07-10-2021, 03:37 PM
সুমন্ত্র বাকিদের থেকে কুহুকে একটু বেশী সমীহ করে। আর সে জন্যে ও ইতিমধ্যেই কুহুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলেছে। কুহুর কাছেও সুমন্ত্র যেনো একটু বেশী আকর্ষণের। কারণ সুমন্ত্রর মধ্যে ও খুঁজে পায় যেনো হারানো দিনের ছোঁয়া। তার শরীরের গঠন আর কথা বলার ধরণ ওকে বারবার জয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে জয়ের প্রতি ভালোবাসার সাথে বিদ্বেষটা বুঝি এখনো সে মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেনি। প্রথম প্রথম কয়েকবার সুমন্ত্রর প্রতি কিছু অসৌদ্যার্হ্যপূর্ণ ব্যবহারও করে ফেলেছিল সে জয়ের সাথে তার সাদৃশ্যের জন্য। কিন্তু পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেই বিদ্বেষ কিছুটা ভাল লাগায় পরিবর্তিত হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে ওদের বোঝাপড়াটা অনেকটা বেড়ে উঠেছে। এখন ওরা একে ওপরের সঙ্গ পছন্দ করে। নানান কাজের অছিলায় সুমন্ত্রর ঘরে আসতে কুহুর ভালো লাগে। সারাদিনের কাজের ফাঁকে সুমন্ত্রর সাথে গল্প করলে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগে। মানুষ একা একা বাঁচতে পারে না, 'আমি' থেকে 'আমরা' হতে চায় মন, তাই বয়স যাইহোক না কেন একটা দোসর সে খোঁজে, যা জীবনে টাটকা বাতাস এনে দেয়, যার মধ্যে বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভাবে অজান্তে বুঝি কুহুর মনে জয়ের জায়গাটা আজ সুমন্ত্র নিয়ে বসেছে।।
এদিকে শান্তনু অফিসের কাজে ইন্ডিয়া এসেছে এক সপ্তাহের জন্য। পুণেতে অফিসের গেস্ট হাউসে থাকা। কাজ মিটিয়ে হপ্তাশেষে পরিকল্পনা করল বাবার সাথে শান্তিনীড়ে এসে দেখা করার। সাথে বাবাকে বিদেশে নিয়ে যাবার প্ল্যান টাও ফাইনাল করে নেবে। আশ্রমে এসে কিছুক্ষনের মধ্যে শান্তনুর দৃষ্টি আকর্ষিত হলো কুহুর দিকে। উনি যেনো একদম অন্য ধরণের মহিলা, একাধারে অনেক গুণের অধিকারী। মা গত হবার পর বিধ্বস্ত বাবার মুখে রাশি রাশি আনন্দ দেখে শান্তনু আজ খুব মুগ্ধ। আর তার কৃতিত্বটা কুহুকে দিতে তার বিন্দু মাত্র দ্বিধা নেই মনে। তার প্রতিও কুহুর স্নেহের আতিশয্য শান্তনুর খুব ভালো লেগেছে। সব মিলিয়ে কুহুর প্রতি তার মনে নিতান্তই শ্রদ্ধা জেগে উঠেছে এক ব্যক্তিত্বময়ী জননীর রূপে। সাথে শান্তনু বুঝতে পেরেছে যে এই আনন্দ সে বিদেশে গিয়ে বাবাকে দিতে পারবে না। তাই ও বাবাকে আর শান্তিনীড় থেকে দূর করতে চায় না। বাবাকে জানিয়েও দিয়েছে তার সিদ্ধান্ত। শেষে হপ্তা কাটিয়ে শান্তনু বাবাকে ছেড়ে আবার ফিরত যায় বিদেশে। সাথে সাথে নিয়ে যায় এক গুচ্ছ মধুর স্মৃতি বাবা আর শান্তনীড়কে নিয়ে। এদিকে ছেলের সিদ্ধান্তে সুমন্ত্রের খুশীর সীমা নেই। আজ সে শান্তিনীড়ে থাকার ছাড়পত্র পেয়ে গেছে, কুহুর সান্নিধ্যে কুহুর ছায়ায় সুখ দুঃখের শরিক হয়ে থাকার ছাড়পত্র।।
সেদিন খুব ভোরে কুহুর ঘুম ভেঙে গেছে।আগের রাতে খুব ভালো বৃষ্টি হয়েছে, সকালটা বড়ো নির্মল লাগছে তাই। সুমন্ত্রর সাথে একটু বেশি সময় কাটাতে গিয়ে বাগানের গাছ গুলোর পরিচর্যায় ঘাটতি হয়ে গেছে তার। এখন তাই একটু বাগানের গাছগুলোর সাথে সময় কাটাতে চায় কুহু। বৃষ্টির দাপটে করুন অবস্থা মাধবীলতা, অপরাজিতার মতো গাছগুলোর, মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে তারা। রাতভর হয়তো একটু অবলম্বন খুঁজেছে, উঠে দাঁড়াবার প্রবল আকুতি জানিয়ে হয়তো হয়েছে দিশেহারা। কুহুর মনে পরে যায় তার ফেলে আসা অতীত, জয় সেদিন তার আকুতি না শোনায় কিভাবে সে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলো উঠে দাঁড়াবার তাগিদে। যাইহোক আজ সুমন্ত্রর মতন গাছগুলোও নবজীবন পায় কুহুর ছোঁয়ায়।
ওদিকে সকাল থেকে অনেকক্ষণ কুহুর জন্য অপেক্ষা করে শেষে সুমন্ত্রও বাগানে আসে। ঘর থেকে সিঁড়ি ভেঙ্গে আসতে গিয়ে একটু হাঁপিয়ে পড়েছে সে, তাই কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় বাঁধানো বেদিতে একটু বসে। তাকে দেখে কুহুও হাতের মাটি ধুয়ে এসে বসে সুমন্ত্রর পাশে। রক্তের সম্পর্ক নেই, সমাজের সিলমোহর নেই তবুও মনেহয় কুহু কতো আপনজন তার। সকালের সোনামাখা রোদে কুহুকে আজ বড়ো সুন্দর লাগছে সুমন্ত্রর। তার না বলা মনের কথাগুলো কুহুকে বলে দিতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে আজ। হ্যাঁ আজই, এই প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে এই কৃষ্ণচূড়ার তলায় দাঁড়িয়ে। সাথে সাথে আবার ভয় হয় কি জানি কুহু আবার তার আসল পরিচয় টা ধরে ফেলবে না তো? শেষে অনেক সাহস সঞ্চয় করে সুমন্ত্র কুহুকে জিজ্ঞাসা করে তুমি আমার মিতা হবে? বাকি জীবনটা একসাথে চলবো দুজনে? না না শরীর ছুঁয়ে নয় মন ছুঁয়ে থাকতে চাই তোমার, থাকবে?
মনের মিতা হবার অনাস্বাদিত স্বাদ পেতে এই বয়সেও কুহুর মুখে রক্তিম আভা খেলে যায়। স্বাধীন, পিছুটানহীন কুহুও বোধহয় মনে মনে চেয়েছিল বাকি জীবনটা সুমন্ত্রর সাথে পা মিলিয়ে চলতে। তাই চোখের ভাষাতেই অনুচ্চারিত সম্মতি প্রকাশ করে তার। প্রকৃতির মাঝে গান্ধর্ব মতে দুটো প্রৌঢ় হৃদয় আজ একাকার হয়ে যায়। আনমনা হয়ে দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে কুহু, আর অপার মুগ্ধতা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে সুমন্ত্রর প্রৌঢ় দুটি চোখ। আজ রাশি রাশি সুখানুভূতি নিয়ে শান্তিনীড়ের দিকে পা বাড়ানোর আগে সুমন্ত্র কুহুর ভিজে হাতটা নিজের হাতে ধরে। একি, এতো সেই পুরানো স্পর্শ, তুমি কে? বলে দূরে সরে যায় কুহু। সুমন্ত্র বিব্রত হয়ে যায়, যে আশঙ্কা এতো দিন দুঃস্বপ্নের মতো ওর পিছু করেছে আজ কি তাহলে তা সত্যি হয়ে গেলো? কুহু আবার প্রশ্ন করে, আমার অনুভূতি ভুল হতে পারে না, কি তোমার আসল পরিচয়, তুমি কি জয়? প্রথমে বলতে দ্বিধা থাকলেও শেষে ওর ভালোবাসা রক্ষার খাতিরে সুমন্ত্র স্বীকার করে সেই জয়। আর তারপর বিস্তারিত ভাবে শোনায় তার নাম ও মুখোশ্রী পরিবর্তনের গল্প। তারপর ক্ষমা প্রার্থনা করে কুহুর কাছে তার পুরানো দুর্ব্যবহার আর এতদিন আসল পরিচয় লুকিয়ে রাখার জন্যে। কিছুক্ষণ থেমে আবার বোঝাতে শুরু করে যে তাকে হারানোর ভয়ে এতদিন সে পরিচয় দেয়নি, পাছে সে তাকে ক্ষমা না করে। মুহূর্তের মধ্যে কুহুর মনে পড়ে যায় সেই দুর্দিন যখন সে কিছু সময় ভিক্ষা চেয়ে জয়ের কাছে অনুরোধ করেছিলো, আর কি নিষ্ঠুর ভাবে সেদিন জয় ওর সমস্ত মিনতি নাকচ করে দিয়েছিলো। ক্ষণিকের মধ্যে সুমন্ত্রর প্রতি ওর সমস্ত ভালোবাসা জয়ের প্রতি ঘোর বিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সমস্ত স্বপ্ন যেনো ক্ষণিকের ব্যবধানে চুড়মার হয়ে যায়। সে সুমন্ত্রকে খুব শক্ত গলায় একটু একা থাকতে দেওয়ার অনুরোধ করে। সেই কঠিন কুহুকে দেখে বিষণ্ণ সুমন্ত্র বুঝে উঠতে পারে না যে কি করবে। তারপর বিশেষ কিছু একটা বলতে গিয়ে ওর বুকে ব্যথা ওঠে আর ওকে হাসপাতাল নিয়ে যায় শান্তিনীড় কতৃপক্ষ।।
দীর্ঘ চিকিৎসার পর সে যাত্রা প্রাণে বেঁচে যায় সুমন্ত্র। সে আবার ফিরে আসে শান্তিনীড়ে। কিন্তু কুহু আর নেই সেখানে, সে ছেড়ে দিয়েছে তার স্বপ্নের প্রাসাদ। স্বপ্ন ভাঙ্গার দুঃখে আজ ও খুব বেশী বিষণ্ণ। অনাসক্ত কুহু ধিক্কার দেয় নিজেকে তার তপস্যার জীবনে এই প্রলয় আসার জন্য। সে নিজেকে দায়ী করে এই পরিণতির জন্য। তবে তারুণ্যে জয়ের কাছে পরাজিত হয়ে জীবন টাকে সে অনেক কঠোর ভাবে চিনে ফেলিছিল, তাই ও জানে কিভাবে সুমন্ত্রকেও মন থেকে মুছে ফেলা যায়।।
কুহু আজ একা। আজ ঝড় চলে গেছে, কিন্তু থেকে গেছে তার সুদৃঢ় মনোভাব আর উন্নত শির। আজ এক অজানা ঠিকানায় সে আবার করে এক নতুন শান্তিনীড় বানানোর তাগিদে লিপ্ত হয়েছে। এবার বুঝি ও আসল সুমন্ত্র কে খুঁজে পাবে।।
এদিকে শান্তনু অফিসের কাজে ইন্ডিয়া এসেছে এক সপ্তাহের জন্য। পুণেতে অফিসের গেস্ট হাউসে থাকা। কাজ মিটিয়ে হপ্তাশেষে পরিকল্পনা করল বাবার সাথে শান্তিনীড়ে এসে দেখা করার। সাথে বাবাকে বিদেশে নিয়ে যাবার প্ল্যান টাও ফাইনাল করে নেবে। আশ্রমে এসে কিছুক্ষনের মধ্যে শান্তনুর দৃষ্টি আকর্ষিত হলো কুহুর দিকে। উনি যেনো একদম অন্য ধরণের মহিলা, একাধারে অনেক গুণের অধিকারী। মা গত হবার পর বিধ্বস্ত বাবার মুখে রাশি রাশি আনন্দ দেখে শান্তনু আজ খুব মুগ্ধ। আর তার কৃতিত্বটা কুহুকে দিতে তার বিন্দু মাত্র দ্বিধা নেই মনে। তার প্রতিও কুহুর স্নেহের আতিশয্য শান্তনুর খুব ভালো লেগেছে। সব মিলিয়ে কুহুর প্রতি তার মনে নিতান্তই শ্রদ্ধা জেগে উঠেছে এক ব্যক্তিত্বময়ী জননীর রূপে। সাথে শান্তনু বুঝতে পেরেছে যে এই আনন্দ সে বিদেশে গিয়ে বাবাকে দিতে পারবে না। তাই ও বাবাকে আর শান্তিনীড় থেকে দূর করতে চায় না। বাবাকে জানিয়েও দিয়েছে তার সিদ্ধান্ত। শেষে হপ্তা কাটিয়ে শান্তনু বাবাকে ছেড়ে আবার ফিরত যায় বিদেশে। সাথে সাথে নিয়ে যায় এক গুচ্ছ মধুর স্মৃতি বাবা আর শান্তনীড়কে নিয়ে। এদিকে ছেলের সিদ্ধান্তে সুমন্ত্রের খুশীর সীমা নেই। আজ সে শান্তিনীড়ে থাকার ছাড়পত্র পেয়ে গেছে, কুহুর সান্নিধ্যে কুহুর ছায়ায় সুখ দুঃখের শরিক হয়ে থাকার ছাড়পত্র।।
সেদিন খুব ভোরে কুহুর ঘুম ভেঙে গেছে।আগের রাতে খুব ভালো বৃষ্টি হয়েছে, সকালটা বড়ো নির্মল লাগছে তাই। সুমন্ত্রর সাথে একটু বেশি সময় কাটাতে গিয়ে বাগানের গাছ গুলোর পরিচর্যায় ঘাটতি হয়ে গেছে তার। এখন তাই একটু বাগানের গাছগুলোর সাথে সময় কাটাতে চায় কুহু। বৃষ্টির দাপটে করুন অবস্থা মাধবীলতা, অপরাজিতার মতো গাছগুলোর, মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে তারা। রাতভর হয়তো একটু অবলম্বন খুঁজেছে, উঠে দাঁড়াবার প্রবল আকুতি জানিয়ে হয়তো হয়েছে দিশেহারা। কুহুর মনে পরে যায় তার ফেলে আসা অতীত, জয় সেদিন তার আকুতি না শোনায় কিভাবে সে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলো উঠে দাঁড়াবার তাগিদে। যাইহোক আজ সুমন্ত্রর মতন গাছগুলোও নবজীবন পায় কুহুর ছোঁয়ায়।
ওদিকে সকাল থেকে অনেকক্ষণ কুহুর জন্য অপেক্ষা করে শেষে সুমন্ত্রও বাগানে আসে। ঘর থেকে সিঁড়ি ভেঙ্গে আসতে গিয়ে একটু হাঁপিয়ে পড়েছে সে, তাই কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় বাঁধানো বেদিতে একটু বসে। তাকে দেখে কুহুও হাতের মাটি ধুয়ে এসে বসে সুমন্ত্রর পাশে। রক্তের সম্পর্ক নেই, সমাজের সিলমোহর নেই তবুও মনেহয় কুহু কতো আপনজন তার। সকালের সোনামাখা রোদে কুহুকে আজ বড়ো সুন্দর লাগছে সুমন্ত্রর। তার না বলা মনের কথাগুলো কুহুকে বলে দিতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে আজ। হ্যাঁ আজই, এই প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে এই কৃষ্ণচূড়ার তলায় দাঁড়িয়ে। সাথে সাথে আবার ভয় হয় কি জানি কুহু আবার তার আসল পরিচয় টা ধরে ফেলবে না তো? শেষে অনেক সাহস সঞ্চয় করে সুমন্ত্র কুহুকে জিজ্ঞাসা করে তুমি আমার মিতা হবে? বাকি জীবনটা একসাথে চলবো দুজনে? না না শরীর ছুঁয়ে নয় মন ছুঁয়ে থাকতে চাই তোমার, থাকবে?
মনের মিতা হবার অনাস্বাদিত স্বাদ পেতে এই বয়সেও কুহুর মুখে রক্তিম আভা খেলে যায়। স্বাধীন, পিছুটানহীন কুহুও বোধহয় মনে মনে চেয়েছিল বাকি জীবনটা সুমন্ত্রর সাথে পা মিলিয়ে চলতে। তাই চোখের ভাষাতেই অনুচ্চারিত সম্মতি প্রকাশ করে তার। প্রকৃতির মাঝে গান্ধর্ব মতে দুটো প্রৌঢ় হৃদয় আজ একাকার হয়ে যায়। আনমনা হয়ে দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে কুহু, আর অপার মুগ্ধতা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে সুমন্ত্রর প্রৌঢ় দুটি চোখ। আজ রাশি রাশি সুখানুভূতি নিয়ে শান্তিনীড়ের দিকে পা বাড়ানোর আগে সুমন্ত্র কুহুর ভিজে হাতটা নিজের হাতে ধরে। একি, এতো সেই পুরানো স্পর্শ, তুমি কে? বলে দূরে সরে যায় কুহু। সুমন্ত্র বিব্রত হয়ে যায়, যে আশঙ্কা এতো দিন দুঃস্বপ্নের মতো ওর পিছু করেছে আজ কি তাহলে তা সত্যি হয়ে গেলো? কুহু আবার প্রশ্ন করে, আমার অনুভূতি ভুল হতে পারে না, কি তোমার আসল পরিচয়, তুমি কি জয়? প্রথমে বলতে দ্বিধা থাকলেও শেষে ওর ভালোবাসা রক্ষার খাতিরে সুমন্ত্র স্বীকার করে সেই জয়। আর তারপর বিস্তারিত ভাবে শোনায় তার নাম ও মুখোশ্রী পরিবর্তনের গল্প। তারপর ক্ষমা প্রার্থনা করে কুহুর কাছে তার পুরানো দুর্ব্যবহার আর এতদিন আসল পরিচয় লুকিয়ে রাখার জন্যে। কিছুক্ষণ থেমে আবার বোঝাতে শুরু করে যে তাকে হারানোর ভয়ে এতদিন সে পরিচয় দেয়নি, পাছে সে তাকে ক্ষমা না করে। মুহূর্তের মধ্যে কুহুর মনে পড়ে যায় সেই দুর্দিন যখন সে কিছু সময় ভিক্ষা চেয়ে জয়ের কাছে অনুরোধ করেছিলো, আর কি নিষ্ঠুর ভাবে সেদিন জয় ওর সমস্ত মিনতি নাকচ করে দিয়েছিলো। ক্ষণিকের মধ্যে সুমন্ত্রর প্রতি ওর সমস্ত ভালোবাসা জয়ের প্রতি ঘোর বিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সমস্ত স্বপ্ন যেনো ক্ষণিকের ব্যবধানে চুড়মার হয়ে যায়। সে সুমন্ত্রকে খুব শক্ত গলায় একটু একা থাকতে দেওয়ার অনুরোধ করে। সেই কঠিন কুহুকে দেখে বিষণ্ণ সুমন্ত্র বুঝে উঠতে পারে না যে কি করবে। তারপর বিশেষ কিছু একটা বলতে গিয়ে ওর বুকে ব্যথা ওঠে আর ওকে হাসপাতাল নিয়ে যায় শান্তিনীড় কতৃপক্ষ।।
দীর্ঘ চিকিৎসার পর সে যাত্রা প্রাণে বেঁচে যায় সুমন্ত্র। সে আবার ফিরে আসে শান্তিনীড়ে। কিন্তু কুহু আর নেই সেখানে, সে ছেড়ে দিয়েছে তার স্বপ্নের প্রাসাদ। স্বপ্ন ভাঙ্গার দুঃখে আজ ও খুব বেশী বিষণ্ণ। অনাসক্ত কুহু ধিক্কার দেয় নিজেকে তার তপস্যার জীবনে এই প্রলয় আসার জন্য। সে নিজেকে দায়ী করে এই পরিণতির জন্য। তবে তারুণ্যে জয়ের কাছে পরাজিত হয়ে জীবন টাকে সে অনেক কঠোর ভাবে চিনে ফেলিছিল, তাই ও জানে কিভাবে সুমন্ত্রকেও মন থেকে মুছে ফেলা যায়।।
কুহু আজ একা। আজ ঝড় চলে গেছে, কিন্তু থেকে গেছে তার সুদৃঢ় মনোভাব আর উন্নত শির। আজ এক অজানা ঠিকানায় সে আবার করে এক নতুন শান্তিনীড় বানানোর তাগিদে লিপ্ত হয়েছে। এবার বুঝি ও আসল সুমন্ত্র কে খুঁজে পাবে।।