Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
#8
কুপের এ্যারেঞ্জমেন্টটা খুব ভাল দুদিকে দুটি সীট মাঝখানে একটা সেন্টার টেবিলের মতো, জানলার ধারে মাথার শিয়রে একটা টেবিল ল্যাম্পের মত জেলে দেখলাম বেশ ভাল, যাক ঘুম না আসা পর্যন্ত একটা বই পড়া যাবে, কালকূট সমগ্রের একটা খন্ড নিয়ে এসেছি। ছটা উপন্যাস আছে। ট্রেনটা কত জোরে যাচ্ছে কিভাবে যাচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা, এই কামরারই কয়েকজনের চেঁচামিচির শব্দ কানে আসছে, তারা এখনো গুছিয়ে উঠতে পারে নি।

ফোনটা বেজে উঠল, দেখলাম বড়মার নম্বর, সমস্ত ব্যাপার পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে জানিয়ে দিলাম, শেষে বড়মা বলল সাবধানে থাকিস।
নীচু হয়ে সিটের তলা থেকে ব্যাগটা টেনে বার করলাম, পাম্পার বালিশটা বার করে ফুলিয়ে নিলাম, উপন্যাস সমগ্রটা বার করে কুপের দরজাটা টেনে দিয়ে, টান টান হয়ে শুয়ে পড়লাম, আঃ কি আরাম।

আবার ফোনটা বেজে উঠল, দেখলাম তনুর নম্বর- হাঃ হাঃ করে হাসি, কি হল বাবাজীবন, ট্রেন ছেড়েছে,
-হ্যাঁ।
-এখন কোথায়?
-জানিনা ট্রেন চলছে এটুকু বলতে পারি।
-কেন!
-আরে আমার টিকিট টু টায়ার এসি কোচের একটা কুপে পড়েছে, সেখানে দুটো সিট আছে কিন্তু আমি একা।
-ইস ব্যাডলাক। আমি যাব নাকি।
-চলে এসো।
-ইস শখ দেখ।
-তুমি এখন কোথায়।
-বাড়ি ফিরছি। বড় সাহেবের আজ মাথাটা বেশ গরম।
-কেন? আবার কি হলো।
-অফিসে একটা ঝামেলা হয়েছে।
-কাকে নিয়ে।
-আবার কাকে নিয়ে ঐ চিফ রিপোর্টার।
-তোমার এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছো।
-হুঁ। অনি ভাল লাগছে না, তোমার কথা বার বার মনে পরছে।
-আজকের দুপুরটা তুমি ভাল এনজয় করেছো।
-কেন তুমি করো নি।
-কই করলাম সবই তো তুমি শুষে নিলে, আমি পেলাম কোথায়, ঐ ছিটে ফোঁটায় কিছু হয় নাকি।
-এই জান তোমার ওখান থেকে বেরিয়ে অফিসে এসে দেখি হয়ে গেছে।
-তাই !
-হ্যাঁ। কি বিচ্ছিরি অবস্থা বলতো, ম্যানেজ করে নিয়েছি।
-তনু।
-কি।
-আবার কবে করবো।
-ফিরে এসো।
-এলেই হবে।
-এখন কি করবো?
-কি আর করা যাবে, দুধের সাধ ঘোলে মেটাও।

কুপের দরজাটা কেউ নক করল, শুয়ে শুয়েই বললাম খোলা আছে ভেতরে আসুন।
দেখলাম, টিটি সাহেব এসেছেন উঠে বসলাম, ওনাকে ভেতরে এসে বসতে বললাম, উনি ভেতরে এলেন, আমি ব্যাগ থেকে টিকিটটা বের করে ওনাকে দিলাম, উনি দেখে বললেন, স্যার আপনার কোন অসুবিধা হলে, আমাকে বলবেন।
আমি একটু অবাক হলাম, আমাকে স্যার বলে সম্বোধন করাতে, আমি বললাম একটু কফি পাওয়া যাবে।
অবশ্যই আমি গিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর ঐ যে বললাম এনি প্রবলেম আমাকে একটু জানাবেন। আমি পাশেই আছি।
-ঠিক আছে।
উনি চলে গেলেন, একটু পরেই দেখলাম একজন এসে একটা ট্রে টেবিলের ওপরে রাখল, কফির পট কাপ ডিস দেখে আমার একটু সন্দেহ হল, আমি নিশ্চই কোন সাধারণ ব্যক্তি নই, এদের এ্যারেঞ্জমেন্ট সেই কথাই বলছে, একজন সাধারণ সাংবাদিকের জন্য এরকম ব্যবস্থা। কেমন যেন সন্দেহ হল। মুখে কিছু বললামনা। পকেট থেকে মানিপার্সটা বার করে পয়সা দিতে গেলাম, বলল না স্যার আপনার যখনি যা চাই বলবেন আমরা চলে আসব, একটা বেল দেখিয়ে বলল, এই বেলটা একটু বাজাবেন। আমার সন্দেহটা আরো বাড়ল।
এই ঘরটায় আমাকে বোবা হয়েই থাকতে হবে কারুর সঙ্গে কথা বলার জো নেই। কফি খাওয়ার পর বইটা পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই

হঠাৎ দরজায় টোকা মারার শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দেখলাম, টিটি ভদ্রলোক মুখটা আমসি করে দাঁড়িয়ে আছে।
-সরি স্যার ডিসটার্ব করলাম যদি একটু পারমিসন দেন তাহলে একটা কথা বলবো।
-আমি একটু অবাক হলাম, বলুন,
-স্যার আপনার এই কুপে একটা সিট খালি আছে একজন ভদ্রমহিলাকে যদি একটু লিফট দেন ?
-আমি লিফ্ট দেবার কে, ফাঁকা আছে, আপনি এ্যালট করবেন।
-না স্যার এই কুপটা আজ শুধু আপনার জন্য, জি এম সাহেবের হুকুম।
-হ্যাঁ স্যার, এবং আপনার যাতে কোন অসুবিধা না হয়, তার জন্যও আমাদের নির্দেশ দেওয়া আছে।
-তাই নাকি। এজিএম মানে সোমনাথ মুখার্জী।
-হ্যাঁ স্যার।
এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম, ঠিক আছে আপনি যান, ওনাকে নিয়ে আসুন।
চোখের নিমেষে ভদ্রলোক অদৃশ্য হয়ে গেলেন, কিছুক্ষণ পরে বছর কুড়ির একজন তরুণীকে নিয়ে এসে হাজির।
দেখেই আমার চোখ স্থির হয়ে গেলো।
গায়ের রং পাকা গমের মতো, পানপাতার মতো লম্বাটে মুখ ঠোঁটের ঠিক ওপরে একটা বাদামী রং-এর তিল। পিঠময় মেঘের মতো ঘন কালো চুল মাঝে কিছুটা হাইলাইট করা। চোখে রিমলেস চশমা। উদ্ধত বুক। পরনে থ্রি কোয়ার্টার জিনসের প্যান্ট এবং টাইট একটা হাতাকাটা গেঞ্জি।
টিটি ভদ্রলোক আমার পরিচয় ওকে দিতেই আমি হাত তুললাম।
আমি ঝিমলিকে আপনার সব কথা বলেছি, তাছাড়া সোমনাথ বাবুও ওকে সব বলেছে। ঝিমলির বাবা আমাদের ডিভিশনের এজিএম। উনিও আপনাকে খুব ভাল করে চেনেন আপনার লেখার খুব ভক্ত।
মোবাইলটা বেজে উঠল, পকেট থেকে বার করতেই দেখলাম, বড় সাহেবের ফোন। তুই এখন কোথায়?
-কি করে বলবো, একটা কুপের মধ্যে টিকিট কেটেছ, আমি এতটা ভি আইপি হয়ে গেছি নাকি?
-সারা রাতের জার্নি তোর মা বলল…..
-ও। আমরা এখন কোথায় আছি? টিটি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।
-খড়গপুর ছেড়ে এলাম।
-শোন আমরা এখন খড়গপুর ছেড়ে এলাম।
-ও। শোন সোমনাথ ফোন করেছিল ওদের এক কলিগের মেয়ে কি পরীক্ষা আছে, তোর স্টেশনেই নামবে, আমাকে রিকোয়েস্ট করেছিল, তোর কুপে পারলে একটু ব্যবস্থা করে দিস, আর তোর বড়মাকে বলার দরকার নেই।
হাসলামওরা আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।
-আচ্ছা আচ্ছা, দু একটা ভাল লেখা কাল পরশুর মধ্যে পাঠাস।
-ঠিক আছে।
আমার কথাবার্তা শুনে ওরা বুজে গেছে আমি কার সঙ্গে এতক্ষণ কথা বলছিলাম। টিটি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললাম, কটা বাজে।
-দশটা পনেরো।
-একটু কিছু খাওয়াতে পারেন। আমার গেস্ট এলেন।
-ওকে স্যার গেস্ট বলবেন না। ঠিক আছে আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-আর একটু কফি।
-আচ্ছা স্যার।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘির শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপা্ধ্যায়)) - by MNHabib - 01-11-2021, 11:41 AM



Users browsing this thread: