13-10-2021, 07:22 PM
হাতের সমস্যাটা অনেকদিন হচ্ছে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে না । একটাকে অবশ্য ভালো খবর বলা যায় না , কারন বেশি বিরতির পর , বেশ জোড়াল ভাবে হয় , এমন হয়েছে প্রায় দুই দিনের মতো আমার বাঁ পাশ অবশ ছিলো । তাই বাড়ি থেকে ইদানিং তেমন বের হচ্ছি না , বাড়ি টু মায়ের দোয়া হটেল , আবার সেখান থেকে বাড়ি । বলা যায় এক ধরনের অপেক্ষা করছি কখন ঐ বিশ্রী ব্যাপারটা শুরু হবে ।
এই অপেক্ষা করতে গিয়ে একটা বিশেষ জিনিস লক্ষ্য করলাম , সেটা হচ্ছে । অপেক্ষা জিনিসটা বড্ড খারাপ , এইজে আমার রোগ , এই রোগের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়েও হাঁপিয়ে উঠেছি আমি । মনে হচ্ছে , আসছে না কেনো , আসছে না কেনো। আর যারা আপন জনের জন্য অপেক্ষা করে , তাদের না জনি কি হাল হয় । আমার অবশ্য অপেক্ষা করার মতো আপনজন নেই। তাই এই অপেক্ষা জনিত বিড়ম্বনা থেকে আমি মুক্ত ছিলাম এতদিন । তাই হয়ত আমার অসুখ আমাকে এবার সেই স্বাদ দিচ্ছে ।
আমি সত্যি সত্যি আপনজনের মতো করে আমার অসুখ এর ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছি । একদম আটঘাট বেধে অপেক্ষা । হাতের কাছে ঔষধ নিয়ে ঘুরছি , জেখানেই জাচ্ছি সাথে করে ঔষধ রাখছি । জেনো জামাই এর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে এলেই শরবৎ দেয়া হবে হা হা হা ।
এই অপেক্ষার প্রহর গুলিতে আপনজন নিয়ে বেশ ভালো রকম এর চিন্তা ভাবনা এসেছে আমার মাথায় । অনেক ভেবে দেখলাম “আপনজন” এই শব্দটা একটা তকমা এর মতো , অনেকটা প্রধান অতিথির গায়ে যেমন লাগানো থাকে । মানুষ এর জীবনের নানা পর্যায়ে এই তকমা বিশেষ কারো গায়ে লাগানো থাকে । তখন সেই বিশেষ মানুষ টি হয়ে যায় প্রধান অথিতি ,
যেমন আমি যখন খুব ছোট ছিলাম , আমার জীবনের প্রধান অতিথি ছিলো আমার বাবা । বাবার জন্য সব সময় অপেক্ষা করে থাকতাম । যত রাত হোক বাবা না ফেরা পর্যন্ত কিছুই খেতাম না । বাবা ফিরলে তবেই খেতে বসতাম । তখন বুঝতাম না , সারাদিন খাটুনির শেষে বাবা কতটা ক্লান্ত থাকতো । ধিরে ধিরে বয়স বাড়তে লাগলো , বাবার প্রতি সমিহ বাড়তে লাগলো , সাথে বাড়তে লাগলো দূরত্ব ।
তখন আমার জীবনের প্রধান অতিথি হয়ে উঠলো আমার বড় দুই বোন । ওরা দুজনে যাই করতো আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। খেলাধুলা করার সময় ওরা যখন আমাকে দলে নিত তখন আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হতো না । সারাদিন অপেক্ষায় থাকতাম কখন ওরা কলেজ থেকে বাড়ি ফিরবে ।
বয়স আরও একটু বাড়ল , আমি বুঝতে শিখলাম যে আমার স্বাধীনতা আমার বড় দুই বোন এর চেয়ে বেশি । তখন ওদের জীবন টাকে আমার কাছে পানসে মনে হতে লাগলো । আমার জীবনের প্রধান অথিতি পরিবর্তন হতে শুরু করলো , তখন বন্ধুদের মনে হতে এদের চেয়ে আপন আমার আর কেউ নেই । সারাক্ষণ বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে হতো ।
ক্লাস ফাকি দিয়ে আড্ডা দেয়া , সিনেমা দেখতে যাওয়া । বন্ধুদের আবদার মেটাতে বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি , মায়ের কাছে বাড়তি টাকার জন্য অন্যায় আব্দার । সবচেয়ে বড় হট্টগোল বেধেছিলো যেবার বন্ধুরা মিলে বেরাতে যাওয়ার প্রোগ্রাম হলো। বাবা কিছুতেই রাজি ছিলেন না । ওনার মতে একা বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আমার বয়স তখন কম । কিন্তু আমি নাছোড় বান্দার মতো গো ধরে ছিলাম । কিছুতেই আমি অতো বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছিলাম না । তিন দিন সুধু আমারা বন্ধুরা , সেখানে কেউ শাসন করার মতো থাকবে না । ১৬ বছর বয়সি আমি তখন জেনো হাওয়ায় উড়ছিলাম । তাই আমার সাথে কেউ পেরে ওঠেনি , বাবার শাসন , মায়ের অনুরধ সব উপেক্ষা করে সেবার আমি গিয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে ।
এর পর কলেজে উঠলাম , তখন আমার মাঝে নতুন আকাঙ্ক্ষা তৈরি হলো । আমি দেখলাম সুধু বন্ধুদের সহচারজ আমাকে আর আগের মতো তৃপ্তি দিচ্ছে না , আরও বেশি কিছু চাইছে মন । আমাদের ক্লাসের সেই চশমা পরা মেয়েটি , রোজ এসে তৃতীয় বেঞ্চে বসতো । সেই মেয়েটির প্রতি আগ্রহ বোধ করতে লাগলাম । মেয়েটি যে কখন আমার অজান্তেই আমার জীবনের নতুন প্রধান অতিথি হয়ে উঠেছিলো বুঝে উঠতে পারিনি । রোজ কলেজে এসে সেই বিশেষ স্থানে দাড়িয়ে থাকতাম । মেয়েটি একটি সাদা টয়োটা কারে করে আসতো । রোজ একি যায়গায় এসে পার্ক করতো গাড়িটি , আমি দাড়িয়ে থাকতাম হাত দশেক দূরে হিজল তলায় । কিছুই বলতাম না সুধু দেখতাম , এক পলক দেখার মাঝে এতো ভাললাগা এতো তৃপ্তি কোথা হতে যে আসতো কে জানে।
“ এখানে কিচ্ছু হবে না বন্ধু সময় নষ্ট করছিস”
সুজয় নামের একটা বন্ধু ছিলো আমার , একদিন হঠাত বলল আমাকে । ভাব করেছিলাম কিছুই বুঝতে পারিনি , বোকার মতো জিজ্ঞাস করেছিলাম “ কিসের কথা বলছিস , কিসের সময়”
সুজয় একটু মুচকি হেসেছিলো , গম্ভির ভাবে বলেছিলো “হয় , হয় নতুন নতুন গজালে এমন হয়” । তারপর সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞাস করেছিলো “ তুই এই মেয়ের নাম জানিস”
“না” উত্তর দিয়েছিলাম , আসলে কোনদিন নাম জিজ্ঞাস করার ইচ্ছা হয়নি , হিজল তলায় দাড়িয়ে থাকাতে এতই ডুবে ছিলাম যে কোনদিন সামনে দাড়িয়ে নাম জিজ্ঞাস করা অথবা দুটো কথা বলার ইচ্ছাই কোনদিন তৈরি হয়নি ।
“ এই মেয়ের নাম সু-নয়না” নামটি বলে সুজয় আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তে তাকালো ,
“ বাহ খুব সুন্দর নাম তো” সত্যি নামের সার্থকতা ছিলো , চশমা পরা মেয়েদের চোখ সুন্দর না অসুন্দর সেটা বোঝা মুস্কিল , কিন্তু এই মেয়ের চোখের গভিরতা চশমার মোটা কাচ একটুও ঢাকতে পারেনি । পাওয়ার ওয়ালা কাচের ভেতর থেকে মায়াময় দুই চোখ নিজের সব গল্প যেন খোলা বইয়ের মতো মেলে ধরে থাকে ।
“ সু-নয়না সেন” শেষের সেন শব্দটি অনেক গুরুত্বের সাথে বলেছিলো সুজয় , কিন্তু আমি তৎক্ষণাৎ সেই সেন শব্দের তাৎপর্য বুঝতে পারিনি । যখন বুঝতে পেরেছিলাম আমার কাছে সেই সেন শব্দের মতো মহত্ত্ব ধরা পরেনি । দুই বছর আমি সকাল সোয়া আটটায় সেই হিজল গাছের নিচে দাড়িয়ে থেকেছি । একটি বারের জন্য মনে হয়নি যে সামনে গিয়ে দুটো কথা বলি , অথবা সেন নামের কোন মেয়ের জন্য দাড়িয়ে থাকা সময়ের অপচয় । কেনই বাঁ হবে আমি তো আর নাম জানতে চাইনি , তাই নামের কোন তাৎপর্য ও আমার কাছে নেই ।
সমাপনি দিন সু-নয়না এসেছিলো , বলে ছিলো “তুমি কি কিছু বলবে?”
“ নাহ” ছোট করে উত্তর দিয়েছিলাম আমি , আসলে বলার মতো কিছুই ছিলো না আমার । তবে এখন মনে হয় যদি বলতাম “ তোমার নাম সু-নয়না না হয়ে সু-কন্ঠি হলেও মন্দ হতো না” তাহলে কেমন হতো ।
এর পর আমার জীবনে আরও আপনজন এসেছে , লীলা , এবার আর এক তরফা ছিলো না বোধহয় ব্যাপারটা । হয়ত আমি ডেস্পারেট ছিলাম । বাবা মা ততদিনে চলে গেছে , বোনদের সব বিয়ে হয়ে গেছে , বন্ধুরা সব নিজ কাজে ব্যাস্ত । তখন একজন আপঞ্জনের বড় প্রয়োজন ছিলো । লীলা সেই অবাভ পুরন করেছিলো ।
বড় জেদি মেয়ে ছিলো , ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে চলে এসেছিলো । এক পরকার জোড় করেই আমি দিয়ে এসেছিলাম । কারন ততদিনে লীলার চেয়েও বড় আপনজন আমার জীবনে চলে এসেছে , আমার অসুখ , আজ যার জন্য আমি অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি । কবে সে পুরোপুরি আমাকে দখল করে নেবে আমরা দুজনে দুজনার হয়ে যাবো । ডাক্তার বলেছে অসুখটি যখন পুরোপুরি আমাকে কাবু করে নেবে তখন আমার বাঁ পাশ সম্পূর্ণ অচল হয়ে যেতে পারে ।
আমি ধরে নিয়েছি হয়ে যাবে , ডাক্তার রা অমন একটু আধটু বলেই , ওরা সরাসরি কখনো বলে না যে হবে , ওরা বলে হতে পারে । এতে রোগীর ইচ্ছা শক্তি বজায় থাকে । তবে আমি তেমন হতাশ নই , আমার মতে যেহেতু আমি চাই বাঁ না চাই , এই অসুখটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বিষয় , তাই এঁকে নিয়েই আমাকে থাকতে হবে । যখন আমার বাঁ পাশ অবশ হয়ে যাবে তখন আমি বরং খুশিই হবো , তখন আমার আর নিজেকে একলা লাগবে না , মনে হবে আমার সাথে আমার জীবনের সবচেয়ে আপনজন , আমার জীবনের প্রধান অতিথি আছে ।
তবে মাঝে মাঝে মনটা একটু চঞ্চল হয়ে ওঠে , মনে প্রশ্ন জাগে , স্বপ্ন কি সত্যি হয়? আর যদি সত্যি হয় তাহলে কি নিলুফার এর মতো কেউ এসে যদি পরম মমতায় আমার হাত ধরে তাহলে কি অসুখটা চলে যাবে ?
তখন এই অসুখটাকে বিদায় করে দিয়ে সেই মমতাময়ী হয়ে যাবে আমার জীবনের প্রধান অতিথি । যেমন লীলা কে সরিয়ে অসুখটা আমাকে দখল করে নিয়ছিলো । হোক না , হলে মন্দ কি , ভারত বর্ষের মতো আমিও না হয় কখনো এর অধিন তো কখনো ওর অধিন হয়ে থাকলাম । চলুক না আমাকে নিয়ে যুদ্ধ , নিজেকে আমার বেশ দামি মনে হবে ।
এই অপেক্ষা করতে গিয়ে একটা বিশেষ জিনিস লক্ষ্য করলাম , সেটা হচ্ছে । অপেক্ষা জিনিসটা বড্ড খারাপ , এইজে আমার রোগ , এই রোগের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়েও হাঁপিয়ে উঠেছি আমি । মনে হচ্ছে , আসছে না কেনো , আসছে না কেনো। আর যারা আপন জনের জন্য অপেক্ষা করে , তাদের না জনি কি হাল হয় । আমার অবশ্য অপেক্ষা করার মতো আপনজন নেই। তাই এই অপেক্ষা জনিত বিড়ম্বনা থেকে আমি মুক্ত ছিলাম এতদিন । তাই হয়ত আমার অসুখ আমাকে এবার সেই স্বাদ দিচ্ছে ।
আমি সত্যি সত্যি আপনজনের মতো করে আমার অসুখ এর ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছি । একদম আটঘাট বেধে অপেক্ষা । হাতের কাছে ঔষধ নিয়ে ঘুরছি , জেখানেই জাচ্ছি সাথে করে ঔষধ রাখছি । জেনো জামাই এর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে এলেই শরবৎ দেয়া হবে হা হা হা ।
এই অপেক্ষার প্রহর গুলিতে আপনজন নিয়ে বেশ ভালো রকম এর চিন্তা ভাবনা এসেছে আমার মাথায় । অনেক ভেবে দেখলাম “আপনজন” এই শব্দটা একটা তকমা এর মতো , অনেকটা প্রধান অতিথির গায়ে যেমন লাগানো থাকে । মানুষ এর জীবনের নানা পর্যায়ে এই তকমা বিশেষ কারো গায়ে লাগানো থাকে । তখন সেই বিশেষ মানুষ টি হয়ে যায় প্রধান অথিতি ,
যেমন আমি যখন খুব ছোট ছিলাম , আমার জীবনের প্রধান অতিথি ছিলো আমার বাবা । বাবার জন্য সব সময় অপেক্ষা করে থাকতাম । যত রাত হোক বাবা না ফেরা পর্যন্ত কিছুই খেতাম না । বাবা ফিরলে তবেই খেতে বসতাম । তখন বুঝতাম না , সারাদিন খাটুনির শেষে বাবা কতটা ক্লান্ত থাকতো । ধিরে ধিরে বয়স বাড়তে লাগলো , বাবার প্রতি সমিহ বাড়তে লাগলো , সাথে বাড়তে লাগলো দূরত্ব ।
তখন আমার জীবনের প্রধান অতিথি হয়ে উঠলো আমার বড় দুই বোন । ওরা দুজনে যাই করতো আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। খেলাধুলা করার সময় ওরা যখন আমাকে দলে নিত তখন আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হতো না । সারাদিন অপেক্ষায় থাকতাম কখন ওরা কলেজ থেকে বাড়ি ফিরবে ।
বয়স আরও একটু বাড়ল , আমি বুঝতে শিখলাম যে আমার স্বাধীনতা আমার বড় দুই বোন এর চেয়ে বেশি । তখন ওদের জীবন টাকে আমার কাছে পানসে মনে হতে লাগলো । আমার জীবনের প্রধান অথিতি পরিবর্তন হতে শুরু করলো , তখন বন্ধুদের মনে হতে এদের চেয়ে আপন আমার আর কেউ নেই । সারাক্ষণ বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে হতো ।
ক্লাস ফাকি দিয়ে আড্ডা দেয়া , সিনেমা দেখতে যাওয়া । বন্ধুদের আবদার মেটাতে বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি , মায়ের কাছে বাড়তি টাকার জন্য অন্যায় আব্দার । সবচেয়ে বড় হট্টগোল বেধেছিলো যেবার বন্ধুরা মিলে বেরাতে যাওয়ার প্রোগ্রাম হলো। বাবা কিছুতেই রাজি ছিলেন না । ওনার মতে একা বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আমার বয়স তখন কম । কিন্তু আমি নাছোড় বান্দার মতো গো ধরে ছিলাম । কিছুতেই আমি অতো বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছিলাম না । তিন দিন সুধু আমারা বন্ধুরা , সেখানে কেউ শাসন করার মতো থাকবে না । ১৬ বছর বয়সি আমি তখন জেনো হাওয়ায় উড়ছিলাম । তাই আমার সাথে কেউ পেরে ওঠেনি , বাবার শাসন , মায়ের অনুরধ সব উপেক্ষা করে সেবার আমি গিয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে ।
এর পর কলেজে উঠলাম , তখন আমার মাঝে নতুন আকাঙ্ক্ষা তৈরি হলো । আমি দেখলাম সুধু বন্ধুদের সহচারজ আমাকে আর আগের মতো তৃপ্তি দিচ্ছে না , আরও বেশি কিছু চাইছে মন । আমাদের ক্লাসের সেই চশমা পরা মেয়েটি , রোজ এসে তৃতীয় বেঞ্চে বসতো । সেই মেয়েটির প্রতি আগ্রহ বোধ করতে লাগলাম । মেয়েটি যে কখন আমার অজান্তেই আমার জীবনের নতুন প্রধান অতিথি হয়ে উঠেছিলো বুঝে উঠতে পারিনি । রোজ কলেজে এসে সেই বিশেষ স্থানে দাড়িয়ে থাকতাম । মেয়েটি একটি সাদা টয়োটা কারে করে আসতো । রোজ একি যায়গায় এসে পার্ক করতো গাড়িটি , আমি দাড়িয়ে থাকতাম হাত দশেক দূরে হিজল তলায় । কিছুই বলতাম না সুধু দেখতাম , এক পলক দেখার মাঝে এতো ভাললাগা এতো তৃপ্তি কোথা হতে যে আসতো কে জানে।
“ এখানে কিচ্ছু হবে না বন্ধু সময় নষ্ট করছিস”
সুজয় নামের একটা বন্ধু ছিলো আমার , একদিন হঠাত বলল আমাকে । ভাব করেছিলাম কিছুই বুঝতে পারিনি , বোকার মতো জিজ্ঞাস করেছিলাম “ কিসের কথা বলছিস , কিসের সময়”
সুজয় একটু মুচকি হেসেছিলো , গম্ভির ভাবে বলেছিলো “হয় , হয় নতুন নতুন গজালে এমন হয়” । তারপর সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞাস করেছিলো “ তুই এই মেয়ের নাম জানিস”
“না” উত্তর দিয়েছিলাম , আসলে কোনদিন নাম জিজ্ঞাস করার ইচ্ছা হয়নি , হিজল তলায় দাড়িয়ে থাকাতে এতই ডুবে ছিলাম যে কোনদিন সামনে দাড়িয়ে নাম জিজ্ঞাস করা অথবা দুটো কথা বলার ইচ্ছাই কোনদিন তৈরি হয়নি ।
“ এই মেয়ের নাম সু-নয়না” নামটি বলে সুজয় আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তে তাকালো ,
“ বাহ খুব সুন্দর নাম তো” সত্যি নামের সার্থকতা ছিলো , চশমা পরা মেয়েদের চোখ সুন্দর না অসুন্দর সেটা বোঝা মুস্কিল , কিন্তু এই মেয়ের চোখের গভিরতা চশমার মোটা কাচ একটুও ঢাকতে পারেনি । পাওয়ার ওয়ালা কাচের ভেতর থেকে মায়াময় দুই চোখ নিজের সব গল্প যেন খোলা বইয়ের মতো মেলে ধরে থাকে ।
“ সু-নয়না সেন” শেষের সেন শব্দটি অনেক গুরুত্বের সাথে বলেছিলো সুজয় , কিন্তু আমি তৎক্ষণাৎ সেই সেন শব্দের তাৎপর্য বুঝতে পারিনি । যখন বুঝতে পেরেছিলাম আমার কাছে সেই সেন শব্দের মতো মহত্ত্ব ধরা পরেনি । দুই বছর আমি সকাল সোয়া আটটায় সেই হিজল গাছের নিচে দাড়িয়ে থেকেছি । একটি বারের জন্য মনে হয়নি যে সামনে গিয়ে দুটো কথা বলি , অথবা সেন নামের কোন মেয়ের জন্য দাড়িয়ে থাকা সময়ের অপচয় । কেনই বাঁ হবে আমি তো আর নাম জানতে চাইনি , তাই নামের কোন তাৎপর্য ও আমার কাছে নেই ।
সমাপনি দিন সু-নয়না এসেছিলো , বলে ছিলো “তুমি কি কিছু বলবে?”
“ নাহ” ছোট করে উত্তর দিয়েছিলাম আমি , আসলে বলার মতো কিছুই ছিলো না আমার । তবে এখন মনে হয় যদি বলতাম “ তোমার নাম সু-নয়না না হয়ে সু-কন্ঠি হলেও মন্দ হতো না” তাহলে কেমন হতো ।
এর পর আমার জীবনে আরও আপনজন এসেছে , লীলা , এবার আর এক তরফা ছিলো না বোধহয় ব্যাপারটা । হয়ত আমি ডেস্পারেট ছিলাম । বাবা মা ততদিনে চলে গেছে , বোনদের সব বিয়ে হয়ে গেছে , বন্ধুরা সব নিজ কাজে ব্যাস্ত । তখন একজন আপঞ্জনের বড় প্রয়োজন ছিলো । লীলা সেই অবাভ পুরন করেছিলো ।
বড় জেদি মেয়ে ছিলো , ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে চলে এসেছিলো । এক পরকার জোড় করেই আমি দিয়ে এসেছিলাম । কারন ততদিনে লীলার চেয়েও বড় আপনজন আমার জীবনে চলে এসেছে , আমার অসুখ , আজ যার জন্য আমি অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি । কবে সে পুরোপুরি আমাকে দখল করে নেবে আমরা দুজনে দুজনার হয়ে যাবো । ডাক্তার বলেছে অসুখটি যখন পুরোপুরি আমাকে কাবু করে নেবে তখন আমার বাঁ পাশ সম্পূর্ণ অচল হয়ে যেতে পারে ।
আমি ধরে নিয়েছি হয়ে যাবে , ডাক্তার রা অমন একটু আধটু বলেই , ওরা সরাসরি কখনো বলে না যে হবে , ওরা বলে হতে পারে । এতে রোগীর ইচ্ছা শক্তি বজায় থাকে । তবে আমি তেমন হতাশ নই , আমার মতে যেহেতু আমি চাই বাঁ না চাই , এই অসুখটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বিষয় , তাই এঁকে নিয়েই আমাকে থাকতে হবে । যখন আমার বাঁ পাশ অবশ হয়ে যাবে তখন আমি বরং খুশিই হবো , তখন আমার আর নিজেকে একলা লাগবে না , মনে হবে আমার সাথে আমার জীবনের সবচেয়ে আপনজন , আমার জীবনের প্রধান অতিথি আছে ।
তবে মাঝে মাঝে মনটা একটু চঞ্চল হয়ে ওঠে , মনে প্রশ্ন জাগে , স্বপ্ন কি সত্যি হয়? আর যদি সত্যি হয় তাহলে কি নিলুফার এর মতো কেউ এসে যদি পরম মমতায় আমার হাত ধরে তাহলে কি অসুখটা চলে যাবে ?
তখন এই অসুখটাকে বিদায় করে দিয়ে সেই মমতাময়ী হয়ে যাবে আমার জীবনের প্রধান অতিথি । যেমন লীলা কে সরিয়ে অসুখটা আমাকে দখল করে নিয়ছিলো । হোক না , হলে মন্দ কি , ভারত বর্ষের মতো আমিও না হয় কখনো এর অধিন তো কখনো ওর অধিন হয়ে থাকলাম । চলুক না আমাকে নিয়ে যুদ্ধ , নিজেকে আমার বেশ দামি মনে হবে ।