09-10-2021, 11:18 AM
পুজোর জন্য কিছু একটা চাইবে বোধহয়।
আহা রে! সারাজীবন অভাবেই বড় হলো মেয়েটা। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে... সেই মানুষটা থাকলে একটু হলেও তো অন্যরকম হতো জীবনটা...
"কি চাই রে? ওহ! কোন এক ওয়েবসাইটে সেল দিচ্ছে, তাই না? কিছু কিনবি?"
"আঃ, না মা। তোমার থেকে একটা অন্য জিনিস চাইব। আমার পুজোর গিফট সেটা।"
"কি, তিন্নি? আমার কিন্তু হাত একদম খালি..." একটু বিপন্ন গলায় বলেন মন্দিরা। যদিও জানেন, তিন্নি উল্টোপাল্টা কিছু চাইবার মেয়ে নয়! দেখেছে তো মায়ের লড়াই এতগুলো বছর ধরে। তাড়াতাড়ি ম্যাচিওরড হয়ে গেছে তাই!
"মা... আমার... আসলে আমার..."
"বল..?"
"আজ তোমার ফোনটা ধরেছিলাম তোমার অফিসের কারো নাম্বার সেভ করা আছে কিনা খুঁজতে গিয়ে । পেলাম না। তাই পরে নেট থেকে খুঁজে ফোন করেছিলাম ল্যান্ডলাইন নাম্বারে। "
"কি বলছিস তিন্নি? আমি এখন ফোন কিনতে পারব না কিন্তু। আমার ফোন ঠিক আছে!"
"ওফ, মা! ফোন কিনতে হবে না। আসলে... আমি নাম্বার খুঁজতে গিয়ে 'অমিত এফ বি' লেখা একজনের মেসেজ দেখেছি মা। আমি বেশ কিছুদিন ধরেই দেখছিলাম তুমি রাতে শুয়ে শুয়েও অনেকক্ষণ মোবাইলে খুটুরখাটুর করো... ভেবেছিলাম তোমাকে জিজ্ঞেস করব... করা হয় নি..."
"তিন্নিইইই" চিৎকার করে ওঠেন মন্দিরা...
এগিয়ে আসে তিন্নি। মায়ের সামনে মেঝেতে বসে পড়ে, মায়ের হাঁটুতে দুটো হাত রেখে...
"তোমার প্রাইভেসি নষ্ট করতে চাইনি মা। খুব চিন্তায় ছিলাম। তোমার অফিসের নাম দিয়ে কোনো নাম সেভ করা নেই দেখে মেসেজ বক্স খুলেছিলাম। তখন ই দেখলাম এই 'অমিত এফ বি' তোমাকে অনেক মেসেজ করেছেন। ওনার প্রোফাইল ও দেখলাম আমার ফেসবুক থেকে। ওনার মেসেজ গুলো কিছু পড়েছি মা। উনি তোমাকে নতুন করে জীবন শুরু করতে বলেছেন..."
"তিন্নি, প্লিজ চুপ করো। আমি এই নিয়ে কথা বলতে বা শুনতে চাই না..."
"মা, প্লিজ শোনো। তুমি জানো, তুমিই আমার পৃথিবী। আর উনি ঠিক ই বলেছেন। বাবা মারা যাবার সময় আমি সবে ক্লাস থ্রি! মেরেকেটে আটবছর বয়স তখন আমার। নভেম্বরে আমি আঠেরোয় পড়ব মা। দশ দশটা বছর ধরে তুমি একা লড়াই করছ... লোন নিয়ে এই বাড়িটা কিনেছ...আমাকে পড়াচ্ছ...দুজনের খাওয়া খরচ... সে ও তো অনেক মা... তারপর তোমার যাতায়াত... বাকি সবকিছু... কিভাবে সব সামলাচ্ছ তুমি, ভেবেই আমার ভয় লাগে... তুমি কতদিন হাসো না মা! হাসার সময়ই পাও না! তোমার ও তো অধিকার আছে নিজের কথা ভাবার! আমার মা হবার পাশাপাশি তুমি তো 'মন্দিরা ভট্টাচার্য' ও,তাই না?"
অনেক কিছু বলবেন ভাবছিলেন মন্দিরা... কিন্তু পারছেন না।
এইকথা গুলোই তো কতবার ভেবেছেন নিজে। একা থাকার দিনে আর রাতেও।
কিন্তু পেরেছেন কোথায়? পারেন কই!
"এই 'অমিত এফ বি' হোন বা অন্য কেউ... কে কেমন, কি চাইছে, আমার থেকে অনেক ভাল বুঝবে তুমি... আমার তো সবাইকেই ভাল লাগে! তোমার তো তা না! তুমি ভাবো মা... কথা বলো, আড্ডা মারো... প্রেম ই যে করতে হবে, তার কি মানে আছে? জাস্ট, সুযোগ দাও... নিজেকে.."
তিন্নি না... যেন অন্য কেউ বলছে কথা গুলো। কেমন অমোঘ... সত্য শোনাচ্ছে!
"তুই কবে এত বড় হয়ে গেলি মা..." রুদ্ধস্বরে এটুকুই শুধু বলতে পারলেন মন্দিরা।
"এঃ, তোমার কাছে তো সবসময় ছোট্ট!" বলে মা কে জড়িয়ে ধরে তিন্নি।
মন্দিরাও জড়িয়ে ধরেন মেয়েকে।
দুই নারীর হৃদয় যেন অতলান্ত মোহনা তখন!
মাকে জড়িয়ে রেখেই দেওয়ালের দিকে তাকায় তিন্নি। দেওয়ালে বাবার ছবি টাঙানো। সেদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে "বাবা, তোমার স্মৃতি আমার কাছে ঝাপসা হয়ে আসছে। শুধু মা কে ভাল রাখতে চাই সারাজীবন... এটাই আমার তর্পণ... তুমি আশীর্বাদ করো.."
চোখ বুজে ফেলেছিল তখন তিন্নি... নইলে দেখত... ছবির মধ্যে বাবার হাসিমুখ...
আহা রে! সারাজীবন অভাবেই বড় হলো মেয়েটা। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছে... সেই মানুষটা থাকলে একটু হলেও তো অন্যরকম হতো জীবনটা...
"কি চাই রে? ওহ! কোন এক ওয়েবসাইটে সেল দিচ্ছে, তাই না? কিছু কিনবি?"
"আঃ, না মা। তোমার থেকে একটা অন্য জিনিস চাইব। আমার পুজোর গিফট সেটা।"
"কি, তিন্নি? আমার কিন্তু হাত একদম খালি..." একটু বিপন্ন গলায় বলেন মন্দিরা। যদিও জানেন, তিন্নি উল্টোপাল্টা কিছু চাইবার মেয়ে নয়! দেখেছে তো মায়ের লড়াই এতগুলো বছর ধরে। তাড়াতাড়ি ম্যাচিওরড হয়ে গেছে তাই!
"মা... আমার... আসলে আমার..."
"বল..?"
"আজ তোমার ফোনটা ধরেছিলাম তোমার অফিসের কারো নাম্বার সেভ করা আছে কিনা খুঁজতে গিয়ে । পেলাম না। তাই পরে নেট থেকে খুঁজে ফোন করেছিলাম ল্যান্ডলাইন নাম্বারে। "
"কি বলছিস তিন্নি? আমি এখন ফোন কিনতে পারব না কিন্তু। আমার ফোন ঠিক আছে!"
"ওফ, মা! ফোন কিনতে হবে না। আসলে... আমি নাম্বার খুঁজতে গিয়ে 'অমিত এফ বি' লেখা একজনের মেসেজ দেখেছি মা। আমি বেশ কিছুদিন ধরেই দেখছিলাম তুমি রাতে শুয়ে শুয়েও অনেকক্ষণ মোবাইলে খুটুরখাটুর করো... ভেবেছিলাম তোমাকে জিজ্ঞেস করব... করা হয় নি..."
"তিন্নিইইই" চিৎকার করে ওঠেন মন্দিরা...
এগিয়ে আসে তিন্নি। মায়ের সামনে মেঝেতে বসে পড়ে, মায়ের হাঁটুতে দুটো হাত রেখে...
"তোমার প্রাইভেসি নষ্ট করতে চাইনি মা। খুব চিন্তায় ছিলাম। তোমার অফিসের নাম দিয়ে কোনো নাম সেভ করা নেই দেখে মেসেজ বক্স খুলেছিলাম। তখন ই দেখলাম এই 'অমিত এফ বি' তোমাকে অনেক মেসেজ করেছেন। ওনার প্রোফাইল ও দেখলাম আমার ফেসবুক থেকে। ওনার মেসেজ গুলো কিছু পড়েছি মা। উনি তোমাকে নতুন করে জীবন শুরু করতে বলেছেন..."
"তিন্নি, প্লিজ চুপ করো। আমি এই নিয়ে কথা বলতে বা শুনতে চাই না..."
"মা, প্লিজ শোনো। তুমি জানো, তুমিই আমার পৃথিবী। আর উনি ঠিক ই বলেছেন। বাবা মারা যাবার সময় আমি সবে ক্লাস থ্রি! মেরেকেটে আটবছর বয়স তখন আমার। নভেম্বরে আমি আঠেরোয় পড়ব মা। দশ দশটা বছর ধরে তুমি একা লড়াই করছ... লোন নিয়ে এই বাড়িটা কিনেছ...আমাকে পড়াচ্ছ...দুজনের খাওয়া খরচ... সে ও তো অনেক মা... তারপর তোমার যাতায়াত... বাকি সবকিছু... কিভাবে সব সামলাচ্ছ তুমি, ভেবেই আমার ভয় লাগে... তুমি কতদিন হাসো না মা! হাসার সময়ই পাও না! তোমার ও তো অধিকার আছে নিজের কথা ভাবার! আমার মা হবার পাশাপাশি তুমি তো 'মন্দিরা ভট্টাচার্য' ও,তাই না?"
অনেক কিছু বলবেন ভাবছিলেন মন্দিরা... কিন্তু পারছেন না।
এইকথা গুলোই তো কতবার ভেবেছেন নিজে। একা থাকার দিনে আর রাতেও।
কিন্তু পেরেছেন কোথায়? পারেন কই!
"এই 'অমিত এফ বি' হোন বা অন্য কেউ... কে কেমন, কি চাইছে, আমার থেকে অনেক ভাল বুঝবে তুমি... আমার তো সবাইকেই ভাল লাগে! তোমার তো তা না! তুমি ভাবো মা... কথা বলো, আড্ডা মারো... প্রেম ই যে করতে হবে, তার কি মানে আছে? জাস্ট, সুযোগ দাও... নিজেকে.."
তিন্নি না... যেন অন্য কেউ বলছে কথা গুলো। কেমন অমোঘ... সত্য শোনাচ্ছে!
"তুই কবে এত বড় হয়ে গেলি মা..." রুদ্ধস্বরে এটুকুই শুধু বলতে পারলেন মন্দিরা।
"এঃ, তোমার কাছে তো সবসময় ছোট্ট!" বলে মা কে জড়িয়ে ধরে তিন্নি।
মন্দিরাও জড়িয়ে ধরেন মেয়েকে।
দুই নারীর হৃদয় যেন অতলান্ত মোহনা তখন!
মাকে জড়িয়ে রেখেই দেওয়ালের দিকে তাকায় তিন্নি। দেওয়ালে বাবার ছবি টাঙানো। সেদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে "বাবা, তোমার স্মৃতি আমার কাছে ঝাপসা হয়ে আসছে। শুধু মা কে ভাল রাখতে চাই সারাজীবন... এটাই আমার তর্পণ... তুমি আশীর্বাদ করো.."
চোখ বুজে ফেলেছিল তখন তিন্নি... নইলে দেখত... ছবির মধ্যে বাবার হাসিমুখ...