Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
শিক্ষা ! 
দেবশ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় 

ট্রেনটা বর্ধমান স্টেশনে দাঁড়াতেই মিলি বলে উঠল মা ডিম সেদ্ধ খাবে? ঐ দেখো বিক্রি করছে।মাধবী দেবীর সবে তন্দ্রাটা এসেছিল।  তিনি বললেন- না রে আমি খাবো না, তুই খেলে খা।মিলি হাত নেড়ে ডাকলো- ডিম, এই ডিম, এদিকে । একটা ডিম সেদ্ধ কিনে খেতে খেতে সামনের সিটের বয়স্ক মহিলাটির দিকে চোখ পড়ল তার। মহিলাটি একদৃষ্টে মিলিকেই দেখছিলেন। মিলি ওনার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। মহিলাটি বেশ আগ্রহ নিয়েই জিগ্গেস করলেন কোথায় যাচ্ছ? মিলি উত্তর দিল- কলকাতায়।ইশারায় মাধবীদেবীকে দেখিয়ে জিগ্গেস করলেন- তোমার মা? মিলি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল। তিনি আবার জিগ্গেস করলেন- বাড়ি কোথায়? মিলি বলল- আসানসোলে। মহিলা বললেন- আমরা দুর্গাপুরে থাকি। মিলি এতক্ষণে বুঝল বয়স্ক মহিলার পাশে মিলির থেকে বয়সে কিছুটা ছোটো যে বিবাহিতা মেয়েটি বসে সে ওনার সঙ্গেই আছে। মিলি সেই মেয়েটির দিকে তাকাতেই একটা শুকনো হাসি উপহার দিল সে। ট্রেন আবার নিজের গতিতে ছুটতে শুরু করল।বয়স্ক মহিলাটি বেশ বকবকে। উনি নিজেই মিলিকে বলতে শুরু করলেন- এটা আমার ছেলের বউ। আমার একটাই ছেলে। ডি.এস.পি তে ইঞ্জিনিয়ার। এই একবছর হল বিয়ে দিয়েছি। আমার বউমার বাপের বাড়ি ধানবাদ। মিলি বুঝতেই পারল মহিলা নিজের গল্প শোনানোর মুডে আছেন। বাধ্য হয়েই কান থেকে ইয়ার ফোনটা খুলে জিন্সের পকেটে রাখল।মহিলা বলে চললেন- আমার বউমা এম.এ পাশ। চাকরি করার হুজুগ ছিল খুব। আমি একবারেই রাজি হয়নি। তোর বর এত টাকা রোজগার করে,তোর চাকরির কি প্রয়োজন? আর ব্যাগ দুলিয়ে চাকরি করতে গেলে ঘর কে সামলাবে বল দেখি? মিলি বিবাহিতা মেয়েটির দিকে একবার তাকাতেই তার মনের কষ্টটা তার মুখে ফুটে উঠতে দেখল। মহিলা এক নিঃশ্বাসে বলেই চললেন- আমি তো বলেই দিয়েছি, দুবছরের মধ্যেই নাতির মুখ দেখতে চাই। মেয়েমানুষের শিক্ষা , বাচ্চাকে মানুষ করার কাজেই লাগে। তাও তো আমার মত শাশুড়ি বলে বিয়ের একবছর পরেই চুড়িদার পরার পারমিশান দিয়েছি। এবার নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য একটু থেমে তিনি মিলিকে জিগ্গেস করলেন- তা তুমি কি করো মা? মিলি হেসে উত্তর দিল- আমি ডাক্তার। মহিলা- ডাক্তার,  বাহ খুব ভাল।  তা বিয়ে থা করো নি  কেন এখনও ? একে ডাক্তার, তার উপর দেখতে শুনতে এত সুন্দর।  তুমি তো ভাল ছেলে পাবে। মিলি হেসে বলল- কি করব মাসিমা,ছেলের মায়েদের আমায় পছন্দ হয় না। মহিলা বেশ অবাক হয়ে বললেন- সেকি , এত সুন্দর চেহারা, তাতে এত শিক্ষিত, ডাক্তার,  তাও পছন্দ হয় না? মিলি- নাহ ,হবে কি করে? আমি তো হসপিটালেই অনেকটা সময় কাটাই, সংসার সামলাতে যদি অসুবিধা হয়? মহিলা এবার থতমত খেয়ে গেলেন। এতক্ষণ মাধবীদেবী ঘুমানোর ভান করে সবই শুনছিলেন। হঠাৎ হাসতে হাসতে তিনি বললেন- উফ মিলি তুইও পারিস বটে। তারপর ঐ মহিলার দিকে তাকিয়ে বললেন- দিদি, মিলি আমার ছেলের বউ। আমার ছেলে আর ও দুজনেই দুর্গাপুর মিশন হসপিটালের ডাক্তার। তিন বছর হল ওদের বিয়ে হয়েছে। আজ আমরা কলকাতাতে মিলির বাবার বাড়িতেই যাচ্ছি।
মহিলা মুখটা হাঁ করে সব শুনছিলেন এতক্ষণ।  এবার তিনি বললেন- তা এয়ো স্ত্রী ,এদিকে হাতে শাঁখা,পলা ,মাথায় সিঁদুর কিছুই তো পরে নি। তার উপর এমন ছোট চুল,জিন্সের প্যান্ট। আপনি এগুলোর পারমিশান দিলেন দিদি? মাধবীদেবী হাসতে হাসতেই বললেন- দিদি ,আমার ছেলেও তো বিয়ের পর সাজ পোশাক পাল্টায়নি। তাহলে ওই বা কেন পাল্টাবে বলুন?
মহিলা বেশ ব্যাঙ্গের সুরেই বললেন- তা আপনি তো দেখছি শাঁখা,সিঁদুর সবই পরে আছেন। মাধবীদেবী ভদ্র ভাবেই বললেন- দিদি আমার শাশুড়ি পড়াশোনা জানতেন না,তাই অনেক কুসংস্কার নিয়ম ভেবে মেনে চলতেন তিনি। আমার পছন্দ না হলেও আমি কোনোদিন সেগুলোর বিরোধীতা করিনি, উনি কষ্ট পাবেন ভেবে। কিন্তু তাই বলে তো আমি নিয়মের নাম করে এই বোঝা আমার ছেলের বউয়ের উপর চাপিয়ে দিতে পারিনা।আপনি একটা কথা মন্দ বলেননি। মেয়েমানুষের শিক্ষা বাচ্চাকে মানুষ করার কাজেই লাগে। শুধু ডিগ্রি থাকলেই শিক্ষিত হওয়া যায় না। জীবনের বিভিন্ন ধাপে আমি যে শিক্ষা অর্জন করেছি তা থেকেই আমি আমার ছেলেকে মেয়েদের মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখিয়েছি। তাদের সম্মান করতে শিখিয়েছি। মহিলার পাশে বসে থাকা তার ছেলের বউ মাধবীদেবীকে ঢিপ করে একটা প্রণাম করে বসল। বয়স্ক মহিলাটির মুখে যেন কেউ সেলোটেপ চিটিয়ে দিল। বাকিটা রাস্তা তিনি শুধুই গোমরা মুখে জানলার বাইরে তাকিয়েই কাটিয়ে দিলেন।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by dada_of_india - 17-10-2021, 06:37 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)