Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
#3
চা টোস্ট খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১১টা বাজে, মোবাইলটা বেজে উঠল, তনুর ফোন, কানে ধরতেই খিল খিল করে হেসে উঠল কি সাহেব, টিকিট হাতে ধরিয়ে দিয়েছে,
-কিসের টিকিট?
-ভাইজ্যাকের।
-না। ধরাবে।
-বাঃ বাঃ তুমি কি এখন অফিসে না বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছ।
-এই মাত্র অমিতদার ঘর থেকে বেরোলাম।
-বাঃ আমি এখন কালীঘাটে আছি, ফ্ল্যাটে গিয়ে একটা মিস কল মেরো। তুমিতো আর ফোন করবেনা, যাওয়ার আগে একবার……
-আমার যাবার ব্যাপার তুমি জানলে কি করে।
-আরে বাবা তুমি হচ্ছ সুপার বসের কাছের লোক তোমার প্রতি কতজনের নজর আছে তা জান, হাঁদারাম।
-ঠিক আছে।
-বড়মাকে ফোন করলাম|
-হ্যাঁ বল, সব শুনেছি, তোকে একেবারে খাটিয়ে খাটিয়ে মারলে, দাঁড়া আজ আসুক একবার দেখাচ্ছি মজা, তোদের অফিসে তুই ছাড়া কি আর কেউ নেই রে।
-তুমি বলো।
-তুই কখন আসছিস।
-আমি পাঁচটার সময় যাবো অফিসে কিছু কাজ আছে, করে একটু ফ্ল্যাটে যাব তারপর তোমার কাছে যেতে যেতে ৫টা হবে।
-কি খাবি।
-তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি গিয়ে তোমার কাছে ভাত খাব।
-ঠিক আছে।
-নিউজ রুমে আসতেই মল্লিকদা বলল, হল সব কথা।
-হ্যাঁ।
-মুখটা ওরকম গোমড়া কেন।
-ভাল লাগে বলো, এই দুদিন আগে ফিরলাম, আজই বলে তোকে যেতে হবে।
-হক কথার এক কথা, আমি একটা তোকে কথা বলি, আমি মল্লিকদারমুখের দিকে তাকালাম, নিশ্চই কোন বদ বুদ্ধি আছে।
-দুই একটা আর্টিকেল খারাপ কইরা লেইখা দে। বেশ কেল্লা ফতে।
-তোমার সব তোলা থাকছে ঠিক জায়গায় নালিশ হবে মনে রেখো।
-এই দেখো গরম খাইলি।
-কি আছে দাও তাড়াতারি লিখে দিয়ে কেটে পরি।
-ঐ মায়াটার লগে…..
-আবার….
-ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুমি এখন আইতে পার।
-আমিতাভদা বলল কি কাজ আছে।
-ছিল ডিস্ট্রিবিউট হয়ে গেছে।
-বাঃ বেশ বেশ।
-কবে আসা হচ্ছে।
-দিন পনেরোর জন্য যেতে হবে।
-ও।
-তাহলে আমি এখন আসি।
-হ্যাঁ যাও বিকেলে দেখা হবে।
-ঠিক আছে।
নিউজরুম থেকে বেরোতেই হরিদার সঙ্গে দেখা।
-কোথায় যাচ্ছ?
-কেন?
-বাবু একবার ডাকছেন।
-আবার কি হলো ?
-আমি কেমন করে জানবো।
এডিটর রুমে ঢুকতেই দেখলাম অমিতাভদা আমাদের হাউসের আজকের কাগজটা পড়ছেন, আমাকে দেখেই মুখটা তুললেন, একটু আগে যারা ছিল তারা সবাই বেরিয়ে গেছে। আমাকে বললেন তুই বোস তোর সঙ্গে একটু দরকার আছে।
আমি একটু অবাক হলাম, আমার সঙ্গে আবার কিসের গোপন বৈঠক! সরাসরি মুখের দিকে তাকালাম, একটা র্দীঘশ্বাস ফেলে বললেন -একটু চা খাবি?
মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলাম
হরিদা দুকাপ চা দিয়ে গেলো, তোর কোন তাড়াহুরো নেই তো
মনে মনে ভাবলাম আজ কপালে আমার দুঃখ আছে। নিশ্চই তানিয়ার ব্যাপারটা সাহেব জেনে ফেলেছে। কে জানাল ব্যাপারটা। তানিয়া নিশ্চই নয়। তাহলে! না গতকাল যে লেখাটা জমা দিলাম সেই লেখার ব্যাপারে কিছু।
চায়ের কাপে দীর্ঘ চুমুক দিয়ে আমাকে বললেন, তুই সংঘমিত্রা ব্যানার্জ্জীকে চিনিস?
আমি অমিতাভদার চোখে চোখ রেখে কিছু বোঝার চেষ্টা করলাম।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললাম- চিনি, কেনো?
-সেদিন ফোন করে তোর কথা জিজ্ঞাসা করছিল, তখন তুই শিলিগুড়িতে ছিলি, আমাকে তোর ফোন নম্বর জিজ্ঞাসা করলো, আমি বলতে পারলাম না
-আর কি বললো ?
-না আর কিছু নয় এই আর কি…… অমিতাভদা কথাটা বলে আমার চোখে চোখ রেখে একটু থেমে গেলেন
-তোর বড়মা জানে ?
-না
-ওর সঙ্গে যে তোর পরিচয় আছে আগে তো কখনো বলিস নি
-ও কে যে ওর কথা তোমাদের বলতে হবে ?
-আরি বাবা বলিস কিরে, ওর জন্যই তো আমরা দুটো খেয়ে পরে বেঁচে আছি রে?
-তার মানে!
-আরে পাগল ও আমাদের এই কাগজ কোম্পানীর ৭৫ শতাংশ শেয়ার হোল্ড করে আছে, আমাদের মালিক তোরও মালিক
মাথাটা বারুদের মতো গরম হয়ে গেলো, চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে| আমি সরাসরি অমিতাভদার চোখে চোখ রাখলাম
-আর কি বলেছে?
না আর কিছু নয়, বললো তুই এখানে কার সোর্সে এসেছিস তোকে কে রিক্রুট করেছে এই সব আর কি
-তুমি কি বললে ?
-আমি বললাম তুই শুভঙ্করের থ্রু দিয়ে এসেছিস, শুভঙ্কর আমার বন্ধু, তা দেখলাম ও শুভঙ্করকেও চেনে
-ও, আর কি বললো?
-বাবাঃ, তুই আমাকে এ ভাবে জেরা করছিস কেনো, আমি তো তোকে খালি জিজ্ঞাসা করলাম মাত্র
-ব্যাপারটা যখন আমাকে নিয়ে তখন আমাকে ভাল করে জানতে হবে তাই
অমিতাভদা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল, জানে আমি ভীষণ হুইমজিক্যাল আমাকে এই পৃথিবীতে একমাত্র কন্ট্রোল করতে পারে বড়মা, বড়মা ছাড়া আমি কাউকে এই পৃথিবীতে পাত্তা দিই না, এরকম একবার হয়েছিল একটা লেখা নিয়ে আমি অমিতাভদার বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলাম, এমনকি রিজাইন দেবারও মনস্থির করে ফেলেছিলাম, সে যাত্রায় বড়মা শিখন্ডী হয়ে সব সামাল দিয়েছিলেন। অমিতাভদা ঐ ব্যাপারটা জানেন।
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম, সংঘমিত্রা আমার ক্লাশমেট, কলেজের বন্ধু আমরা একসঙ্গে পড়াশুনো করেছি। শুভঙ্করবাবুর কাছেও এক সঙ্গে পড়েছি।
ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। পেছন ফিরে তাকায় নি। সোজা লিফ্টের কাছে চলে এলাম। দেখলাম লিফ্ট এখন গ্রাউন্ড ফ্লোরে রয়েছে সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে নীচে নেমে এলাম।
মনটা ভীষণ খারাপ লাগল, মিত্রা শেষ পর্যন্ত এখানে ফোন করল কেন! ও এই হাউসের মালিক এইটা বোঝাতেই কি অমিতাভদাকে ফোন করে আমার কথা জিজ্ঞাসা করলো না অন্য কোন অনুসন্ধিতসা।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘির শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপা্ধ্যায়)) - by MNHabib - 01-11-2021, 11:19 AM



Users browsing this thread: