30-10-2021, 11:10 PM
নগর দর্পন
দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করলাম কিন্তু নয়না আসলো না। মেয়েটার উপর মাঝে মাঝে রাগ হয় ভীষন রাগ। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে বদলা এখনো নিতে পারি নি । কি করে জানি না বসের খুব প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠলো এই নয়না । দিন যায় রাত যায় আমার নির্মোহ খেলা থামে না। শিকারী বেড়ালের মত বসে থাকি আশায় , এক দিন আসবে যেদিন নয়না কে নিজের ঘৃণা দিয়ে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দেব তার সুন্দরী হওয়ার অহমিকাকে।
ইস্তিয়াক আমাকে শুধু সমীহ করে না দাদার মত সন্মান দেয়। রায় সাহেব চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলেন এই মাত্র, অফিসের সময় শেষ । আমি নিজেও জানি না কেন আমার এত প্রতিহিংসা নয়নার প্রতি । মেমরি থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে কলকাতায় চলে আসলাম। কলকাতার হেড অফিস আর মেমরির প্রোডাকশন অফিস সামলে সত্যি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি
"দাদা আজ আপনাকে এত অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে কেন? " ইস্তিয়াকের কোথায় নিরবতা খান খান হয়ে গেল । আমি বললাম 'ইস্তিয়াক নয়নার কাছে দিনে দিনে যেন আমি হেরে যাচ্ছি , ওর এত রূপের অহংকার আমার আর সহ্য হচ্ছে না। সপ্তাহে এক বার আমি আর ইস্তিয়াক পার্ক স্ট্রিট এর অফিস এ হানা দি। ইন্টারন্যাশনাল অর্ডার গুলো আমাদেরই সামলাতে হয় দুজনকে । বিকেলের আকাশ টা যেন ভরে উঠেছে কোনো ধীমী সুন্দর ফুলের গন্ধে মন ভরে গেছে ।আমার কোনো তাড়া নেই , তাই আজ আর গাড়ি নিয়ে গতির পাল্লা দিতে ইচ্ছে হলো না , আর আমার নতুন গাড়িটাকে একটু যত্ন করি। " তোর কি মনে হয় ইস্তিয়াক , আমাদের চিন্তা ভাবনা গুলো সব কি ভুল ?"
ইস্তিয়াক কিছু না বলে মুখে সিগারেট ধারায়। " তবে দাদা রায় সাহেবের সেক্রেটারি বলেই হয়ত জোর নয়নার অনেক বেশি।কোনো ভাবে রায় সাহেবকে সরাতে পারলে তবেই নয়নার বিহিত সম্ভব ।" সো সো করে ঝড়ের গতিতে মেমরি লোকাল টা পাস করলো ! এই ভাবেই কত জীবনের যবনিকা পাত হয় এক পলকে , আবার মনের স্মৃতি গুলো মাথা জাগিয়ে ওঠে তুলাদণ্ডের মতো , আর শান্ত মন বিচার করতে চায় কি ভুল আর কি ঠিক ।
সিগারেটের টান মারতে মারতে জিজ্ঞাসা করলাম " তোর্ রাগ হয় না ?" ইস্তিয়াক হালকা হেঁসে বলে " আগে হত এখন অভ্যেস ।' দু পাশে ধানক্ষেত দিয়ে গাড়ি ছুটছে টিপ্ টিপ্ বৃষ্টি কে পিছনে ফেলে , আমরাও ছুটছি গন্ত্যব্য অজানা। শির শির করে হালকা হাওয়ায় মন ফুরে ফুরে লাগছে দুজনের । অভিমান আছে কিন্তু অনুরাগ নেই । সেই দিনটার কথা আজও মনে পরে , যেদিন কাজলি পিসির কান্না ধরে রাখতে পারছিল না আমায় ! সুনীল পিসেমশাই কার্ডিয়াক অর্রেস্ট এ মারা গেলেন। সবে নয়না ১৮ থেকে ১৯ এ পা দিয়েছে , পিসির ৩৬- বা ৩৮ হবে , হয়তো সংসারটা ভেসেই যেত । এক ঝাপটা বৃষ্টি তে চমকে উঠলাম আমি ।
ইস্তিয়াক: "দাদা আপনি তো নয়না দের চেনেন জানেন , তাহলে ওদের উপর আপনার এত রাগ কেন ?"
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তখন মায়া হয়েছিল , যেন সদ্য আধফোটা কুড়ি। কঠিন বাস্তবের সামনে দাঁড়িয়ে রক্ত ঝরছে তার বুকে । তার পরের গল্পটা আজ ইতিহাস , পেরিয়ে এসেছি ৬ টা বছর । হেমন্তের গন্ধ হয়তো নাকেই লাগত না এত গুলো বছর , যদি নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দিতে গিয়ে সমাজের এত বিদ্রুপ গ্লানি মাথায় নিয়ে বোঝা বেড়াতে হতো ! কাজল পিসির বাড়িতে আমার নিয়মিত আশা যাওয়া , এক কথায় আমার নিজের ঘর , আমার স্ত্রী তখন আসে নি আমার জীবনে । যদিও আমার জীবনে স্ত্রী এসে কোনো দিন কোনো কাজে আমায় কিছুতেই বাঁধা দেয় নি।
দেখতে দেখতে ওদেরই একজন হয়ে উঠেছিলাম আমি , যেমন করে ছোট্ট একটা অর্কিড বেচে থাকে বড় কোনো আশ্রয়ে। আমি ভাবি নি কোনো লোভ , কোনো মোহ , কিন্তু সেদিনের রাত আজ ও আমাকে কুরে কুরে খায়। কি ভাবে ভোলা যায় ? কি ভাবে সেই বিদ্যুতের ছটার মত এক ঝলক আগুনের রাশ আমায় শেষ করে দিয়েছে তিলে তিলে। আমায় কাঙ্গাল করে দিয়েছে প্রতিহিংসায় , আর সেই গ্লানি বুকে নিয়ে বেঁচে আছি , যন্ত্রের মত। বি কে রায় এর ফোন-এ বেশ বিরক্ত লাগলো , কারণ তাকে আমি কোনো দিনই বস ভাবতে পারি না , শুধু পদমর্যাদার জন্য তার দাস হয়ে থাকতে হয় । আর তারই অনুগ্রহে তিলে তিলে গড়ে তুলি আমার সোনার সংসার , আমার বাচ্ছা আর আমার এক ধর্ম নিষ্ঠাবতী পত্নী কে নিয়ে। আমার সংসার নয়না কে ক্ষমা করে দিলেও আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি নি আজও। শিকারী বেড়ালের মত ওঁত পেতে থাকি আমার শেষ জুয়া খেলব বলে !
দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করলাম কিন্তু নয়না আসলো না। মেয়েটার উপর মাঝে মাঝে রাগ হয় ভীষন রাগ। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে বদলা এখনো নিতে পারি নি । কি করে জানি না বসের খুব প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠলো এই নয়না । দিন যায় রাত যায় আমার নির্মোহ খেলা থামে না। শিকারী বেড়ালের মত বসে থাকি আশায় , এক দিন আসবে যেদিন নয়না কে নিজের ঘৃণা দিয়ে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দেব তার সুন্দরী হওয়ার অহমিকাকে।
ইস্তিয়াক আমাকে শুধু সমীহ করে না দাদার মত সন্মান দেয়। রায় সাহেব চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলেন এই মাত্র, অফিসের সময় শেষ । আমি নিজেও জানি না কেন আমার এত প্রতিহিংসা নয়নার প্রতি । মেমরি থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে কলকাতায় চলে আসলাম। কলকাতার হেড অফিস আর মেমরির প্রোডাকশন অফিস সামলে সত্যি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি
"দাদা আজ আপনাকে এত অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে কেন? " ইস্তিয়াকের কোথায় নিরবতা খান খান হয়ে গেল । আমি বললাম 'ইস্তিয়াক নয়নার কাছে দিনে দিনে যেন আমি হেরে যাচ্ছি , ওর এত রূপের অহংকার আমার আর সহ্য হচ্ছে না। সপ্তাহে এক বার আমি আর ইস্তিয়াক পার্ক স্ট্রিট এর অফিস এ হানা দি। ইন্টারন্যাশনাল অর্ডার গুলো আমাদেরই সামলাতে হয় দুজনকে । বিকেলের আকাশ টা যেন ভরে উঠেছে কোনো ধীমী সুন্দর ফুলের গন্ধে মন ভরে গেছে ।আমার কোনো তাড়া নেই , তাই আজ আর গাড়ি নিয়ে গতির পাল্লা দিতে ইচ্ছে হলো না , আর আমার নতুন গাড়িটাকে একটু যত্ন করি। " তোর কি মনে হয় ইস্তিয়াক , আমাদের চিন্তা ভাবনা গুলো সব কি ভুল ?"
ইস্তিয়াক কিছু না বলে মুখে সিগারেট ধারায়। " তবে দাদা রায় সাহেবের সেক্রেটারি বলেই হয়ত জোর নয়নার অনেক বেশি।কোনো ভাবে রায় সাহেবকে সরাতে পারলে তবেই নয়নার বিহিত সম্ভব ।" সো সো করে ঝড়ের গতিতে মেমরি লোকাল টা পাস করলো ! এই ভাবেই কত জীবনের যবনিকা পাত হয় এক পলকে , আবার মনের স্মৃতি গুলো মাথা জাগিয়ে ওঠে তুলাদণ্ডের মতো , আর শান্ত মন বিচার করতে চায় কি ভুল আর কি ঠিক ।
সিগারেটের টান মারতে মারতে জিজ্ঞাসা করলাম " তোর্ রাগ হয় না ?" ইস্তিয়াক হালকা হেঁসে বলে " আগে হত এখন অভ্যেস ।' দু পাশে ধানক্ষেত দিয়ে গাড়ি ছুটছে টিপ্ টিপ্ বৃষ্টি কে পিছনে ফেলে , আমরাও ছুটছি গন্ত্যব্য অজানা। শির শির করে হালকা হাওয়ায় মন ফুরে ফুরে লাগছে দুজনের । অভিমান আছে কিন্তু অনুরাগ নেই । সেই দিনটার কথা আজও মনে পরে , যেদিন কাজলি পিসির কান্না ধরে রাখতে পারছিল না আমায় ! সুনীল পিসেমশাই কার্ডিয়াক অর্রেস্ট এ মারা গেলেন। সবে নয়না ১৮ থেকে ১৯ এ পা দিয়েছে , পিসির ৩৬- বা ৩৮ হবে , হয়তো সংসারটা ভেসেই যেত । এক ঝাপটা বৃষ্টি তে চমকে উঠলাম আমি ।
ইস্তিয়াক: "দাদা আপনি তো নয়না দের চেনেন জানেন , তাহলে ওদের উপর আপনার এত রাগ কেন ?"
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তখন মায়া হয়েছিল , যেন সদ্য আধফোটা কুড়ি। কঠিন বাস্তবের সামনে দাঁড়িয়ে রক্ত ঝরছে তার বুকে । তার পরের গল্পটা আজ ইতিহাস , পেরিয়ে এসেছি ৬ টা বছর । হেমন্তের গন্ধ হয়তো নাকেই লাগত না এত গুলো বছর , যদি নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দিতে গিয়ে সমাজের এত বিদ্রুপ গ্লানি মাথায় নিয়ে বোঝা বেড়াতে হতো ! কাজল পিসির বাড়িতে আমার নিয়মিত আশা যাওয়া , এক কথায় আমার নিজের ঘর , আমার স্ত্রী তখন আসে নি আমার জীবনে । যদিও আমার জীবনে স্ত্রী এসে কোনো দিন কোনো কাজে আমায় কিছুতেই বাঁধা দেয় নি।
দেখতে দেখতে ওদেরই একজন হয়ে উঠেছিলাম আমি , যেমন করে ছোট্ট একটা অর্কিড বেচে থাকে বড় কোনো আশ্রয়ে। আমি ভাবি নি কোনো লোভ , কোনো মোহ , কিন্তু সেদিনের রাত আজ ও আমাকে কুরে কুরে খায়। কি ভাবে ভোলা যায় ? কি ভাবে সেই বিদ্যুতের ছটার মত এক ঝলক আগুনের রাশ আমায় শেষ করে দিয়েছে তিলে তিলে। আমায় কাঙ্গাল করে দিয়েছে প্রতিহিংসায় , আর সেই গ্লানি বুকে নিয়ে বেঁচে আছি , যন্ত্রের মত। বি কে রায় এর ফোন-এ বেশ বিরক্ত লাগলো , কারণ তাকে আমি কোনো দিনই বস ভাবতে পারি না , শুধু পদমর্যাদার জন্য তার দাস হয়ে থাকতে হয় । আর তারই অনুগ্রহে তিলে তিলে গড়ে তুলি আমার সোনার সংসার , আমার বাচ্ছা আর আমার এক ধর্ম নিষ্ঠাবতী পত্নী কে নিয়ে। আমার সংসার নয়না কে ক্ষমা করে দিলেও আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি নি আজও। শিকারী বেড়ালের মত ওঁত পেতে থাকি আমার শেষ জুয়া খেলব বলে !