09-10-2021, 03:55 PM
(This post was last modified: 23-05-2022, 09:40 PM by cuck son. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
বাঁ হাতের কাঁপন টা আজকাল বেশ ঘন ঘন হচ্ছে, এই যেমন এখন হচ্ছে , আর এ জন্যই সকাল সকাল ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। দ্রুত ডাক্তার দেখানো দরকার কিন্তু ডাক্তার দেখাতে ইচ্ছে হয় না। কারন ডাক্তার এর কাছে গেলেই মন খারাপ হয়ে যায় , এবং সেই মন খারাপ অনেকদিন স্থায়ী হয় । এমনিতে বেশ আছি , খাচ্ছি দাচ্ছি, ঘুরছি ফিরছি , ঐ বিশ্রী রোগটার কথা খুব একটা মনে পরে না । কিন্তু ডাক্তার এর কাছে গেলেই ডাক্তার পই পই করে সব মনে করিয়ে দেয় । জেনো আমাকে কে মনে করিয়ে দিয়ে বেশ মজা পায় ডাক্তার বাবু । তাই ঠিক করেছি কিছুতেই আর ঐ ডাক্তার এর কাছে যাবো না । মাঝে মাঝে অবশ্য মনে হয় একটা মেয়ে ডাক্তার হলে ভালো হতো , মেয়ে ডাক্তারদের নিশ্চয়ই মনে মায়া দয়া বেশি থাকবে । খারাপ রোগের কথা বলার সময় ও মমতা মিশিয়ে বলবে ।
মশারির নিচে শুয়ে শুয়েই এসব ভাবছিলাম , কিন্তু আর বেশিক্ষণ শুয়ে থাকতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না , কারন কলিং বেল বাজছে, একাধারে বেজেই চলছে । এরকম নাছোড় বান্দা একজন ই আসে আমার এর কাছে , সেটা হচ্ছে মতিন । আমার ছোট বেলার বন্ধু । ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলো , ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর কি হলো , বাড়ির পাশের বস্তির এক মেয়ে কে বিয়ে করে ফেলল । সেই থেকে বাড়ি ছাড়া , ওর বাবা ওকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলো । আমি নিজেও ব্যাপারটা জানতাম না , মতিন এর ক্লাসে আসা বন্ধ দেখে মনে করেছিলাম হয়ত কোথাও ঘুরতে গেছে । কিন্তু একদিন হঠাত সন্ধার সময় মতিন বাড়ি এসে হাজির । তখন আমি একাই থাকি , বাবা মারা জাওয়র পর ছোট বোন সুমি কে ওর বড় খালা নিয়ে গিয়েছিলো , বিয়ের চেষ্টা করা হচ্ছিলো ওর ।
“ দোস্ত একটা উপকার করতে হবে , যদি করিস সারাজিবন তোর কেনা গোলাম হয়ে থাকবো” প্রায় ঘণ্টা খানেক অন্য কথা বলার পর বলেছিলো মতিন । আমি তেমন অবাক হইনি , কারন এই ধরনের কথা প্রায় বলত মতিন । “ কি উপকার? টাকা নাই , টাকা দিতে পারবো না” নির্লিপ্ত ভাবে বলেছিলাম আমি ।
“ না দোস্ত টাকা না , আশ্রয় দিতে হবে” আকুল হয়ে বলেছিলো মতিন ।
“ ক্যান তোর বাড়িতে কি হয়েছে?”
“ বের করে দিসে”
“ কেনো?”
“ সেটা একটু পরে বলছি , আগে বল আশ্রয় দিবি”
“ আরে এমন করে বলছিস কেনো থাক না যতদিন ইচ্ছা” বেশ অবাক হয়েছিলাম ওর আচরনে ।
আমার অনুমতি পেয়েই ঘর থেকে দৌরে বেড়িয়ে গিয়েছিলো মতিন । ফিরে এসেছিলো মিনিট পনেরো পর , সাথে ১৪-১৫ এর একটা মেয়ে , গায়ে সস্তা চকমকে রঙ এর একটা সারি । মাথায় বড় করে ঘোমটা দেয়া । ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, যদিও বাড়িতে আমি একাই থাকি , অভিবাবক কেউ নেই যে কৈফিয়ত দিতে হবে , কিন্তু তখনো আমি এই স্বাধীন জীবনে সম্পূর্ণ অভ্যস্ত হয়ে উথিনি
“ তোর ভাবি হয়” হাঁসি মুখে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো মতিন । রাজ্যের প্রস্ন ঘুরপাক খেলেও মুখে কিছুই বলতে পারিনি ।
“ খুব ভালো চা করতে পারে তোর ভাবি” বউ কে দার করিয়ে রেখেই বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বলেছিলো মতিন। তারপর বৌয়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো “যাও চট করে চা করে নিয়ে আসো , চা খাইয়ে দেবর এর মন জয় করে নাও… হা হা হা”
ক্রিইইইন ক্রিইইইইন , হ্যা মতিন ছাড়া আর কেউ না , । তাই ডান হাত দিয়ে মশারি আলগা করে , অনেকটা হেঁচোর পেচর করে বিছানা থেকে উঠে পরি । মতিন এর বউ আর এখন নেই । ঐ মেয়ে ওকে ফেলে চলে গেছে। ঠিক মতো ভাত কাপড় দেয়ার মুরদ যে মতিন এর নেই সেটা ওইটুকু মেয়ে বুঝে গিয়েছিলো । মেয়েটার নাম যে কি ছিলো মনে করার চেষ্টা করলাম কিন্তু মনে আসছে না । মন্ডা , বা মন্ডি এই টাইপ কিছু ছিলো । মাস খানেক এ বাড়িতে থাকার পর , মেয়েটি আমার সাথে অনেক ফ্রি হয়ে গিয়েছিলো । এটা সত্যি ছিলো যে মেয়েটি দারুন চা বানাতে পারত , জিজ্ঞাস করলে বলত “ চা ওলার মাইয়া চা বানাইতে পারুম না তো কি পারুম? নাইস দিতে?” আর খিল খিক করে হাসত । মেয়েটা নাচ কে নাইস বলত , আমি অবাক হয়ে দেখতাম মেয়েটিকে । যেমন দেখতে সুন্দর ছিলো তেমন সুন্দর হাঁসি ছিলো । টাকা ওয়ালা বাবার ঘরে জম্ন হলে মেয়েটির ভাগ্য হয়ত অন্নরকম হতো ।
মেয়েটি আমাকে প্রায় বলত , “ আপনারে আমার আপন ভাইয়ের মতন মনে হয় । আপ্নের উপর বইয়া বইয়া খাইতাসি , এইটা আমার ভালা লাগে না”
আমি বলতাম “ ভাই বলছো আবার বলছ আমার উপর বসে বসে খাচ্ছো এমন বলছো কেনো”
“ আমি নাইলে আপ্নের বইন , কিন্তু ঐ মতিন্নারে আপ্নে খাওয়াইবেন ক্যান” রেগে গিয়ে বলত মেয়েটি
“ কি করবো ?”
“ ঘাড় ধইরা বাইর কইরা দেন” নির্লিপ্ত ভাবে বলত মেয়েটি , আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করতাম
“তোমার কি হবে?”
“ আমাগো আবার কি হইবো , আমারা হাত চালাইয়া খাইতে জানি , আপনের বন্ধুর মতন নিষ্কর্মা না , খাওন পিদ্দন এর অভাব হইবো না”
তবে মতিন কে আমার ঘাড় ধরে বের করতে হয়নি , একদিন সকালে উঠে দেখি মেয়েটি নেই , সাথে আমার ছোট বোন এর কিছু জামা কাপড় আর কিছু জিনিস পত্র ও গায়েব। অবাক হয়েছিলাম খুব , তবে তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলো মতিন এর আচরন দেখে , কিছুই হয়নি এমন ভাব করে ছিলো মতিন । এর পর প্রায় এক সপ্তার মতো মতিন আমার বাড়িতে ছিলো দিনের বেলা স্বাভাবিক থাকতো আর রাতে বালিসে মুখ গুজে কাঁদত ।
“ কিরে সালা দরজা খুলতে এত সময় লাগে?”
যা ভেবে ছিলাম তাই , মতিন এসেছে , ওকে দেখলে আমার নিজেকে খুব বয়স্ক মনে হয় । মাথায় চুল নেই , মুখের চামড়া কুচকে গেছে কয়েক যায়গায়, দেখে মনেই হয় না ওর বয়স মাত্র ৩২ । পরনে একটা পুরাতন সাফারি কোট , এই কোট এর আবার বিশাল ইতিহাস , ওর কোন এক স্যার নাকি খুব সখ করে এটা নিজের জন্য বানিয়েছিলো , বউ এর পছন্দ হয়নি শুনে রাগে দুক্ষে মতিন কে দিয়ে দিয়েছিলো ।
“ এত সকালে কি মনে করে এলি” আমি উল্টো প্রশ্ন করাল্ম , বা হাত টা এখন আর টের পাচ্ছি না , মনে হচ্ছে আমার হাত নেই ।
“ আছে বন্ধু , আছে , আগে চা খাওয়াও তারপর বলছি” খুব রহস্য করে বলল মতিন , আমার কাছে অবশ্য এটা কোন রহস্য না , আমি জানি হয়ত নতুন কোন স্কিম এর সন্ধান পেয়েছে । আমার কাছে টাকা চাইতে এসেছে । এক বছরে টাকা পাচ গুন হবে , আর সেই লাভের টাকা অর্ধেক ওর অর্ধেক আমার । মতিন কে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারি না যে আমার কাছে টাকা নেই।
“ টাকা নেই” আমি সোজা বলে দিলাম । এক হাত নেই এমন অনুভূতিটা আমাকে বেশ তাড়িত করে রেখছে । মতিন এর মুখ দেখে মনে হলো খুব আহত হয়েছে , কিন্তু নিমেষেই সেই ভাব দূর করে ফেলল।
“ স্কিম টা খুব ভালো , আর এর জন্য তোকে বাড়িটা বিক্রিও করতে হবে না , ওরা তোর যায়গায় এই পুরনো বিল্ডিং ভেঙ্গে নতুন হাইরাইজ বিল্ডিং করে দেবে , অর্ধেক ফ্লাট তোর অর্ধেক ওদের , আমি সুধু দালালি পাবো আর একটা ফ্লাট”
হ্যা ইদানিং এই জিনিসটা খুব শুরু হয়েছে । তবে ফ্রড আছে প্রচুর এই লাইনে , এসব নিয়ে নাটক সিনেমা ও হচ্ছে ।
“ আমি একা মানুষ এত ফ্লাট দিয়ে কি করবো “ আমি বললাম
“ একা থাকবি ক্যান , বিয়ে থা করবি , আমার এক চাচা আছে গ্রামে , ওনার মেয়ে , নাম নিলুফার , যেমন সুন্দরী , তেমন গুনবতি” মতিন দিগুন উৎসাহ নিয়ে বলল ।
“ তুই জানিস আমার অবস্থা” আমি কাতর গলায় বললাম , কেউ যখন আমার অবস্থা জেনেও আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখায় তাহলে আমার খুব কষ্ট হয় ।
“ ধুর , বা হাত কাঁপে তো কি হয়েছে , নিলুফার এর মতো মেয়ে পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে” মতিন আমার কথা কানেই দিলো না।
“ চাচার গ্রামে বিশাল সম্পদ , বাড়িতে পুকুর , বিশাল গেরস্থি , তোকে একদিন নিয়ে যাবো” এসব আরও নানা ধরনের বকর বকর করা শেষে , আগামি সপ্তায় বাড়ির দলিল ঠিক রাখতে বলে বিদায় নিলো মতিন ।
আমি একা ঘরে বসে রইলাম , বা হাতের অস্তিত্ব ফিরে এসেছে , তবে সাথে করে অসহ্য ব্যাথা নিয়ে এসেছে , আমার কপাল ঘামছে , হয়ত আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো এখন । মনে মনে ভাবলাম মতিন আরও কিছুক্ষন থাকলে ভালো হতো । হয়ত অজ্ঞান হওয়া থেকে রক্ষা পেতাম । কিন্তু একা ঘরে সেটা সম্ভব না , আমার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছে , চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে । কিন্তু অন্ধকার হচ্ছে না আমার সামনে , কেমন জানি গারো সবুজ একটা আলো , তার পর ধিরে ধিরে সেটা গ্রাম্য মেঠো পথে পরিনত হলো । পথের দুই ধারের সবুজ ঘাস গুলি ভেজা হয়ায় ওদের সবুঝ রঙ অনেক সতেজ মনে হচ্ছে । হয়ত একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছে । হ্যা তাই হবে , কারন আমার পায়ের পাতা ভেজা ভেজা লাগছে , আমি সামনে তাকালাম , মেঠো পথের শেষে একটা পুকুর ওয়ালা বাড়ি , পুকুরের চারিদিকে সারি সারি নারকেল গাছ । একটা গাছের নিচে একটা মেয়ে দাড়িয়ে , শ্যামলা গায়ের রঙ নীল একটি ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা দেয়া , মেয়েটির ডাগর চোখে রাজ্যের মায়া ।
আমি হঠাত করে মেয়েটির সামনে এসে দারালাম । মেয়েটি আমাকে দেখে খিল খিক করে হেঁসে উঠলো , কি চমৎকার সেই হাঁসি , একদম মতিন এর বউ এর মতো , হাসির কারনে মাথার ঘোমটা পরে গেছে । মাথা ভর্তি কালো কোঁকড়ানো চুল । আমি বললাম
“ নিলুফার হাসো কেনো?”
“ আপনাকে দেখে হাঁসি “
“ আমি হাসির কি করলাম”
“ এই যে কেমন চোখ মুখ কুচকে আছেন , তাই দেখে হাঁসি”
“ আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে , তাই এমন করে আছি , মানুষের কষ্ট দেখে কি হাঁসতে হয়?”
“ হয় , আপনার কষ্ট দেখে আমার হাঁসতে ইচ্ছা হয়”
“ কেনো”
“ কারন আপনি খালি খালি কষ্ট পাচ্ছেন , আপনি যদি এখন হাত বাড়িয়ে আমার হাতটা ধরেন তাহলে আপনার কষ্ট দূর হয়ে যাবে , কিন্তু আপনি সেটা করবেন না”
“ আমি করবো , আমাকে তোমার হাত দাও নিলুফার”
“ উহু এত সহজে না” এই বলে নিলুফার আরও জোড়ে জোড়ে হাঁসতে লাগলো । আর আমার চোখের সামনের সুবুজভাব আলো দূর হয়ে একটা লাল আলো দেখা দিলো , ধিরে ধিরে সেই লাল আলো পরিনত হলো সাদা আলোয় , আমি নিজেকে আবিস্কার করলাম , আমার ঘরের মেঝেতে । সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে আছে ।
ক্রমশ
মশারির নিচে শুয়ে শুয়েই এসব ভাবছিলাম , কিন্তু আর বেশিক্ষণ শুয়ে থাকতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না , কারন কলিং বেল বাজছে, একাধারে বেজেই চলছে । এরকম নাছোড় বান্দা একজন ই আসে আমার এর কাছে , সেটা হচ্ছে মতিন । আমার ছোট বেলার বন্ধু । ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলো , ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর কি হলো , বাড়ির পাশের বস্তির এক মেয়ে কে বিয়ে করে ফেলল । সেই থেকে বাড়ি ছাড়া , ওর বাবা ওকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলো । আমি নিজেও ব্যাপারটা জানতাম না , মতিন এর ক্লাসে আসা বন্ধ দেখে মনে করেছিলাম হয়ত কোথাও ঘুরতে গেছে । কিন্তু একদিন হঠাত সন্ধার সময় মতিন বাড়ি এসে হাজির । তখন আমি একাই থাকি , বাবা মারা জাওয়র পর ছোট বোন সুমি কে ওর বড় খালা নিয়ে গিয়েছিলো , বিয়ের চেষ্টা করা হচ্ছিলো ওর ।
“ দোস্ত একটা উপকার করতে হবে , যদি করিস সারাজিবন তোর কেনা গোলাম হয়ে থাকবো” প্রায় ঘণ্টা খানেক অন্য কথা বলার পর বলেছিলো মতিন । আমি তেমন অবাক হইনি , কারন এই ধরনের কথা প্রায় বলত মতিন । “ কি উপকার? টাকা নাই , টাকা দিতে পারবো না” নির্লিপ্ত ভাবে বলেছিলাম আমি ।
“ না দোস্ত টাকা না , আশ্রয় দিতে হবে” আকুল হয়ে বলেছিলো মতিন ।
“ ক্যান তোর বাড়িতে কি হয়েছে?”
“ বের করে দিসে”
“ কেনো?”
“ সেটা একটু পরে বলছি , আগে বল আশ্রয় দিবি”
“ আরে এমন করে বলছিস কেনো থাক না যতদিন ইচ্ছা” বেশ অবাক হয়েছিলাম ওর আচরনে ।
আমার অনুমতি পেয়েই ঘর থেকে দৌরে বেড়িয়ে গিয়েছিলো মতিন । ফিরে এসেছিলো মিনিট পনেরো পর , সাথে ১৪-১৫ এর একটা মেয়ে , গায়ে সস্তা চকমকে রঙ এর একটা সারি । মাথায় বড় করে ঘোমটা দেয়া । ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, যদিও বাড়িতে আমি একাই থাকি , অভিবাবক কেউ নেই যে কৈফিয়ত দিতে হবে , কিন্তু তখনো আমি এই স্বাধীন জীবনে সম্পূর্ণ অভ্যস্ত হয়ে উথিনি
“ তোর ভাবি হয়” হাঁসি মুখে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো মতিন । রাজ্যের প্রস্ন ঘুরপাক খেলেও মুখে কিছুই বলতে পারিনি ।
“ খুব ভালো চা করতে পারে তোর ভাবি” বউ কে দার করিয়ে রেখেই বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বলেছিলো মতিন। তারপর বৌয়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো “যাও চট করে চা করে নিয়ে আসো , চা খাইয়ে দেবর এর মন জয় করে নাও… হা হা হা”
ক্রিইইইন ক্রিইইইইন , হ্যা মতিন ছাড়া আর কেউ না , । তাই ডান হাত দিয়ে মশারি আলগা করে , অনেকটা হেঁচোর পেচর করে বিছানা থেকে উঠে পরি । মতিন এর বউ আর এখন নেই । ঐ মেয়ে ওকে ফেলে চলে গেছে। ঠিক মতো ভাত কাপড় দেয়ার মুরদ যে মতিন এর নেই সেটা ওইটুকু মেয়ে বুঝে গিয়েছিলো । মেয়েটার নাম যে কি ছিলো মনে করার চেষ্টা করলাম কিন্তু মনে আসছে না । মন্ডা , বা মন্ডি এই টাইপ কিছু ছিলো । মাস খানেক এ বাড়িতে থাকার পর , মেয়েটি আমার সাথে অনেক ফ্রি হয়ে গিয়েছিলো । এটা সত্যি ছিলো যে মেয়েটি দারুন চা বানাতে পারত , জিজ্ঞাস করলে বলত “ চা ওলার মাইয়া চা বানাইতে পারুম না তো কি পারুম? নাইস দিতে?” আর খিল খিক করে হাসত । মেয়েটা নাচ কে নাইস বলত , আমি অবাক হয়ে দেখতাম মেয়েটিকে । যেমন দেখতে সুন্দর ছিলো তেমন সুন্দর হাঁসি ছিলো । টাকা ওয়ালা বাবার ঘরে জম্ন হলে মেয়েটির ভাগ্য হয়ত অন্নরকম হতো ।
মেয়েটি আমাকে প্রায় বলত , “ আপনারে আমার আপন ভাইয়ের মতন মনে হয় । আপ্নের উপর বইয়া বইয়া খাইতাসি , এইটা আমার ভালা লাগে না”
আমি বলতাম “ ভাই বলছো আবার বলছ আমার উপর বসে বসে খাচ্ছো এমন বলছো কেনো”
“ আমি নাইলে আপ্নের বইন , কিন্তু ঐ মতিন্নারে আপ্নে খাওয়াইবেন ক্যান” রেগে গিয়ে বলত মেয়েটি
“ কি করবো ?”
“ ঘাড় ধইরা বাইর কইরা দেন” নির্লিপ্ত ভাবে বলত মেয়েটি , আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করতাম
“তোমার কি হবে?”
“ আমাগো আবার কি হইবো , আমারা হাত চালাইয়া খাইতে জানি , আপনের বন্ধুর মতন নিষ্কর্মা না , খাওন পিদ্দন এর অভাব হইবো না”
তবে মতিন কে আমার ঘাড় ধরে বের করতে হয়নি , একদিন সকালে উঠে দেখি মেয়েটি নেই , সাথে আমার ছোট বোন এর কিছু জামা কাপড় আর কিছু জিনিস পত্র ও গায়েব। অবাক হয়েছিলাম খুব , তবে তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলো মতিন এর আচরন দেখে , কিছুই হয়নি এমন ভাব করে ছিলো মতিন । এর পর প্রায় এক সপ্তার মতো মতিন আমার বাড়িতে ছিলো দিনের বেলা স্বাভাবিক থাকতো আর রাতে বালিসে মুখ গুজে কাঁদত ।
“ কিরে সালা দরজা খুলতে এত সময় লাগে?”
যা ভেবে ছিলাম তাই , মতিন এসেছে , ওকে দেখলে আমার নিজেকে খুব বয়স্ক মনে হয় । মাথায় চুল নেই , মুখের চামড়া কুচকে গেছে কয়েক যায়গায়, দেখে মনেই হয় না ওর বয়স মাত্র ৩২ । পরনে একটা পুরাতন সাফারি কোট , এই কোট এর আবার বিশাল ইতিহাস , ওর কোন এক স্যার নাকি খুব সখ করে এটা নিজের জন্য বানিয়েছিলো , বউ এর পছন্দ হয়নি শুনে রাগে দুক্ষে মতিন কে দিয়ে দিয়েছিলো ।
“ এত সকালে কি মনে করে এলি” আমি উল্টো প্রশ্ন করাল্ম , বা হাত টা এখন আর টের পাচ্ছি না , মনে হচ্ছে আমার হাত নেই ।
“ আছে বন্ধু , আছে , আগে চা খাওয়াও তারপর বলছি” খুব রহস্য করে বলল মতিন , আমার কাছে অবশ্য এটা কোন রহস্য না , আমি জানি হয়ত নতুন কোন স্কিম এর সন্ধান পেয়েছে । আমার কাছে টাকা চাইতে এসেছে । এক বছরে টাকা পাচ গুন হবে , আর সেই লাভের টাকা অর্ধেক ওর অর্ধেক আমার । মতিন কে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারি না যে আমার কাছে টাকা নেই।
“ টাকা নেই” আমি সোজা বলে দিলাম । এক হাত নেই এমন অনুভূতিটা আমাকে বেশ তাড়িত করে রেখছে । মতিন এর মুখ দেখে মনে হলো খুব আহত হয়েছে , কিন্তু নিমেষেই সেই ভাব দূর করে ফেলল।
“ স্কিম টা খুব ভালো , আর এর জন্য তোকে বাড়িটা বিক্রিও করতে হবে না , ওরা তোর যায়গায় এই পুরনো বিল্ডিং ভেঙ্গে নতুন হাইরাইজ বিল্ডিং করে দেবে , অর্ধেক ফ্লাট তোর অর্ধেক ওদের , আমি সুধু দালালি পাবো আর একটা ফ্লাট”
হ্যা ইদানিং এই জিনিসটা খুব শুরু হয়েছে । তবে ফ্রড আছে প্রচুর এই লাইনে , এসব নিয়ে নাটক সিনেমা ও হচ্ছে ।
“ আমি একা মানুষ এত ফ্লাট দিয়ে কি করবো “ আমি বললাম
“ একা থাকবি ক্যান , বিয়ে থা করবি , আমার এক চাচা আছে গ্রামে , ওনার মেয়ে , নাম নিলুফার , যেমন সুন্দরী , তেমন গুনবতি” মতিন দিগুন উৎসাহ নিয়ে বলল ।
“ তুই জানিস আমার অবস্থা” আমি কাতর গলায় বললাম , কেউ যখন আমার অবস্থা জেনেও আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখায় তাহলে আমার খুব কষ্ট হয় ।
“ ধুর , বা হাত কাঁপে তো কি হয়েছে , নিলুফার এর মতো মেয়ে পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে” মতিন আমার কথা কানেই দিলো না।
“ চাচার গ্রামে বিশাল সম্পদ , বাড়িতে পুকুর , বিশাল গেরস্থি , তোকে একদিন নিয়ে যাবো” এসব আরও নানা ধরনের বকর বকর করা শেষে , আগামি সপ্তায় বাড়ির দলিল ঠিক রাখতে বলে বিদায় নিলো মতিন ।
আমি একা ঘরে বসে রইলাম , বা হাতের অস্তিত্ব ফিরে এসেছে , তবে সাথে করে অসহ্য ব্যাথা নিয়ে এসেছে , আমার কপাল ঘামছে , হয়ত আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো এখন । মনে মনে ভাবলাম মতিন আরও কিছুক্ষন থাকলে ভালো হতো । হয়ত অজ্ঞান হওয়া থেকে রক্ষা পেতাম । কিন্তু একা ঘরে সেটা সম্ভব না , আমার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছে , চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে । কিন্তু অন্ধকার হচ্ছে না আমার সামনে , কেমন জানি গারো সবুজ একটা আলো , তার পর ধিরে ধিরে সেটা গ্রাম্য মেঠো পথে পরিনত হলো । পথের দুই ধারের সবুজ ঘাস গুলি ভেজা হয়ায় ওদের সবুঝ রঙ অনেক সতেজ মনে হচ্ছে । হয়ত একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছে । হ্যা তাই হবে , কারন আমার পায়ের পাতা ভেজা ভেজা লাগছে , আমি সামনে তাকালাম , মেঠো পথের শেষে একটা পুকুর ওয়ালা বাড়ি , পুকুরের চারিদিকে সারি সারি নারকেল গাছ । একটা গাছের নিচে একটা মেয়ে দাড়িয়ে , শ্যামলা গায়ের রঙ নীল একটি ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা দেয়া , মেয়েটির ডাগর চোখে রাজ্যের মায়া ।
আমি হঠাত করে মেয়েটির সামনে এসে দারালাম । মেয়েটি আমাকে দেখে খিল খিক করে হেঁসে উঠলো , কি চমৎকার সেই হাঁসি , একদম মতিন এর বউ এর মতো , হাসির কারনে মাথার ঘোমটা পরে গেছে । মাথা ভর্তি কালো কোঁকড়ানো চুল । আমি বললাম
“ নিলুফার হাসো কেনো?”
“ আপনাকে দেখে হাঁসি “
“ আমি হাসির কি করলাম”
“ এই যে কেমন চোখ মুখ কুচকে আছেন , তাই দেখে হাঁসি”
“ আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে , তাই এমন করে আছি , মানুষের কষ্ট দেখে কি হাঁসতে হয়?”
“ হয় , আপনার কষ্ট দেখে আমার হাঁসতে ইচ্ছা হয়”
“ কেনো”
“ কারন আপনি খালি খালি কষ্ট পাচ্ছেন , আপনি যদি এখন হাত বাড়িয়ে আমার হাতটা ধরেন তাহলে আপনার কষ্ট দূর হয়ে যাবে , কিন্তু আপনি সেটা করবেন না”
“ আমি করবো , আমাকে তোমার হাত দাও নিলুফার”
“ উহু এত সহজে না” এই বলে নিলুফার আরও জোড়ে জোড়ে হাঁসতে লাগলো । আর আমার চোখের সামনের সুবুজভাব আলো দূর হয়ে একটা লাল আলো দেখা দিলো , ধিরে ধিরে সেই লাল আলো পরিনত হলো সাদা আলোয় , আমি নিজেকে আবিস্কার করলাম , আমার ঘরের মেঝেতে । সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে আছে ।
ক্রমশ