Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
#অণুগল্প

 
বেজার মুখে স্ট্যান্ডে বসেছিল ঝন্টু।
আজ বাজার খুব খারাপ। অবশ্য শুধু আজ না, এই গোটা হপ্তা জুড়েই বাজার খুব খারাপ। পুজোতে 'এদিক যাওয়া যাবে না, ওদিক যাওয়া যাবে না' চলল 'দিন, নো এন্ট্রির চক্করে, তারপর বিষ্টি শুরু হলো তো হলোই। আর এই দু'দিন ধরে চলছে লক্ষ্মীপুজো! লোকজন বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেই না! আর স্ট্যান্ডে শাটল গাড়ি নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে ওদের।
এমনিতেও এবার পুজোতে ওদের রুটে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। কি, না - লোকজনের হাতে এখন টাকাপয়সা বাড়ন্ত। যেন ওদের বাড়িতে পয়সার গাছ লাগানো আছে! ওদের বাড়িতেও তো অভাবের হাঁ মুখ আছে! কিন্তু, বলে আর কি হবে! আর স্ট্যান্ডের সবাইকে দিয়ে ঝন্টুকে বিচার করলে হবে? স্ট্যান্ডের আর কারো কি বাবার করোনা হয়েছিল? অক্সিজেনের অভাবে মর মর হয়েছিল? আর দামী হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল? যাক, টাকা গেছে জলের মতো, কিন্তু তাও মানুষটা ঘরে ফিরেছে... এটা কি কম শান্তির কথা?
তবে হ্যাঁ, লোন হয়ে গেছে অনেক। প্রতি সপ্তাহে লোন নিতে পাড়ায় লোক আসে, গুনেগেঁথে দিতে হয় বকেয়া টাকা। আর তাই আজকাল মেজাজ সবসময় চড়ে থাকে ওর। আর রাগ হলেই মাথার ঠিক থাকেনা। তখন সবাইকে গালাগাল দিয়ে ফেলে ও। প্যাসেঞ্জারদের দেয় না, কিন্তু লাইনের সবাই ঝন্টুর মুখকে ভয় পায়। সেদিন বিশু একটা ভাল কথা বলতে এসেছিল ইয়ার্কির ছলে... সেই নিয়ে এমন করে কথা শুনিয়েছে যে বেচারা মুখ কালো করে সরে গেছিল। পরে খারাপ লেগেছিল ওর... কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তো হয়েই গেছে! ওর সাথে সেভাবে কেউ কথা বলছে না স্ট্যান্ডের। খারাপ লেগেছে, তবে তারপরেই মনে হয়েছে, "ঠিকই আছে! আমি তো বাজে ! আমি কি ভাল ছেলে নাকি, যে ভাল ছেলেদের মতো ভাল ভাল কথা বলব? হুঁহ!"
নিজের মনে এসব এতাল বেতাল ভাবছে, হঠাৎ দেখে লাল শাড়ি পরা একটা মেয়ে এসেছে স্ট্যান্ডে। যাক, এতক্ষণে কেউ এলো, এরপর যদি আরও কয়েকজন আসেন, গাড়ি না ভরলেও ট্রিপ মেরে দেবে ও। দরকারে রাস্তা থেকে কাউকে তুলে নেবে।
দেখে, মেয়েটি লাইনের প্রথমে থাকা ওর গাড়ির দিকে না গিয়ে রেলিং এর কাছে চলে এলো।
"সেক্টর ফাইভ যাবেন তো? ওই যে, প্রথম গাড়িটা... ২৪৩৯, ওটা যাবে।" বলে উঠল ঝন্টু।
"না দাদা, আমার আজ অফিস ছুটি। আমি তো আপনাদের কাছেই এসেছি। ভালোই হলো, আপনার সাথেও দেখা হয়ে গেল!" বলল মেয়েটি।
বলে কি! এমনি হুরী পরী মার্কা একটা মেয়ে নাকি ওর কাছে এসেছে!
কোঁত করে একটা ঢোঁক গিলল ও। তারপর আমতা আমতা করে বলল "-আমার কাছে মানে..."
"আসলে দাদা, আমি থ্যাংকইউ বলতে এসেছি। এই 'দিন আগে আমার একটা ইন্টারভিউ ছিল। এদিকে ক্যাবের ভাড়া অনেক দেখাচ্ছিল। শেষমেষ স্ট্যান্ডে এসে দেখি ওই দুর্যোগের মধ্যেও আপনারা গাড়ি চালাচ্ছেন। এই আপনার গাড়িতেই গেছিলাম আমি। চাকরিটা হয়ে গেছে। কোভিডের জন্য আগের চাকরিটা চলে গেছিল... ইইন্টারভিউ দিচ্ছিলাম, কিন্তু হচ্ছিল না কিছুতেই! তাই ভাবলাম স্ট্যন্ডে আসি, একটু থ্যাংকইউ বলে যাই! আপনার গাড়ির এই 'মায়ের আশীর্বাদ' লেখা স্টিকারটা মনে ছিল... আর এখানে এসে আপনাকেও চিনতে পেরে গেলাম..."
"... বাহ্! খুব খুশি হলাম..." সত্যিই খুব ভাল লাগছিল ঝন্টুর। এতদিন ধরে গাড়ি চালাচ্ছে, এমনি দেখেনি কখনও!
"খুশি তো হবেন দাদা। আপনি, আপনারা সবাই খুব ভাল তো! এই যে দাদা, একটু প্রসাদ এনেছি আমাদের বাড়ির মা লক্ষ্মীর পুজোর। ওই নাড়ু-টাড়ু আর কি... একটু ভাগ করে নেবেন!" মাস্কের আড়ালে হেসে বলে মেয়েটি। তারপর ওর হাতে বেশ বড় একটা প্যাকেট দিয়ে চলে যায়
ঘোর কাটছিল না ঝন্টুর।
ধন্যবাদ জানালো স্ট্যান্ডে এসে একজন প্যাসেঞ্জার!
প্রসাদ দিয়ে গেল!
আবার কি যেন বলল... হ্যাঁ খুব ভাল!
ওকে...ওকে ভাল বলল!
একটু চুপ করে রইল ঝন্টু। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল।
ভাল ছেলে হবে এবার। বিশুকে গিয়ে এক্ষুণি স্যরি বলবে। মন থেকে ক্ষমা চাইলে বিশু ক্ষমা না করে পারবেই না!
আরও একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল ও।
মেয়েটি ওকে গাল ভরে 'দাদা' ডেকে গেল!
আর ওদের গালাগাল বেশিরভাগ কিনা মা আর বোনের নামে!
ইস! ছিঃ!
আগে কেন মনে আসেনি?
নাঃ, এরকম কোনো গালাগাল... ধুত্তোর... কোনো গালাগাল আর দেবে না ঝন্টু।
এবার ভাল ছেলে হবে।
নিজের মনেই হাসতে হাসতে প্রসাদের প্যাকেটটা নিয়ে বিশুর দিকে এগিয়ে গেল ঝন্টু...

Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 26-10-2021, 09:49 AM



Users browsing this thread: 18 Guest(s)