12-10-2021, 02:59 PM
অনীশ মুখার্জী, আই. টি. সেক্টরের বড় চাকুরে, কোলকাতার উপকন্ঠে একটা ছোট বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে। জলপাইগুড়িতে মা-বাবা, একান্নবর্তী পরিবারে থাকেন, এখন ওয়ার্ক ফর্ম হোম হোলেও, মাঝে মাঝে অফিসে যেতে হয়, তাই আর জলপাইগুড়ি যাওয়া হয়না। অনেকসময় মা-বাবা এখানে এসে কয়েকদিন থেকে গেলেও সবসময়ের জন্য থাকতে চাননা। অগত্যা বিয়ে করতে অনাগ্রহী অনীশ একা-ই থাকে, সকালে কণিকা মাসি রান্না আর ঘরের অন্যান্য কাজ করে দিয়ে যায়, তাতেই বেশ চলছে তার। মুখের স্বাদ বদলের জন্য, Zomato-তে order করে, নিজের যা লাগে সবসময় তার থেকে একটা বেশি order করে, লক্- ডাউনের বাজারে এইভাবে ওই ছেলেগুলোকে খাইয়ে মানসিক প্রশান্তি পায়। অনেকে অনেকভাবে এই সময় মানুষকে সাহায্য করছে, ও এইভাবে কিছু করার চেষ্টা করে।
তপন, পরিমল, আমিনুল, প্রলয়, ফিরাদ আরো অনেকেই সেদিন এই অঞ্চলের নামকরা একটি রেস্টুরেন্টে-এর সামনে নিজেদের বাহন নিয়ে order নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। একে অপরের পরিচিত হওয়ায় টুকটাক হাসি-মস্করাও চলছে, এমন সময় ফিরাদের কাছে নতুন order ঢোকে। তার চোখে হাল্কা হাসি খেলে যায়, তপনের চোখ যায় ফিরাদের দিকে-
- কিরে, হাসলি কেন ওই address দেখে?
- ও... কিছু না, এই বাড়িটাতে আগেও গেছি।
- তো? শুধু এরজন্য হাসলি? বল্ না ফিরাদ, কি ব্যাপার? গোপন কিছু?
গলাটা খাদে নিয়ে, একটু আড়াল করে ফিরাদ বললো-
- ওই বাড়িতে অনীশ মুখার্জী বলে একজন থাকেন, সবসময় একটা বেশি order দেয়, যে delivery করতে আসে তাকে ওইটা দিয়ে দেয়। আজকে রাতে একটু ভালো-মন্দ পেটে যাবে। (একটু হেসে বলে) বড়ো ভালো মানুষ-রে দাদা, এইরকম লোকও আছে!
ফিরাদের কথা শুনতে শুনতে তপনের-ও চোখ গোল গোল হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে বলে-
- আ.. মি চিনি ওনাকে, আমিও একদিন ওই extra box-টা পেয়েছিলাম, মা-বাবা ভিষণ খুশি হয়েছিল সেদিন। উনি তো আবার order-এর সঙ্গে tips-ও যোগ করে দেন - 50/- টাকা। সত্যি বড়ো ভালো মনের লোক।
এই শহরতলীর অনেক Zomato delivery boy এর কাছেই অনীশ মুখার্জী বিশেষ পরিচিত হয়ে যায়। এরা সবাই জানে, ওনাকে প্যাকেট দিতে গেলেই উনি ভালোবেসে আরেকটা ওদের হাতে ঝুলিয়ে দেবে। পয়সা রোজগার করতে বেরিয়ে উপরি পাওনা এই ভালোবাসা সবারই মনে দাগ কাটে।
সেদিন সকাল থেকেই অনীশের শরীরটা ভালো লাগছে না, মাথাটা টিপ্-টিপ্ করছে, কোমর- গা-হাত-পা ব্যথা, কিছুই ভালো লাগছে না। কণিকা মাসি দুদিনের ছুটি নিয়ে বোনের বাড়ি গেছে, রান্না করে ফ্রিজে খাবার-ও রেখে গেছে, কিন্তু কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। সন্ধ্যের সময় calpol 650 খাওয়ায় শরীরটা একটু ঝর্ ঝরে লাগলে, Zomato তে order দেয়, পছন্দের দোকানের চাউমিন।
আটটা নাগাদ তপন তাদের অনীশদার জন্য খাবার নিয়ে হাজির হয়। এখন আর ওরা location-এ এসে phone করেনা, অনীশদার বাড়িতে calling bell বাজিয়ে একদম হাতে দিয়ে দেয়। কিন্তু সেদিন দুবার calling bell বাজিয়ে, দু-এক বার অনীশ-দা করে চেঁচিয়ে ডেকে, phone-এ পুরো রিং হয়ে যাওয়ার পর-ও অনীশদার দেখা না পাওয়ায় তপন একটু ঘাবড়ে যায়। এমনিতেই ওর বাড়িটা পাড়ার শেষ প্রান্তে, আশেপাশে ফাকা, লোকজন- ও বিশেষ কাউকে এদিকে দেখা যায়না। ঘরের যে জানলার আলো বাইরের দিকে পড়েছে, সেদিকে গিয়ে পর্দা সরিয়ে তপন ভীষণ অবাক হয়ে যায়।
দেখে, কিরকম অদ্ভুত ভাবে খাটের ধারে শুয়ে আছে অনীশদা - বা হাত খাট থেকে নীচে ঝুলছে, বা-পা-টাও কেমন ধারের দিকে ঝুলে রয়েছে, মুখটা অন্যদিকে ঘোরানো। কিছুক্ষণ ওইদিকে তাকিয়ে, তপন হতবাক হয়ে যায়, কি করা উচিত ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, সম্বিত ফিরতেই সে প্রথমেই ফিরাদকে phone করে। ফিরাদ বাকিদের সব জানায়... সবাই প্রায় আধঘণ্টার মধ্যে চলে আসে তাদের প্রিয় অনীশদার বাড়িতে। আমিনুল-এর ওই অঞ্চলের Zomato zonal manager এর সাথে বিশেষ জানাশোনা থাকায় আর পুলিশের সহায়তায় অনীশ মুখার্জী-কে কোলকাতার হসপিটালে ভর্তি করা সম্ভব হয়।
কদিন প্রায় যমে-মানুষে টানাটানি যায়, কখনো প্রলয়, কখনো তপন.... ওরা কেউ না কেউ হাসপাতালে থেকে, কখনো রাত জেগে যখন যা দরকার যোগান দিয়ে গেছে। জলপাইগুড়ি থেকে ওর মা-বাবা -খুড়তুতো ভাই এসে অর্থের ব্যবস্হা করলেও অনীশের Zomato ভাইয়েরা সমস্ত ছোটাছুটির কাজগুলো নির্দ্বিধায় স্ব-উৎসাহে করে যায় দিনের পর দিন। প্রায় একমাস হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফেরে অনীশ, সেদিন-ও তার সঙ্গী ছিল ফিরাদ।
আরও একমাস পরে, আজ অনীশ মুখার্জীর ভাড়া বাড়িতে আনন্দ হইচই, বাড়িতে রীতিমতো ঠাকুর দিয়ে রান্না চলছে। অনীশের Zomato ভাইদের আজ সারাদিনের নিমন্ত্রণ ঐ বাড়িতে, যার যখন সুবিধা এসে খেয়ে যাবে। ওরা নিজেরাই সবকিছু তদারকি করছে, তপন-ফিরাদ আজ ছুটি নিয়েছে। অনীশ বারান্দায় ঠায় বসে আছে তার এই বৃহৎ পরিবারের সদস্যদের সাদরে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। ওর মা-বাবাও ওদের এই মিলন উৎসবে সমান উৎসাহে মেতে উঠেছেন.... পরম করুণাময় ঈশ্বরের কাছে তাঁরা বারবার ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, ভাগ্যিস্ অনীশের এই ভাইয়েরা এখানে ছিল.... তা-না হলে কি যে হতো কে জানে?
(সংগৃহীত)
তপন, পরিমল, আমিনুল, প্রলয়, ফিরাদ আরো অনেকেই সেদিন এই অঞ্চলের নামকরা একটি রেস্টুরেন্টে-এর সামনে নিজেদের বাহন নিয়ে order নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। একে অপরের পরিচিত হওয়ায় টুকটাক হাসি-মস্করাও চলছে, এমন সময় ফিরাদের কাছে নতুন order ঢোকে। তার চোখে হাল্কা হাসি খেলে যায়, তপনের চোখ যায় ফিরাদের দিকে-
- কিরে, হাসলি কেন ওই address দেখে?
- ও... কিছু না, এই বাড়িটাতে আগেও গেছি।
- তো? শুধু এরজন্য হাসলি? বল্ না ফিরাদ, কি ব্যাপার? গোপন কিছু?
গলাটা খাদে নিয়ে, একটু আড়াল করে ফিরাদ বললো-
- ওই বাড়িতে অনীশ মুখার্জী বলে একজন থাকেন, সবসময় একটা বেশি order দেয়, যে delivery করতে আসে তাকে ওইটা দিয়ে দেয়। আজকে রাতে একটু ভালো-মন্দ পেটে যাবে। (একটু হেসে বলে) বড়ো ভালো মানুষ-রে দাদা, এইরকম লোকও আছে!
ফিরাদের কথা শুনতে শুনতে তপনের-ও চোখ গোল গোল হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে বলে-
- আ.. মি চিনি ওনাকে, আমিও একদিন ওই extra box-টা পেয়েছিলাম, মা-বাবা ভিষণ খুশি হয়েছিল সেদিন। উনি তো আবার order-এর সঙ্গে tips-ও যোগ করে দেন - 50/- টাকা। সত্যি বড়ো ভালো মনের লোক।
এই শহরতলীর অনেক Zomato delivery boy এর কাছেই অনীশ মুখার্জী বিশেষ পরিচিত হয়ে যায়। এরা সবাই জানে, ওনাকে প্যাকেট দিতে গেলেই উনি ভালোবেসে আরেকটা ওদের হাতে ঝুলিয়ে দেবে। পয়সা রোজগার করতে বেরিয়ে উপরি পাওনা এই ভালোবাসা সবারই মনে দাগ কাটে।
সেদিন সকাল থেকেই অনীশের শরীরটা ভালো লাগছে না, মাথাটা টিপ্-টিপ্ করছে, কোমর- গা-হাত-পা ব্যথা, কিছুই ভালো লাগছে না। কণিকা মাসি দুদিনের ছুটি নিয়ে বোনের বাড়ি গেছে, রান্না করে ফ্রিজে খাবার-ও রেখে গেছে, কিন্তু কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। সন্ধ্যের সময় calpol 650 খাওয়ায় শরীরটা একটু ঝর্ ঝরে লাগলে, Zomato তে order দেয়, পছন্দের দোকানের চাউমিন।
আটটা নাগাদ তপন তাদের অনীশদার জন্য খাবার নিয়ে হাজির হয়। এখন আর ওরা location-এ এসে phone করেনা, অনীশদার বাড়িতে calling bell বাজিয়ে একদম হাতে দিয়ে দেয়। কিন্তু সেদিন দুবার calling bell বাজিয়ে, দু-এক বার অনীশ-দা করে চেঁচিয়ে ডেকে, phone-এ পুরো রিং হয়ে যাওয়ার পর-ও অনীশদার দেখা না পাওয়ায় তপন একটু ঘাবড়ে যায়। এমনিতেই ওর বাড়িটা পাড়ার শেষ প্রান্তে, আশেপাশে ফাকা, লোকজন- ও বিশেষ কাউকে এদিকে দেখা যায়না। ঘরের যে জানলার আলো বাইরের দিকে পড়েছে, সেদিকে গিয়ে পর্দা সরিয়ে তপন ভীষণ অবাক হয়ে যায়।
দেখে, কিরকম অদ্ভুত ভাবে খাটের ধারে শুয়ে আছে অনীশদা - বা হাত খাট থেকে নীচে ঝুলছে, বা-পা-টাও কেমন ধারের দিকে ঝুলে রয়েছে, মুখটা অন্যদিকে ঘোরানো। কিছুক্ষণ ওইদিকে তাকিয়ে, তপন হতবাক হয়ে যায়, কি করা উচিত ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, সম্বিত ফিরতেই সে প্রথমেই ফিরাদকে phone করে। ফিরাদ বাকিদের সব জানায়... সবাই প্রায় আধঘণ্টার মধ্যে চলে আসে তাদের প্রিয় অনীশদার বাড়িতে। আমিনুল-এর ওই অঞ্চলের Zomato zonal manager এর সাথে বিশেষ জানাশোনা থাকায় আর পুলিশের সহায়তায় অনীশ মুখার্জী-কে কোলকাতার হসপিটালে ভর্তি করা সম্ভব হয়।
কদিন প্রায় যমে-মানুষে টানাটানি যায়, কখনো প্রলয়, কখনো তপন.... ওরা কেউ না কেউ হাসপাতালে থেকে, কখনো রাত জেগে যখন যা দরকার যোগান দিয়ে গেছে। জলপাইগুড়ি থেকে ওর মা-বাবা -খুড়তুতো ভাই এসে অর্থের ব্যবস্হা করলেও অনীশের Zomato ভাইয়েরা সমস্ত ছোটাছুটির কাজগুলো নির্দ্বিধায় স্ব-উৎসাহে করে যায় দিনের পর দিন। প্রায় একমাস হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফেরে অনীশ, সেদিন-ও তার সঙ্গী ছিল ফিরাদ।
আরও একমাস পরে, আজ অনীশ মুখার্জীর ভাড়া বাড়িতে আনন্দ হইচই, বাড়িতে রীতিমতো ঠাকুর দিয়ে রান্না চলছে। অনীশের Zomato ভাইদের আজ সারাদিনের নিমন্ত্রণ ঐ বাড়িতে, যার যখন সুবিধা এসে খেয়ে যাবে। ওরা নিজেরাই সবকিছু তদারকি করছে, তপন-ফিরাদ আজ ছুটি নিয়েছে। অনীশ বারান্দায় ঠায় বসে আছে তার এই বৃহৎ পরিবারের সদস্যদের সাদরে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। ওর মা-বাবাও ওদের এই মিলন উৎসবে সমান উৎসাহে মেতে উঠেছেন.... পরম করুণাময় ঈশ্বরের কাছে তাঁরা বারবার ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, ভাগ্যিস্ অনীশের এই ভাইয়েরা এখানে ছিল.... তা-না হলে কি যে হতো কে জানে?
(সংগৃহীত)