Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
জীবনের অন্য পৃষ্ঠা - কামদেব
#21
[১৮]

পঞ্চা বেঞ্চে বসে বিড়ি টানছে। দোকান ফাকা, মাঝে মাঝে খদ্দের আসছে, চা খেয়ে চলে যাচ্ছে। পাড়ার ছেলেগুলো সন্ধ্যে হলেই জাকিয়ে বসে আড্ডা দেয়। গমগম করে দোকান। কয়েক কাপ চা খায় সারাদিনে তবু ছেলেগুলোর প্রতি পঞ্চার কেমন মায়া জড়িয়ে গেছে।
বেশি খদ্দের এলে জায়গা ছেড়ে দেয়, এমনি খারাপ না তবে মাঝে মাঝে এমন তর্ক শুরু করে মনে হয় এই লাগে তো সেই লাগে। রাস্তার লোকজন হা-করে তাকিয়ে দেখে। আবার আপনা হতে জুড়িয়ে যায়। ক-দিন ধরে কেউ আসছেনা, ওদের পরীক্ষা চলছে। রাতের দিকে সঞ্জয় আসে, ওর বুঝি আর লেখাপড়া হবেনা। বাপটা কারখানায় কাজ করে, মা শয্যাশায়ী। বোনটা এখনো পড়ছে। খদ্দের ঢুকতে পঞ্চাদা ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
সঞ্জয়কে নিয়ে উমানাথ ঢুকে বলল, পঞ্চাদা আজকের কাগজটা কোথায়? সকালে তাড়াতাড়িতে পড়া হয়নি।
পঞ্চা কাগজ এগিয়ে দিতে উমানাথ চোখ বোলাতে থাকে। পঞ্চা জিজ্ঞেস করে, কাগজে কিছু খবর আছে?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে উমানাথ বলল, সব খবর কি কাগজে বের হয়?
খদ্দের আসতে পঞ্চা ব্যস্ত হয়ে পড়ল। উমানাথ কাগজে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, মাসীমা কেমন আছে এখন?
আগের থেকে কিছুটা ভাল। সঞ্জয় বলল। টুনির জন্য মায়ের যত দুশ্চিন্তা।
সব মায়েরই এই সমস্যা। রতি থাকলে ভাল বলতে পারতো।
দেখা হলেই রতি মায়ের খোজ নেয়। সঞ্জয় বলল।
উমানাথ নিজের মনে হাসে। পঞ্চাদা আবার এসে বসল। সঞ্জয় বলল, তুমি হাসছো কেন?
ওর কথা ভেবে হাসি পাচ্ছে। ওকে কে দেখে তার ঠিক নেই ও অন্যের খোজ নেয়। ছেলেটা একেবারে অন্যরকম।
কার কথা বলছিস? পঞ্চাদা জিজ্ঞেস করল।
রতির কথা বলছি। ছেলেটা যদি একটু সাহায্য পেত অনেক উপরে উঠতে পারত।
ঠিক বলেছিস। ওর দাদাটা একটা অমানুষ। পঞ্চাদা বলল।
কিন্তু আমি একদিনও শুনিনি দিবুদার সম্পর্কে ও কোনো খারাপ কথা বলেছে।
সঞ্জয় বলল, এইটা ঠিক বলেছো। কারো বিরুদ্ধে ওকে কোনোদিন বলতে শুনিনি। আমি একদিন বলেছিলাম, সবতাতে তোর ভাল মানুষী। কি বলল জানো?
উমানাথ কাগজ হতে মুখ তুলে তাকায়। সঞ্জয় বলল, দ্যাখ সবাই আমার মত হবে এমন ভাবা অন্যায় আবদার। আমিও কি অন্যের মত? শালা ওর সঙ্গে তুমি কথায় পারবেনা।
ওদের পরীক্ষা কবে শেষ হবে? পঞ্চাদা জিজ্ঞেস করল।
তার কোনো ঠিক নেই। এতো কলেজ নয়, কারো কাল কারো পরশুমনে হয় এই সপ্তাহে সবার শেষ হয়ে যাবে। উমানাথ বলল।
রাস্তায় টুনিকে দেখে সঞ্জয় উঠে গেল। ফিরে এসে বলল, আমি আসছি উমাদা?
কিছু হয়েছে? উমানাথ জিজ্ঞেস করে।
না না, কে নাকি এসেছে। সঞ্জয় চলে গেল।
উমানাথ কি যেন ভাবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, পঞ্চাদা তোমার ছবিদির কথা মনে আছে?
পঞ্চা মনে করার চেষ্টা করে, উমানাথ বলল, ঐযে পরেশের দিদি।
সে কবেকার কথা। কি কেলেঙ্কারি, আর বলিস না।
অফিস থেকে ফেরার পথে, ছবিদিকে দেখলাম। মনে হল চিনতে পারেনি আমাকে।
না চেনাই ভাল। ওসব মেয়েদের থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল।
উমানাথের মনটা খুত খুত করে। ছবিদির এই পরিনতি হবে কোনোদিন কি ভেবেছিল? বংশের নাম ডুবিয়ে দিল। বিধবা হলে কি এই পথে যেতে হবে? পঞ্চাদা হয়তো ঠিকই বলেছে, ছবিদি এখন অতীত। অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে পাঁকই উঠবে।

বাংলা শিক্ষক রাখার সময় চিন্তা ছিল চিঙ্কি ব্যাপারটা কিভাবে নেবে। এখন দেখছেন মেয়েকে বাংলা শেখাতে গিয়ে হিতে বিপরীত হল। কলেজের পড়া ছেড়ে মেয়ে এখন বাংলা নিয়ে মেতেছে। সুনীল গুপ্ত সপরিবারে আলোচনায় বসেছেন।
কিরে রঞ্জা তুই তো ওর সঙ্গে থাকিস, তোর কি মনে হয়? অঞ্জনা গুপ্ত বললেন।
চিঙ্কির বাংলা প্রেম, ইটস এ্যামাজিং। রঞ্জনা বিস্ময় প্রকাশ করে।
একথা বললে হবে? কি করতে হবে তাই বল।
প্রথমদিন ছেলেটাকে রাগিনীর সঙ্গে দেখে আমার ভাল লাগেনি। কিন্তু ও বলল ওকে চেনেই না।
রাগিনী কে? সুনীল গুপ্ত জিজ্ঞেস করেন।
ওই যে সোসাইটীতে আছে ধ্যান-ফ্যান কি সব করে। তুক তাকও জানে হয়তো।
কি সর্বোনাশ তুই তো আগে কিছু বলিস নি? অঞ্জনা আতকে উঠল। স্বামীকে বলল, শোনো তুমি ঐ মাস্টারকে ছাড়িয়ে দেও। দরকার নেই বাংলা শিখে।
তাতে খারাপ হবে। রঞ্জনা বলল।
কি খারাপ হবে?
রঞ্জনা ঠিক বলেছে। তোমার মেয়েকে তুমি জানো না?
সন্দীপা ঢুকে জিজ্ঞেস করে, বাপি আমাকে ডেকেছো?
বোসো। কলেজের পড়াশোনা কেমন চলছে?
সাডেনলি দিস কোয়েশ্চন? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে সন্দীপা।
না মানে বাংলা শেখার জন্য ক্ষতি হচ্ছে নাতো?
হোয়াই ইউ থিঙ্ক সো? কলেজ ইজ মাই প্রাইমারি দেন আদার।
সাময়িক বন্ধ রাখলে কেমন হয়?
আর ইউ জোকিং? দিস ইজ নট এ্যা গেম বাপি।
গেমের কথা আসছে কেন? গত সপ্তাহে আসেনি তাতে কি ক্ষতি হয়েছে?
মম হি ইজ হিউম্যান বিইং।
ঠিক আছে। তোমার টিচার আবার কবে আসছেন?
নেক্সট সানদে। হি ইজ এ্যাপিয়ারিং এক্সাম।
ঘোষ বলছিল ছেলেটি খুব পুওর ফ্যামিলির ছেলে, বিধবা মা।
সো হোয়াট? হি ইজ কম্পিটেণ্ট এনাফ বাপি।
অঞ্জনা বোনের সঙ্গে চোখাচুখি করে। সুনীল গুপ্তর মনে হয় বিষয়টা নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করলেই জেদ বেড়ে যাবে। তুকতাক ব্যাপারটা তাকে চিন্তিত করে। যদিও এইসব মন্ত্র তন্ত্র তুকতাকে তার তেমন বিশ্বাস নেই। রঞ্জনার মুখে কথাটা শুনে চিন্তিত।
সন্দীপা চলে যেতে অঞ্জনা বলল, তুমি ঐসব বলতে গেলে কেন?
সুনীল গুপ্ত হাসলেন, আর্থিক অবস্থা শুনলে মোহ যদি কেটে যায়।
জাম্বু মোহ অত সহজে কাটেনা। আমাকে দেখে বুঝতে পারছেন না? স্কাউণ্ড্রেলটাকে কি আমি চিনতে পেরেছিলাম?
ওসব কথা থাক রঞ্জা।
কেন থাকবে কেন? তুমি কি বলতে চাইছো?
না আমি কিছু বলতে চাইনা।
তুমি বলতে চাইছো ওকে আমি সারভেণ্ট লাইক ট্রিট্ করতাম?
আমার মাথা ধরেছে আমি উঠছি। অঞ্জনা চলে গেলেন।
নিজের মনে বলতে থাকে রঞ্জনা, বেশ করেছি। ভেড়ুয়া টাইপ পুরুষ আমি দু-চক্ষে দেখতে পারিনা।
সুনীল গুপ্ত অন্য দিকে তাকিয়ে থাকেন। এই ব্যাপারে মতামত দিলে দাম্পত্য অশান্তি হতে পারে। তবে তার মনে হয়েছে পরিস্কার করে না বললেও নানা কথায় মনে হয়েছে সেস্কুয়ালি আনহ্যাপি। ভাল চাকরি করে বয়স তেমন কিছু না, কেন যে বিয়ে করছেনা কে জানে।
কলাবতী কনস্ট্রাকশনের বাইরে মজুর মিস্ত্রীরা বসে আছে। বাবুলালের বউয়ের নাম কলাবতী। ভিতরে কিছুলোক অপেক্ষা করছে। সেই ঘরের ভিতর দিয়ে গিয়ে একটা ঘরে বিশাল টেবিলের ওপাশে মালিক বাবুলাল শিং।
সামনে ইঞ্জিনীয়ার মণ্ডলবাবু। একটি ছেলে ঢুকে বাবুয়ার কানে কানে ফিসফিস করে কি বলতে বাবুয়া অবাক। দেববাবুর বাসায় কয়েকবার গিয়ে ওর স্ত্রী, আলপনা ম্যাডামকে দেখেছে, আলাপ হয়নি। নিরীহ সাধারণ মহিলা, একেবারে তার অফিসে চলে এলেন? বাইরে বেরিয়ে দেখল বছর সাতেকের ছেলে নিয়ে অপেক্ষমান আলপনা ম্যাম। বাবুয়া লজ্জিত গলায় বলল, ভাবীজী আপ? আইয়ে ভিতরে আসুন। এই মুন্না দু-কাপ চা পাঠিয়ে দে।
ভিতরে ঢূকে বলল, মণ্ডলবাবু আপনি পেলানটা বানিয়ে মিন্সিপালিটিতে জমা করে দিন।
মন্ডল বাবু চলে যেতে বাবুয়া বলল, বলুন ভাবীজী?
কাজ কতদুর হোল? আল্পনা জিজ্ঞেস করে।
আর বলবেন না। দুকানদারদের সঙ্গে কথা হয়ে গেছে। এখুন দেবুদার উপর সব ডিপেন করছে।
দ-কাপ চা নামিয়ে রেখে একটি ছেলে চলে গেল।
নিন চা খান। বাবুয়া বলল।
চায়ে চুমুক দিয়ে আলপনা বলল, দেখুন ঠাকুর-পো আপনার দাদার উপর নির্ভর করলে হবেনা। আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে।
বাবুয়া অবাক হয় ভাবীজীকে খুব নিরীহ বলে মনে হয়েছিল। তার ওয়াইফ কলাবতীর মত। কলকাত্তা এসেও গাইয়া রয়ে গেছে।
সোজা আঙুলে কাজ নাহলে অন্য পথ দেখতে হবে। আল্পনা পরামর্শ দিল।
ওর একটা ভাই আছে পাড়ায় বেশ পপুলার।
ওটা দাদার চেয়েও ভীতু, ওকে নিয়ে ভাববেন না। বুড়িটার কিছু ব্যবস্থা করলেই হয়ে যাবে।
আলপনা ভাবীর কথা শুনে বাবুয়া ভাবে ভাবীর সঙ্গে আগে যোগাযোগ হলে ভাল হত।
ঠিক আছে ভাবী। একটা নতুন কাজ শুরু হচ্ছে তারপর ওইদিকটা দেখব। এই মুন্না একটা রিক্সা ডেকে দে।
রত্নাকরের পরীক্ষা খারাপ হয়নি। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা হয়নি অনেক দিন। আরেকটা পেপার আছে পাঁচদিন পর তাহলেই শেষ। স্যাণ্ডিকে বলেছে রবিবারে যাবে, অসুবিধে হবেনা। যাবার পথে একবার পঞ্চাদার দোকানে ঢু মেরে যাবে। কেউ না থাকুক উমাদাকে পাওয়া যাবে মনে হয়। দোকান ফাকা পঞ্চাদা বসে আছে এককোনে। কি ব্যাপার?
পঞ্চাদা বলল, উমাদা হিমু সঞ্জয়ের মাকে নিয়ে অনেক্ষন আগে হাসপাতালে গেছে।
কাল শনিবার পরীক্ষা নেই। রত্নাকর ভাবে হাসপাতালে যাবে না অপেক্ষা করবে? পঞ্চাদা এক কাপ চা দিয়ে বলল, ফেরার সময় হয়ে গেছে। কিছু নাহলে এখুনি ফিরবে।
রত্নাকর চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে, গরীবের সঙ্গেই শুধু কেন এমন হয়। মায়ের পিছনে টাকা কম খরচ হলনা? চা শেষ হবার আগেই উমাদা আর হিমু এল।
কেমন আছে মাসীমা? রত্নাকর জিজ্ঞেস করে।
ডাক্তার দেখছে, এখনই কিছু বলা যাচ্ছেনা। সঞ্জয় আর ওর কে আত্মীয় এসেছে ওরা আছে। সোমবার আমার পরীক্ষা উমাদা কি ভাবছো? হিমু বলল।
ভাবনা তো একটাই। কি যে করবে সঞ্জয়? নিজের পড়া গেছে এবার টুনির পড়াও না শেষ হয়।
রত্নাকর বলল, উমাদা তুমি চিন্তা কোরনা। কাল শনিবার সবাই বেরবো। ফাণ্ড করতেই হবে।
হুট করে কিছু করলেই হল? কিসের ফাণ্ড একটা নাম তো দিতে হবে?
পাড়ায় বেরিয়ে দেখি, সাড়া পেলে ওসবের জন্য আটকাবে না।
ঠিক আছে, কাল অফিস যাবোনা। দেখা যাক পাড়ার লোকজন কি বলে? উমানাথ বলল।
ফাণ্ড করলে আমার একশো টাকা ধরে রাখ। পঞ্চাদা বলল।
এটাকে স্থায়ী করতে হবে। প্রতি মাসে কালেকশনে বের হবো।
সেটা পরে ভাবা যাবে, এখন সঞ্জয়ের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা দরকার। হিমু বলল।
রাস্তা দিয়ে পারমিতাকে যেতে দেখে রতি জিজ্ঞেস করে, এত দেরী?
পরীক্ষা শেষ হল, একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম। হেসে বলল পারমিতা।
এক এক করে সব পঞ্চাদার দোকানে জড়ো হতে থাকে। সঞ্জয়ের মায়ের খবর শুনে আড্ডা তেমন জমল না। রতির প্রস্তাবে সবাই একমত না হলেও স্থির হল কাল বেরিয়ে দেখা যাক।
সুদীপের ইচ্ছে ছিল তনিমার ব্যাপারটা নিয়ে রতির সঙ্গে আলোচনা করবে। অবস্থা দেখে বিষয়টা তুললো না। পরীক্ষা হল থেকে বেরিয়ে তনিমার কলেজে গেছিল, সেখানে গিয়ে শুনলো তনিমা বেরিয়ে গেছে। আরো কিছু ব্যাপার আভাস পেল, বিশ্বাস না করলেও একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: জীবনের অন্য পৃষ্ঠা - কামদেব - by stallionblack7 - 26-04-2019, 08:40 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)