07-10-2021, 03:43 PM
পরের দিন সকালে খুশীর থেকে বাবার নাম ঠিকানা নেওয়া হবে। কিন্তু খুব হতাশ হলো জেনে যে তাদের বাড়ি আমেরিকার কলোরাডো রাজ্যে। বিদেশ ভূমিতে গিয়ে তাহলে কি কুহুর পক্ষে সম্ভব হবে খুশীর বাবার খোঁজ নেবার? কিন্তু একটা কিছু তো সূত্র বের করতেই হবে, কুহু যে দেবী কুতেতির কাছে সংকল্প নিয়েছে। আর সূত্রটা বোধহয় বের হলো যখন খুশী ওর বাবার নাম বললো, শান্তনু রায়। সাথে এক আশ্চর্য মিল যে ওর মায়ের নাম ও কবিতা, মানে কবিতা রায়। শান্তনু রায় নামটা তো কুহুর খুব চেনা নাম লাগছে। কথায় কথায় খুশীর থেকে আরো জানা গেলো যে ওর দাদু উত্তরবঙ্গে কোনো বয়স্ক আশ্রমে থাকে আর নাম সুমন্ত্র রায়। ক্ষণিকের জন্যে কুহুর শরীরে যেনো তড়িৎ প্রবাহ বয়ে গেলো। খুব বিস্মৃত হোলো জেনে যে খুশীর রক্তের সম্পর্ক আছে সুমন্ত্রর সাথে। তাহলে কি খুশীর সূত্রে আবার করে সে সুমন্ত্রর সংস্পর্শে আসবে? কিন্তু সে যে সুমন্ত্রকে পরিত্যাগ করে এসেছে। তাহলে কি সে শান্তনুকে খোঁজার সংকল্প পরিত্যাগ করবে? মনের ভিতর আলোড়ন চলতে থাকে পক্ষে ও বিপক্ষে। শেষে কুহু স্থির করে সে শান্তিনীড়ে যাবে সুমন্ত্রর থেকে শান্তনুর খোঁজ নিতে। সে যে দেবী কুতেতির কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে খুশীকে ওর বাবার সাথে মিলিয়ে দেবার।।
সুমন্ত্র আজ মানসিক ভাবে পুরো বিধ্বস্ত। কুহুর শান্তিনীড় ছেড়ে যাওয়াকে সে কোনোদিন মন থেকে গ্রহণ করতে পারেনি। তার ওপর বিচ্ছেদের দিনে কুহুর সেই লাঞ্ছনা তার কাছে আজও যেনো দুঃস্বপ্ন হয়ে রয়ে গেছে। ছেড়ে যাবার আগে সে কুহুকে কিছু সত্য বলতে চেয়েছিলো কিন্তু তার বুকে ব্যথা ওঠায় সেটা শেষ পর্যন্ত বলে উঠতে পারেনি। আজ তাই অবমাননার গ্লানিতে আচ্ছাদিত সুমন্ত্রর আত্মবিশ্বাস প্রায় বিলুপ্তির পথে। সাথে গত এক বছর যাবত শরীরের প্রতি অরাজকতা করে আজ সে যক্ষা রোগের শিকার হয়েছে।।
হঠাত করে কুহুকে শান্তিনীড়ে দেখে সুমন্ত্র অবাক হলো। অবচেতন মনে আশার সঞ্চার হয় যে তার শরীর খারাপের খবর পেয়ে বুঝি কুহু ছুটে এসেছে তাকে সঙ্গ দিতে, তাকে সুশ্রূষা করার সংকল্প নিয়ে। প্রথমে সুমন্ত্রর এই দুরবস্থা দেখে কুহুর ভিতরটা কেঁদে ওঠে। কিন্তু আজ তার মনোভাব সুদৃঢ় আর সংকল্প অটুট। আজ সে মনকে দুর্বল করে দিতে চায়না। নিজেকে তাই পরক্ষণে সামলে নিয়ে সুমন্ত্রকে জানায় নাতনি 'খুশীর' খবর আর তার আসার উদ্দেশ্য। সুমন্ত্র এখন খুব দুর্বল হয়ে গেছে। তার কথা বলতে গিয়ে হাঁফ আসছে। তবু কষ্টের সাথে শোনালো শান্তনুর দুঃস্বপ্নের গল্প। শান্তনু পরিবার নিয়ে ২০১৩ সালের জুন মাসে আমেরিকা থেকে আসে আর তারপর বেড়াতে যায় গাড়োয়ালের চারধামে। সেখানে কেদারনাথে থাকাকালীন অলকানন্দার প্রলয়ে হঠাত করে ওরা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর শান্তনুর যখন জ্ঞান ফেরে তখন ও হাসপাতালে ভর্তি আছে। অলকানন্দার খরস্রোতে মেরুদণ্ডে গভীর আঘাত পেয়েছে। কোনোরকমে নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও স্ত্রী আর মেয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা হবার পরে এখন কয়েক মাস বিছানায় রেস্ট নিতে হবে। তাই নিরুপায় হয়ে দেশের বাড়িতে একা থাকে কেয়ার টেকারের সহায়তায়। শান্তনুর এই বিপর্যয়ের গল্প শুনে খুব বিষণ্ণ হয় কুহু। তার স্ত্রী ও মেয়ের খবর তো জানা ছিল, কিন্তু তার যে আজ এত কঠিন অবস্থা তা জানা ছিল না। পুরো রায় পরিবারের দুর্দশা দেখে কুহু কুতেতি দেবীর কাছে সকলের মঙ্গল কামনা করে। তারপর সুমন্ত্রর থেকে দেশের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে রওনা হয়ে যায়। সুমন্ত্র তার কাছ থেকে পাঁচ মিনিটের সময় চায়। সে আজ কুহুর থেকে নিজের জন্যে কোনো আনুকূল্য কামনা করে না। শুধু কুহুকে বিনীত নিবেদন করে যেনো শান্তনু আর খুশীর সে খেয়াল রাখে। আর তারপর তাদের ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে কিছু অব্যক্ত কথা বলার চেষ্টা
করে। কিন্তু দুর্বল সুমন্ত্র তা বলতে গিয়ে হাঁপিয়ে পড়ে, তাই কথা অব্যক্তই থেকে যায়। হতভাগ্য সুমন্ত্র আরো একবার বঞ্চিত হয় কুহুর কাছে সত্যের উন্মোচন করতে। কুহু মনে মনে সুমন্ত্রর আরোগ্য কামনা করে সেখান থেকে বিদায় নেয় শান্তনুর উদ্দেশে।।
কেয়ার টেকারের কাছ থেকে শান্তনু খবর পায় কোনো মহিলা তার সাথে বুঝি দেখা করতে এসেছে। মহিলা শুনে শান্তনু হকচকিয়ে যায়, সত্যিই কি ওর স্ত্রী কবিতা তাহলে ফিরে এসেছে। কিন্ত অল্পক্ষণেই তার সমস্ত উচ্ছ্বাস বিষণ্ণতায় বদলে যায়। কুহুর মুখে শান্তনু স্ত্রী কবিতার চির বিদায়ের গল্প শোনে। ক্ষণিকের জন্যে স্তব্ধ হয়ে যায় ওর ভাষা, নীরব হয়ে যায় আকাশ বাতাস। শুধু চোখের দুই কোণ বেয়ে দুই ফোঁটা অশ্রুধারা ঝরে পড়ে বালিশের গায়ে। তার মাথায় হাত রেখে কুহু সহানুভূতি জানায়। এই অল্প বয়সে জীবনে এতো বড় ঝড়। তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে কুহু শোনায় খুশীর গল্প, তাকে উদ্দীপ্ত করতে। আবার ঠোঁটের কোণ থেকে মৃদু হাসি ভেসে ওঠে আদরের খুশী ভালো আছে জেনে। কুহুর থেকে সহানুভূতি পেয়ে শান্তনু যেনো আশ্বস্ত হয়েছে। কুহুর সান্নিধ্যে আজ হঠাত করে যেনো বাঁচার লয়টা আবার খুঁজে পেয়েছে। স্বল্প সময়ের সাক্ষাত যেনো সমস্ত বিষাদকে আজ দূর করে দিয়েছে। তার মনে পড়ে যায় শান্তিনীড়ে ঠিক তেমনটাই কুহু করেছিলো তার বাবার জন্যে।।
শান্তনু এবার ফিরে আসে কুহুর প্রসঙ্গে। বাবা ওকে তাদের বিচ্ছেদের সব গল্প শুনিয়েছে আর জানিয়েছে কুহুর নতুন ঠিকানা আশানিকেতনের। ঠিক হয় চারধাম যাত্রা শেষে শান্তনু আশানিকেতনে যাবে। আর সেখানে কুহুকে তার ভুল বোঝাবুঝির সংশোধন করাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেই পরিকল্পনা সার্থক হয়ে ওঠেনি। আগে দুই বার চেষ্টা করেও আজ অবধি বাবা সে কথা কুহুকে বলে উঠতে পারেনি। একবার বুকে ব্যথা আর একবার দুর্বলতায় বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়া। আজ তাই শান্তনু সেই সত্যের উন্মোচন করতে চায়। সে করে দিতে চায় আজ দুই প্রৌঢ়ের শাপমোচন। আর বাজিয়ে দিতে চায় তাদের মহা মিলনের শঙ্খধ্বনি।।
সুমন্ত্র আজ মানসিক ভাবে পুরো বিধ্বস্ত। কুহুর শান্তিনীড় ছেড়ে যাওয়াকে সে কোনোদিন মন থেকে গ্রহণ করতে পারেনি। তার ওপর বিচ্ছেদের দিনে কুহুর সেই লাঞ্ছনা তার কাছে আজও যেনো দুঃস্বপ্ন হয়ে রয়ে গেছে। ছেড়ে যাবার আগে সে কুহুকে কিছু সত্য বলতে চেয়েছিলো কিন্তু তার বুকে ব্যথা ওঠায় সেটা শেষ পর্যন্ত বলে উঠতে পারেনি। আজ তাই অবমাননার গ্লানিতে আচ্ছাদিত সুমন্ত্রর আত্মবিশ্বাস প্রায় বিলুপ্তির পথে। সাথে গত এক বছর যাবত শরীরের প্রতি অরাজকতা করে আজ সে যক্ষা রোগের শিকার হয়েছে।।
হঠাত করে কুহুকে শান্তিনীড়ে দেখে সুমন্ত্র অবাক হলো। অবচেতন মনে আশার সঞ্চার হয় যে তার শরীর খারাপের খবর পেয়ে বুঝি কুহু ছুটে এসেছে তাকে সঙ্গ দিতে, তাকে সুশ্রূষা করার সংকল্প নিয়ে। প্রথমে সুমন্ত্রর এই দুরবস্থা দেখে কুহুর ভিতরটা কেঁদে ওঠে। কিন্তু আজ তার মনোভাব সুদৃঢ় আর সংকল্প অটুট। আজ সে মনকে দুর্বল করে দিতে চায়না। নিজেকে তাই পরক্ষণে সামলে নিয়ে সুমন্ত্রকে জানায় নাতনি 'খুশীর' খবর আর তার আসার উদ্দেশ্য। সুমন্ত্র এখন খুব দুর্বল হয়ে গেছে। তার কথা বলতে গিয়ে হাঁফ আসছে। তবু কষ্টের সাথে শোনালো শান্তনুর দুঃস্বপ্নের গল্প। শান্তনু পরিবার নিয়ে ২০১৩ সালের জুন মাসে আমেরিকা থেকে আসে আর তারপর বেড়াতে যায় গাড়োয়ালের চারধামে। সেখানে কেদারনাথে থাকাকালীন অলকানন্দার প্রলয়ে হঠাত করে ওরা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর শান্তনুর যখন জ্ঞান ফেরে তখন ও হাসপাতালে ভর্তি আছে। অলকানন্দার খরস্রোতে মেরুদণ্ডে গভীর আঘাত পেয়েছে। কোনোরকমে নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও স্ত্রী আর মেয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা হবার পরে এখন কয়েক মাস বিছানায় রেস্ট নিতে হবে। তাই নিরুপায় হয়ে দেশের বাড়িতে একা থাকে কেয়ার টেকারের সহায়তায়। শান্তনুর এই বিপর্যয়ের গল্প শুনে খুব বিষণ্ণ হয় কুহু। তার স্ত্রী ও মেয়ের খবর তো জানা ছিল, কিন্তু তার যে আজ এত কঠিন অবস্থা তা জানা ছিল না। পুরো রায় পরিবারের দুর্দশা দেখে কুহু কুতেতি দেবীর কাছে সকলের মঙ্গল কামনা করে। তারপর সুমন্ত্রর থেকে দেশের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে রওনা হয়ে যায়। সুমন্ত্র তার কাছ থেকে পাঁচ মিনিটের সময় চায়। সে আজ কুহুর থেকে নিজের জন্যে কোনো আনুকূল্য কামনা করে না। শুধু কুহুকে বিনীত নিবেদন করে যেনো শান্তনু আর খুশীর সে খেয়াল রাখে। আর তারপর তাদের ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে কিছু অব্যক্ত কথা বলার চেষ্টা
করে। কিন্তু দুর্বল সুমন্ত্র তা বলতে গিয়ে হাঁপিয়ে পড়ে, তাই কথা অব্যক্তই থেকে যায়। হতভাগ্য সুমন্ত্র আরো একবার বঞ্চিত হয় কুহুর কাছে সত্যের উন্মোচন করতে। কুহু মনে মনে সুমন্ত্রর আরোগ্য কামনা করে সেখান থেকে বিদায় নেয় শান্তনুর উদ্দেশে।।
কেয়ার টেকারের কাছ থেকে শান্তনু খবর পায় কোনো মহিলা তার সাথে বুঝি দেখা করতে এসেছে। মহিলা শুনে শান্তনু হকচকিয়ে যায়, সত্যিই কি ওর স্ত্রী কবিতা তাহলে ফিরে এসেছে। কিন্ত অল্পক্ষণেই তার সমস্ত উচ্ছ্বাস বিষণ্ণতায় বদলে যায়। কুহুর মুখে শান্তনু স্ত্রী কবিতার চির বিদায়ের গল্প শোনে। ক্ষণিকের জন্যে স্তব্ধ হয়ে যায় ওর ভাষা, নীরব হয়ে যায় আকাশ বাতাস। শুধু চোখের দুই কোণ বেয়ে দুই ফোঁটা অশ্রুধারা ঝরে পড়ে বালিশের গায়ে। তার মাথায় হাত রেখে কুহু সহানুভূতি জানায়। এই অল্প বয়সে জীবনে এতো বড় ঝড়। তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে কুহু শোনায় খুশীর গল্প, তাকে উদ্দীপ্ত করতে। আবার ঠোঁটের কোণ থেকে মৃদু হাসি ভেসে ওঠে আদরের খুশী ভালো আছে জেনে। কুহুর থেকে সহানুভূতি পেয়ে শান্তনু যেনো আশ্বস্ত হয়েছে। কুহুর সান্নিধ্যে আজ হঠাত করে যেনো বাঁচার লয়টা আবার খুঁজে পেয়েছে। স্বল্প সময়ের সাক্ষাত যেনো সমস্ত বিষাদকে আজ দূর করে দিয়েছে। তার মনে পড়ে যায় শান্তিনীড়ে ঠিক তেমনটাই কুহু করেছিলো তার বাবার জন্যে।।
শান্তনু এবার ফিরে আসে কুহুর প্রসঙ্গে। বাবা ওকে তাদের বিচ্ছেদের সব গল্প শুনিয়েছে আর জানিয়েছে কুহুর নতুন ঠিকানা আশানিকেতনের। ঠিক হয় চারধাম যাত্রা শেষে শান্তনু আশানিকেতনে যাবে। আর সেখানে কুহুকে তার ভুল বোঝাবুঝির সংশোধন করাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেই পরিকল্পনা সার্থক হয়ে ওঠেনি। আগে দুই বার চেষ্টা করেও আজ অবধি বাবা সে কথা কুহুকে বলে উঠতে পারেনি। একবার বুকে ব্যথা আর একবার দুর্বলতায় বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়া। আজ তাই শান্তনু সেই সত্যের উন্মোচন করতে চায়। সে করে দিতে চায় আজ দুই প্রৌঢ়ের শাপমোচন। আর বাজিয়ে দিতে চায় তাদের মহা মিলনের শঙ্খধ্বনি।।