30-10-2021, 03:54 PM
নীরব আহবান
১
সাদা রঙের বল আগে দেখেনি অর্ক। যেমন আগে কখনও দেখেনি এত প্রশান্তি... বাচ্চাদের খেলতে দেখলে এত শান্তি পাওয়া যায় বুঝি? কি জানি? বাচ্চাদের খেলতে ও আগেও তো দেখেছে, মুম্বাইতে যেই ফ্ল্যাটে ও থাকত, সকালবেলা অফিস যাবার সময় প্রায়ই দেখত চার পাঁচটা বাচ্চাকে খেলতে, বিশেষ করে শনি বার, বা রবিবার সকালে ও যখন তানিয়ার সাথে দেখা করতে যেত। কিন্তু এত ভালো লাগেনি কেন?
আসলে কি ঘটছে সেটা বোধহয় আসল কথা নয়, কিভাবে দেখছি সেটাই বোধহয় আসল... কোথায় যেন পড়েছে এই লাইনটা অর্ক। কোন বইয়ে? ও হ্যা! মনে পড়েছে, মালবিকা রায়ের লেখা। অর্কর সবচেয়ে প্রিয় লেখিকা। আহা কি অসাধারন লেখেন, সব বই প্রথম এডিশন কিনে পড়ে অর্ক, আসলে এত কড়া বাস্তব এত সহজে লেখেন মহিলা।
আজকের বাস্তবটাও বাস্তবিক ভাবে ওঁরই লেখা বোধহয়, অর্কপ্রভ সরকারের কোলকাতায় আসার দুটো প্রধান কারনের মধ্যে একটি... “মালবিকা রায়”।
আজ সকালে ৭.৩০ এ কোলকাতায় ফ্লাইট ল্যান্ড করার আগে অব্ধি তো এত কিছু ভাবেনি অর্ক। নাকি ভাবার সময় পায়নি? কিম্বা তানিয়া সময় দেয়নি। অর্কর এত কিছু মনে হয়না। নিজেকে অতন্ত সাদামাটা মনে হয়.... মিডিওকার। যে অফিসে ঠিক করে কাজ করতে পারেনা। ব্যাঙ্ক ব্যালান্স মেইনটেন করতে পারেনা। পারে শুধু উল্টোপাল্টা ভাবতে আর বলতে। তানিয়া ভালোই করেছে। অনেক ভালো ছেলে আছে যাদের কাছে ভাল চাকরি আছে, বৈষয়িক জ্ঞান আছে, দুম করে চাকরি ছেড়ে দেয় না “ভালো লাগছে না” বলে। ওরা সবাই “মোর দ্যান মিডিওকার”। তানিয়াও তাই।
অর্কর প্রথম প্রথম ওকে কেতকী ফুলের মত লাগত, পরের দিকে কেমন যেন খারাপ দেখতে হতে শুরু করল তানিয়া।
অর্ক ফুলগাছ লাগাতে ভালো বাসে। কেতকী ওর প্রিয় ফুল। উফফ বাবা কি ন্যাকা! মাঝে মাঝে নিজেকেই কেমন নিজেকে বোকা বোকা মনে হয় ওর।
ওর মায়ের বোধহয় কেতকী ফুল প্রিয় ছিল, মুম্বাইতে যেই বাড়িতে ওরা প্রথমে থাকত, মানে অর্কর ৭ বছর বয়স অব্ধি। ওই বাড়িতে একটা কেতকী ফুলের গাছ ছিল। তখন থেকেই কেতকী ফুল খুব প্রিয় ছিল অর্কর। বোধহয় ওর মায়েরও, কোনদিন জিজ্ঞেস করার সাহস পায়নি। সময় দুএকবার পেয়েছিল বটে, বোর্ডিং কলেজে যাবার আগের দিন রাতে মা অনেকক্ষন পাশে বসে ছিল, জিজ্ঞেস করতেই পারত। তার পর যেদিন চাকরি পেয়ে মায়ের সাথে মিস্টার পুগুলিয়ার বাড়িতে দেখা করতে গেল শেষবারের মত, জিজ্ঞেস করতেই পারত “মা... কেতকী ফুল কি তোমার প্রিয় ফুল?” করেনি... করতে চায়নি। আর শেষ যেবার দেখা হয়েছিল সেবার জিজ্ঞেস করার উপায় ছিলনা ওর কাছে। সেবার বাবাকেও শেষ বারের মত দেখেছিল। অর্ক মাথা ন্যাড়া হয়নি। অফিসের ছুটিও পায়নি। তবে শ্রাদ্ধের দিন মন্ত্র পড়তে গেছিল অর্ক, সেই পুরোনো বাড়িটাতে। সেদিন বিশেষ কেউ আসেনি, মিঃ পুগুলিয়াও আসেননি। বাবার কয়েকজন বন্ধুবান্ধব, ব্যাস! সব শেষ করে বাড়ির পেছন দিকটায় সাহস করে খুঁজতে গেছিল অর্ক একবার। বাবা লুকিয়ে পেছন থেকে দেখছিল ওকে। কেতকী গাছটা ততদিনে মরে গেছে।
১
সাদা রঙের বল আগে দেখেনি অর্ক। যেমন আগে কখনও দেখেনি এত প্রশান্তি... বাচ্চাদের খেলতে দেখলে এত শান্তি পাওয়া যায় বুঝি? কি জানি? বাচ্চাদের খেলতে ও আগেও তো দেখেছে, মুম্বাইতে যেই ফ্ল্যাটে ও থাকত, সকালবেলা অফিস যাবার সময় প্রায়ই দেখত চার পাঁচটা বাচ্চাকে খেলতে, বিশেষ করে শনি বার, বা রবিবার সকালে ও যখন তানিয়ার সাথে দেখা করতে যেত। কিন্তু এত ভালো লাগেনি কেন?
আসলে কি ঘটছে সেটা বোধহয় আসল কথা নয়, কিভাবে দেখছি সেটাই বোধহয় আসল... কোথায় যেন পড়েছে এই লাইনটা অর্ক। কোন বইয়ে? ও হ্যা! মনে পড়েছে, মালবিকা রায়ের লেখা। অর্কর সবচেয়ে প্রিয় লেখিকা। আহা কি অসাধারন লেখেন, সব বই প্রথম এডিশন কিনে পড়ে অর্ক, আসলে এত কড়া বাস্তব এত সহজে লেখেন মহিলা।
আজকের বাস্তবটাও বাস্তবিক ভাবে ওঁরই লেখা বোধহয়, অর্কপ্রভ সরকারের কোলকাতায় আসার দুটো প্রধান কারনের মধ্যে একটি... “মালবিকা রায়”।
আজ সকালে ৭.৩০ এ কোলকাতায় ফ্লাইট ল্যান্ড করার আগে অব্ধি তো এত কিছু ভাবেনি অর্ক। নাকি ভাবার সময় পায়নি? কিম্বা তানিয়া সময় দেয়নি। অর্কর এত কিছু মনে হয়না। নিজেকে অতন্ত সাদামাটা মনে হয়.... মিডিওকার। যে অফিসে ঠিক করে কাজ করতে পারেনা। ব্যাঙ্ক ব্যালান্স মেইনটেন করতে পারেনা। পারে শুধু উল্টোপাল্টা ভাবতে আর বলতে। তানিয়া ভালোই করেছে। অনেক ভালো ছেলে আছে যাদের কাছে ভাল চাকরি আছে, বৈষয়িক জ্ঞান আছে, দুম করে চাকরি ছেড়ে দেয় না “ভালো লাগছে না” বলে। ওরা সবাই “মোর দ্যান মিডিওকার”। তানিয়াও তাই।
অর্কর প্রথম প্রথম ওকে কেতকী ফুলের মত লাগত, পরের দিকে কেমন যেন খারাপ দেখতে হতে শুরু করল তানিয়া।
অর্ক ফুলগাছ লাগাতে ভালো বাসে। কেতকী ওর প্রিয় ফুল। উফফ বাবা কি ন্যাকা! মাঝে মাঝে নিজেকেই কেমন নিজেকে বোকা বোকা মনে হয় ওর।
ওর মায়ের বোধহয় কেতকী ফুল প্রিয় ছিল, মুম্বাইতে যেই বাড়িতে ওরা প্রথমে থাকত, মানে অর্কর ৭ বছর বয়স অব্ধি। ওই বাড়িতে একটা কেতকী ফুলের গাছ ছিল। তখন থেকেই কেতকী ফুল খুব প্রিয় ছিল অর্কর। বোধহয় ওর মায়েরও, কোনদিন জিজ্ঞেস করার সাহস পায়নি। সময় দুএকবার পেয়েছিল বটে, বোর্ডিং কলেজে যাবার আগের দিন রাতে মা অনেকক্ষন পাশে বসে ছিল, জিজ্ঞেস করতেই পারত। তার পর যেদিন চাকরি পেয়ে মায়ের সাথে মিস্টার পুগুলিয়ার বাড়িতে দেখা করতে গেল শেষবারের মত, জিজ্ঞেস করতেই পারত “মা... কেতকী ফুল কি তোমার প্রিয় ফুল?” করেনি... করতে চায়নি। আর শেষ যেবার দেখা হয়েছিল সেবার জিজ্ঞেস করার উপায় ছিলনা ওর কাছে। সেবার বাবাকেও শেষ বারের মত দেখেছিল। অর্ক মাথা ন্যাড়া হয়নি। অফিসের ছুটিও পায়নি। তবে শ্রাদ্ধের দিন মন্ত্র পড়তে গেছিল অর্ক, সেই পুরোনো বাড়িটাতে। সেদিন বিশেষ কেউ আসেনি, মিঃ পুগুলিয়াও আসেননি। বাবার কয়েকজন বন্ধুবান্ধব, ব্যাস! সব শেষ করে বাড়ির পেছন দিকটায় সাহস করে খুঁজতে গেছিল অর্ক একবার। বাবা লুকিয়ে পেছন থেকে দেখছিল ওকে। কেতকী গাছটা ততদিনে মরে গেছে।