Thread Rating:
  • 23 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller বহ্নিশিখা by BOURSES_BRAQUE
#59
ব্লক সি... প্রতিটি সেলে চারজন করে কয়েদি রয়েছে। সবশুদ্ধ ষাট জন। ট্রেসি নোংরা পুতগন্ধযুক্ত অলিন্দ দিয়ে হাটতে হাটতে একটার পর একটা সেলের গারদের ফাঁক দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকা কয়েদিদের দেখতে দেখতে এগিয়ে যেতে লাগল। ওই কয়েদিদের মুখে নানান ধরণের অভিব্যক্তি... কারুর মুখ ভাবলেশহীন তো কারুর মুখে লালসা ঝরে পড়ছে যেন। আবার কেউ কেউ তার দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। তার মনে হতে লাগল সে যেন অদ্ভুত এক অচেনা ভীন জগতে এসে পড়েছে। একটা অদম্য চিৎকার যেন গলা ফুঁড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে তার শরীরের মধ্যে থেকে। ওয়ার্ডেনের ঘরে ওকে যখন ডেকে পাঠানো হল, তখন একটা ক্ষীণ আশা ছিল... কিন্তু এই মুহুর্তে আর সেটাও নেই। সব শেষ। আগামী পনেরোটা বছর তাকে এই অন্ধকার জগতের কোন একটা বিশোধক খাঁচায় থাকতে হবে।

ভেতরে যা...’ একটা সেলের দরজা খুলে দিয়ে ট্রেসিকে বলে উঠল গার্ড। হাঁটতে হাঁটতে নিজের চিন্তার মধ্যেই হারিয়ে ছিল সে। তাই গার্ডের কথা বুঝতে একটু সময় লাগল। মুখ তুলে তাকালো সে সেলের ভেতর দিকে। ভেতরে তিনটে মেয়ে তার দিকেই নীরবে তাকিয়ে বসে রয়েছে।কি হলো, চল...’ খেঁকিয়ে উঠল গার্ড।


একটু ইতঃস্তত করে ধীর পায়ে সেলের মধ্যে পা রাখল ট্রেসি। কানে এল পেছনে গারদ বন্ধ হয়ে তালা লাগিয়ে দেবার ধাতব শব্দ। এটাই তাহলে ট্রেসির আগামী পনেরো বছরের জন্য নির্দিষ্ট ঘর...

ঘিঞ্জি ঘরটাতে সব সমেত চারটি বাঙ্ক রয়েছে। একটা টেবিল, তার ওপর একটা ভাঙা আয়না। চারটে লকার। দূরে, ঘরের কোনায় আসন বিহীন একটা টয়লেট করার জায়গা। তার সেলের অন্য তিন সাথী তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে... তাকিয়ে রয়েছে বললে ভুল বলা হবে... যেন তার শরীরের প্রতিটা ভাঁজ লালসা ভরা দৃষ্টি দিয়ে চেটে চেটে আস্বাদন করছে।


প্রথম কথাটা ওদের মধ্যে একজন পিয়ুর্তোরিকান মেয়ে বলে উঠল... ‘ওরে, দেখ দেখ, নতুন চিড়িয়া এসেছে আমাদের কাছে...’ গলাটা ভারী আর ঘড়ঘড়ে। দেখতে মোটামুটি খারাপ না। আরো ভালো বলা যেত যদি না ওই লম্বা একটা ছুরিতে কাটা দাগটা প্রায় কপাল থেকে গলা অবধি থাকত। দেখে তো খুব বেশি হলে বছর চোদ্দর বেশি মনে হয় না।

পাশ থেকে একটা বেঁটে মোটা মাঝ বয়সী মেক্সিকান মহিলা বলে উঠল, ‘তোকে দেখে বেশ ভালো লাগল মেয়ে... তা তোকে এখানে কি করতে পাঠালো?’

ট্রেসির সত্যি বলতে উত্তর দেবে কি তখন মুখ থেকে কথা সরছে না।


তৃতীয় জন এক কালো নিগ্রো মেয়ে। উচ্চতায় প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি হবে। তীক্ষ্ণ ঠান্ডা দৃষ্টি। মুখটা পাথরের মত কঠিন। মাথাটা সম্পূর্ন কামানো যার ফলে ঘরের মিটমিটে আলো সেই কামানো খুলির ওপর পড়ে মাথার নীলকালো শিরাউপশিরাগুলো স্পষ্ট করে তুলেছে। এতে আরো যেন একটা ভয়ঙ্কর রূপ দিয়েছে মেয়েটিকে। সে এবার বলে উঠল, ‘ওই কোনের বাঙ্কটা তোর, বুঝেছিস!’

ধীর পদক্ষেপে নির্দ্দিষ্ট বাঙ্কের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। বাঙ্কের ওপর একটা নোংরা তোষক পাতা, না জানি আগের কয়েদির কি কি শরীর নিসৃত রস সেই তোষকে দাগ করে রেখেছে। দেখেই গাটা গুলিয়ে উঠল ট্রেসির। ঘেন্নায় তোষকটায় বসা তো দূর ছুতেও প্রবৃত্তি হল না তার। অনিচ্ছা সত্তেও ভেতর থেকে একটা প্রতিবাদ বেরিয়ে এল তার মুখ দিয়ে, ‘অসম্ভব, এই বিছানায় আমি... আমি কিছুতেই শুতে পারব না!’

শুনে ওপাশ থেকে মুটকি মেক্সিকান মেয়েটা খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠল, ‘শুতে হবে না সোনা, তুই একটা কাজ কর বরং, তুই এসে আমার ওপর শুয়ে পড়।

কথাটা শুনে চোখ তুলে তাকালো। একে একে ঘরের তিনজনকে দেখল সে। প্রত্যেকের চোখের দৃষ্টি তাকে যেন জামাকাপড়ের ওপর দিয়ে ভেতরের নগ্ন শরীরটাকে মাপছে মনে হল তার। না, না। ভুল ভাবছি আমি। আমি যা ভাবছি তা নয়। সব ভুল ভাবনা আমার... তবুও মনের মধ্যের সংশয় কাটে না তার।


অনেক কষ্টে সে বলে উঠল, ‘কার সাথে কথা বলতে হবে? মানে আমার একটা পরিষ্কার বিছানা চাই। কার সাথে কথা বললে হবে?’ প্রশ্ন করল সে। উত্তর দিল কালো মেয়েটি, ‘ভগবানের সাথে! কিন্তু বিগত বেশ কিছু বছর হল উনিও আর এদিকে আসছেন না!’

উত্তরটা শুনে একটু দমে গেল। আবার ঘুরে নিজের বিছানার দিকে তাকালো। কয়একটা বড়বড় তেলাপোকা ঘুরে বেড়াচ্ছে ওর বিছানার ওপাশে। অসম্ভব। পারবো না। এই ভাবে থাকতে হলে আমি পাগল হয়ে যাব... মনে মনে ভাবল সে। তার মনের কথা বুঝেই যেন কালো মেয়েটি বলে উঠল, ‘ভুলে যা... সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নে...’ কথা শুনে মনে পড়ে গেল কিছুক্ষন আগেই বলা ওয়ার্ডেনের কথা গুলো... ‘সময়এর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিন, তাতে আপনারই ভালো হবে।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বহ্নিশিখা by BOURSES_BRAQUE - by ddey333 - 17-10-2021, 09:51 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)