Thread Rating:
  • 106 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) সমাপ্ত :---
এর কয়েক সপ্তাহ পর আকাশের মাধ্যমিক পরিক্ষা শেষ হয়ে গেল। তার কয়েক সপ্তাহ পরে মাধ্যমিক এর রেজাল্ট বার হলে স্টার মার্কস পেয়ে পাস করলো আকাশ। আকাশের টেস্টের রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় যে মা আকাশকে উঠতে বসতে কথা শোনাতেন সেই মা মাধ্যমিকে ছেলের রেজাল্ট ভালো হওয়ায় ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কপালে মুখে চুম্বনের বর্ষা করিয়ে দিলেন। নিজের দেওয়া কথার জন্য আকাশকে অফিস যাওয়ার সময় একটা স্যামসাং এর দামী ফোন আর সাথে একটা আপেলের ল্যাপটপ কিনে দিতে হলো শুভাশীষ বাবুকে ।

শোরুম থেকে বাড়ি ফেরার রাস্তায় আসতে আসতে ফোন আর ল্যাপটপ এর জন্য  আকাশের পা আর মাটিতে পড়ছে না। ‘ কখন বাড়ি ফিরে ফোন ঘাটবো ! ‚ এটা ভেবেই অস্থির হয়ে উঠলো সে। ফ্ল্যাটে ঢুকে এই প্রথম ঘরের দরজা ভেতর থেকে ভেজিয়ে দিলো সে। দুপুরে খাবার সময় ছাড়া আর সারাদিন ঘরের বাইরে এলো না। স্নেহা দেবী ভুরু কুঁচকে তাকালেও কিছু বললেন না। খাটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে 3G internet connection এ দ্রুত নেট সার্ফিং এর মজা সে নিতে শুরু করলো। কয়েক মিনিটে মোবাইলের যাবতীয় খুটিনাটি সিস্টেম সে শিখে নিল।

কলেজ থেকে ফিরেই সুচি আকাশের ফ্ল্যাটে ঢুকে , ভেজিয়ে রাখা দরজা ঠেলে ঘরের ভিতর ঢুকে আকাশের পাশে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো “ কি করছিস ? „

সুচি দরজায় ধাক্কা দেওয়া মাত্রই আকাশ ফোনে একটা গাড়ির রেসের গেম চালু করে দিয়েছিল। আকাশকে চুপচাপ ফোনে গেম খেলতে দেখে সুচি আবার জিজ্ঞাসা করলো “ ফেসবুক ডাউনলোড করেছিস ? „

“ না । „

ভুরু কুঁচকে মুখে বিরক্তি নিয়ে সুচি জিজ্ঞাসা করলো  “ তাহলে কি করলি সারাদিন ? „

“ গেম খেলছিলাম আর ফোনের সেটিংস করছিলাম । „

“ তুই আর তোর খেলা। দে । „ বলে আকাশের হাত থেকে  ফোনটা ছিনিয়ে নিল। আকাশ “ এই ! এই ! „ বলে ফোনটা নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু সুচির হাত থেকে ফোন কেড়ে নিতে পারলো না।

সুচি ফোনটা নিয়ে close all tab করতে গিয়ে দেখলো আকাশের সদ্য চালু করা গেম tab এর পিছনেই যে tab টা আছে সেখানে xnxx লেখা আছে। লেখাটা পড়েই সুচির ভুরু কপালে উঠে কুঁচকে গেল আর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল । xnxx এর ট্যাবটা খুলে তাতে চোখ বুলিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে গর্জিয়ে “ লম্পট , জানোয়ার কোথাকার সারাদিন এইসব দেখছিলি তুই ! „ কথাটা বলে ঠাসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিল আকাশের গালে ।

আকাশও সজোড়ে একটা চড় মারতে গেলো “ আমি দেখছি তাতে তোর কি ? „

বালিশ তুলে আকাশের চড়টা আটকে সুচি বললো “ নোংরা জিনিস দেখছিস আবার মুখের উপর তর্ক করছিস! „  কথাটা বলে সুচি আকাশের ঘামচাতে গেল।

সুচির বড়ো বড়ো নখের জন্য আকাশের গালে দুটো আঁচড়ে গেল । ডান গালে ঠিক কানের পাশে দুটো সরু সরু আঁচড়ের দাগ ফুটে উঠলো। এদিকে আকাশও সুচির মুখ খামচাতে গেল কিন্তু নখ না থাকায় তেমন সুবিধা করতে পারলো না।

ঘরের ভিতর থেকে দাপাদাপির শব্দ আর সুচির মুখের গালাগালি শুনে স্নেহা দেবী হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে দেখলেন খাটের বিছানা অগোছালো , বালিশ নিচে পড়ে আছে। আর খাটের উপর সুচি আকাশকে কামড়াতে যাচ্ছে আর কামড়ানোর হাত থেকে বাচার জন্য আকাশ সুচির মুখটা দুরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে আর বলছে “ রাক্ষস , নরখাদক ! কোথা থেকে শিখেছিস মানুষের মাংস খাওয়া ? „

আর সহ্য করতে পারলেন না স্নেহা দেবী “ এইইইইই ! „ বলে গর্জিয়ে উঠলো

“ কি শুরু করলি তোরা ! থাম বলছি ! রোজরোজ তোদের এইসব আর ভালো লাগে না ! কবে বড়ো হবি তোরা ? „ প্রায় চিল্লিয়ে কানের মাথা খেয়ে কথাগুলো বলে আকাশকে টেনে সরাতে লাগলেন।

ওদিকে কাকিকে আসতে দেখে সুচি আকাশকে ছেড়ে দিয়ে খাটে বসে হাঁপাতে শুরু করলো । আকাশও সুচিকে ছেড়ে দিয়ে খাট থেকে উঠে নিচে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে শুরু করলো ।  এদিকে মা আসার পর থেকেই আকাশের বুকটা ঢিবঢিব করতে শুরু করলো। যদি সুচি মাকে বলে দেয় তাহলে আর আস্ত রাখবে না।

ঠিক এই সময়ে স্নেহা দেবী ছেলের গালে সুচির দুটো নখের আঁচড় দেখতে পেলেন। আকাশের মুখটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখার পর চোখ ঠিকরে বার হয়ে এলো। মুখটা পাথরের মতো শক্ত করে সুচিকে ধমকিয়ে উঠলেন “ সবকিছুর একটা সীমা থাকে সুচি ! তোর সাহস কি করে হলো আমার ছেলের মুখে ওইভাবে আঁচড়ানোর ? „

কাকি যেন তাকে কিছুই বলেনি এমন ভাব করে খাট থেকে আকাশের ফোনটা তুলে কাকির চোখের সামনে ধরে বললো “ দেখো ও কি দেখছিল ! „

“ ইসসসস এতো বড়ো বেইমান এই সুচি আগে জানতাম না। মাকে বললি কেন ! এবার কি হবে... এবার নির্ঘাত মা আমার পিঠের চামড়া তুলে তারপর শান্ত হবে ! „ এই কথাটা ভেবেই ঘর থেকে পালানোর চেষ্টা করতে লাগলো আকাশ ।

বাঙালির মায়ের শুধু দুটো অস্ত্র যথেষ্ট তার ছেলেকে প্যাঁদানোর জন্য। এক হলো হাতের খুনতি আর দুই হলো পায়ের জুতো। কিন্তু এই মুহুর্তে স্নেহা দেবীর হাতে খুনতি ছিল না এমনকি পায়ে জুতোও ছিল না। ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকা 5'6 ইঞ্চি উচ্চতার আকাশের চুল মুঠো করে ধরে পিঠে তিন চারটে কিল চড় দমম দমম শব্দে বসিয়ে দিলেন “ নির্লজ্জ ! বেহায়া ! দিনদিন জানোয়ার তৈরি হচ্ছিস ! কোথা থেকে শিখেছিস এইসব দেখা ? „

“ মা প্লিজ এইবারটি ক্ষমা করে দাও আর কখনো দেখবো না। কথা দিলাম। „ কথাটা বলতে মাথা উঁচু করতেই  মায়ের হাতের আরও দুটো চড় ঠাসসসস ঠাসসস করে আকাশের গালে বসে গেল ।

“ কোথা থেকে এসব দেখা শিখেছিস বল ? জানোয়ার , রকে বসে আড্ডা দে যা । পড়াশোনা আর করতে হবে না । „ বলে আরও দুটো চড় বসিয়ে দিলেন ছেলের গালে। আকাশের দুই গাল একটা টমেটোর থেকেও বেশি লাল হয়ে উঠেছে।

কাকির রুদ্রমূর্তি দেখে সুচি প্রথমেই ভয় পেয়ে গেছিল। আকাশকে বেধড়ক পেটা খেতে দেখে সুচি মনে মনে বললো ‘ কাকিকে বলা একদম ঠিক হয়নি। ‚

সুচি কথাটা ভাবতে ভাবতে খাট থেকে নেমে আকাশের মাকে শান্ত করার জন্য বললো “ কাকি ! কাকি প্লিজ আর মেরো না । „

সুচিকে অগ্রাহ্য করে আরও দুটো চড় বসিয়ে দিলেন আকাশের গালে । সুচি এবার আকাশের মাকে একটু টেনে সরাতেই আকাশ ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে দৌড় মারলো ।

সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে মায়ের এলোপাতাড়ি চড় কিল এর জন্য দাগ পড়ে যাওয়া গালে হাত বোলাতে বোলাতে ফুসতে ফুসতে আপনমনেই বললো “ এক নম্বরের বেইমান। বন্ধুর নামে কলঙ্ক। মাকে বলার কি দরকার ছিল ! নিজে বাঁচার জন্য মাকে বলে দিল । এরপর আর একটাও কথা বলি কি না দেখ ! বন্ধুত্বই রাখবো না। „

আরও নানা ধরনের কথা বলে সুচিকে শাপ-শাপান্ত করতে করতে নিচে নেমে পার্কে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ পর অন্ধকার হয়ে আসলে সোসাইটির গেট দিয়ে বাবার জাগুয়ার গাড়িটা ঢুকতে দেখলো । এদিকে আকাশ টেস্টে যা খারাপ রেজাল্ট করেছিল তার থেকেও খারাপ রেজাল্ট বিপ্লব বিচ্ছু মাধ্যমিকে করলো। তাই তার ঘর বাইরে বার হওয়া নিষিদ্ধ হয়ে গেল।

তারও কিছুক্ষণ পর চুপচাপ উপরে উঠে দেখলো ফ্ল্যাটের দরজা ভেজানো আছে। আকাশ দরজাটা হাল্কা করে ঢেলে ভিতরে ঢুকে নিজের ঘরে গিয়ে দরজার ছিটকিনি দিয়ে দিল । ছিটকিনি দিতে গিয়ে ডান তর্জনীর উপর চোখ পড়তেই সুচির উপর রাগ আরও বেড়ে গেল। ডান হাতের তর্জনীতে সুচির পছন্দ করে দেওয়া আংটিটা এখনও আছে। আংটিটার উপর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর রাগে ফুসতে ফুসতে তর্জনী থেকে আংটিটা খুলে ছুড়ে ফেলে দিল ঘরের এক কোনায়। আংটিটা দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে পাশেই রাখা পড়ার টেবিলের উপর পড়লো।

রাতে শুভাশীষ বাবু খেতে বসলে দেখলেন শুধু তার জন্যেই খাবার বাড়া আছে। ভুরু কুঁচকে স্ত্রী কে জিজ্ঞাসা করলেন “ তোমরা খাবে না ? „

খুব রুক্ষ স্বরে আকাশের মা বললেন  “ না । খিদে নেই । „

আকাশের বাবা স্ত্রীর কন্ঠ শুনেই বুঝলেন যে নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে “ কিছু হয়েছে ? আকাশ কিছু করেছে ? „

আকাশের কথা শুনেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে স্নেহা দেবী বললেন “ তোমার অতো জেনে কি হবে ? বাড়ির কোন খবরটা রাখো তুমি ! কি হচ্ছে কি না হচ্ছে কোনও দিনও জানতে চেয়েছো ? তুমি খেয়ে নাও। আমার খিদে নেই । „

শুভাশীষ বাবু আর কথা বাড়ালেন না। কথা বাড়ালে আরও অনেক কথা হয়তো শুনতে হবে তাই তিনি একাই খেতে শুরু করলেন। খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর তিনি খাটে শুয়ে পড়তেই গভীর ঘুমে ঢলে পড়লেন। এর কিছুক্ষণ পর স্নেহা দেবী আকাশের দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললেন “ এই খেয়ে নে । „

ভিতর থেকে আকাশ রাগী কন্ঠে বলে উঠলো “ আমার খিদে নেই । „

এবার স্নেহা শান্ত কোমল স্বরে বললেন “ মার না খেতে চাইলে চুপচাপ এসে খেয়ে নে । „

মারের ভয়েতে নাকি মায়ের এই কোমল মমতার স্বরের জন্য  আকাশ খাট থেকে উঠে ঘরের বাইরে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লো। আকাশ বসলে স্নেহা দেবী আকাশের জন্য খাবার বেড়ে দিলেন। শুধু একজনের খাবার দেখে আকাশ বললো “ তুমি খাবে না । „

“ না , আমার খিদে নেই । „

“ তাহলে আমারও খিদে নেই । „ আকাশ কথাটা বলে হাত দুটো ভাজ করে এক দৃষ্টিতে ডাইনিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে রইলো। আকাশের কথা শুনে স্নেহা দেবী কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর নিজের জন্যেও খাবার বাড়তে শুরু করলেন । খাওয়া হয়ে গেলে আকাশের মা আকাশকে সোফায় বসিয়ে গালে ডেটল লাগিয়ে দিলেন ।

এর কিছুদিন পর স্নেহা দেবী আকাশ কে ফোন দিয়ে দিলেন। ফোন হাতে পেয়েও সুচির উপর আকাশের রাগ বিন্দুমাত্র কমলো না। দু সপ্তাহ কেটে গেল কিন্তু আকাশ সুচির সাথে একবারও কথা বলে নি। মুখের দিকে তাকায়নি পর্যন্ত

এই কয় দিনে সুচির অনুশোচনা হলো যে ‘ কাকিকে কথাটা বলা ঠিক হয়নি। ‚

দুই সপ্তাহ পর সুমির অফিসে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি পড়লো। তাই সবাই মিলে ঠিক করা হলো শুক্রবার রাতের ট্রেনে পুরী ভুবনেশ্বর গিয়ে ঘুরে আবার বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেনে ফিরবে। তাহলে শুক্রবার আবার সুমি আবার অফিস যেতে পারবে। সমরেশ বাবুও মেয়েদের মন রাখার জন্য অফিসে ছুটির আর্জি দিলেন। ছুটি মঞ্জুর ও হয়ে গেল।

শুক্রবার সুচি একটু তাড়াতাড়িই কলেজ থেকে ফিরলো। সোসাইটিতে ঢুকে দেখলো সোসাইটির মাঠে দেখলো আকাশ খেলছে। কিছুক্ষণ সুচি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার পর আকাশও সুচির দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে আবার ফিল্ডিংয়ে মনোনিবেশ করলো।

আকাশের এই মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় সুচির মনটা হুহু করে উঠলো। ফ্ল্যাটে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে এসে দেখলো একটা ছোট পাত্রে প্রায় পনের কুড়িটা বকফুল আছে। আর পাশেই সুচেতা দেবী দাঁড়িয়ে বেসন গুলছে । বকফুল দেখেই সুচির চোখ চকচক করে উঠলো “ এখন বকফুলের বড়া/পকোড়া করছো ! যেতে দেরি হবে না ? „

“ তোর বাবা আসার আগে আমার হয়ে যাবে। আর এখন কিছু না বানালে তো ট্রেনে ওঠার আগে পর্যন্ত কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করতে থাকবি । „

মোট ছয় দিনের জন্য যাচ্ছে পুরী। এই পুরো সময়ে আকাশের সাথে একবারও কথা হবে না। এই কিছুক্ষণ আগে আকাশ যেভাবে মুখ ঘুরিয়ে নিল সেটা ভেবে সুচি ভাবলো ‘ ওর রাগ ভাঙানো দরকার। ‚ কথাটা ভেবেই মায়ের সাহায্য করতে শুরু করলো সুচি।

বকফুলের বড়া/পকোড়া বানানো হয়ে গেলে একটা প্লেটে নিজের ভাগের পাঁচটা বড়া/পকোড়া নিয়ে আকাশের ফ্ল্যাটে চলে এলো। আকাশ সবে ফুটবল খেলে বাড়িতে ঢুকে হাত পা ধুয়ে সোফায় এসে বসেছে। সুচি আকাশের পাশে বসে প্লেটটা আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিল “ এনে । খা । „

আকাশ সুচির দিকে একটা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রিমোটের বোতাম টিপে টিভি চালিয়ে দিল । আকাশের অবজ্ঞায় বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে সুচি একটা বড়া/পকোড়া তুলে আকাশের মুখের সামনে ধরে বললো “ রাগ করিস নি। দেখ , তোর জন্য নিজের হাতে বানিয়ে এনেছি । „

সুচির বাড়িয়ে রাখা ডান হাতটা ঠেলে আকাশ রাগে ফুসতে ফুসতে বললো “ মায়ের হাতে মার খাইয়ে এখন বড়া খাইয়ে ঢং করতে এসছিস ? „

সুচিকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য বাঁ হাতে আলতো করে ধরে রাখা প্লেটটা ঠং ঠং আওয়াজ করে মেঝেতে পড়ে গেল আর সব বকফুল এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। এই হঠাৎ ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার জন্য দুজনেই প্রস্তুত ছিল না। সুচি কিছুক্ষণ নিজের হাতে বানানো বড়া গুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে প্লেটটা তুলে নিজের ঘরে চলে এলো।

ঘরে যেতে যেতে রাগে ফুসতে ফুসতে সুচি বললো “ এক নম্বরের জানোয়ার তৈরি হচ্ছে। কিছুদিন পর তো চিড়িয়াখানায় যেভাবে লোকে টিকিট কেটে পশু দেখতে যায় ঠিক সেইভাবে একেও টিকিট কেটে লোকে দেখতে আসবে। „

কিছুক্ষণ পর আকাশ যখন শান্ত হলো তখন নিচে পড়ে থাকা বড়া গুলোর দিকে তাকিয়ে অনুশোচনা হলো ‘ এই প্রথম ও নিজের হাতে কিছু বানিয়ে এনেছিল। এইভাবে ফেলে দেওয়া উচিত হয়নি । ‚

রাতে সুচেতা দেবী ঘর বন্ধ করে স্নেহা দেবীকে বললেন “ এই নাও চাবি। আমরা আসছি। একটু দেখো ঘরটা। „

স্নেহা দেবী হেসে বললেন “ তোমরা নিশ্চিন্তে এসো । আর সাবধানে যেও। „

একটা ট্যাক্সি ধরে সুচি সপরিবারে হাওড়া স্টেশনে পৌছে সেখান থেকে পুরী যাওয়ার জন্য ট্রেন ধরলো । সকালে পুরী পৌঁছে একটা সুমির বুক করে রাখা হোটেলে চেক ইন করে সমুদ্র তটে চলে এলো সবাই।

আকাশ ঘুম থেকে ওঠার পর মনটা আরও বেশি ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো গতকাল সন্ধ্যার ঘটনার জন্য। ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে ফেসবুক খুলে সুচিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিল। তিন ঘন্টা পর আবার ফেসবুক খুলে আকাশ দেখলো তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট সুচি একসেপ্ট করেনি । আর প্রোফাইলে সুচি সমুদ্র উপকূলে বালির উপর বসে, দাড়িয়ে, জলে পা ডুবিয়ে, সূর্যের দিকে তাকিয়ে কয়েকটা ফটো ছেড়েছে।ফটো গুলো দেখে আকাশের মুখ বিস্ময়ে হা হয়ে গেল। ‘ ওরা পুরী কখন গেল ? ‚ আকাশ সেই সব ফটোতে লাইক দিয়ে একটা কমেন্ট করে দিল ---- একবারও বললি না তো পুরী যাচ্ছিস !

কয়েক ঘন্টা পর আবার ফেসবুক খুলে আকাশ দেখলো ঠিক তারই কমেন্টের নিচে জয়শ্রী লিখেছে --- বাহ্ সুন্দর দেখাচ্ছে। আর জয়শ্রীর কমেন্টের রিপ্লাইতে সুচি লিখেছে--thank you. কিন্তু আকাশের কমেন্টের কোন রিপ্লাই সুচি দেয়নি । কমেন্টের কোন রিপ্লাই না পেয়ে আকাশ বুঝলো সুচি এখনও রেগে আছে।

পরের দিন সুচি কোনার্কের মন্দিরের কয়েকটা ফটো দিয়েছে। আর কোনার্কের মন্দিরের গায়ে লাগানো পাথরে খোদাই করা বড়ো চাকাটা সুচি ঠেলে ঘোরাতে চাইছে এরকম একটা ফটো দিল। ফটোটার নিচে জয়শ্রী কমেন্ট করেছে --- কিরে! ঘুরলো চাকা ?

আকাশ এবার ‘ যদি রেগে গিয়ে কমেন্টের উত্তর দেয় ‚ সেই আশায় রাগানোর জন্য কমেন্ট লিখলো --- ওই রথে করেই স্বর্গে চলে যা আর আসতে হবে না এখানে  । মা যাতে সন্দেহ না করে তাই মায়ের সামনে সোফায় বসে সারাদিন ফেসবুক খুলে বসে রইলো। এখন কলেজ ছুটি তাই সারাদিন আর কোন ব্যাস্ততা নেই। মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করেছে বলে মাও আর বকছেন না, তাই সারাদিন ফোন খুলে পড়ে রইলো আকাশ। বারবার স্ক্রোল করতে লাগলো শুধু একটা রিপ্লাইয়ের আশায়। পরপর সবার কমেন্টের রিপ্লাই সুচি দিল কিন্তু আকাশের কমেন্টের রিপ্লাই দিল না । কলেজের নতুন বন্ধু বান্ধীদের কমেন্টের রিপ্লাই কিন্তু আকাশের কমেন্টের রিপ্লাই সুচি দিল না। সুচির বয়েই গেছে আকাশের মতো জানোয়ারের কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার।

পরের দিন  puja Done বলে সুচি একটা পোস্ট করলো। এবার আরও একটু রাগানোর জন্য আকাশ লিখলো--- এতো পাপ করেছিস যে এই একটা পুজায় কিছু হবে না। তার জন্য যজ্ঞ করতে হবে ।

কিন্তু এটারও কোন রিপ্লাই সুচি দিল না। মোট সাত দিন পুরী ভুবনেশ্বর থেকে চিল্কা হ্রদ দেখে আরও কয়েকটা ফটো আপলোড করলো সুচি। মায়ের সাথে,বাবার সাথে দিদির সাথে ফটো তুলে আপলোড করলো । প্রত্যেকটা ফটোর নিচে আকাশ একটার বেশি বিভিন্ন ধরনের কমেন্ট করে সুচিকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করলো শুধুমাত্র একবার রিপ্লাই পাওয়ার আশায়। কিন্তু একটা কমেন্টেরও রিপ্লাই সুচি দিল না। এই কয়দিন আকাশের ঘুম মাথায় উঠেছে। সবাইকে রিপ্লাই করছে কিন্তু শুধু ওর কমেন্টের রিপ্লাই দিচ্ছে না এটা ভেবে ভালো ঘুম হচ্ছে না আর , দিন আর কাটতে চাইছে না যেন ! 

শুক্রবার হাওড়া স্টেশনে ফিরে ট্যাক্সি ধরার আগে সুচি স্টেশনের একটা ফটো দিয়ে লিখলো Back to kolkata. লাইনটা পড়েই আকাশের চোখ জ্বলে উঠলো। দেড় ঘন্টা পর সুচেতা দেবী আকাশের মার কাছে থেকে চাবি নিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুললেন  ।

ঠিক সেই সময় আকাশ এসে লিভিংরুমের সোফায় বসে  পাশের ফ্ল্যাটের দরজার খোলার শব্দ আর সাথে সুমির একটা কথা শুনতে পেল --- এবার অফিসের জন্য দৌড়াও আবার সেই বাড়ি-অফিস অফিস-বাড়ি শুরু হয়ে গেল।

এর দশ মিনিট পর আকাশ সোফা থেকে উঠে সুচির ফ্ল্যাটে ঢুকে সুচির ঘরে চলে এলো। তখন দুই বোন গায়ের ওড়না বিছানায় ফেলে ফ্যানের হাওয়া খাচ্ছিল। আকাশ ঢুকেই খাটের উপর বসে থাকা সুচির দিকে তাকিয়ে বললো “ তুই আমার কমেন্টের রিপ্লাই দিস নি কেন ? „

“ অমানুষদের সাথে আমি কথা বলি না । „ আকাশের দিকে না তাকিয়ে ব্যাগ থেকে জামা কাপড় বার করতে করতে বললো সুচি।

আকাশ বুঝলো সেই বকফুলের জন্য সুচি এখনও রেগে আছে “ আচ্ছা আমি কান ধরে ক্ষমা চাইছি । আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দে । „

তবুও সুচির রাগ কমছে না দেখে আকাশ বললো “ এবার কি উঠবোস করবো! „ সুচিকে নিরুত্তর দেখে আকাশ বললো “ নে কান ধরে ওঠবোস করছি ।  এবার তো ক্ষমা করে দে । „

তিন বার কান ধরে ওঠবোস করার পর সুচির ঠোঁটের কোনায় একটা হাসি নিয়ে বললো “ থাক আর ন্যাকামো করতে হবে না । „ বলে ব্যাগ থেকে একটা জিভে গজার প্যাকেট বার করে আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিল ।

আকাশ বুঝলো যে অভিনয়ে কাজ হয়েছে। ঠোটটা দুই গালে যতোটা ছড়ানো যায় ততোটা ছড়িয়ে খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো।

আকাশের চলে যাওয়ার পর সুচি সুমির দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চেয়ারে বসে একমনে তাদেরকেই দেখছে। মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে সে কি ভাবছে, কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছে যে সে কিছু একটা ভাবছে কি ভাবছিস ।

সুমি চেয়ারে বসে ফ্যানের হাওয়া খেতে খেতে এতক্ষণ তার বোন আর আকাশ কেই দেখে যাচ্ছিল। আকাশের ওঠবোস করার সময় সুচির মুখে যে হাসিটা দেখা দিয়েছিল সুমি সেই হাসিটা চিনতে পেরেছিল। মনে মনে বলেছিল --- হ্যাঁ এটা সেই হাসি। সেই আকাশের পরিক্ষা শুরু হওয়ার আগের দিন রাতে সুচি এই হাসিটাই হাসছিল। এতক্ষণ সেই হাসিটাই লক্ষ্য করে বোনের প্রশ্নের উত্তরে খুব আস্তে শান্ত স্বরে জবাব দিল --- “ আমার ভীষণ ভয় করছে । „

“ ভয়! কেন! কিসের ভয় ? „ ভয়ের কথা সুচি নিজেই ভয় পেয়ে গেল। 

কিছু একটা বলতে গিয়ে দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সুমি প্রায় চিল্লিয়ে উঠলো “ নটা বাজতে যায় আর আমি এখনও রেডি হয়নি। ইসস অফিস যেতে দেরি হলে আবার কথা শুনতে হবে। „বলে স্নানঘরে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিল।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 12 users Like Bichitro's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) চলছে :--- - by Bichitro - 24-10-2021, 09:18 AM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)