19-10-2021, 06:00 PM
হটাৎই এক শীতের সকালে , খবরের কাগজ হাতে নিয়ে চায়ের কাপে প্রথম চুমুক দিতে যাবে এমন সময়, পাশের টেবিলে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো । ফোনটা হাতে নিয়ে পার্থ দেখলো , অচেনা নম্বর ...
- হ্যালো
- হ্যালো , সুপ্রভাত , আমি বৈকুণ্ঠপুর ভারত সেবাশ্রম থেকে বলছি ।
- বৈকুন্টপুর ? হ্যাঁ বলুন ...
- আমি কি পার্থ বসুর সাথে একটু কথা বলতে পারি ?
- বলছি , বলুন ...
- পার্থ বাবু , এতো সকালে আপনাকে বিরক্ত করার জন্যে ভীষণ দুঃখিত ।
- না না ঠিক আছে , বলুন ।
- আসলে , আপনার বিদ্যালয়ের শিক্ষক , কর্ণ চক্রবর্তী ...
- ক ..কর্ণ চক্রবর্তী ... ও হ্যাঁ কর্ণ স্যার ...
- হ্যাঁ আসলে , খুবই দুঃখের সংবাদ , উনি কাল রাতে গত হয়েছেন ।
- ও মাই গড ...
- আসলে , আমিই এই আশ্রমের প্রধান পুরোহিত এবং কর্ণ বাবুর শেষ বয়সের একমাত্র বন্ধুও বলতে পারেন , কাল সন্ধ্যে বেলা থেকেই ওনার শরীরটা খারাপ হতে শুরু করে আবার , তারপর রাতের দিকে প্রায় আচ্ছন্ন অবস্থাতেই , উনি আমার হাত ধরে বলেন , ওনার মুখাগ্নি যেন শুধু আপনার হাতেই করা হয় ....আর ভোরের দিকেই ...
- কিন্তু , মানে ... ওনার ছেলে .. বা পরিবার ..
- সে অনেক কাহিনী আছে , ফোনে বলাতো সম্ভব নয় । আপনি যদি একটু তারাতারি আসতে পারেন , তাহলে খুবই ভালো হয় ।
- হ্যাঁ আমি আসছি , কিন্তু এখান থেকে পৌঁছতেতো তাও ঘন্টা পাঁচেক মতোন লেগে যাবে ।
- তাতে অসুবিধা নেই , আপনি যতো তাড়াতাড়ি পারেন চলে আসুন ।
ফোনটা কেটে দিতেই যেন একরাশ বিষণ্নতা ঘিরে ধরলো পার্থকে । সকালের ফুর ফুরে মেজাজটা যেন কোথায় হারিয়ে গেলো নিমেষেই , চায়ের কাপ টেবিলেই বসে থেকে আকাশের বুকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে একসময় ঠান্ডা হয়ে গেলো ।
ট্রেনের জানালা দিয়ে দ্রুত গতিতে হারিয়ে যাওয়া গাছপালা বাড়িঘর গুলো , পেছনের ফেলে আসা কলকাতার ক্যানভাসে জায়গা করে নিচ্ছিলো , আর রেখে যাচ্ছিলো অসংখ্য প্রশ্ন পার্থর মনে । কর্ণ স্যারের বাড়ি বর্ধমান , তাহলে স্যার চাকরি থেকে অবসর নেবার পর বৈকুণ্ঠপুরের আশ্রমে কেন ? আশ্রম কতৃপক্ষ তার ফোন নম্বর কোথা থেকে পেলো ? আর সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন , স্যারের মুখাগ্নি করতে , তাকে কেন ডাকা হচ্ছে ? পার্থ যতদূর শুনেছিলো কর্ণ স্যার বিয়ে করেছেন , তাহলে কি স্যার নিঃসন্তান ? তবে তার স্ত্রী কোথায় ? হাজারো প্রশ্ন ভিড় করছিলো পার্থর মাথায় ,যার একটিরও উত্তর তার জানা নেই ।
বৈকুণ্ঠপুর পৌঁছতে প্রায় দুপুর হয়ে গেলো , তারপর সেখান থেকে একটা টোটো গাড়িকে গন্তব্যের ঠিকানা বলে , পেছেনের সিটে গা এলিয়ে দিলো পার্থ । রাস্তাঘাট , বাড়িঘর সব বদলে গিয়েছে , দেখতে দেখতে কলেজের বিল্ডিংটাও পেরিয়ে গেলো চোখের সামনে দিয়ে । সেই ছোট্ট কলেজটা আজ অনেক বড়ো হয়েছে , কলেজের পাশের পুকুরটা খোঁজার চেষ্টা করলো সে , কিন্তু সেটি পাওয়া গেলো না । হয়তো বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে , তার উপর বাড়ি উঠেছে । সেই পুকুরের পাশের কুল গাছ থেকে কুল পারতে গিয়ে ঝুপ করে পুকুরে পরে গিয়েছিলো শৈবাল , তারপর তাকে তুলতে গিয়ে সবাই ভিজে স্নান । এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে আশ্রমের সামনে চলে এসেছে টেরই পায়নি সে । টোটো ভাড়া মিটিয়ে , আশ্রমের দিকে পা বাড়ালো পার্থ , আশ্রমের সামনে গুটি কতক লোক দাঁড়িয়ে , মুখগুলি সবই অচেনা ।
একটু এগিয়ে যেতেই , একজন মোটা মতোন লোক পার্থর দিকে এগিয়ে এসে বললো ...
- তুই আসবি আমি ঠিক জানতাম । স্যারের প্রিয় ছাত্র ছিলি তুই , স্যার শেষ বেলায় তোকে ডেকেছেন তুই আসবি না .. এ হতেই পারে না ..
- সরি .. আপনাকে ঠিক ...
- আরে ... বিশ্বরূপ রে ... তোদের বিশু ...মনে নেই , তাই না ?
- আরে বিশু মস্তান ... শিয়ালদহ স্টেশনে সেবার ...
তারপর ধীরে ধীরে সব জট পরিষ্কার হতে লাগলো পার্থর । বছর দশেক আগে একবার শিয়ালদহ স্টেশনে এই বিশুর সাথে দেখা হয়েছিলো , তখন তাড়াহুড়োতে ফোন নম্বরটা আদান প্রদানও হয়েছিলো , ব্যস্ত জীবনের চাকা ঘুরতে ঘুরতে ব্যাপারটা একেবারেই মাথা থেকে উড়ে গিয়েছিলো পার্থর । তারপর বিখ্যাত বিজ্ঞানী বন্ধুকে ফোন করে বিরক্ত করা উচিত হবে , কিনা , সেই ভেবে বিরত থেকেছে বিশ্বরূপ , তাই পরে আর তেমন যোগাযোগ হয়নি , ফোন নম্বর থেকে গিয়েছে কনট্যাক্টস লিস্টে ।
- হ্যালো
- হ্যালো , সুপ্রভাত , আমি বৈকুণ্ঠপুর ভারত সেবাশ্রম থেকে বলছি ।
- বৈকুন্টপুর ? হ্যাঁ বলুন ...
- আমি কি পার্থ বসুর সাথে একটু কথা বলতে পারি ?
- বলছি , বলুন ...
- পার্থ বাবু , এতো সকালে আপনাকে বিরক্ত করার জন্যে ভীষণ দুঃখিত ।
- না না ঠিক আছে , বলুন ।
- আসলে , আপনার বিদ্যালয়ের শিক্ষক , কর্ণ চক্রবর্তী ...
- ক ..কর্ণ চক্রবর্তী ... ও হ্যাঁ কর্ণ স্যার ...
- হ্যাঁ আসলে , খুবই দুঃখের সংবাদ , উনি কাল রাতে গত হয়েছেন ।
- ও মাই গড ...
- আসলে , আমিই এই আশ্রমের প্রধান পুরোহিত এবং কর্ণ বাবুর শেষ বয়সের একমাত্র বন্ধুও বলতে পারেন , কাল সন্ধ্যে বেলা থেকেই ওনার শরীরটা খারাপ হতে শুরু করে আবার , তারপর রাতের দিকে প্রায় আচ্ছন্ন অবস্থাতেই , উনি আমার হাত ধরে বলেন , ওনার মুখাগ্নি যেন শুধু আপনার হাতেই করা হয় ....আর ভোরের দিকেই ...
- কিন্তু , মানে ... ওনার ছেলে .. বা পরিবার ..
- সে অনেক কাহিনী আছে , ফোনে বলাতো সম্ভব নয় । আপনি যদি একটু তারাতারি আসতে পারেন , তাহলে খুবই ভালো হয় ।
- হ্যাঁ আমি আসছি , কিন্তু এখান থেকে পৌঁছতেতো তাও ঘন্টা পাঁচেক মতোন লেগে যাবে ।
- তাতে অসুবিধা নেই , আপনি যতো তাড়াতাড়ি পারেন চলে আসুন ।
ফোনটা কেটে দিতেই যেন একরাশ বিষণ্নতা ঘিরে ধরলো পার্থকে । সকালের ফুর ফুরে মেজাজটা যেন কোথায় হারিয়ে গেলো নিমেষেই , চায়ের কাপ টেবিলেই বসে থেকে আকাশের বুকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে একসময় ঠান্ডা হয়ে গেলো ।
ট্রেনের জানালা দিয়ে দ্রুত গতিতে হারিয়ে যাওয়া গাছপালা বাড়িঘর গুলো , পেছনের ফেলে আসা কলকাতার ক্যানভাসে জায়গা করে নিচ্ছিলো , আর রেখে যাচ্ছিলো অসংখ্য প্রশ্ন পার্থর মনে । কর্ণ স্যারের বাড়ি বর্ধমান , তাহলে স্যার চাকরি থেকে অবসর নেবার পর বৈকুণ্ঠপুরের আশ্রমে কেন ? আশ্রম কতৃপক্ষ তার ফোন নম্বর কোথা থেকে পেলো ? আর সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন , স্যারের মুখাগ্নি করতে , তাকে কেন ডাকা হচ্ছে ? পার্থ যতদূর শুনেছিলো কর্ণ স্যার বিয়ে করেছেন , তাহলে কি স্যার নিঃসন্তান ? তবে তার স্ত্রী কোথায় ? হাজারো প্রশ্ন ভিড় করছিলো পার্থর মাথায় ,যার একটিরও উত্তর তার জানা নেই ।
বৈকুণ্ঠপুর পৌঁছতে প্রায় দুপুর হয়ে গেলো , তারপর সেখান থেকে একটা টোটো গাড়িকে গন্তব্যের ঠিকানা বলে , পেছেনের সিটে গা এলিয়ে দিলো পার্থ । রাস্তাঘাট , বাড়িঘর সব বদলে গিয়েছে , দেখতে দেখতে কলেজের বিল্ডিংটাও পেরিয়ে গেলো চোখের সামনে দিয়ে । সেই ছোট্ট কলেজটা আজ অনেক বড়ো হয়েছে , কলেজের পাশের পুকুরটা খোঁজার চেষ্টা করলো সে , কিন্তু সেটি পাওয়া গেলো না । হয়তো বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে , তার উপর বাড়ি উঠেছে । সেই পুকুরের পাশের কুল গাছ থেকে কুল পারতে গিয়ে ঝুপ করে পুকুরে পরে গিয়েছিলো শৈবাল , তারপর তাকে তুলতে গিয়ে সবাই ভিজে স্নান । এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে আশ্রমের সামনে চলে এসেছে টেরই পায়নি সে । টোটো ভাড়া মিটিয়ে , আশ্রমের দিকে পা বাড়ালো পার্থ , আশ্রমের সামনে গুটি কতক লোক দাঁড়িয়ে , মুখগুলি সবই অচেনা ।
একটু এগিয়ে যেতেই , একজন মোটা মতোন লোক পার্থর দিকে এগিয়ে এসে বললো ...
- তুই আসবি আমি ঠিক জানতাম । স্যারের প্রিয় ছাত্র ছিলি তুই , স্যার শেষ বেলায় তোকে ডেকেছেন তুই আসবি না .. এ হতেই পারে না ..
- সরি .. আপনাকে ঠিক ...
- আরে ... বিশ্বরূপ রে ... তোদের বিশু ...মনে নেই , তাই না ?
- আরে বিশু মস্তান ... শিয়ালদহ স্টেশনে সেবার ...
তারপর ধীরে ধীরে সব জট পরিষ্কার হতে লাগলো পার্থর । বছর দশেক আগে একবার শিয়ালদহ স্টেশনে এই বিশুর সাথে দেখা হয়েছিলো , তখন তাড়াহুড়োতে ফোন নম্বরটা আদান প্রদানও হয়েছিলো , ব্যস্ত জীবনের চাকা ঘুরতে ঘুরতে ব্যাপারটা একেবারেই মাথা থেকে উড়ে গিয়েছিলো পার্থর । তারপর বিখ্যাত বিজ্ঞানী বন্ধুকে ফোন করে বিরক্ত করা উচিত হবে , কিনা , সেই ভেবে বিরত থেকেছে বিশ্বরূপ , তাই পরে আর তেমন যোগাযোগ হয়নি , ফোন নম্বর থেকে গিয়েছে কনট্যাক্টস লিস্টে ।