19-10-2021, 11:37 AM
গভীর আস্মরণে যেন ঢলে পড়েছে সে... ফিরে গিয়েছে জঠরের মধ্যে যেন। সে একা... নিঃসঙ্গ এই অন্ধকারে। কারাগারের মাটির নিচের একটা ছোট্ট অন্ধকার কুঠুরীতে তাকে রেখে যাওয়া হয়েছে। সেখানের ঠান্ডা সিমেন্টের মেঝেতে একটা পাতলা ছেড়া মাদুর ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। ঘরের কোনে একটা গর্ত করা, টয়লেট করার জন্য। ট্রেসি ওই অন্ধকারের মধ্যে চুপচাপ শুয়ে বিড়বিড় করে বাবার শেখানো ছোটবেলাকার কবিতা আওড়াতে লাগল। উন্মাদ হতে তার আর কি বাকি আছে?
যে এখানে কি করে এল, বা এটা কোথায়, কিছুই জানে না সে। জানার প্রয়োজনই বা কোথায়? দরকার কি? শুধু যন্ত্রনা। অনুভব করছে সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা। আমি নিশ্চয় পড়ে গিয়েছিলাম আর তাতেই এত আঘাত লেগেছে আমার... মনে মনে নিজেকে বোঝায় সে। মা, মা শুধু পারে তার এই যন্ত্রনা লাঘব করে দিতে... গুঙিয়ে ওঠে সে... ‘মা... মা গো...’। কোন উত্তর নেই। কেউ সাড়া দেয় না। সব চুপ... নিস্তব্দ চতুর্দিক...। ধীরে ধীরে আবার ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে সে।
আটচল্লিশ ঘন্টা এক টানা সে ঘুমিয়ে রইল, তারপর ধীরে ধীরে তার সেই নিদারুণ যন্ত্রনা বদলে গেল ব্যথায় আর ব্যথা থেকে বেদনায়। চোখ খুলে তাকালো সে। সে অনুভব করল তার চারপাশে একটা অদ্ভুত অনস্তিত্ব যেন ঘিরে রয়েছে। নিকশ অন্ধকার ঘরটা। এতই অন্ধকার যে দেওয়াল পর্যন্ত দেখা যায় না। আস্তে আস্তে তার মনে পড়ে যেতে লাগল। হ্যা, তারা তাকে বয়ে নিয়ে গিয়েছিল ডাক্তাতের কাছে। ডাক্তার বলছিল, ‘... একটা পাঁজরার হাড় ভেঙেছে, আর সেই সাথে কবজিতেও একটা চিড় ধরেছে। ওগুলো ধরে টেপ দিয়ে টেনে বেঁধে দিলেই হবে। আর শরীরের যা কাঁটা ছেড়া, খুব খারাপ অবস্থা হলেও সে সবও আস্তে আস্তে সেরে যাবে। কিন্তু একটা ব্যাপার যেটা হয়েছে, ওর পেটের বাচ্ছাটাকে বাঁচানো গেল না...’
‘ওহ! আমার বাচ্ছা...!’ ডাক্তারের কথাটা মনে পড়তেই নিজের তলপেটে হাত রেখে গুঙিয়ে উঠল ট্রেসি। ‘ওরা... ওরা আমার বাচ্ছাটাকে খুন করল, মেরেই ফেলল...’ হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল। কাঁদতে থাকল নিজের বাচ্ছা হারানোর শোকে। কাঁদতে থাকল নিজের অবস্থার জন্য। কাঁদতে থাকল এই জঘন্য জগতটার জন্য।
ওই অন্ধকার ছোট্ট কুঠুরীতে সে হীমশীতল মেঝেয় পাতলা মাদুরের ওপর চুপ করে শুয়ে রইল। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল সে। যত ভাবতে লাগল, তত তার অন্তরাত্মা তীব্র ঘৃণায় ভরে যেতে লাগল। এতটাই তীব্র সে ঘৃণা, যে আবেগে রীতিমত ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল ট্রেসি। সেই ঘৃণা তার মনে গভীরে জ্বলতে জ্বলতে যেন তার সমস্ত আবেগ অনুভূতিকে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিতে লাগল... পরিশেষে পড়ে রইল একটাই বোধশক্তি... প্রতিশোধ। সে প্রতিশোধ তার সেলের সতীর্থদের বিরুদ্ধে নয়, ওরা তো তারই মত অবস্থার শিকার মাত্র। এ প্রতিশোধ তাদের বিরুদ্ধে, যারা তার এই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী, যারা তার জীবনটাকেই সম্পূর্ণ ধংস করে দিয়েছে।
জো রোম্যানো : তোমার মা আমাকে একবারও তো কই বলেন নি যে তাঁর এমন একটা ডাগর মেয়ে আছে...’
অ্যান্থনী ওরাসত্তি : ‘জো রোম্যানো যার হয়ে কাজ করে, তার নাম অ্যান্থনী ওরাসত্তি। আর এই নিউ অর্লিন্স শহরটা চালায় এই ওরাসত্তি...’
পেরী পোপ : ‘নিজেকে অপরাধী স্বীকার করে আদালতের সময় বাঁচিয়েছ...’
জজ হেনরী লরেন্স : ‘আগামী পনেরো বছরের জন্য আপনাকে নির্বাষীত করা হল লুইসিয়ানা মহিলা সংশোধানাগারে...’
হ্যা। এরাই আমার আসল শত্রু। আর সেই সাথে আছে চার্লস, যে একটা বারের জন্যও শোনার প্রয়োজন বোধ করল না তার কথা। ‘...তোমার যদি টাকার প্রয়োজন ছিল, আমাকে বলতে পারতে... এটা তো ঠিক যে আমি তোমাকে ততটা এখনও চিনি না... আমার কিছু করার নেই আর, তোমার সন্তান, তুমি যেটা ভালো বোঝ করতে পারো...’
এর দাম চোকাতে হবে, প্রত্যেককে। একে একে। কি করে তা এখনও জানে না সে। কিন্তু এটা জানে, এদের প্রত্যেকের ওপর প্রতিশোধ নেবে সে। ‘আগামীকাল... যদি আগামীকালটা আসে...’ ভাবল ট্রেসি।
যে এখানে কি করে এল, বা এটা কোথায়, কিছুই জানে না সে। জানার প্রয়োজনই বা কোথায়? দরকার কি? শুধু যন্ত্রনা। অনুভব করছে সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা। আমি নিশ্চয় পড়ে গিয়েছিলাম আর তাতেই এত আঘাত লেগেছে আমার... মনে মনে নিজেকে বোঝায় সে। মা, মা শুধু পারে তার এই যন্ত্রনা লাঘব করে দিতে... গুঙিয়ে ওঠে সে... ‘মা... মা গো...’। কোন উত্তর নেই। কেউ সাড়া দেয় না। সব চুপ... নিস্তব্দ চতুর্দিক...। ধীরে ধীরে আবার ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে সে।
আটচল্লিশ ঘন্টা এক টানা সে ঘুমিয়ে রইল, তারপর ধীরে ধীরে তার সেই নিদারুণ যন্ত্রনা বদলে গেল ব্যথায় আর ব্যথা থেকে বেদনায়। চোখ খুলে তাকালো সে। সে অনুভব করল তার চারপাশে একটা অদ্ভুত অনস্তিত্ব যেন ঘিরে রয়েছে। নিকশ অন্ধকার ঘরটা। এতই অন্ধকার যে দেওয়াল পর্যন্ত দেখা যায় না। আস্তে আস্তে তার মনে পড়ে যেতে লাগল। হ্যা, তারা তাকে বয়ে নিয়ে গিয়েছিল ডাক্তাতের কাছে। ডাক্তার বলছিল, ‘... একটা পাঁজরার হাড় ভেঙেছে, আর সেই সাথে কবজিতেও একটা চিড় ধরেছে। ওগুলো ধরে টেপ দিয়ে টেনে বেঁধে দিলেই হবে। আর শরীরের যা কাঁটা ছেড়া, খুব খারাপ অবস্থা হলেও সে সবও আস্তে আস্তে সেরে যাবে। কিন্তু একটা ব্যাপার যেটা হয়েছে, ওর পেটের বাচ্ছাটাকে বাঁচানো গেল না...’
‘ওহ! আমার বাচ্ছা...!’ ডাক্তারের কথাটা মনে পড়তেই নিজের তলপেটে হাত রেখে গুঙিয়ে উঠল ট্রেসি। ‘ওরা... ওরা আমার বাচ্ছাটাকে খুন করল, মেরেই ফেলল...’ হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল। কাঁদতে থাকল নিজের বাচ্ছা হারানোর শোকে। কাঁদতে থাকল নিজের অবস্থার জন্য। কাঁদতে থাকল এই জঘন্য জগতটার জন্য।
ওই অন্ধকার ছোট্ট কুঠুরীতে সে হীমশীতল মেঝেয় পাতলা মাদুরের ওপর চুপ করে শুয়ে রইল। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল সে। যত ভাবতে লাগল, তত তার অন্তরাত্মা তীব্র ঘৃণায় ভরে যেতে লাগল। এতটাই তীব্র সে ঘৃণা, যে আবেগে রীতিমত ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল ট্রেসি। সেই ঘৃণা তার মনে গভীরে জ্বলতে জ্বলতে যেন তার সমস্ত আবেগ অনুভূতিকে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিতে লাগল... পরিশেষে পড়ে রইল একটাই বোধশক্তি... প্রতিশোধ। সে প্রতিশোধ তার সেলের সতীর্থদের বিরুদ্ধে নয়, ওরা তো তারই মত অবস্থার শিকার মাত্র। এ প্রতিশোধ তাদের বিরুদ্ধে, যারা তার এই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী, যারা তার জীবনটাকেই সম্পূর্ণ ধংস করে দিয়েছে।
জো রোম্যানো : তোমার মা আমাকে একবারও তো কই বলেন নি যে তাঁর এমন একটা ডাগর মেয়ে আছে...’
অ্যান্থনী ওরাসত্তি : ‘জো রোম্যানো যার হয়ে কাজ করে, তার নাম অ্যান্থনী ওরাসত্তি। আর এই নিউ অর্লিন্স শহরটা চালায় এই ওরাসত্তি...’
পেরী পোপ : ‘নিজেকে অপরাধী স্বীকার করে আদালতের সময় বাঁচিয়েছ...’
জজ হেনরী লরেন্স : ‘আগামী পনেরো বছরের জন্য আপনাকে নির্বাষীত করা হল লুইসিয়ানা মহিলা সংশোধানাগারে...’
হ্যা। এরাই আমার আসল শত্রু। আর সেই সাথে আছে চার্লস, যে একটা বারের জন্যও শোনার প্রয়োজন বোধ করল না তার কথা। ‘...তোমার যদি টাকার প্রয়োজন ছিল, আমাকে বলতে পারতে... এটা তো ঠিক যে আমি তোমাকে ততটা এখনও চিনি না... আমার কিছু করার নেই আর, তোমার সন্তান, তুমি যেটা ভালো বোঝ করতে পারো...’
এর দাম চোকাতে হবে, প্রত্যেককে। একে একে। কি করে তা এখনও জানে না সে। কিন্তু এটা জানে, এদের প্রত্যেকের ওপর প্রতিশোধ নেবে সে। ‘আগামীকাল... যদি আগামীকালটা আসে...’ ভাবল ট্রেসি।