03-11-2021, 02:40 PM
মিত্রার বাড়িতে যখন পোঁছলাম তখন রাত ৮টা বেজে গেছে। গাড়ি একেবারে পোর্টিকোর ভেতরে এসে দাঁড়ালো। আমি গাড়ি থেকে নামতেই একজন ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন। আমাকে বললেন, মেমসাহেব ওপরের ঘরে আছেন, আপনাকে চলে যেতে বলেছেন। আমি দু’মাস আগে এখানে এসেছিলাম, আর দুমাস পরে এলাম, অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সব কিছু লক্ষ্য করলাম, উপরে উঠে গেলাম, মিত্রা সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ওকে দেখে থমকে দাঁড়ালাম, মিত্রা একটা বাসন্তী কালারের সালোয়ার কামিজ পরেছে, দারুণ দেখাচ্ছে, কলেজ লাইফের মিত্রা আর আমার বস মিত্রার মধ্যে অনেক পার্থক্য, তবু কোথায় যেন এক থেকে গেছে মিত্রা।
-আয়।
আমি ওপরে উঠে এলাম। ওর পেছন পেছন গেলাম, একটা ঘরে আমাকে নিয়ে এলো। দু-একজন ওখানে বসে আছেন। এদের মধ্যে মাত্র একজনকেই চিনতে পারলাম, আমাদের অফিসের এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার, মিঃ সনাতন ঘরুইকে। উনি আমাকে দেখে একটু অবাক হলেন, কিন্তু মুখে কিছু বললেন না। মিত্রা সকলের সঙ্গে আমাকে পরচয় করিয়ে দিলেন। মিঃ ঘরুই খালি বললেন আমি ওনাকে চিনি তবে বেশি কথা হয় নি কোন দিন, তবে উনি যে আপনার এতোটা ক্লোজ জানতাম না।
মিত্রা বেশ গম্ভীর গলায় বললো, এর বেশি আর চেনার চেষ্টা করবেন না।
মিত্রা বললো, বুবুন (আমার ডাক নাম) মিঃ অরিন্দম চ্যাটার্জী এবং কিংশুক ব্যানার্জীকে আমি আজ এ্যাপয়েন্ট দিলাম। তোকে সব বলছি তুই সব শুনে নে, তারপর ডিসিশন দে। তোর ডিসিশন আমার অনেক কাজে লাগবে।
সবাই আমার আর মিত্রার দিকে তাকাল।
সব শোনার পর বুঝলাম, ও অনেক কেই তাড়াবার বন্দোবস্ত করেছে, এমনকি তাদের চিঠিও সই সাবুদ হয়ে গেছে, বিশেষ করে যাদের সঙ্গে আজ দুপুর বেলায় আমার কথা কাটাকাটি হয়েছে তাদের সঙ্গেও। অমিতাভদা মল্লিকদা যে জায়গায় ছিল সেই জায়গাতেই আছেন।
আমি সব শুনে বললাম, এটা তুই ডিসিশন নিয়েছিস না অন্য কারুর মতামত নিয়ে করেছিস।
মিত্রা বললো আমি ডিসিশন নিয়েছি।
আমি কথা না বাড়িয়ে বললাম, তুই যা আগে করে ফেলেছিলি, এখন সেইরকম রাখ। চেঞ্জ করিস না।
-কেন বলছিস বল।
-অনেক সমস্যা তৈরি হবে।
মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকালো।
-বরং দুটো নতুন পদ ক্রিয়েট কর।
-তারপর।
-অমিতাভদার জায়গায় তুই সম্পাদক হ।
-আমি। বড় বড় চোখ করে, তোর কি মাথা খারাপ হলো।
-খাতা কলমে।
অমিতাভদাকে প্রধান সম্পাদক কর, মল্লিকদাকে মুখ্য সম্পাদক কর, আর বাকিগুলোকে যুগ্ম সম্পাদক বানিয়ে দে। তোর নামটা চেঞ্জ করে নে সম্পাদকের জায়গায়।
-যাঃ তা হয় না।
-না হবার কি আছে তুই মালিক।
-এই কাগজের একটা ঐতিহ্য আছে।
-ঐ কথাটা মাথায় রেখেই তোকে বলছি।
-এটা যদি করতে পারিস তাহলে আর কারুর কিছু বলার থাকবে না। তবে তোর খরচ বারবে দুটো নতুন ঘর করতে হবে।
-সেটা কিছু নয়।
-ঘরুই বাবুকে বলে দে কাল থেকে কাজ শুরু করে দিক।
-ঘর কার কার জন্য।
-সুনীতদা এখন যে ঘরে আছে সেই ঘরেই থাকুক। একটা অমিতাভদার জন্য আর একটা মল্লিকদার জন্য, তবে ঘর দুটো তোকে নিউজ রুমের মধ্যে করতে হবে, আলাদা জায়গায় করলে হবে না।
-কেনো?
-নিউজের ছেলেগুলোর সঙ্গে ঘন ঘন কথা না বললে ওদের ভাত হজম হবে না। ওরা নিউজ খায় নিউজ দিয়ে স্নান করে সব কিছুই ওদের নিউজ ময়।
সবাই আমার কথায় হেসে ফেললো, ঘরুই বাবু আমার কথা শুনে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, অনিন্দ ঠিক কথাই বলেছে ম্যাডাম।
-আর দিল্লী ব্যুরোকে জানিয়ে দে তোর নামটা কাল পরশুর মধ্যে চেঞ্জ করে পাঠিয়ে দিতে, কি ঘরুইবাবু হবে না।
-নিশ্চই হবে।
-আর এই কয়েকদিন যেমন চলছে তেমন চলুক, আর ঘরুইবাবু সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলুক, আর তুই কয়েকদিন অফিসে যাস না।
-ঠিক আছে।
-আর নিউজরুমের বুড়োগুলোকে সামলাবার দায়িত্ব আমি নেবো তোকে কিছু ভাবতে হবে না।
সবাই হেসে ফেললো।
-আপনি ভালো কথা বলেছেন। যত সমস্যা ঐ এডিটর পদটাকে নিয়ে। অরিন্দমবাবু বললেন।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মাথা দোলালো।
-আমি মিঃ ঘরুই এর দিকে তাকিয়ে বললাম, ঘরুইবাবু অফিসে আপনার সঙ্গে আমার বিশেষ একটা কথা হয় না, কিন্তু আপনি আমার সম্বন্ধে অনেক খোঁজ খবর রাখেন।
ঘরুইবাবু আমার মুখের দিকে তাকালেন।
-আপনার স্বভাব চরিত্র সম্বন্ধে মিত্রা যতটা না জানে তার থেকে আমি অনেক বেশি জানি, খালি এইটুকু ব্যাপার আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম।
ঘরুইবাবুর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। উনি ভাবতে পারেন নি এক ঘর লোকের মধ্যে ওনাকে আমি এই ধরনের কথা বলতে পারি।
-এ আপনি কি বলছেন, অনিন্দবাবু।
-আপনি নিশ্চই জানেন আমি কতোদূর দৌড়তে পারি।
-হ্যাঁ হ্যাঁ তা কি বলতে।
-ওনাদের আমি চিনি না, (সামনে বসা দুজন নতুন ব্যক্তিকে দেখিয়ে) তাই এই মুহূর্তে কিছু বলছি না। (হাতজোড় করে) তবে আপনাদেরও জানাই মিত্রা আমার কলেজের বন্ধু, শুধু বন্ধু নয় বিয়ের আগে ওদের বাড়িতেও আমার যাতায়াত ছিল, ওর বাবা-মা সকলেই আমার বিশেষ পরিচিত। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। মিত্রার কোন ক্ষতি হবে এটা আমি মেনে নেবো না। ও আপনাদের যে দায়িত্ব দিচ্ছে তা ঠিক ঠিক ভাবে পালন করবেন।
মিত্রা চুপচাপ বসেছিল, ওরা আমার কথা শোনার পর কেউ আর কোন কথা বললো না।
মিত্রা যখন আপনাদের এখানে ডেকে এনেছেন, তখন আমি বুঝে নেবো আপনারা ব্যবসায়িক দিক থেকে মিত্রার খুব কাছের লোকই হবেন।
সকলেই আমার মুখের দিকে তাকালো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, ওনাদের পারপাশটা আমাকে একটু বলবি।
-চম্পকবাবুকে আমি রাখবনা ভেবেছিলাম।
-কেনো।
-ওনার চলচলন আমার ভাল লাগছে না। ওনার জায়গায় অরিন্দম বাবুকে নিয়ে এলাম।
-না এ ভুলটা করিস না। চম্পকদা থাকুক, চম্পকদার ওপরে ওনাকে বসা।
অরিন্দমবাবু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার একটু অসুবিধে হবে কাজে।
-কি কারনে বলছেন।
-স্যাবোটেজ হতে পারে। আপনি যখন এতটাই জানেন তখন এইটুকু নিশ্চই বুঝতে পারছেন।
-অরিন্দমবাবু আপনি আগে কোথায় ছিলেন।
একটা সর্বভারতীয় ইংরাজী দৈনিকের কথা বললেন।
-মিত্রার সঙ্গে আপনার পরিচয়।
মিত্রা বললো, আমার ক্লাবের মিঃ রায় ওনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
-ও। আপনাদের ওখানে মৈনাক আছে না।
-অরিন্দমবাবুর মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।
মিত্রা বললো কে মৈনাক।
-আমাদের সঙ্গে ইংরাজী ডিপার্টমেন্টে পরতো।
-ও। ঐ ফর্সামতো ছেলেটা।
-হ্যাঁ।
-তোর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে।
-ভাইজ্যাক যাওয়ার দুচারদিন আগে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
অরিন্দমবাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম, চম্পকদাকে এখন সরানো যাবে না। আপনি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবুন।
অরিন্দমবাবু চুপচাপ বসে রইলেন।
মিত্রার দিকে তকিয়ে বললাম, কিংশুক বাবু।
-ওনাকে আমি ম্যানেজমেন্ট দেখার জন্য অনুরোধ করেছি।
-ভালো।
-তবে তুই একটা কাজ কর, দায়িত্বটা সকলকে ভাগা ভাগি করে দে।
-তোর মতামতটা বল।
-আজ হবে না। দাদাকি এখানে আছেন। সবাই আমার মুখের দিকে তাকালো।
না। মুম্বাই গেছে।
-কবে আসবেন।
-দুএকদিন দেরি হবে।
-দাদাকে আসতে দে।
-ঠিক আছে।
মিত্রা ওদের দিকে তাকিয়ে বললো যে ভাবে বুবুন বললো ঐ ভাবে কাল থেকে কাজ এগিয়ে নিয়ে যান, কিংশুক বাবু আর অরিন্দমবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনাদের ঘরটা রেডি হোক তারপর অফিসে আসবেন, আপনারা কাজ শুরু করে দিন। ঘরুইবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন, যা যা ডিসিশন হলো সেই মতো কাজ শুরু করুন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলার চেষ্টা করুন।
ঘরুইবাবু একটু আমতা আমতা করে বললেন, আর কয়েকটা দিন আমাকে সময় দিন।
ঠিক আছে তাই হোক।
সুনীতবাবু কিছু বললে পাত্তা দেবার দরকার নেই। বাকিটা কি করে কি করতে হয়, আপনাক বুঝিয়ে বলার দরকার নেই।
ঘরুইবাবু মাথা নীচু করে বললেন না ম্যাডাম আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবো।
সবাই বিদায় নিল।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)