Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
#17
ঝিমলি এক কথায় আমার সঙ্গে আমার হোটেলে থাকতে রাজি হয়ে গেলো। ও ওর বাড়িতে ফোন করে ওর বাবার পারমিশন নিয়ে নিল। সকাল বেলা ট্রেন যখন ভাইজ্যাকে থামল, টিটি ভদ্রলোক এলেন আমাদের কুপে, আমরা তখন রেডি হয়ে গেছি নামার জন্য একজন ভদ্রলোক ওনার পেছনে এসে দাঁড়াল, জিজ্ঞাসা করল আমি অনিন্দ্য কিনা, আমি একটু অবাক হলাম, উনি বললেন আমি রামাকান্ত, অফিস থেকে আসছি, আমি ওকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম ও আমাদের এখানকার অফিসের কর্মচারী, যাক একটা ঝামেলা চুকলো ওকে সব ব্যাপারটা বলতে ও বলল ও সব জানে, আজ থেকে আমার সঙ্গেই ওর ডিউটি, যতোক্ষণ না আমি এখান থেকে যাচ্ছি। ঝিমলি আমার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসল, রামাকান্ত বলল, স্যার আপনার লাগেজটা দিন আমি গাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখছি। আমি আমার লাগেজ ওকে দিতেই, ও ঝিমলির লাগেজটাও তুলে নিল, ঝিমলি হাই হাই করে উঠল, আমি ওকে চোখের ইশারায় বারণ করলাম।
 
ট্রেন থেকে নেমে টিটি সাহেবকে বিদায় জানালাম, স্টেশনের বাইরে এসে দেখলাম, গাড়ি রেডি আমি ঝিমলি পেছনের সিটে উঠে বসলাম, হোটেলে পৌঁছতে মিনিট দশেক লাগল, হোটেলে চেক ইন করে, নিজের রুমে গেলাম, রমাকান্ত আমাদের সঙ্গেই আমাদের রুম পর্যন্ত এল, ঘরেরে মধ্যে লাগেজ রেখে আমাকে বলল স্যার, আমি এখন অফিসে যাচ্ছি, অফিসে খবর দিচ্ছি আপনি চলে এসেছেন, আমি আবার কখন আসবো? আমি বললাম তুমি এখন যাও, বালচন্দ্রনকে বলবে আমাকে একবার ফোন করতে, আমি আমার ভিজিটিং কার্ডটা ওকে দিলাম। ও সেলাম ঠুকে চলে গেলো।
 
হোটেলের ঘর দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ, এ তো হোটেল রুম নয়, একটা স্যুইট, বিগ বসরা এলে ম্যানেজমেন্ট এ ধরনের বন্দোবস্ত করে থাকেন, আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছিল, আমি কি তাহলে বিগ বস হয়ে গেছি? কিন্তু কার কাছ থেকে জানবো, বড়মাকে একটা ফোন করলাম, জানিয়ে দিলাম, হোটেলে পৌঁছেছি, বিগ বসকে যেন জানিয়ে দেয়, বড়মা জানাল বিগ বস এরি মধ্যে জেনে গেছেন আমি হোটেলে পৌঁছে গেছি। একটা ম্যাসেজ ঢুকলো দেখলাম তানিয়ার কাল রাতে ফোন বন্ধ করে রাখার জন্য অভিমান।
 
ঝিমলি সোফায় গা এলিয়ে বসেছিল, ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম চোখ নামিয়ে নিল, ওকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে,
-কি ভাবছ? এ কোথায় এসে পড়লাম।
-না।
-তাহলে।
-ভাবছি এতোটা সৌভাগ্য আমার কপালে লেখা ছিল।
-কিসের সৌভাগ্য।
-এখানে এক্সাম দিতে এসে এরকম হোটেলে থাকব।
-ধূস, যত সব আজে বাজে কথা।
-নাগো অনিদা সত্যি বলছি, তোমার সঙ্গে দেখা না হলে আমার হয়তো অনেক কিছুই অজানা থেকে যেত।
-আমারো ঠিক তাই। আমার চোখে দুষ্টুমির ঝিলিক।
-যাঃ যতোসব আজেবাজে চিন্তা।
-কি খাবে।
-ফ্রেস হয়ে খাব।
-ফ্রেস হবার আগে কিছু গরম গরম খেয়ে নাও, তারপর দেখবে ফ্রেস হতে দারুণ মজা।
-জানি এ অভিজ্ঞতা তোমার আছে। আমার কাল পরীক্ষা একবার সিটটা কোথায় জানতে যেতে হবে।
-তোমায় চিন্তা করতে হবে না। একটু পরেই বালচন্দ্রন আসবে, ও আমাদের এখানকার ব্যুরো চিফ, ওকে বললেই সব ব্যবস্থা করে দেবে।
ঘরের বেলটা বেজে উঠল, লক ঘুরিয়ে খুলতেই একজন ওয়েটার এসে বলল, স্যার কফি আর কিছু স্ন্যাক্স নিয়ে আসি।
আমি ছেলেটির দিকে তাকালাম, তোমায় কে বলল আমাদের এই সময় এগুলো লাগবে।
-হুকুম আছে স্যার। আমার ওপর এই কামরার দেখভালের দায়িত্ব পরেছে।
-তোমায় কে বলেছে।
-অফিস থেকে।
ঝিমলি এককাত হয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছে, ওর দিকে ছেলেটি একবার তাকাল, তাকানোই উচিত, আমি ওর জায়গায় থাকলে আমিও তাকাতাম।
-ঠিক আছে যাও নিয়ে এসো
মনে হচ্ছে কোন অবস্থাপন্ন গেরস্থের ড্রইং রুমে বসে আছি। ঝিমলির দিকে তাকালাম, ও এবার পাদুটে ওপরে তুলে টান টান হয়ে, শুয়ে পরেছে। শরীরের চরাই উতরাই দেখলে সত্যি নেশা লেগে যায়। কালকের রাতের কথাটা মনে পরে গেল, সত্যি আমি খুব ভাগ্যবান। না হলে এরকম একটা মেয়ে আমার কপালেই বা জুটবে কেন।
 
নিজের ব্যাগ থেকে টাওয়েল আর একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করে নিলাম, আর সাবান শ্যাম্পু। ঝিমলি চোখ বন্ধ করে পরে আছে, কাছে গিয়ে দেখলাম, ঘুমিয়ে পরেছে। ওকে আর বিরক্ত করলাম না। ঘরটা ভাল করে ঘুরে ঘুরে দেখলাম, আবিষ্কার করলাম এই ঘরের ভিতরেও আর একটা ঘর আছে। খুলে দেখলাম, ঐটা আরো সুন্দর, দেখে মনে হচ্ছে শোবার ঘর, পালঙ্ক দেখে এখুনি শুয়ে পরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু না। ঝিমলিকে সারপ্রাইজ দিতে হবে। সত্যি ভাগ্য করে জন্মেছিলাম। জানলার পর্দাটা একটু সরাতেই দেখলাম কাছেই একটা ছোট পাহাড়ের মতো দেখাচ্ছে, কি দারুণ দৃশ্য। সত্যি সত্যি সত্যি তিন সত্যি আমি ভাগ্যবান।
 
হ্যাঁ আজ বলছি আমি ভাগ্য করেই জন্মেছি। কিন্তু যেদিন গ্রাম থেকে শহরে পা রাখলাম, একটা অনাথ ছেলে, শুধু স্যারের একটা চিঠি সঙ্গে করে, আর পকেটে স্যারের দেওয়া কিছু টাকা, আসার সময় স্যার খালি বলেছিলেন, কলকাতায় যাচ্ছিস যা, জোয়ারের জলে ভেসে যাস না, নিজের কেরিয়ারটা তৈরি করিস।
 
আমরা, কলেজের ছাত্ররা বলতাম মনা মাস্টার, নিঃসন্তান মনা মাস্টার আমার কারিগর, স্যারের কাছেই শুনেছি। আমার বাবা মনা মাস্টারের বন্ধু, একবছর বন্যায় আমাদের গ্রামে খুব কলেরা হয়েছিল, আমার বাবা মা সেই সময় একসঙ্গে মারা যান, সেই থেকেই আমি গ্রামের ছেলে, তবে মনা মাস্টারের বাড়িতেই বড় হয়েছি। আরো কতো কি যে হয়েছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।

এখনো আমি বছরে একবার গ্রামে যাইঅন্নপূর্ণা পূজোর সময়। আমাদের যা কিছু জমি-জমা সবই মনা মাস্টারের হেফাজতে, ভিটেটায় ভাঙা মাটির দেওয়াল এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জানিনা এ বছর গিয়ে কি দেখবো। বন্ধুরা ঐ সময় সবাই আসে, দেখা সাক্ষাৎ হয়, ঐ দু চারদিন বেশ ভাল লাগে, মা-বাবা কাউকেই মনে পরে না। আমি যখন কলকাতায় আসছি, মনা মাস্টার আমাকে একটা এ্যালবাম দিয়েছিলেন, জানিনা তোর সঙ্গে আমার আর দেখা হবে কিনা, এটা রাখ, এতে তুই তোর পরিবারকে জানতে পারবি।
 
সত্যি কথা বলতে কি গ্রামে থাকাকালীন, মা-বাবা কি জিনিষ জানতে পারি নি। অমিতাভদার বাড়িতে এসে বুঝতে পারলাম, মা কি জিনিষ।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপা্ধ্যায়)) - by MNHabib - 01-11-2021, 02:12 PM



Users browsing this thread: