Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
#37
-আসুন।
ভেতরে এসে বসলাম।
সুনীতদা আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন, ম্যাডাম এই হচ্ছে অনিন্দ।
আমি মিত্রার চোখে চোখ রেখেই বুকের সামনে হাত তুললাম।
চম্পকদা বললেন আরে অনিবাবু, ভাইজ্যাক কেমন কাটালে।
-ভাল।
-তোমার আর্টিকেলগুলো কিন্তু এবার খুব একটা জমে নি।
আমি চম্পকদার দিকে একবার তাকালাম, সামান্য হেসে বললাম, চম্পকদা আমি জানতাম আপনি এ্যাডের লোক সাংবাদিকতা নিয়ে কবে থেকে মাথা ঘামাতে শুরু করলেন।
আমার কথায় ঘরটা একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো, মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু বললো না। হেলান দিয়ে চুপচাপ বসেছিল, আর একদৃষ্টে দেখে যাচ্ছিল। হ্যাঁ ম্যাডাম বলুন আমাকে কেন ডেকেছিলেন।
সুনীতদা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- ঐ ব্যাপারটা।
আমি বেশ গম্ভীর হয়ে বললাম, আপনাকে ডিসিশন জানিয়ে দিয়েছি, নতুন কিছু থাকলে বলতে পারেন।
-সেটা আমরা মানতে পারছি না।
-সুনীতদা, আপনি এখন এই হাউসের কোন পজিশনে আছেন আমি জানি না। তবে আমার যিনি রিসেন্ট বস কাম এডিটর ছিলেন তাঁকে আমি এ হাউসে যখন ঢুকি তখন বলেই ঢুকেছিলাম, আমার একটা পা হাউসের বাইরে থাকবে সব সময়, প্রয়োজন পরলে যে পাটা ভেতরে আছে সেটাও বাইরে বার করে নেবো।
-তুমি কি বলতে চাইছো।
-আপনি একজন চিফ এডিটর, বাংলা ভাষাটাও ঠিক মতো বুঝতে পারছেন না।
-হেয়ালী রাখ।
-আমি উঠে দাঁড়ালাম, বুকের কাছে হাতজোড় করে বললাম আমি আসছি।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল, ওর চোখে অনেক না বলা কথা, কিন্তু বুঝতে পারছি এদের সামনে কিছুতেই বলতে পারছে না। আমাকে চেয়ার দেখিয়ে বললেন, বসুন, সুনীতবাবু আপনারা এখন যান আমি ওনার সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি।
এক ঘর ভর্তি লোক সবাই এই কথায় কেমন যেন অবাক হয়ে গেলো, একে অপরের মুখের দিকে তাকালো, আমি বসলাম, একে একে সবাই ঘরের বাইরে চলে গেলো। মিত্রা বেল বাজাতেই সেই ছেলেটিকে দেখলাম, যে আমায় ডাকতে গিয়েছিল, চোখ ভীষণ জালা জালা করছে। মাথা নীচু করে বসে ছিলাম।
-কেউ যেন আমাকে বিরক্ত না করে। বেল বাজালে একমাত্র তুমি আসবে।
-ঠিক আছে ম্যাডাম। ছেলেটি বেরিয়ে গেলো।
আমি মাথা নীচু করে বসেছিলাম, অনেক দিন পর কারুর সঙ্গে এইরকম রাফ ব্যবহার করলাম, নিজেরি খুব খারাপ লাগছিলো, এসির হাওয়াটা ভীষণ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিল।
-কিরে আমার সঙ্গে কথা বলবি না।
-বলুন।
-বাবাঃ, এখনো রাগ পরে নি।
-রাগের কি আছে, চাকরি করতে এসেছি তা বলে নিজের সত্বাকে বিক্রি করতে আসি নি।

মিত্রা নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এলো। আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
-তুই রাগ করলে আমি যাবো কোথায়, আমি বড় একা।
আমি ওর দিকে তাকালাম, ওর চোখ দুটো ছল ছল করছে।
-তুই আমার পাশে থাকবি না।
আমি ওর দিকে তাকালাম। ওর চোখের ভাষা পরার চেষ্টা করলাম, না আমার কলেজ লাইফের মিত্রাই ওর চোখের মধ্যে কোন দ্বৈত সত্বা নেই, একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-তুই এ সব কি করলি।
-আমি করিনি, আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে।
-তার মানে, ব্যবসা করতে বসেছিস, মালকিন হয়েছিস।
-সে অনেক কথা, আর ভাল লাগছে না। তোর সঙ্গে দুমাস আগে দেখা হয়েছিল, তোকে আমার ওখানে যেতে বলেছিলাম, তুই যাস নি।
চুপ করে থাকলাম।
আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মাথাটা ঘুরিয়ে বললো, বল কেন যাস নি।
আমার চোখ দুটো ভারি হয়ে এসেছিল। নিজেকে সামলে নিলাম।
ও আমার পাশে একটা চেয়ার নিয়ে মুখো মুখি বসলো।
-কখন ফিরলি।
-সকালে।
-বাড়ি গেছিলি।
-না।
ফোনটা বেজে উঠলো, বড়মার ফোন, ফোন ধরতেই বড়মার গলায় অভিমানের সুর, কিরে কখন আসবি, আমরা না খেয়ে বসে আছি।
আমি বললাম একটু পরে যাচ্ছি।
বড়মা আমার গলার স্বরে বুঝতে পারলো, কিছু একটা হয়েছে।
-তোর কি হয়েছে।
-না কিছু হয় নি, তুমি এখন রাখো, আমি ঘন্টা খানেকের মধ্যেই চলে যাচ্ছি। মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
-কার ফোন।
-বড়মা। অমিতাভদার স্ত্রী।
মিত্রার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। কি ভাবলো, দুজনেই চুপচাপ বসে আছি, ওর হাত আমার ডান হাতটা ধরে আছে, আমাকে একটা কথা দে।
-কি।
-আজ রাতে আমার বাড়ি থাকবি।
-বলতে পারছি না।
-না তোকে কথা দিতেই হবে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, ওর চোখে নানা বিস্ময়, বললাম ঠিক আছে।
-তুই আমার গাড়ি নিয়ে যা।
-না তা হয় না।
-কেনো।
-এরা কি ভাববে।
-ব্যাবসাটা আমার।
-এরা কেউ জানেনা তুই আমার পূর্ব পরিচিত।
-জানি। সেই জন্য আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি। আমায় তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। তুই আমায় সাহায্য কর। তোর প্রমিসের কথা মাথায় আছে তো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
-খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছিলাম।
-কি।
না জেনে তোর ফাইলটাও সই করে ফেলেছিলাম।
-ভালোইতো।

বাইরের বেলটা বেজে উঠতেই, মল্লিকদা বললো দাঁড়া আমি যাচ্ছি।
ছোটমা বললো, তুমি কথা বলো আমি গিয়ে খুলে দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর ছোটমা ফিরে এলেন হাতে একটা চিঠি। মুখটা কেমন শুকনো শুকনো।
আমি হেসে বললাম কি হলো আবার। আমার হাতে চিঠি দিয়ে বললো, তোর চিঠি।

খামটা হাতে নিলাম। সকলে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কেমন যেন ভয় ভয়।
আমি চিঠিটা খুললাম, মিত্রার চিঠি। গাড়ি পাঠালাম, চলে আয়, অমিতাভদা, মল্লিকদা, বড়মা ছোটমাকে আমার প্রণাম দিস, দেরি করিসনা। মিত্রা।

চিঠিটা পরা হলে সকলের মুখের দিকে তাকালাম, সবাই উৎসুক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বড়মার হাতে চিঠিটা দিলাম, বড়মা পরা হলে ছোট মাকে দিল, ছোটমা অমিতাভদার হাতে, অমিতাভদা চিঠিটা পরার পর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। মল্লিকদা পরে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসি, ছোটমার দিকে তাকিয়ে বললো, কেশটা বেশ জটিল, বড়মা খেঁকিয়ে উঠলো আর বকিস না, কাগজের এডিটর হয়েছে, দুই মক্কেল বসে বসে বিরাট কাজ করেছেন, সবাই মিলে তোদের তাড়িয়ে দিলে আর তোরা বসে বসে খাবি খাচ্ছিস
- নানা তুমি শোন, অমিতাভদা বলে উঠলেন
-আর শুনে কাজ নেই অনেক হয়েছে, বড়মা বললেন, আমি উঠে পরে বাথরুমে গেলাম, বেরিয়ে এসে বড়মাকে বললাম, আমাকে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করে দাও।

ছোটমা ঘর থেকে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করে আনলেন। আজ আমায় কেউ বাধা দিল না, কেউ কোন প্রশ্ন করলো না। আজ সবাই জানলো সংঘমিত্রা শুধু আমার পরিচিতই নয় খুব ঘনিষ্ঠ।
ওরা সবাই সোফায় বসে গল্প করছিলো। আমি বড়মাকে প্রণাম করলাম, তারপর ছোটমাকে, তারপর অমিচাভদাকে, অমিতাভদা আমার মাথায় হাত রেখে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, চোখদুটো ছল ছল করছে, মুখে করুণ আর্তি, তোর ওপর আজ সব কিছু নির্ভর করছে।
আমি মাথা নীচু করলাম, তুমি এক ভাবছো কেনো। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি আমার সঙ্গে যাবে।
-না।
-তুই যা, তুই যা ডিসিশন নিবি তাই হবে।
মল্লিকদাকে প্রণাম করতে যেতেই বললেন, থাক থাক আমার চেয়ারের একটা বন্দোবস্ত কর, না হলে বেকার হয়ে যাব। এই বুড়ো বয়সে আর ভাল লাগে না।
 
কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, মল্লিকদা আমার মুখটা চেপে ধরলেন, আজ নয় সুখবর এনে বলিস।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘির শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপা্ধ্যায়)) - by MNHabib - 02-11-2021, 07:38 PM



Users browsing this thread: