30-10-2021, 10:36 PM
হাতে কোদাল নিয়ে চোখ লাল করা সুজন । মুখে তাড়ির বিশ্রী গন্ধ । ফিরে এসেছে সাগর থেকে চুপি সাড়ে । ছিল না মরমী আশে পাশে । লুকিয়ে দেখেছে অতসীর অভিসার ।
" এই সালা সুমুন্দীর বাচ্ছা । তোর তলে তলে এতো ! কোদাল দিয়ে কুপিয়েই মেরে দোবো তোকে আজ ! " গর্জে উঠেই বসিয়ে দেয় কোদাল সিদ্দের মাথা লক্ষ্য করে । হাত নিয়ে প্রতিহত করতে গিয়ে ধারালো কোদালের মুখ কেটে ফালা করে দেয় সিদ্দের হাত মুহূর্তে । আর হাত থেকে ছিটকে গিয়ে কোদালের পিছনের লোহার বেড় টা গিয়ে সজোরে আঘাত করে সিদ্দের কপালে । গভীর ক্ষত হয়ে ফেটে গেছে কপাল সিদ্দের । একটা চোখ বুঝে গেছে আঘাতে তৎক্ষণাৎ। ধাক্কা মারলো সিদ্দে তার বাবা কে প্রাণের ভয়ে । তাল সামলাতে পারলো না সুজন মাঝি ।
মাঝে অশ্রাব্য গলা গালি ।
" এই শালা তোর মা খানকি , তোকে জন্ম দিযেছে বেজন্মা কোথাকার , তোর একদিন কি আমার একদিন ! তোকে বলি দেব আজ শালা রূপসার চরে !"
মাটিতে ঝুকে টাল খেয়ে লুঙ্গিটা কোনো রকমে কোমরে জড়িয়ে নিলো সিদ্দে । আর দৌড়াতে শুরু করবে বলে উঠে দাঁড়ালো আঘাত সামলে । পাশেই হুর মুড়িয়ে নেশার ঘোরে পরে গেছে সুজন । আর সম্বিৎ ফিরে সিদ্দে কে অমন ভয়ঙ্কর রক্তাক্ত দেখে চেঁচিয়ে উঠলো ছোট মা ।
" একি রে সিদ্দের বাপ্ একি করলি , নিজের ছেলে কে !"
তারই মধ্যে টলতে টলতে উঠে দাঁড়িয়ে আবার নির্মম আঘাত হানলো সুজন অতসী কে । হাত দিয়ে প্রত্যাহত করা ছাড়া বসে আর কিছু করার ছিল না অতসীর , মেয়ের প্রাণ সে । খাটের নিচে রাখা কাস্তে হাতে নিয়ে বার করে সুজনের কোদালের আঘাত সামলাতে চাইলেও পারলো না বসে থেকে । কোদাল এসে কুপিয়ে দিলো অতসীর ঘাড় । বড়ো গাছের মতো এলিয়ে পড়লো অতসী আঘাতে । হাতে পড়ে রইলো ধরে থাকা কাস্তে । ঘাড়ে শুধু চুইয়ে উঠলো খানিকটা রক্ত । না ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে না । অতসীর শরীর কাঁপছে ।
পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে সিদ্দে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রূপসা নদীর পার ধরে । নদীর ধার ধরে রক্তের পথ তৈরী করছে তার দৌড় । সারা গায়ে মাখা রক্ত । কপাল লাল সিঁদুরে মাখা ভর্তি মেঘ ।দু একজন হায় হায় করে চিৎকার করছে । ঠাকুর দালানে দাঁড়িয়ে থাকা মরমীর হাত ধরে আছে সিদাম ।সবার হৈ হট্টগোলে খেয়াল পড়লো তার নদীর পাড়ের দিকে ।
দূরে দাঁড়িয়ে মরমী দেখছে সিদ্দে কে দৌড়াতে । সিদ্দের শরীরের দিকে তাকালেই যে তাকে চিনতে পারে মরমী । ওদিকে তাকালে সূর্যের আলোতে সব কালো কালো লাগে । বিকেলের অন্ধকার নামে নি ।শরিরটা রুদ্ধশ্বাসে দৌড়াতে দৌড়াতে ঝপ করে নদীর পাড়ের কোথাও মাথা গুঁজে পড়ে গেলো । না আর নড়ছে না ।
একটা দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেললো মরমী ।
কোলাহলের উৎসবে ভালোবাসার হৃৎপিণ্ড কখনো কখনো শান্ত হয়ে যায় । প্রতিধ্বনি দেয় না সে মন । তুমুল আর্তনাদ আর কান্নার রোল পড়েছে মুহুর্মুহু মরমীর ঘরের চারপাশে । উদ্ভ্রান্তের মতো পাগল হয়ে ছোটাছুটি করছে সুজন কোদাল হাতে । না কাওকে মারতে না । হায় হায় করছে সে । বুকে আক্ষেপ আর চোখে শুন্য দৃষ্টি ।
চেঁচাচ্ছে পাগলের মতো সুজন " হ্যাঁ সব শেষ হয়ে গেছে , সব শেষ ! হা হা হা হা " আর মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে কেঁদে উঠছে হাউ হাউ করে । গায়ের লোক সুজন কে ধরে বসিয়ে দিলো এক জায়গায় ঘরের দুয়ারে । হাত থেকে কোদাল তার পড়ে গেছে অনেক আগেই । দৃষ্টি আগেরই মতো শুন্য । কোঁচড় থেকে মুড়ে রাখা সোনার গলার হার টা চক চক করছে মাটির মেঝেতে । সোনার ধর্ম নেই । সোনার শুধু লোভ হয়, দুঃখ হয় না , আর সোনার হয় বেইমানি । সোনাকে তাই তো ছোয়া যায় না ।
কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস , কেউ সেটাকে তুলে নিলো সন্তর্পনে ।
বুক খালি করে আর দু চারটে শেষ পড়ে থাকা নিঃস্বাস ছেড়ে দেয় মরমী বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ।তাকায় সুদামের দিকে । নতুন সাইকেলে চড়ে পাশের গা থেকে তাকে দেখতে এসেছিলো । সাইকেল সুজনেরই কিনে দেয়া । পিছনে লোহার বসার জায়গায় বসে দেখে নেয় মরমী । হাসি উড়ে যাওয়া মলিন সাদা মুখটায় শেষ বার চেষ্টা করে হাসতে ।
" কিরে পারবি আমায় নিয়ে সাইকেল চালাতে আমি কিন্তু শুধু তোকে ধরে থাকবো ?"
সিদাম হাসে না , প্যাডেলে পা দেয় , চোখে জীবনের নতুন চমক আর প্রত্যয় নিয়ে ।সাইকেলটা গড়িয়ে যায় সব কিছু পিছনে ফেলে মাটির রাস্তায় । কোথাও বুনো আকন্দ ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে । মাটির রাস্তার রেখা ধরে রাস্তার আগাছার উপর দিয়ে রঙিন দুটো প্রজাপতির মতো উড়ে মিলিয়ে যেতে থাকে দুটো সবে রং লাগা জীবন । নাঃ বাবা মার দিকে শেষ বার তাকায় নি মরমী । ঝুকে পড়ে থাকা সিদ্দের শরীরটাকে কেন যেন প্রণাম করতে ইচ্ছে হয় মরমীর । হয় তো তার প্রথম ভালোবাসার উৎসবের উদযাপন ।
শাড়ির খুট দিয়ে এক ফোটা ফালতু উপচে পড়া চোখের জল মুছে নেয় সে । রূপসার চর আর দেখা যাচ্ছে না উদযাপনের হৃৎপিণ্ডে । সাইকেলের ঝাকুনি তে খসে পড়ছে ভালোবাসার গাঁথা বাসি ফুল
গুলো । পাথরের বিগ্রহ আছে , কিন্ত ভগবান নেই ।
কোথাও উৎসবের আকাশে সিদ্দে জাল বুনছে । আর ভোরের ব্যস্ততা তে বিষন্ন পাগলাটে সুজন মাঝির নৌকা ভিড়ে যাচ্ছে ঘাটে । অতসীর নাম টা মুছে গেছে নূর 'র মনেও
, আর ইতিহাস ভুলে গেছে সব সময়ের অন্তরাল । রূপসা আজও খোঁজে মরমীর উদযাপনের হৃদপিন্ড কে ।
রূপসার চরে কখনো ফাঁসির সাজা হয় না । সন্ধ্যের লম্ফ জ্বালিয়ে রেডিওর গান ছাড়ে সুজন । দাবায় বসে , জাল সে বুনতে পারে একদম সিদ্দেরই মতো ।
সমাপ্ত !
" এই সালা সুমুন্দীর বাচ্ছা । তোর তলে তলে এতো ! কোদাল দিয়ে কুপিয়েই মেরে দোবো তোকে আজ ! " গর্জে উঠেই বসিয়ে দেয় কোদাল সিদ্দের মাথা লক্ষ্য করে । হাত নিয়ে প্রতিহত করতে গিয়ে ধারালো কোদালের মুখ কেটে ফালা করে দেয় সিদ্দের হাত মুহূর্তে । আর হাত থেকে ছিটকে গিয়ে কোদালের পিছনের লোহার বেড় টা গিয়ে সজোরে আঘাত করে সিদ্দের কপালে । গভীর ক্ষত হয়ে ফেটে গেছে কপাল সিদ্দের । একটা চোখ বুঝে গেছে আঘাতে তৎক্ষণাৎ। ধাক্কা মারলো সিদ্দে তার বাবা কে প্রাণের ভয়ে । তাল সামলাতে পারলো না সুজন মাঝি ।
মাঝে অশ্রাব্য গলা গালি ।
" এই শালা তোর মা খানকি , তোকে জন্ম দিযেছে বেজন্মা কোথাকার , তোর একদিন কি আমার একদিন ! তোকে বলি দেব আজ শালা রূপসার চরে !"
মাটিতে ঝুকে টাল খেয়ে লুঙ্গিটা কোনো রকমে কোমরে জড়িয়ে নিলো সিদ্দে । আর দৌড়াতে শুরু করবে বলে উঠে দাঁড়ালো আঘাত সামলে । পাশেই হুর মুড়িয়ে নেশার ঘোরে পরে গেছে সুজন । আর সম্বিৎ ফিরে সিদ্দে কে অমন ভয়ঙ্কর রক্তাক্ত দেখে চেঁচিয়ে উঠলো ছোট মা ।
" একি রে সিদ্দের বাপ্ একি করলি , নিজের ছেলে কে !"
তারই মধ্যে টলতে টলতে উঠে দাঁড়িয়ে আবার নির্মম আঘাত হানলো সুজন অতসী কে । হাত দিয়ে প্রত্যাহত করা ছাড়া বসে আর কিছু করার ছিল না অতসীর , মেয়ের প্রাণ সে । খাটের নিচে রাখা কাস্তে হাতে নিয়ে বার করে সুজনের কোদালের আঘাত সামলাতে চাইলেও পারলো না বসে থেকে । কোদাল এসে কুপিয়ে দিলো অতসীর ঘাড় । বড়ো গাছের মতো এলিয়ে পড়লো অতসী আঘাতে । হাতে পড়ে রইলো ধরে থাকা কাস্তে । ঘাড়ে শুধু চুইয়ে উঠলো খানিকটা রক্ত । না ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে না । অতসীর শরীর কাঁপছে ।
পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে সিদ্দে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রূপসা নদীর পার ধরে । নদীর ধার ধরে রক্তের পথ তৈরী করছে তার দৌড় । সারা গায়ে মাখা রক্ত । কপাল লাল সিঁদুরে মাখা ভর্তি মেঘ ।দু একজন হায় হায় করে চিৎকার করছে । ঠাকুর দালানে দাঁড়িয়ে থাকা মরমীর হাত ধরে আছে সিদাম ।সবার হৈ হট্টগোলে খেয়াল পড়লো তার নদীর পাড়ের দিকে ।
দূরে দাঁড়িয়ে মরমী দেখছে সিদ্দে কে দৌড়াতে । সিদ্দের শরীরের দিকে তাকালেই যে তাকে চিনতে পারে মরমী । ওদিকে তাকালে সূর্যের আলোতে সব কালো কালো লাগে । বিকেলের অন্ধকার নামে নি ।শরিরটা রুদ্ধশ্বাসে দৌড়াতে দৌড়াতে ঝপ করে নদীর পাড়ের কোথাও মাথা গুঁজে পড়ে গেলো । না আর নড়ছে না ।
একটা দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেললো মরমী ।
কোলাহলের উৎসবে ভালোবাসার হৃৎপিণ্ড কখনো কখনো শান্ত হয়ে যায় । প্রতিধ্বনি দেয় না সে মন । তুমুল আর্তনাদ আর কান্নার রোল পড়েছে মুহুর্মুহু মরমীর ঘরের চারপাশে । উদ্ভ্রান্তের মতো পাগল হয়ে ছোটাছুটি করছে সুজন কোদাল হাতে । না কাওকে মারতে না । হায় হায় করছে সে । বুকে আক্ষেপ আর চোখে শুন্য দৃষ্টি ।
চেঁচাচ্ছে পাগলের মতো সুজন " হ্যাঁ সব শেষ হয়ে গেছে , সব শেষ ! হা হা হা হা " আর মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে কেঁদে উঠছে হাউ হাউ করে । গায়ের লোক সুজন কে ধরে বসিয়ে দিলো এক জায়গায় ঘরের দুয়ারে । হাত থেকে কোদাল তার পড়ে গেছে অনেক আগেই । দৃষ্টি আগেরই মতো শুন্য । কোঁচড় থেকে মুড়ে রাখা সোনার গলার হার টা চক চক করছে মাটির মেঝেতে । সোনার ধর্ম নেই । সোনার শুধু লোভ হয়, দুঃখ হয় না , আর সোনার হয় বেইমানি । সোনাকে তাই তো ছোয়া যায় না ।
কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস , কেউ সেটাকে তুলে নিলো সন্তর্পনে ।
বুক খালি করে আর দু চারটে শেষ পড়ে থাকা নিঃস্বাস ছেড়ে দেয় মরমী বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ।তাকায় সুদামের দিকে । নতুন সাইকেলে চড়ে পাশের গা থেকে তাকে দেখতে এসেছিলো । সাইকেল সুজনেরই কিনে দেয়া । পিছনে লোহার বসার জায়গায় বসে দেখে নেয় মরমী । হাসি উড়ে যাওয়া মলিন সাদা মুখটায় শেষ বার চেষ্টা করে হাসতে ।
" কিরে পারবি আমায় নিয়ে সাইকেল চালাতে আমি কিন্তু শুধু তোকে ধরে থাকবো ?"
সিদাম হাসে না , প্যাডেলে পা দেয় , চোখে জীবনের নতুন চমক আর প্রত্যয় নিয়ে ।সাইকেলটা গড়িয়ে যায় সব কিছু পিছনে ফেলে মাটির রাস্তায় । কোথাও বুনো আকন্দ ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে । মাটির রাস্তার রেখা ধরে রাস্তার আগাছার উপর দিয়ে রঙিন দুটো প্রজাপতির মতো উড়ে মিলিয়ে যেতে থাকে দুটো সবে রং লাগা জীবন । নাঃ বাবা মার দিকে শেষ বার তাকায় নি মরমী । ঝুকে পড়ে থাকা সিদ্দের শরীরটাকে কেন যেন প্রণাম করতে ইচ্ছে হয় মরমীর । হয় তো তার প্রথম ভালোবাসার উৎসবের উদযাপন ।
শাড়ির খুট দিয়ে এক ফোটা ফালতু উপচে পড়া চোখের জল মুছে নেয় সে । রূপসার চর আর দেখা যাচ্ছে না উদযাপনের হৃৎপিণ্ডে । সাইকেলের ঝাকুনি তে খসে পড়ছে ভালোবাসার গাঁথা বাসি ফুল
গুলো । পাথরের বিগ্রহ আছে , কিন্ত ভগবান নেই ।
কোথাও উৎসবের আকাশে সিদ্দে জাল বুনছে । আর ভোরের ব্যস্ততা তে বিষন্ন পাগলাটে সুজন মাঝির নৌকা ভিড়ে যাচ্ছে ঘাটে । অতসীর নাম টা মুছে গেছে নূর 'র মনেও
, আর ইতিহাস ভুলে গেছে সব সময়ের অন্তরাল । রূপসা আজও খোঁজে মরমীর উদযাপনের হৃদপিন্ড কে ।
রূপসার চরে কখনো ফাঁসির সাজা হয় না । সন্ধ্যের লম্ফ জ্বালিয়ে রেডিওর গান ছাড়ে সুজন । দাবায় বসে , জাল সে বুনতে পারে একদম সিদ্দেরই মতো ।
সমাপ্ত !