Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
#48
মিত্রারা এলো প্রায় দেড়টা নাগাদ, আমি তখন আমার ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছি। অফিসে কম্পিউটর ঘাঁটাঘাঁটি করি তাই সেইভাবে খুব একটা অসুবিধা হলো না। বেশ তাড়াতাড়ি সরগরো হয় গেলাম। ছোটমা এসে বললেন, চলুন আপনার গেস্টরা চলে এসেছেন, আমি ছোটমার মুখের দিকে তাকালাম, ছোটমা হাসছেন, এ হাসি পরিতৃপ্তির হাসি, এ হাসি মন ভালো হয়ে যাবার হাসি, এ হাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে হারিয়ে গিয়ে আবার ফিরে পাওয়া।
-কি হলো ঐ ভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয় কি দেখছিস।
-তোমাকে।
-তবে রে দুষ্টু, বলে আমার কান ধরলেন।
-ওঃ ছোটমা লাগছে, ছাড় ছাড়।
-দারুন।
-কি দারুন
-মিত্রাকে দেখতে।
-পছন্দ।
ছোটমা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লেন, পছন্দ হয়ে আর হবে কি।
-ঠিক । কপালে নেইকো ঘি, ঠক ঠকালে পাবে কি।
-আর বুড়োমি করতে হবে না, এবার চলো।
-বড়মা কি বলছেন।
-খুব শুনতে ইচ্ছে করছে না।
-মাথা নাড়লাম।
-বিয়ে না হলে বউ করতেন।
-ও তো আমার বউ।
-যাঃ।
-হ্যাঁ গো।
-চল চল ওরা বসে আছে।
-চলো।
 
ছোটমার পেছন পেছন নিচে চলে এলাম, এরই মধ্যে মিঃ ব্যানার্জী, মিত্রা, অমিতাভদা, মল্লিকদা বেশ জমিয়ে গল্প শুরু করে দিয়েছেন। আমাকে দেখেই মিত্রার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো, সবার চোখ এড়ালেও ছোটমার চোখ এড়ালো না। মিঃ ব্যানার্জী বললেন, এসো অনিন্দ তোমার জন্য …….. মল্লিকদা মিঃ ব্যানার্জীকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, না স্যার, অনিন্দ নয়, অনিন্দবাবু। সবাই হো হো করে হসে উঠলো।
 
আমি মিত্রার পাশে সোফার খালি জায়গায় বসে পরলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, সবার সঙ্গে দাদার আলাপ করিয়ে দিয়েছিস, ও বোকা বোকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমার আগে মল্লিকদা সবার সঙ্গে আলাপ করেছেন, এবং আলাপ করিয়ে দিয়েছেন।
-বড়মার সঙ্গে আলাপ হয়েছে।
-হ্যাঁ।
-তুই বড়লোক মানুষ , বড়মা বিশ্বাসই করতে পারে নি তুই এখানে আসতে পারিস।
গালে একটি থাপ্পর।
-হ্যাঁরে সত্যি। দাদার সঙ্গে কথা বলার পর তোর সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, এরা আমাকে পাগল ভাবছিল
-এতটা ঠিক নয়। মিঃ ব্যানার্জী বললেন।
ছোটমা চোখ পাকিয়ে গোল গোল চোখ করলেন, মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, বড়মা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বললেন, ও কোনদিন পরিষ্কার করে কোন কথা বলে না, সব সময় একটা হেঁয়ালি।
-ঠিক বলেছেন, এটা ওর চিরকালের অভ্যাস। মিত্রা বললো।
-তোমরা আমার থেকে বেশি জানবে মা।
-কলেজেও ও এরকম ছিল সব সময় দেখছি, দেখবো, খাচ্ছি, খাবো ভাব। খালি ডঃ রায় যখন কোন কথা বলতেন তখন অনিকে পায় কে। ও তখন সিরিয়াস।
-ডঃ রায় কে ?
-আমাদের হেড ডিপ ।
-সমকালীন পত্রিকায় একসময় খুব ভালো ভালো প্রবন্ধ লিখতেন।
-ও বলতে পারবে। ও স্যারের পোষ্যপুত্র ছিলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
-ঠিক বলেছো, এখানেও তাই, খালি বড় সাহেব কিছু বললে ও শুনবে আর কাউকে কোন পাত্তাই দেয়না। অমিতাভদার দিকে তাকিয়ে বড়মা বললেন।
-খিদে পেয়েছে। তোর পায় নি।
-কি রাক্ষসরে তুই, এইতো কয়েকঘন্টা আগে অতগুলো লুচি খেলি এরি মধ্যে……..ছোটমা বললেন।
সকলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
-তাহলে চলো আমার ঘরে গিয়ে বসি।
 
আমার কথাটা মিঃ ব্যানার্জী লুফে নিলেন। হ্যাঁ হ্যাঁ সেই ভালো কাজের কথা আগে তারপর খাওয়া দাওয়া। আমরা সবাই আমার ঘরে এলাম, ছোটমা বাধা দিয়ে বলেছিলেন, বড়দার ঘরে বোস না, আমি বললাম কেনো, ছাটমা চোখ পাকালেন, আমি মাথা নীচু করে হাসতে হাসতে বললাম, তুমি মিত্রাদের আদি বাড়িতে যাওনি, গেলে এ কথা বলতে না। মিত্রা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে, মিঃ ব্যানার্জী আমার দিকে একবার তাকালেন।
 
-আয়, আসুন। আমি ওদের আমার ঘরে বসালাম, এই বাড়িটার এই ঘরটা সবচেয়ে সুন্দর, আমার কাছে। পিওর ব্যাচেলার্স কোয়ার্টার বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। তবু এটা কিছুটা মন্দের ভালো, সৌজন্যে ছোটমা, বড়মা। আমার জানলার ধারেই বিশাল একটা আমগাছ, তার পাশেই বড় একটা নিমগাছ। এছাড়া আরো কত গাছ আছে। অমিতাভদা ওঁর যৌবন বয়সে এই বাগান বাড়িটা কিনেছিলেন। সামনের দিকে কিছুটা অংশ বাগান, বাকিটা পেছনে, প্রায় ২৫ কাঠা জমির ওপর বাড়িটা। গাছ কিছু ছিল বাকি উনি পুঁতেছেন, এখন পরিচর্যার অভাবে জঙ্গল, একে একে সবাই বসলেন, আমি আমার ভাঙ্গা চেয়ারে বসলাম, এটারও একটা ইতিহাস আছে, সময় সুযোগ পেলে পরে বলবো।
-দাদা কাল কখন ফিরলেন।
-বিকেলের ফ্লাইটে।
-আপনাকে কাছে পাওয়া খুব মুস্কিল।
-কি করবো বলো। ডাক্তারদের কোন জীবন নেই।
-না না এমনভাবে বলবেন না, আপনি শুধু ডাক্তার হলে আলাদা কথা ছিলো, আপনি এশিয়াতে একটা ফিগার।
-লোকে বলে।
মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
-দেখছোতো অনিন্দ তোমার বান্ধবীর অবস্থা। আমাকে ডাক্তার বলে মনে করে না। বলে কিনা আমি ভেটারনারি ডাক্তার।
সবাই হেসে উঠলাম।
-একচ্যুয়েলি ও তো আপনার পাশে আছে, তাই। আমরা আপনাকে সেই ভাবে পাই না তাই বলি
-ওকে বোঝাও, ওর পাগলামির চোটে আমি পাগল হয়ে যাবো।
-এই দেখো ভাল হচ্ছে না কিন্তু। মিত্রা বললো।
-থাক বাড়িতে গিয়ে কুস্তি করিস আমরা কেউ দেখতে যাবো না।
-আবার হাসি।
-দাদাকে সব বলেছিস। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-হ্যাঁ।
-দাদা শুনে কি বললেন।
-তুই জিজ্ঞাসা কর।
-আমি তো দাদাকে প্রশ্ন করিনি, তোকে করেছি।
-আমি কিছু জানিনা যা।
-বাঃ তুমি মালকিন, সম্পাদক বলে কথা।
-না আমি মালকিন নই।
-তাহলে কে।
-জানিনা।
মিঃ ব্যানার্জী হাসলেন। তুমি কি দাদাদের সব বলেছো।
-হ্যাঁ।
-দাদা আপনাদের মতামত বলুন।
-আমরা কি মতামত দেবো বলোতো, আমরা আজ আছি কাল নেই, কাগজটা চালাবেতো ওরা।
ফোনটা বেজে উঠলো। সন্দীপের ফোন। সরি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এলাম।
-কি হয়েছে বল।
-অফিসে এলিনা কেনো।
-আমি এখন কয়েকদিন যাবো না। তোকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলাম করেছিস।
-হ্যাঁ।
-ওরা কিছু বলছিল।
-না। ওরা তোকে বেশ ধসে।
-তুই কি করে বুঝলি
-সে কি খাতির যত্ন।
-থাক। আমার ফোন নম্বরটা দিয়েছিস।
-সে আর বলতে।
-অফিসের হালচাল।
-সুনীতদা ছড়ি ঘোরাচ্ছে। ম্যাডাম অসুস্থ। তাই কয়েকদিন আসতে পারছেন না। এলে আরো কিছু ছাঁটাই হবে।
-ম্যাডাম অসুস্থ তোকে কে বললে।
-আরে আমাদের ঐ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আছে না কি সামন্ত ঘরুই
-হ্যাঁ।
-উনিই বললেন।
-তাই।
-এখনতো উনিই মালিক।
-তাই নাকি।
-হ্যাঁরে।
-আজ আমার মর্নিং ছিলো। এই ফিরছি। আর শোন শোন অফিসে রিমডুলেশন চলছে।
-তাই নাকি।
-হ্যাঁরে।
-কাগজ ঠিক ঠিক বেরোচ্ছে তো।
-বেরোচ্ছে তবে ঐ রকম। তুই আমার চাকরিটা একটু দেখিস।
-ঠিক আছে।
-যে দায়িত্বগুলো তোকে দিয়েছি করে যা।
-ঠিক আছে।
-ঘরে এলাম।
 
মিঃ ব্যানার্জী, অমিতাভদা কথা বলছেন। অফিস কি ভাবে সাজানো হবে। পরবর্তী কি কি কাজ করলে ভাল হয়, সেই নিয়ে। আমি আমার জায়গায় বসলাম। ছোটমা চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে হাজির, পেছনে বড়মা। দেখলাম মেনুটা খারাপ নয়, চিংড়িমাছের ভাজা আর চা। আমি জুল জুল করে চেয়ে রইলাম, ছোটমা হেসে বললেন, তোর জন্য নয়, ওনাদের জন্য।
 
চা খেতে খেতে আবার আলোচনা শুরু হলো।
 
মিত্রা বললো, হিমাংশুর সাথে কথা হয়েছে, ও এই সপ্তাহের মধ্যে রেডি করে দেবে।
-ভালো তো।
-না, একটা সমস্যা হয়েছে।
-সেটা আবার কি রকম।
-ওরা আমার নামে ট্রান্সফার করবে না।
-তোর নামে করবে না, দাদার নামে করুক।
-আমাদের দুজনের নামে হবে না।
মিঃ ব্যানার্জী আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, একটা কথা বলবো অনিন্দ।
-বলুন
-শেয়ারটা তোমার নামে ট্রান্সফার করিয়ে নাও।
-আমার নামে, খেপেছেন নাকি।
-তোর নামে করলে আপত্তি কোথায়। মিত্রা বললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, আমার চাহুনি মিত্রা চেনে।
-ঠিক আছে ঠিক আছে, তুই ওর সাথে কথা বল। মিঃ ব্যানার্জীর দিকে দেখিয়ে দিলেন।
আমি ফোনটা তুলে ডায়াল করলাম। ইচ্ছে করে লাউড স্পীকারে দিলাম।
-হ্যাঁ বল। তোর কাজ করে দিয়েছি। হিমাংশু বললো।
-মাঝে কি ঝামেলা হয়েছে। শুনলাম।
-হ্যাঁ হয়েছে, সে তো আমি মিত্রাকে বলেছি।
-ঝামেলাটা কে সামলাবে তুই না মিত্রা।
-এটুকু সাহায্য তুই যদি না করিস তাহলে কি করে হয়।
-ঠিক আছে, দুটো ডিড কর, একটা আমার নামে ট্রান্সফার হচ্ছে, আর একটা কর আমি মিত্রার নামে ট্রান্সফার করছি।
-আমি তো বলেছিলাম সেই কথা মিত্রা রাজি হয় নি।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, মিত্রা আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে, মুখ লাল হয়ে গেছে। ও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে।
-ঠিক আছে আমি তোকে আধঘন্টা বাদে ফোন করছি।
 
ফোন নামিয়ে রাখলাম, মিত্রার দিকে তাকালাম, সম্পত্তি নিয়ে পাগলামো করিস না। আজ আমি ভাল আছি, কাল শত্রু হয়ে যাব না কে বলতে পারেহিমাংশু আমার ইনস্ট্রাকসন ছাড়া একটুও নরবে না। ও কে যে ভাবে কাজ করতে বলেছি সে ভাবে করতে দে, তোর ভালোর জন্য বলছি। আমাকে তোর যদি কিছু দিতে হয়……. সে তো অনেক সময় রয়েছে। এতো তাড়াহুড়ো করার কি আছে। মিত্রা মাথা নীচু করে বসে আছে, চোখ দুটো ছল ছলে, আমি জ্ঞানতঃ কোন অন্যায় কাজ করবো না।
 
চোখ মোছ, মুখ তোল। মিত্রা মাথা নীচু করে রয়েছে। আমি তোকে অপমান করতে চাই নি, তোকে বোঝাতে চাইলাম, সেদিনও তোকে বুঝিয়েছি, এই টাইমটা খুব ভাইট্যাল। তোকে আটঘাট বেঁধে পা ফেলতে হবে, এখানে ইমোশনের কোন দাম নেই, এ্যাডমিনিস্ট্রেশন আর ইমোশন এক নয়, এটা তোকে আগে বুঝতে হবে।
 
মাথায় রাখবি আমি কিন্তু ভীষ্মর সঙ্গে যুদ্ধ করছি, যে ইচ্ছামৃত্যুর বর নিয়ে বসে আছে। তুই আমার শিখন্ডি। তোর সাহায্য ছাড়া কাউকে কিছু করতে পারবো না। তবে আমিও ভগবান নই আমারও ভুল হতে পারে, তখন তুই কৃষ্ণের মতো আমাকে তোর বিশ্বরূপ দেখাস।
 
সবাই হো হো করে হসে উঠলো
মিত্রা আপাতঃ গম্ভীর কন্ঠে বললো তুই থামবি, বহুত লেকচার মেরেছিস।
 
সবাই হাসলাম। আসর ভেঙে গেলো। খাবার টেবিলে মজা করে সবাই খেলাম, মিঃ ব্যানার্জী সবচেয়ে আনন্দ পেলেন আজকের মেনুতে। একথাও বললেন, এরকম খাবার কতদিন পরে খেলাম, তা বলতে পারবনা।
মল্লিকদা টিপ্পনি কেটে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ‘রাইট চয়েস বেবি।’
 
খাবার শেষ হতে মিঃ ব্যানার্জী বললেন অনিন্দ তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল, চলো তোমার ঘরে যাই। আমর বুকটা ধরাস ধরাস করে উঠলো। তাহলে কি সেদিন রাতের ব্যাপারে……কিন্তু মিত্রার হাব ভাবে সেরকম কিছুতো বুঝতে পারলাম না। তাহলে।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘির শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপা্ধ্যায়)) - by MNHabib - 05-11-2021, 03:15 PM



Users browsing this thread: