Thread Rating:
  • 106 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) সমাপ্ত :---
Update 3

দিদির কথা মতো সুচি এই প্রানহীন কংক্রিটের শহরের এক সেরা প্রাইভেট কলেজে ইকোনমিক্স বিষয় নিয়ে B. Com এ ভর্তি হলো । প্রথমদিন বাসের ভিড়ে ধাক্কা খেয়ে গুতোগুতি করে কলেজ গিয়ে ক্লাসরুমে বসলো। প্রায় আশি নব্বই জন ছাত্র ছাত্রী আছে ক্লাসে। সবার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো যদি কোন চেনা মুখ পেয়ে যায় এই আশায়। ঠিক সেই সময় সুচির পাশে একটা ছেলে এসে বসে জিজ্ঞাসা করলো “ চিনতে পারছো ? „

ছেলেটার উচ্চতা 5'8 । সুঠাম চেহারা , হাফ হাতা জামার বাইরে বেরিয়ে থাকা মাসল দেখে বোঝা যাচ্ছে নিয়মিত জিম করে। মুখটা অনেক ছুচালো আর মুখে চাপ দাড়ি গোফ আছে । ছেলেটাকে দেখেই , সুচি এতক্ষণ ধরে যে একটা চেনা মুখ খুঁজছিল সেটা পেয়ে যাওয়ায় খুশিতে তার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। গালে টোল ফেলে সুচি বললো “ গৌরব । তিন বোন না কেন ! আমরা তো একই কোচিংয়ে পড়তাম কিন্তু কখনো আলাপ হয়নি । „

“ এখন তো হচ্ছে । আমার নাম গৌরব সিকদার। এখানে এসে একজন চেনা মুখ পেয়ে যাবো সেটা ভাবিনি ! „

“ আমার নাম সুচিত্রা তালুকদার। আমিও একটা পরিচিত মুখই খুঁজছিলাম। „

“ তুমি কোন কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছো ? „

“ এখনও ঠিক করিনি। আসলে তেমন কোন টিচারকে চিনিও না তাই আর ঠিক করে উঠতে পারি নি ! „

“ তাহলে বাসুদেব স্যারের কাছে ভর্তি হয়ে যাও । আমিও ওনার কাছেই পড়ি। খুব ভালো পড়ান.......

গৌরবের কথা শেষ হওয়ার আগেই একজন লোক ক্লাসে ঢুকলো। আর তাকে দেখেই সবাই শান্ত হয়ে কথা বন্ধ করে বেঞ্চে বসে পড়লো। সুচি আর গৌরব বুঝলো ইনিই ক্লাস টিচার।

কলেজ থেকে ফিরে বিকালে দিদিকে বলে সুচি গৌরবের সাথে বাসুদেব স্যারের কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে গেল।

এর কয়েক মাস পরেই আকাশ মাধ্যমিক পরিক্ষার টেস্ট পরিক্ষা দিল। রেজাল্ট বার হওয়ার পর বাবা মা তেমন সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। প্রথমে তো স্নেহা দেবী খুব বকলেন “ সব সময় টিভি আর খেলা এই টিভিই হয়েছে যতো নষ্টের গোড়া। „

রাতের খাওয়ার সময় শুভাশীষ বাবু ছেলেকে বললেন “ টেস্ট খারাপ হয়েছে এতে ভেঙে পড়িস না। এখনও সময় আছে , ভালো করে মন দিয়ে পড়ে মাধ্যমিক দে। তুই এর থেকেও ভালো রেজাল্ট করতে পারবি আমি জানি । „

বাবার কথায় আকাশ কনফিডেন্স ফিরে পেল । যে যে বিষয়ে নাম্বার কম পেয়েছিল সেই ভাষায় গুলো আরও ভালো করে রিভাইজ দিতে শুরু করলো।

এদিকে বিপ্লব বিচ্ছু আকাশের থেকে ভালো রেজাল্ট করায় তার বাবার কাছ থেকে জোর করে একটা ফোন কিনে নিল। ফোন কেনার দিন বিকালে সোসাইটির পার্কের এক কোনে বসে বিপ্লব ফোন ঘাটছিল । এখন খেললেই মা বকবে তাই আকাশের খেলাধুলা বারন। আকাশ সারাদিন পড়ার পর বিকালে হাওয়া খেতে পার্কে এসে দেখলো বিপ্লব ফোন ঘাটছে । হাতে স্ক্রিনটাচ ফোন। বিপ্লবের পাশে বসে আকাশ জিজ্ঞাসা করলো “ কার ফোন ? কি করছিস ? „

ফোনের উপর থেকে চোখ না সরিয়ে বিপ্লব বললো “ আজকে কিনলাম । বাবা কিনে দিল । „

কথাটা শুনে আকাশ ভোস করে একটা বড়ো নিশ্বাস ছাড়লো। আকাশের এই নিশ্বাস ছাড়া শুনে বিপ্লব ঠোঁটে একটা বাঁকা হাসি নিয়ে বললো “ দেখবি ? দেখলে মুড ভালো হয়ে যাবে । „

বিপ্লব কি এমন দেখার কথা বলছে যেটা দেখলে মুড ভালো হয়ে যাবে? সেটা ভেবেই গলার স্বরে কৌতুহল মিশিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “ কি ? „

“ দেখলেই বুঝবি ।  „ কথাটা বলে বিপ্লব ফোনের গ্যালারি থেকে একটা ভিডিও চালু করে আকাশের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিল ।  ফোনটা হাতে নিয়ে আকাশ দেখলো ভিডিওতে কোন এক বিদেশিনী সুন্দরী মডেল ক্লাস নিচ্ছে আর ক্লাসে ছাত্র শুধু একজন । হঠাৎ ছাত্রটা খাতা থেকে একটা কাগজ ছিড়ে দলা পাকিয়ে ম্যামের দিকে ছুড়ে মারলো। ম্যাম ছাত্রের দুষ্টুমি দেখে তাকে বেঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকতে বললো। ছাত্র দাঁড়াতেই কিছু একটা দেখে আকাশ “ ইসসস ! কি এসব ? „

খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে বিপ্লব বললো “ মজা তো এবার শুরু হয়েছে । তুই দেখ না ! „

আরও কিছুক্ষণ ভিডিও দেখেই আকাশের গা গুলিয়ে উঠলো আর  বমি পেতে শুরু করলো। ম্যাম আর ছাত্র কি সব করছে !! আকাশ বিপ্লবের হাতে ফোনটা দিয়ে দিল “ কি এসব? তুই এইসব দেখিস সব সময় ! „

“ এইসবই তো করে বড়োরা নিজেদের মধ্যে। তারপরেই তো বাচ্চা জন্মায়। তুই শুধু হাইটেই বড়ো হলি , কিছুই শিখলি না । „ তারপর একটু ইয়ার্কি করে বিপ্লব বললো “ তোকে আর মানুষ করতে পারলাম না ! „

বিপ্লবের কথা শুনে আকাশের মুখে হাজারো জিজ্ঞাসার কৌতুহল ফুটে উঠলো। আকাশের মুখ দেখে বিপ্লব বললো “ শোন । তোকে আজ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞান দিই। আগে বল মাসিক কি ? „

জীবনবিজ্ঞান বইতে যা পড়েছিল সেটা বলতে শুরু করলো আকাশ  “ একজন বয়ঃপ্রাপ্ত সুস্থ মহিলার পঁচিশ থেকে ত্রিশ দিন পরপর শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে সেই ডিম্বাণু, সাথে রক্ত ও মিউকাস শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে এই পক্রিয়াকে বলে মাসিক রজঃচক্র । „

বিপ্লব এতক্ষণ  নিরস মুখ করে আকাশের থেকে বইয়ের সংজ্ঞা শুনে বললো “ হ্যাঁ , এবার এই শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে কিভাবে ? মানে শুক্রাণু তো আমাদের ছেলেদের শরীরে থাকে। এই আমাদের শরীর থেকে মেয়েদের শরীরে যায় কি করে ? „

বিপ্লবের কথার কোন উত্তর আকাশের কাছে নেই। কোন বইতে সে পড়েনি। তাই ভুরু দুটো কোঁচকানো ছাড়া সে আর কিছুই করতে পারলো না। আকাশের মুখ দেখে বিপ্লব বললো “ এই ভিডিওতে যেটা দেখলি ! সেইভাবেই আমাদের শরীরের শুক্রাণু মেয়েদের শরীরে যায়। দেখবি আর একবার ভিডিওটা ? „

আর এই জঘন্য নোংরা জিনিস দেখার কোন ইচ্ছা আকাশের নেই। তাই বিপ্লব ভিডিও চালু করার আগেই আকাশ বিপ্লবের পাশ থেকে উঠে বাড়ির দিকে হাটতে শুরু করলো । বিপ্লব আকাশের কিছু না বলে চলে যাওয়া দেখে ফিক ফিক করে শরীর নাড়িয়ে কিছুক্ষণ হেসে আবার ফোনের মধ্যে ডুব দিল।

ফ্ল্যাটে ঢুকে হাত পা ধুয়ে আকাশ আবার পড়তে বসলো। পড়তে বসলেও পড়ায় মন বসাতে পারলো না একদম। সামনে বই খোলা থাকলেও মন পড়ে আছে বিপ্লবের ফোনে দেখা ভিডিওতে। ভিডিওতে যা দেখেছিল সেটা মনে পড়তেই গা গুলিয়ে উঠছে কিন্তু ওই ভিডিওটা বারবার মনে করতে ইচ্ছা করছে। রাতে আর পড়ায় মন বসাতে পারলো না আকাশ। রাতে খেয়ে বিছানার উপর গা এলিয়ে দিয়ে ওই ভিডিওটা আবার দেখতে ইচ্ছা হলো আকাশের ।

সকালে  ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার পরে আবার সেই ভিডিওটা দেখতে ইচ্ছা হলো আকাশের। স্নেহা দেবী ডাইনিং টেবিলে সকালের ব্রেকফাস্ট রাখছিলেন। আকাশ মাকে দেখে গলায় আদর মিশিয়ে আবদার করলো “ মা আমার একটা ফোন কিনে দাও না । „

কথাটা শুনেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে আকাশের মা বললেন “ টেস্টে এত খারাপ রেজাল্ট করার পর তোর সাহস কি করে হলো ফোন চাওয়ার ! „

মায়ের অগ্নিদৃষ্টি আর শাসানি শুনে দমে গিয়ে , মুখটা বাংলার পাঁচ করে সোফায় বসে পড়লো আকাশ । ঠিক সেই সময় আকাশের বাবা সুট প্যান্ট পড়ে হাতে মোজা নিয়ে আকাশের পাশে এসে বসে মোজা পড়তে পড়তে বললেন “ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট কর। শুধু দামি ফোন না ! সাথে ল্যাপটপ ও কিনে দেবো । „

বাবার কথা শুনে আকাশের চোখটা যেন জ্বলে উঠলো। সে সঙ্গে সঙ্গে ডাইনিং টেবিল থেকে লুচি আর কড়াইশুটির আলুর দম  ব্রেকফাস্ট এনে সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতে খেতে শুরু করলো। এখন তো শুধু খাওয়ার সময়েই টিভি দেখার অনুমতি দেওয়া আছে। বাকি সময় বইয়ের মধ্যে মুখ গুজে পড়ে থাকতে হয় । খেতে খেতে আকাশ ভাবতে লাগলো ‘ নতুন উদ্যোমে পড়তে হবে। যে করেই হোক একটা ফোন পেতেই হবে । ‚

এর কয়েক সপ্তাহ পরে সুচির কলেজে ফ্রেসার্স বা নবিনবরণ উৎসব আয়োজিত হলো। এই অনুষ্ঠানে সুচি আরও কয়েকজনের সাথে কয়েকটা মডার্ন গানে নাচলো। বলাবাহুল্য সবচেয়ে নজরকাড়া পার্ফরমেন্স সুচির হলো। সুচির সবকটা নাচ গৌরব নিজের ফোনের ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করে সেভ করে নিল। নাচ শেষ হওয়ার পর গৌরব বললো “ তুমি এতো ভালো নাচো বলনি তো ! „

মুখে মেকি হাসি নিয়ে সুচি বললো “ ওই মাঝেসাঝে একটু আধটু নাচি। মন ভালো থাকে এতে । „

নিয়মিত কলেজ যাওয়া , কোচিংয়ে গিয়ে নোটস নেওয়ার মধ্যে দিয়ে আরও কয়েক মাস কেটে গেল। সুচির প্রতি গৌরব যে দুর্বল সেটা ক্লাসের সবাই বুঝতে পারলো । আর এদিকে আকাশের মাধ্যমিক পরিক্ষা শুরু হয়ে গেল। একদিন কলেজে গিয়ে সুচি শুনলো ম্যাম আজকে আসেননি তাই শেষ ক্লাসের লেকচার হবে না। দুপুরের পরেই আর কোন লেকচার নেই। এই সুযোগে গৌরব ভাবলো ‘ একটু অগ্রসর হলে কেমন হয় ! ‚

বুকটা ঢিবঢিব করতে শুরু করলো গৌরবের। একটু সাহস নিয়ে কথাটা বলেই ফেললো গৌরব “ বাড়ি যাওয়ার কোন তাড়া আছে ? „

“ না , তেমন কোন তাড়া নেই। কেন বলো তো? „

“ তাহলে সিনেমা দেখতে যাবে ? „ জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে গলা শুকিয়ে এলো গৌরবের।

“ মন্দ হয় না । „

খুব উৎসাহেই সাথে গৌরব বললো “ তাহলে দেরি কিসের। চলো । এখন গেলে দুটোর শো টা দেখতে পাবো। „

তারপর দুজনেই মানিস্কোয়ার এর একটা বাসে উঠে পড়লো। দুপুর বেলা বলে বাসে তেমন ভিড় নেই। বাসে উঠেই ফাকা সিট পেয়ে দুজন পাশাপাশি বসে পড়লো । কিছুক্ষণ পর গৌরভ বললো “ এই বাসটাই সকালের দিকে এমন ভিড় হয় যে দাড়ানো যায় না। „

গৌরবের কথায় সুচি একটা সম্মতিসূচক মাথা দোলালো । সুচির কাছে নিজের দাম বাড়ানোর জন্য গৌরব বললো “ কয়েক মাস পর লাইসেন্স পেয়ে যাবো , তারপর গাড়ি করেই কলেজ যাতায়াত করবো। বাসের এই ভিড় সহ্য হয়না । „

গৌরবের এই কথায় সুচি গৌরবের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার জানালা দিয়ে বাইরে রাস্তার লোকজন দোকানপাট দেখতে লাগলো। সুচি বুঝলো যে গৌরব তাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে।

এই কয়েক মাসে সুচি গৌরবকে খুব ভালো করে চিনে নিয়েছে। গৌরবের চরিত্র এখন সুচির কাছে স্বচ্ছ জলের থেকেও পরিষ্কার। ক্লাসে যখনই সময় পায় তখনই নিজের গুনগান করে বেড়ায় গৌরব ----- ‘ রোজ তিন ঘন্টা জিমে কাটায় গৌরব। প্রফেশনাল ট্রেনারের কাছ থেকে জিম করে।  গৌরবের পুর্বপুরুষ জমিদার ছিল । বাবার অনেক টাকা। এত টাকা যে সাত পুরুষ বসে খেতে পারবে। তবুও গৌরবের বাবা পি জি কর হাসপাতালে ডাক্তারি করে শুধুমাত্র মানুষের সেবা করার জন্য। চেতলাতে একটা ক্লিনিকে সপ্তাহে তিন দিন বসে গৌরবের বাবা। ভিজিট পাঁচশো টাকা। বাবার দুটো গাড়ি আছে। একটা মার্সিডিজ আর একটা বোলেরো। বাবার একমাত্র ছেলে গৌরব। সব সম্পত্তি গৌরব-ই পাবে । দুবার বিদেশ ঘুরে এসছে , একবার আমেরিকা আর একবার জাপান । ‚ বারবার এইসব শুনতে শুনতে কান পচে গেছে সুচির।

রাস্তা ফাকা থাকায় আধ ঘন্টার মধ্যেই তারা মানিস্কোয়ার পৌঁছে গেল। একটা ইংলিশ সিনেমার দুটো টিকিট কাটলো গৌরব। ছশো টাকা দুটো টিকিটের দাম হওয়ায় সুচি তার ব্যাগ থেকে একশো টাকার তিনটে নোট গৌরবের দিকে বাড়িয়ে দিল। সুচিকে টাকা দিতে দেখে গৌরব বললো “ এটা আমার তরফ থেকে ট্রিট । „

গৌরবের কাছ থেকে ট্রিট নেওয়া মানে নিজেকে ছোট করা , তাই গৌরবের কাছ থেকে কোন ধরনের ট্রিট নেওয়ার ইচ্ছা সুচির নেই। তাই গৌরব ট্রিট দেওয়ার কথা বললেও সুচির টাকাটা বাড়িয়েই রইলো। গৌরব বুঝলো সুচি ট্রিট নিতে চায় না। তাই সে সুচির হাত থেকে টাকা গুলো নিয়ে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে দিল

সিনেমা শুরু হলে দুজনেই সিনেমা দেখতে শুরু করলো। একসন মুভি , মাঝে মাঝে একটা দুটো চুম্বনের দৃশ্য আছে। প্রায় এক ঘন্টা পর নায়কের সাথে নায়িকার বিয়ের দৃশ্য দেখানো শুরু হলো । একটা ফুলের বাগান, বাগানে নাম না জানা বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটে আছে। আর বাগানের মাঝখানে একটা সুন্দর ফাউন্টেন আছে । সেই ফাউন্টেনের মাঝখানে নায়কের বন্ধুরা, নায়িকার বন্ধুরা দাড়িয়ে আছে। তারপর নায়ক নায়িকা এসে পাদ্রির সামনে একে অপরকে চুম্বন করে বিয়ে করলো।

নায়ক নায়িকাকে জড়িয়ে ধরে ঠোটে ঠোট রেখে চুমু খাওয়া শুরু করতেই , আরামদায়ক চেয়ারের হাতলে রাখা সুচির বামহাতের উপর গৌরব ডান হাতটা রাখলো। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের গতিতে সুচি হাতটা সরিয়ে নিল । এরপর আরও কুড়ি মিনিট সিনেমা চলার পর ইন্টারভেল শুরু হলো।

ইন্টারভেল হতেই সুচি উঠে হলের বাইরে চলে এলো। মুখটা রাগে পাথর হয়ে আছে। গৌরব সুচির পিছন পিছন এসে করিডরে দৌড়ে সুচির সামনে এসে কান ধরে বললো “ প্লিজ প্লিজ ক্ষমা করে দাও , ওটা ভুল করে হয়ে গেছে। সত্যি আমার কোন খারাপ অভিসন্ধি ছিল না। „

গম্ভীর গলায় সুচি বললো “ দেখো গৌরব ! আমরা শুধু বন্ধু। এর বেশি কিছু নই। তুমি আমাদের বন্ধুত্বটাকে নষ্ট করছো। সরো সামনে থেকে , আমার আর সিনেমা দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে না । „

ইন্টারভেল হওয়ায় বাকি দর্শকদের মধ্যে কয়েকজন বাথরুম করতে এলো। তারা হলের বাইরে এসে সুচি আর গৌরবকে দেখতে লাগলো

“ প্লিজ প্লিজ শোন আমার কথা , ওটা ভুল করে হয়ে গেছে। লোক দেখছো , এরকম করো না । সত্যি বলছি। প্লিজ রাগ করো না। আমরা শুধুই বন্ধু এরকম ভুল আর কখনো করবো না। সিনেমাটা দেখো প্লিজ। আমার এই একটা ভুলের জন্য বন্ধুত্বটা নষ্ট করো না প্লিজ ।

গৌরবের কথায় সুচি শান্ত হলো না। একটু ভেবে দেখলো ‘ এই অকালকুষ্মান্ডের জন্য তিনশো টাকা জলে ফেলে দেওয়া যাবে না। ‚ কথাটা ভেবে আবার সিনেমা হলে বসলো। এরপর গৌরব আর একটাও কথা বলেনি। সিনেমা শেষ হওয়ার পর মানিস্কোয়ার এর বাইরে এসে গৌরব বললো “ আমি তোমাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিই । „

“ না । আমি একা যেতে পারবো। „ বলে গৌরবের দিকে না তাকিয়ে একটা বাসে উঠে পড়লো।

বাসটা সোসাইটি পর্যন্ত যায় না। বাস থেকে নেমে একটা অটো ধরে সোসাইটিতে পৌছল সুচি। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অন্ধকার হয়ে এলো । ঘরে এসে জামা কাপড় ছেড়ে একটা কালো টপ আর একটা হাফ প্যান্ট পড়ে আয়নার সামনে বসে চুল আঁচড়াতে শুরু করলো সুচি। গৌরব আজ যা করলো তার জন্য মুড একদম ভালো নেই সুচির। গৌরবের থেকে যে দূরে থাকবে তারও উপায় নেই। সবসময় জোঁকের মতো লেগে থাকে।

কিছুক্ষণ পর সুমি অফিস থেকে ফিরে ঘরে ঢুকে ফ্যানের নিচে বসে হাওয়া খেতে লাগলো। একটু ধাতস্থ হয়ে চোখ থেকে চশমাটা খুলে বোনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “ আকাশের preparation কেমন ? „

সুচি দিদির কথার মানে বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে দিদির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। সুমি সেটা বুঝতে পেরে বললো “ কালকে থেকে তো আকাশের মাধ্যমিক পরিক্ষা শুরু হবে। ওর preparation কেমন ? „

এতক্ষণ পর সুচির মুড ভালো হতে শুরু করলো । সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার থেকে উঠে সব চুল পিঠের ওপর খোলা ছেড়ে দিয়ে পাশের ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়লো। ঢুকেই “ কাকি ! „ বলে ডাকলো সুচি। কিন্তু কেউ উত্তর দিল না ।

আকাশের ঘরে উকি মেরে দেখলো আকাশ এক মনে সামনে খুলে রাখা ইংরেজি খাতার দিকে তাকিয়ে আছে। “ কাকি কোথায় রে ? „

বই থেকে মুখ না তুলেই আকাশ বললো “ সোমা মাসির কাছে গেছে আষাঢ়ে গপ্প দিতে । „ সোমা মাসি হলো জয়শ্রীর মা।

কাকি ফ্ল্যাটে নেই শুনে সুচি একটা মুচকি হাসি দিয়ে আরও একটা চেয়ার নিয়ে আকাশের পাশে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ আকাশের খুলে রাখা ইংরেজি নোটসের খাতার দিকে তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ সুচি খাতাটা বন্ধ করে দিল। খাতাটা বন্ধ হতেই আকাশ ভুরু কুঁচকে সুচির দিকে তাকালো । সুচির মুখের হাসি দেখে আকাশের বুঝতে অসুবিধা হলো না যে সুচি দুষ্টুমি করছে। সে আবার খাতাটা খুলে মুখে আওয়াজ না করে পড়তে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর সুচি আবার খাতাটা বন্ধ করে দিলে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে আকাশ বললো “ করিস না। পড়তে দে । „

“ তুই যখন আমার মাধ্যমিক পরিক্ষার সময় কানের কাছে বাঁশি নিয়ে প্যাএএএ প্যাএএ করে বাজাচ্ছিলি তখন ! „

সুচির কথায় আকাশ আর কিছু বলতে পারলো না। কিছুক্ষণ সুচির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর সে আবার খাতা খুলে পড়তে শুরু করলো । কয়েক সেকেন্ড পর আবার সুচি আবার খাতাটা বন্ধ করে দিলে আকাশ ঝাঁঝিয়ে উঠলো “ উফফফ ! করিস না ।  এমনিতেই মা রেগে আছে আমার উপর , এসে যদি দেখে তুই এরকম করছিস তাহলে তোকেও বকবে । „ বলে আবার খাতাটা খুলে পড়তে শুরু করলো ।

আকাশের ভয় সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে সুচি আবার খাতাটা বন্ধ করে দিলে আকাশ বললো “ দেখ ! মারপিট করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই , এবার করলে কিন্তু তোকে তুলে ডাস্টবিনে ফেলে আসবো । „

সুচি মুখটা বেকিয়ে ব্যাঙ্গ করে বললো “  উঁউউ ! শখ কতো ! তুলে ডাস্টবিনে ফেলে আসবে। তুলে দেখা একবার ! তারপর তোর কি করি দেখবি.....

সুচির কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ সুচিকে কোলে তুলে নিল । সুচি মুখ দিয়ে শুধু “ এএএএইইইইই ! „ বলে চিল্লিয়ে উঠলো ।

আকাশ যে তাকে সত্যি সত্যি কোলে তুলে নেবে এটা সুচি ভাবেইনি । আকাশ তাকে কোলে তুলে নিলে সুচি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আকাশ সুচিকে ঘরের বাইরে এনে লিভিংরুমের সোফায় বসিয়ে দিয়ে দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিল। ঘটনাটা ঘটতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো মাত্র।

আরও কয়েক সেকেন্ড লাগলো সুচির ভ্যাবাচ্যাকা ভাবটা কাটতে। যখন সম্পূর্ণরূপে হুশ ফিরে পেল তখন তার গাল লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। আর কান গরম হয়ে উঠলো। দাত দিয়ে নিজের ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে সোফা থেকে উঠে ঘরের বাইরে যেতে লগলো সুচি । ঘরের বাইরে আসতেই দেখলো আকাশের মা সিড়ি ভেঙে উপরে উঠছেন।

সুচিকে ঘরের বাইরে আসতে দেখে আকাশের মা বললেন “ কালকে ওর পরিক্ষা। এখন আর ওকে জ্বালাস না। „

সুচি ডান গালের উপর পড়ে থাকা কয়েকটা চুল কানের পিছনে দিয়ে বললো “ ও ভিতর দিয়ে দরজা দিয়ে দিয়েছে। „ কথাটা বলে সুচি নিজের ঘরে ঢুকে গেল ।

ভুরু কুঁচকে আকাশের মা মনে মনে বললেন ‘ দরজা দিয়ে দিয়েছে ! ‚ তারপর ফ্ল্যাটে ঢুকে আকাশের ঘরের দরজায় টোকা নিয়ে বললেন “ এই ভর সন্ধ্যায় দরজা দিয়ে দিয়েছিস কেন ? „

আকাশ চেয়ার থেকে উঠে দরজা খুলে বললো “ ওই সুচি এসে বারবার খাতা বন্ধ করে দিচ্ছিল তাই দরজা দিয়ে দিয়েছি „

“ থাক । আর দরজা দিতে হবে না। ও চলে গেছে । „

এদিকে সুচি নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকে মায়ের সাথে  টিভি দেখতে বসে গেল। টিভির উপর চোখ থাকলেও মনটা টিভির পর্দায় নেই। তার মন পড়ে আছে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া মিষ্টি মূহুর্তে । ‘ কিভাবে পালকের মতো ওকে কোলে তুলে নিয়েছিল আকাশ ‚ এটাই বারবার তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

কিছুক্ষণ পর সমরেশ বাবু অফিস থেকে ফিরে এলে সুচি উঠে নিজের ঘরে চলে গেল। ঘরে ঢুকে দেখলো সুমি টেবিলে বসে একটা উপন্যাস পড়ছে। সুমি সুচিকে ঘরে ঢুকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলো “ কি বললো ও ? „

‘ এই খেয়েছে ! ওর preparation কেমন সেটাই তো জিজ্ঞাসা করা হয়নি ! ‚ “ ভালো বললো। মন দিয়ে পড়ছে। „ বানিয়ে বানিয়ে বলে দিল সুচি।

বোনের উত্তর শোনার সময় তার মুখের দিকে তাকিয়েই ভুরু কুঁচকে গেল সুমির । সুচির ঠোঁটে হাসি আর গালে রক্তিম আভা সুমি স্পষ্ট দেখতে পেল। কথাটা বলে সুচি খাটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে বুকের নিচে একটা বালিশ রেখে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর যে ফোনটা পেয়েছিল সেটাই ঘাটতে শুরু করলো। সুমি মাঝে মাঝে বই থেকে চোখ তুলে বোনের দিকে তাকিয়ে বোনের ঠোঁটের হাসি আর গালের রক্তিম আভা দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সুমি জিজ্ঞাসা না করে আর থাকতে পারলো না “ তুই হাসছিস কেন ? „

ফোন থেকে মুখ তুলে সুচি বললো “ আমি ! কই নাতো ! „

“ হ্যাঁ । তুই হাসছিস । „

“ হঠাৎ আমি কেন হাসতে যাবো ! „

সুমি আর কোন কথা বাড়ালো না। খাওয়ার সময় সুমি বোনের সামনে বসে খেতে খেতে বোনকে দেখতে লাগলো। এখন আর সেই রক্তিম আভা টা না থাকলেও ঠোঁটের হাসিটা এখনও আছে “ হ্যাঁ তুই হাসছিস । „

“ তুই চুপচাপ খা তো ! তখন থেকে হাসছিস কেন ? হাসছিস কেন ? বলে মাথাটা ধরিয়ে দিলি। „

সুমি আর কিছু বললো না। রাতে খাটে শুয়ে আজকে সিনেমায় দেখা বিয়ের দৃশ্যটা স্বপ্নে একটু অন্য ভাবে দেখলো সুচি ।  একটা বিশাল বড়ো গোলাপ ফুলের বাগান । নানা রঙের গোলাপ ফুল আছে তাতে , হলুদ , নীল , গোলাপি , লাল , কালো আরও কত রঙের। আর সেই গোলাপের বাগানের মাঝখান একটা দুই তিন ফুটোর চওড়া রাস্তা , রাস্তার উপর লাল কার্পেট বিছানো আছে। রাস্তাটা শেষ হচ্ছে বাগানের মাঝখানে একটা বিশাল বড়ো রাজপ্রাসাদের সামনে। আর সেই রাস্তায় আকাশ তাকে কোলে করে নিয়ে হাটছে। উদ্দেশ্য হলো সেই রাজপ্রাসাদের ভিতরে যাওয়া। সিনেমায় বিয়ের সময় নায়ক নায়িকা যে কালো ট্যাক্সিডো আর সাদা গাউন পড়ে ছিল সেই পোশাক স্বপ্নে আকাশ আর সুচি পড়ে আছে।

ঘুমের মধ্যে এই স্বপ্ন দেখতে দেখতে সুচি তার দিদিকে বেশ ভালো করে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো । এদিকে সারাদিনে অফিসের ক্লান্তির জন্য গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে থাকা সুমি জেগে গেল।  অন্ধকার ঘরে ঘুম জড়ানো চোখে আন্দাজ করতে অসুবিধা হলো না যে সুচি পাশ বালিশ মনে করে তাকেই জড়িয়ে ধরেছে। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বিরক্ত হয়ে সুমি সুচিকে গা থেকে ছাড়িয়ে সরিয়ে দিল। দিদির ধাক্কায় সুচি উল্টো দিকে ফিরে পাশ বালিশটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরেও স্বপ্ন দেখায় বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত ঘটলো না সুচির ।

সকালে অফিস যাওয়ার তাড়াহুড়োয় সুমি বোনকে যে রাতের জন্য কয়েকটা কথা বলবে সেটা ভুলে গেল।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 8 users Like Bichitro's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) চলছে :--- - by Bichitro - 24-10-2021, 09:01 AM



Users browsing this thread: 163 Guest(s)