ? সবাই তো জানে ডাক্তার দ্যাখানো হয়েছে ”
বুঝলাম, নতুন বৌদি আমার পুরো কথাটা শোনেনি, বা যে কোনো কারণেই হোক বোঝেনি | আমার কথার ও পুরো অন্য রকমের একটা মানে করেছে | নতুন বৌদির মনে কিরকম কষ্ট, আমি বুঝতে পারলামনা | আস্তে করে ওকে পাশে বসিয়ে বললাম, “তুমি আমার কথা বোঝনি নতুন বৌদি, আমি সে কথা বলিইনি | যতখুশি কানমলা দাও, কিন্তু তোমার সাথে দুষ্টুমি আর ইয়ার্কি না করে আমি থাকতেই পারবনা, নতুন বৌদি”| ও আমার কাঁধের উপরে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকলো, “আমার মনে অন্য কিছু আসেনা, বিশ্বাস করো | আমি চলে যাবো, দেখো, একদিন ঠিক চলে যাবো, তোমার মেজদা তখন যেন নতুন করে সংসার করে |” ও কেঁদে চলেছে আর আমি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি | যেন ও ছোট বাচ্চা | ছোটবেলায় মা’র কাছে বকুনি খেলে কুঁড়ি যেমন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতো | নতুন বৌদির কষ্টে আমার দু চোখ দিয়ে অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়ল | সেটা ওকে টের পেতে না দিয়ে বললাম “ভরসা রাখো নতুন বৌদি | তুমি সব পাবে | আজকের দিনে চিকিত্সা কত এগিয়েছে, কত অসম্ভব আজ সম্ভব হয় | আর চিকিত্সা হেরে গেলেই বা ? এ পৃথিবীতে অনেক শিশু আছে, যারা মায়ের জন্য অপেক্ষা করে আছে | আর যেই তোমাকে যত কষ্ট দিক না কেন, আমি কি তোমায় কখনো কষ্ট দিতে পারবো ? আমি তোমার বন্ধু না, তুমি বলো ? লক্ষী আমার, আর কাঁদবেনা বলো”
শনিবার ছিল সেদিন | মেজদা অফিসে | নতুন বৌদি’কে বললাম, “চান করে তৈরী হয়ে নাও, আজ একটু শহরের দিকে বেড়িয়ে আসি | ওদিকেই লাঞ্চ করবো, তারপর একটা সিনেমা দেখি চলো”| সারাদিন ওর সঙ্গে কাটালাম | সন্ধ্যা হয়ে এলেও বোম্বেতে অনেকক্ষণ আলো থাকে | মেরিন ড্রাইভ দিয়ে হাঁটছি দুজনে | একের পর এক গাড়ি চলেছে, উল্টো দিকে চার্চ গেটের লোকালগুলি যাচ্ছে | হাটতে হাটতেই বৃষ্টি এসে পড়ল | ওই গানটা মনে পড়ছিল কিশোরের গলায়, অমিতাভের লিপে | গুনগুন করছিলাম -ও বারবার জানতে চাইতো লিপির ব্যাপারে | আমি একটু এড়িয়ে চলতাম প্রসঙ্গটা | জানতো আমার পেটের থেকে সহজে কথা বেরবেনা, তাই অনেক কায়দা কানুন করতো কথা বার করতে | এমনকি ব্ল্যাক মেলও করতো, “মেজদাকে বলে দেবো, যদি আমাকেও না বলো |” আবার চকলেট দেবো ইত্যাদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিরস্ত করতাম |
একটা ছুটির দিনে ঘুম থেকে উঠে বালিশের পাশে একটা ছোট্ট চিরকুট পেলাম | লেখা আছে, “মনে হয় লিপিকে প্রেমপত্র লিখে অনেক রাত করে ঘুমিয়েছো | তাই জাগালামনা | ব্রেকফাস্ট তৈরী আছে, মুখটা ধুয়ে খেয়ে নাও |” মুখটা ধোবার আগে চিরকুটের পিছন দিকে লিখে দিলাম, “নিদ্রামগ্ন পুরুষ মানুষের ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশের অধিকার তোমায় কে দিলো ?” চিরকুট খানি সাবধানে গুঁজে রাখলাম নতুন বৌদি যে বইটা তখন দুপুরে বসে পরতো, সেই পেজ মার্ক এরই ভিতর করে | পরদিন আবার সেই চিরকুটে লেখা, “আবার যদি দেরি করে ওঠ, কাতুকুতু দেবো |” লিখে দিলাম, “ঘোরতর বিপদ হতে পারে কাতুকুতু দিলে | নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে আমার হাতটা তোমাকে কোথায় অসাবধানে স্পর্শ করে ফেলবে, তখন আমায় দোষ দিওনা যেন | আমি বলে দেবো, আত্মরক্ষায় করেছি |”
বেশ জমত এই খেলাটা | আজকালকার লোক হলে এস-এম-এস এ খেলাটা খেলতে পারতাম, তখন এবং আমাদের বহু আগের যুগেও দেওর-বৌদি’র এহেন খেলাগুলি হত চিরকুটের মাধ্যমে | খেলতে বাধা কোথায় ? নতুন বৌদি আমার খেলার সাথী তো বটেই | আর সেই সঙ্গে আমার বন্ধু, আমার দোসর, কখনো বা অভিভাবিকা, যেন সাক্ষাত মা জননী |
আমি কি জানতাম, এই মা জননী প্রসঙ্গে একদিন নতুন বৌদি’র প্রাণে অজান্তে ব্যথা দিয়ে ফেলবো ? রাতে খুব বৃষ্টি চলছিলো, ঘরে ফ্যান চলছে, জানালা দিয়ে বাদলের পাগলা হাওয়া আসছে | আরাম করে ঘুমিয়ে আছি | সকালে দেখি, আমার গায়ে একটা পাতলা চাদর, ফ্যানটা অনেক কম করে চালানো | বললাম, “আজকাল দিব্যি রাতের বেলাতেও বিনা অনুমতিতে ঘরে এসে পর ?”
ও একটু সিরিয়াস ছিল কেন জানি | আমি বললাম, “একেবারে সাক্ষাত মা জননীর মতো গায়ে সযত্নে চাদর গায়ে দিয়ে দিয়েছে ?”
“ঠান্ডা লেগে গেলে তো ফ্যাঁচফঁচ করবে |”
আমি সকাল সকাল বেদম দুষ্টুমি’র মুড এ ছিলাম | বলেই দিলাম, “আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে একটা বিশেষ স্থানের স্পর্শ না দিয়েই মা জননী হলে ?”
নতুন বৌদি উত্তর করেনি | কি ব্যাপার ? আমার রসিকতার মাত্রা ছাড়ানোয় ও রাগ করেছে ? এ তো হবার কথা নয় ? কানমলা, চড় চাপড়, গাট্টা – এগুলি খাবারই কথা ছিল | আমি কাছে গেলাম | ওর চোখে জল, গম্ভীর হয়ে নিজের কাজ করে চলেছে | বললাম, “রাগ করলে ?” আমার কোনো কথার উত্তর করলনা | আমি কাছে ডাকতে ও হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো | “মা জননী আমি হতে পারিনি | ও কথা ভাবলেই আমার ভীষণ কষ্ট হয়, ছোট ঠাকুরপো | কিন্তু তোমার মুখেও সেই এক কথা ? যখনি কলকাতায় যাবো, সে একদিনের জন্য হলেও তোমার জেঠি, দিদি, আমার মাসী শ্বাশুড়ি – সব এক কথা বলে যাবে, কবে ছেলেপুলে হবে, এখনো কেন হলনা ? আমার সাথে আর কি কোনো কথা নেই কারোর | আমি এখনো মা হতে পারিনি দেখে আমার নিজের মনের ভিতরে বুঝি কোনো কষ্ট নেই ? সবাই তো জানে ডাক্তার দ্যাখানো হয়েছে ”
বুঝলাম, নতুন বৌদি আমার পুরো কথাটা শোনেনি, বা যে কোনো কারণেই হোক বোঝেনি | আমার কথার ও পুরো অন্য রকমের একটা মানে করেছে | নতুন বৌদির মনে কিরকম কষ্ট, আমি বুঝতে পারলামনা | আস্তে করে ওকে পাশে বসিয়ে বললাম, “তুমি আমার কথা বোঝনি নতুন বৌদি, আমি সে কথা বলিইনি | যতখুশি কানমলা দাও, কিন্তু তোমার সাথে দুষ্টুমি আর ইয়ার্কি না করে আমি থাকতেই পারবনা, নতুন বৌদি”| ও আমার কাঁধের উপরে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকলো, “আমার মনে অন্য কিছু আসেনা, বিশ্বাস করো | আমি চলে যাবো, দেখো, একদিন ঠিক চলে যাবো, তোমার মেজদা তখন যেন নতুন করে সংসার করে |” ও কেঁদে চলেছে আর আমি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি | যেন ও ছোট বাচ্চা | ছোটবেলায় মা’র কাছে বকুনি খেলে কুঁড়ি যেমন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতো | নতুন বৌদির কষ্টে আমার দু চোখ দিয়ে অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়ল | সেটা ওকে টের পেতে না দিয়ে বললাম “ভরসা রাখো নতুন বৌদি | তুমি সব পাবে | আজকের দিনে চিকিত্সা কত এগিয়েছে, কত অসম্ভব আজ সম্ভব হয় | আর চিকিত্সা হেরে গেলেই বা ? এ পৃথিবীতে অনেক শিশু আছে, যারা মায়ের জন্য অপেক্ষা করে আছে | আর যেই তোমাকে যত কষ্ট দিক না কেন, আমি কি তোমায় কখনো কষ্ট দিতে পারবো ? আমি তোমার বন্ধু না, তুমি বলো ? লক্ষী আমার, আর কাঁদবেনা বলো”
“রিমঝিম গিরে সাওয়ান
সুলাগ সুলাগ যায়ে মন
ভীগে আজ ইস মৌসম মে
লগি কয়্সী ইয়ে আগন”
নতুন বৌদিকে বলছিলাম, “মনে করো আমি লিপিকে পাশে নিয়ে চলছি আর গাইতে গাইতে চলেছি দুজনে” | ও বললো, “কবে যে লিপি আসবে ? তখন যদি এই দিনরাত ‘নতুন বৌদি’, ‘নতুন বৌদি’ করবার রোগটা সারে |”ওর চোখের দিকে তাকালাম | বললাম, “রোগটা সেরে গেলে তোমার ভালো লাগবে?” আমার কথার কোনো উত্তর দেয়নি ও |