11-10-2021, 12:01 PM
*শ্রেষ্ঠ গুলবাজ*
- কীরে, আপিস যাচ্ছিস বুঝি?
দাদার এই এক স্বভাব। রোজ সকালে একই সময়ে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে অফিসেই যাই। তাও জিজ্ঞেস করবে।
বললাম - না, ইংল্যান্ড যাচ্ছি। নেট বোলারগুলো যাচ্ছেতাই ঝোলাচ্ছে বলে বিরাট ফোনে কমপ্লেন করছিলো কাল রাত্তিরে। যাই দেখি, চারটে বল ছুঁড়ে আসি।
-বাব্বা, সকাল সকাল তো হেব্বি ফর্মে দেখছি। দাঁড়া না দু'মিনিট। এক কাপ চা খেয়ে যা।
আমি বলার চেষ্টা করলাম মেট্রো মিস হয়ে যাবে, কিন্তু তার আগেই দাদা এক ভাঁড় চা এদিকে এগিয়ে দিয়েছে।
- রথ টানলি এবার ?
- দরকার পড়ে না। সংসারের জোয়াল টানাতেই পুণ্যি হয়ে যাচ্ছে।
- হ্যাঁ, টেনেই বা কী হবে ? সে দিন কি আর আছে ? পাপী-তাপীতে ভরে গেছে দেশ। নইলে রথে বৃষ্টি হয়না এমন আজব জিনিস শুনেছিস কখনও ?
- সত্যি ! এবার কিন্তু রথে বৃষ্টি হলোনা।
- এই রথ, বৃষ্টি এসব না থাকলে ছেলেটার কী নাম হতো তাই বা কে জানে?
- কোন ছেলে ?
- সে আছে একজন। কিন্তু তোর কি আর শোনবার সময় আছে ?
- আর পাঁচ চুমুক। ওর মধ্যে কমপ্লিট করতে পারলে শুনতে পারি।
দাদার গুল মিস করলে নিজের লস।
- তাহলে বলি শোন। সে ১৯৭৩ সালের কথা। আমি তখন চেন্নাইয়ে। এক ভদ্রলোকের বাড়ির একতলায় ভাড়া থাকি। সজ্জন মানুষ। ধম্মকম্মে বেশ মতি। আমি পূর্বের লোক বলেই বোধহয় প্রায়ই বলে রথে পুরী যাওয়ার অনেকদিনের ইচ্ছে। একদিন আমি বললাম, ওসব পুরী-ফুরি রাখুন। আপনি মাহেশে চলুন। আপনাকে দেখাবো বাংলার রথ কাকে বলে ! বলে মাহেশের ইতিহাসটা শুনিয়ে দিলাম, বুঝলি? ভদ্রলোক দেখলাম বেশ সিরিয়াস। বৌকে নিয়ে মাহেশের রথ দেখতে যাবেনই। মনস্থির করে ফেলেছেন। টিকিটও কেটে ফেললেন। অগত্যা আমাকেও ঝুলে পড়তে হলো।
- আর তিন চুমুক।
আমি ঘড়ি দেখছি।
- তো সেদিন সকাল থেকে সে কী বৃষ্টি। ছাতা মাথায় আমরা বেরোলাম। পথঘাট ভীষণ পেছল। দড়ি ধরে টান দেওয়ার মুহূর্তে ভদ্রলোক আর সামলাতে পারলেন না। একেবারে উল্টে পড়লেন। সাদা জামাকাপড়ে কাদা-ফাদা লেগে সে কী অবস্থা। কিন্তু রথ টেনে ভদ্রলোক যাকে বলে অভিভূত। চেন্নাই ফিরেও প্রায়ই বলেন মাহেশের রথের কথা।
পরের বছর ভদ্রলোকের এক ছেলে হলো বুঝলি ? আমায় এসে বললেন, একটা নাম সাজেস্ট করুন মাহেশ দিয়ে। আমি তো ভাবছি এ আবার কী পাগলামি রে বাবা! এদিকে ভদ্রলোক নাছোড়বান্দা। ঠাট্টা করে একটা নাম বললাম। ও মা! পরদিন দেখি ওই নামটাই রেজিস্ট্রি করাতে যাচ্ছেন। কী কেলেঙ্কারি। আমি তো স্রেফ ফাজলামি মেরেছি। বললাম - শুনুন এভাবে সরাসরি মাহেশের রেফারেন্স দিয়ে নাম দিলে জায়গাটার অপমান হবে। শত হলেও একটা ঐতিহ্য আছে তো ? আপনি বরং নামটায় একটা-দুটো লেটার কমিয়ে এদিক-ওদিক করে দিন। সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না।
- কী নাম দিয়েছিলে শুনি ?
- হেঁ হেঁ। ভদ্রলোক মাহেশে আছাড় খেয়েছিলেন। আমি ভদ্রলোককে সাজেস্ট করেছিলাম, মাহেশে ভূপতিত। আর পরে চেঞ্জ করে যে নামটা হলো, সে তো তোরা সকলেই জানিস। মহেশ ভূপতি। টেনিস খেলে বেশ নাম করেছে ছেলেটা।
এক চুমুক বাকি ছিলো। বাকি রেখেই আমি হাঁটা লাগালাম মিনিবাসের দিকে।
শুনতে পেলাম দাদা পেছনে চ্যাঁচাচ্ছে - ওরে চায়ের দামটা তো দিয়ে যা ?
- কীরে, আপিস যাচ্ছিস বুঝি?
দাদার এই এক স্বভাব। রোজ সকালে একই সময়ে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে অফিসেই যাই। তাও জিজ্ঞেস করবে।
বললাম - না, ইংল্যান্ড যাচ্ছি। নেট বোলারগুলো যাচ্ছেতাই ঝোলাচ্ছে বলে বিরাট ফোনে কমপ্লেন করছিলো কাল রাত্তিরে। যাই দেখি, চারটে বল ছুঁড়ে আসি।
-বাব্বা, সকাল সকাল তো হেব্বি ফর্মে দেখছি। দাঁড়া না দু'মিনিট। এক কাপ চা খেয়ে যা।
আমি বলার চেষ্টা করলাম মেট্রো মিস হয়ে যাবে, কিন্তু তার আগেই দাদা এক ভাঁড় চা এদিকে এগিয়ে দিয়েছে।
- রথ টানলি এবার ?
- দরকার পড়ে না। সংসারের জোয়াল টানাতেই পুণ্যি হয়ে যাচ্ছে।
- হ্যাঁ, টেনেই বা কী হবে ? সে দিন কি আর আছে ? পাপী-তাপীতে ভরে গেছে দেশ। নইলে রথে বৃষ্টি হয়না এমন আজব জিনিস শুনেছিস কখনও ?
- সত্যি ! এবার কিন্তু রথে বৃষ্টি হলোনা।
- এই রথ, বৃষ্টি এসব না থাকলে ছেলেটার কী নাম হতো তাই বা কে জানে?
- কোন ছেলে ?
- সে আছে একজন। কিন্তু তোর কি আর শোনবার সময় আছে ?
- আর পাঁচ চুমুক। ওর মধ্যে কমপ্লিট করতে পারলে শুনতে পারি।
দাদার গুল মিস করলে নিজের লস।
- তাহলে বলি শোন। সে ১৯৭৩ সালের কথা। আমি তখন চেন্নাইয়ে। এক ভদ্রলোকের বাড়ির একতলায় ভাড়া থাকি। সজ্জন মানুষ। ধম্মকম্মে বেশ মতি। আমি পূর্বের লোক বলেই বোধহয় প্রায়ই বলে রথে পুরী যাওয়ার অনেকদিনের ইচ্ছে। একদিন আমি বললাম, ওসব পুরী-ফুরি রাখুন। আপনি মাহেশে চলুন। আপনাকে দেখাবো বাংলার রথ কাকে বলে ! বলে মাহেশের ইতিহাসটা শুনিয়ে দিলাম, বুঝলি? ভদ্রলোক দেখলাম বেশ সিরিয়াস। বৌকে নিয়ে মাহেশের রথ দেখতে যাবেনই। মনস্থির করে ফেলেছেন। টিকিটও কেটে ফেললেন। অগত্যা আমাকেও ঝুলে পড়তে হলো।
- আর তিন চুমুক।
আমি ঘড়ি দেখছি।
- তো সেদিন সকাল থেকে সে কী বৃষ্টি। ছাতা মাথায় আমরা বেরোলাম। পথঘাট ভীষণ পেছল। দড়ি ধরে টান দেওয়ার মুহূর্তে ভদ্রলোক আর সামলাতে পারলেন না। একেবারে উল্টে পড়লেন। সাদা জামাকাপড়ে কাদা-ফাদা লেগে সে কী অবস্থা। কিন্তু রথ টেনে ভদ্রলোক যাকে বলে অভিভূত। চেন্নাই ফিরেও প্রায়ই বলেন মাহেশের রথের কথা।
পরের বছর ভদ্রলোকের এক ছেলে হলো বুঝলি ? আমায় এসে বললেন, একটা নাম সাজেস্ট করুন মাহেশ দিয়ে। আমি তো ভাবছি এ আবার কী পাগলামি রে বাবা! এদিকে ভদ্রলোক নাছোড়বান্দা। ঠাট্টা করে একটা নাম বললাম। ও মা! পরদিন দেখি ওই নামটাই রেজিস্ট্রি করাতে যাচ্ছেন। কী কেলেঙ্কারি। আমি তো স্রেফ ফাজলামি মেরেছি। বললাম - শুনুন এভাবে সরাসরি মাহেশের রেফারেন্স দিয়ে নাম দিলে জায়গাটার অপমান হবে। শত হলেও একটা ঐতিহ্য আছে তো ? আপনি বরং নামটায় একটা-দুটো লেটার কমিয়ে এদিক-ওদিক করে দিন। সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না।
- কী নাম দিয়েছিলে শুনি ?
- হেঁ হেঁ। ভদ্রলোক মাহেশে আছাড় খেয়েছিলেন। আমি ভদ্রলোককে সাজেস্ট করেছিলাম, মাহেশে ভূপতিত। আর পরে চেঞ্জ করে যে নামটা হলো, সে তো তোরা সকলেই জানিস। মহেশ ভূপতি। টেনিস খেলে বেশ নাম করেছে ছেলেটা।
এক চুমুক বাকি ছিলো। বাকি রেখেই আমি হাঁটা লাগালাম মিনিবাসের দিকে।
শুনতে পেলাম দাদা পেছনে চ্যাঁচাচ্ছে - ওরে চায়ের দামটা তো দিয়ে যা ?