03-11-2021, 06:59 PM
মনে আছে সেই দিনগুলো
চাদর চাপিয়ে গায়ে
ঘিরে বসতাম ভাই বোনেরা
শান্ত শীতল সন্ধেটায়
কখনো জেঠু কখনো বাবা
কখনো বা ঠাকুমা
আবার কখনো মেসো মাসি
কিংবা প্রিয় ছোটমামা
কিসের গল্প?
কিসের আবার....
সেইজে প্রিয় বিষয়
যা শুনলে মন জুড়তো
আবার লাগতো দারুন ভয়!
ভুত গো দাদা ভুত যে ছিল
মোদের আড্ডার প্রাণ
যদিও রাতে বাথরুম যেতে
আঁতকে উঠতো জান!
মনে পড়তো সেসব গল্প
সেই যে মামার বয়স অল্প
গেছিল করতে রাতে যে ইয়ে...
কাউকে না জাগিয়ে একাই এগিয়ে
দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে
কলঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে
কাজে ব্যাস্ত হতেই হটাৎ
বাইরে যেন কিসের আওয়াজ?
কেউকি হাসে?
আশেপাশে?
দূরেই ছিল এখন কাছে!
ওরে বাবা শুনছি একি!
কাঁদছে গলা করে যে নাকি
এগিয়ে আসে আওয়াজ টা যে
এবার যে শুনি খুবই কাছে
বাইরে কি তবে দাঁড়িয়ে কেউ?
দূরে শুনি ডাক ঘেউ ঘেউ ঘেউ
ওরা ঠিক বোঝে এসব ব্যাপার
কিন্তু এবারে কি হবে আমার?
ধুর ছাই কেন এলাম একা?
আমি সত্যিই আস্ত বোকা
এতটা বলে থামলো মামা
ঠিক করলো নিজের জামা
মামা মামা... তারপরে কি ?
বাঁচলে কিকরে বলোতো শুনি!
জড়িয়ে চাদর মামা বললো
শোন তাহলে আগে কি হলো...
আমি তো বুঝি জ্ঞান হারাবো
কিকরে আমি ভুত তারাবো?
এদিকে যে বাইরে বাচ্চা কাঁদে
বাড়িতে নেই বাচ্চা আমি বাদে!
সবাই বড়ো আমার থেকে
ডাকটা আসছে থেকে থেকে
ওরে বাবা এযে বাইরেই!
ওয়া ওয়া কেঁদে চলেছেই
ভয় আমার পাচ্ছে কান্না
বাইরে এখন বেরোতে মানা
বেরোলেই যে চাপবে ঘাড়ে
নইতো মরবো ভুতের মারে!
ওগো ঠাকুর বাঁচাও আমায়
ভয় আমার বুঝি জ্ঞান এই হারায়
তখনি হটাৎ আওয়াজ থামলো
ভয়টা যেন একটু কমলো
গেলো কি তবে সে চলে?
বেরিয়ে এলাম দরজা খুলে
না কই? নেইতো কেউ
বাইরে তখনো ঘেউ ঘেউ ঘেউ
বাইরে বেরিয়ে যেই গেছি এগিয়ে
অমনি আবার গেলাম দাঁড়িয়ে!
পেছনে আবার কাঁদছে কে গো?
এবার তাহলে গেলাম মাগো
তোমার পাচু গেল এবার
চোখে ভাসছে মুখ যে সবার
ওমা পায়ে দিচ্ছে সুড়সুড়ি!
এবার খাবে আমার নাড়ি ভুঁড়ি
নিচ্ছি তখন ঠাকুরের নাম
বাঁচাও আমায় রাম রাম রাম
হচ্ছে নাতো কিছুই দেখি
কেঁদেই চলেছে ভুত বাবাজি
সাহস করে আমি ঘুরেছি
জানি আমি এমনিতেও গেছি
ঘুরে দেখি কেউ আর নেই
আসছি ফিরে পিছন না ফিরেই
কিসে আমার লাগলো যে পা
ফ্যাস করে অমনি উঠলো যে তা
আমিও উঠেছি ভয় লাফিয়ে
দিলাম যে দৌড় এলাম পালিয়ে
সিঁড়িতে উঠেই কিসে খেলাম ধাক্কা
বুঝলাম এবার পাবো অক্কা
ধরে ফেললো দুটো হাত আমায়
টান পড়লো আমার জামায়
কিরে বাবু তুই এই রাতে?
গেছিলি নাকি কলঘরেতে?
উফফফ বাবা চেনা এই গলা
আমার দাদুর জড়িয়ে গলা
বললাম দাদু বাইরে যে ভুত!
বাচ্চার গলা করে ডাকছে যে খুব
হাসলো দাদু শুনে আমার কথা
চলতো কই ভুত আমায় দেখা
দাদুকে নিয়ে এলাম আবার
বাইরে যে সেই একি অন্ধকার
বলল দাদু কই ভুত তোর ?
ডাকতো তাকে দেখি কত জোর
ঢোক গিলে আমি বলি দাদুকে
চলে যাই চলো ফিরে ঘরেতে
ওই যে কাঁদে শুনছো তুমি!
এই শুনেই তো পালাই আমি
দাদু হেসে বলে ওরে বোকা ছেলে
তাকিয়ে দেখ ওই টিনের চালে
আমিও তাকাই খুব ভয় ভয়
কি জানি দেখে যদি আর না সয়
যেই তাকিয়েছি চালের ওপর
গেল সোজা একদিকেতে নজর
আরে.. কি রে ওটা গাছের ডালে?
ঠ্যাং ঝুলিয়ে লেজটা নারে?
সাহস করে গেলাম এগিয়ে
ওটাও দাঁড়ালো লেজ বেঁকিয়ে
বুঝলাম ওটা ছিল চোখের ধোঁকা
আমি সত্যিই আস্ত বোকা
ভাবছিলাম যারে তেনাদের দালাল
সে আসলে একটা বিড়াল!!
দাদু এবারে এগিয়ে এলো
কাঁধে রেখে হাত আমায় বললো
শোনো দাদুভাই একটা কথা
ভয় পেয়োনা তুমি অযথা
এবার তুমি যাও গো ফিরে
উঠতে হবে আবার ভোরে
এবার গিয়ে শুয়ে পোড়ো
ভয় পেয়োনা, হচ্ছ বড়ো
আমিও হেসে আসছি ফিরে
বুকে অনেক সাহস নিয়ে
দোতলাতে আমি উঠেছি যেই
মনে পড়লো.... দাদুতো আর নেই!
গেছেন তিনি মোদের ছেড়ে
বছর দুয়েক আগে চলে
জানলা দিয়ে বাইরে তাকাই
বিড়ালটা আর ওখানে নাই
পেয়ারা গাছটা হাওয়ায় নড়ছে
বুকে আবারো ভয় করছে
কিন্তু আমি দিলাম না দৌড়
মনে আমি আনলাম জোর
মনে পড়লো মুখটা দাদুর
বাইরে উড়ছে অনেক বাদুড়
ভয় খুবই লাগছিলো আমার
ইচ্ছে করছিলো দৌড়ে যাবার
তবু আমি দম নিয়ে
গিয়েছিলাম সামনে এগিয়ে
ঘরে ঢুকে দরজা ভিজিয়ে
শুয়ে পড়লাম বালিশ জড়িয়ে
এইটা ছিল সেই গল্প মামার
শুনে হাত পা কাঁপতো আমার
বাবা মা মাসি মেসো কাকি
এরাও হয়েছে ভুতের সাক্ষী
কখনো বাড়িতে বা বেড়াতে গিয়ে
অজানা ডাকে নাকি গেছে বেরিয়ে
আরও কত যে শুনেছি কাহিনী
কখনো একা বা নিয়ে বাহিনী
আজও মনে পড়ে গো সেসব
হারিয়েছে সেদিন স্মৃতি আজ সব
তবু একটা কথা মানতেই হয়
সবচেয়ে সেরা হলো ভুতেরই ভয়!
কারণ যতই বড়ো হও না কেন
স্মার্টও তুমি হলে ভীষণ...
একবার যদি তার পাল্লায় পড়ো
ফাটবে তখন তোমারো........ (বুঝেই গেছো)
#baban