Thread Rating:
  • 13 Vote(s) - 3.15 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Non-erotic সম্পর্কের আলোয় ---- কুন্তল ঘোষ
#1
প্রথম ভাগ


 
শান্তিনীড় আশ্রমিক পরিবেশে এক বৃদ্ধাশ্রম, বয়স্ক মানুষদের থাকার জন্য সমস্ত সুবিধা এখানে আছে তিস্তার তীরে বেশ মনোরম অবস্থান এই শান্তিনীড়ের আশেপাশে অনেক ছোটো ছোটো পাহাড় উঁকি দেয় এখান ওখান থেকে পূর্ব দিকের প্রাঙ্গনে রাধা কৃষ্ণের সুন্দর এক মন্দির সন্ধ্যের পর রোজ ঘটা করে এখানে পুজো আরতি হয় উত্তরে আশ্রমের গা ঘেঁষে ফুলের বাগান মাধবীলতা, অপরাজিতা, ডালিয়া, জুঁই, নয়নতারা, রজনীগন্ধা, বেলফুল, চামেলী কোন ফুল না নেই আশ্রমের অতিথিরাই সযত্নে বানিয়েছে এই বাগান দক্ষিণে দুটি কৃষ্ণচূড়া গাছ তলায় সামনা সামনি দুটো বাঁধানো বেদি বসার জন্য জীবন সায়াহ্ণে এসে নেমে আসা সন্ধ্যে গুলোকে পুরো মাত্রায় আশ্রমবাসীরা উপভোগ করে এখানে বসে গল্প গুজব করে আর এই সুন্দর পরিবেশের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে গত এক বছর ধরে কুহু।।
 
কুহু চ্যাটার্জি কলেজের হেডমিসট্রেস, রিটায়ার্ড হবার পর এই বৃদ্ধাবাসে ঠাঁই নিয়েছে অল্প বয়সে বাবা হারিয়ে দুই ভাই বোনকে মানুষ করতেই তার বেলা বয়ে গেছে তাই বিয়ে থা করার আর সুযোগ হয়ে ওঠেনি অবশ্য ভালো লেগেছিল কলেজে পড়ার সময়ে সহপাঠী জয় কে কিছু নিভৃতে সময়ও কেটে ছিল দুজনের কুহুর সুরেলা গলার গান শুনতে খুব ভালো বাসতো জয় আর গানের সাথে সাথে তার মৃদু হাসির মধ্যে বেরিয়ে আসা গজ দাঁত আর গালেতে পরা খাঁজ জয়ের ছিল খুব পছন্দের একদিন এক অন্তরঙ্গ মুহূর্তে জয় কুহুর হাতে হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে ওরা সারা জীবন এক সাথে কাটাবে জয়ের সেই দিনের স্পর্শ আর প্রতিজ্ঞাটা কুহুর মনে খুব গভীর রেখাপাত করেছিলো, ভুলতে পারে নি সেই অনুভূতি কোনোদিন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত জীবন যুদ্ধে পরাজিত হতে হয়েছিল কুহুকে ছোটো ভাই বোন নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি সময় মতো আর জয়ের হাতে সেদিন ছিল না সময় কিছু সময় চেয়ে কুহুর বিনীত আকুতিকে জয় সেদিন নাকচ করে দিয়েছিল কুহুর ফেলা চোখের জল সেদিন জয়কে বিগলিত করতে পারেনি জয় শেষ পর্যন্ত অন্য একজন মেয়েকে বিয়ে করে সংসার বেঁধেছিল বাবার পরে জয় কে হারিয়ে রূঢ় বাস্তবের পৈশাচিক রূপকে খুব কাছের থেকে কুহু সেদিন দেখে ফেলেছিল অল্প বয়সে অবশ্য এইসব প্রতিকূলতার কিছু ভালো ফলও হয়েছিল যেটা কুহুর পরবর্তী জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই ঘাত প্রতিঘাতের মাঝে নিজের মনোবলকে অনেকটা সুদৃঢ় করে তুলেছিল শিখেছিল কারোর সাহায্য  না নিয়ে কি করে একলা পথ চলতে হয় আর কারোর উপর বোঝা না হয়ে কিভাবে সম্মানের সাথে জীবন কাটাতে হয় আর সেই প্রচেষ্টাতেই পিএইচডি শেষ করে সে আজ ডক্টর কুহু হয়েছে, কলেজের প্রধান শিক্ষিকা হয়েছে যদিও অনাসক্ত কুহু নিজের নামের আগে ডক্টর উপাধি টা লাগানো পছন্দ করে না সব মিলিয়ে ওর জীবনটা যেন সত্যই এক তপস্যার সব কিছু খুব কষ্ট করে অর্জন করা, কিন্তু কোনো কিছুর প্রতি কোন আসক্তি নেই তাই শেষ পর্যন্ত রিটায়ার্ড হবার পরে ভাই বোনদের শত প্রতিবাদ থাকা সত্ত্বেও শান্তিনীড়কে সে প্রৌঢ়ত্বের নীড় হিসেবে বেছে নিয়েছে।।
 
সুমন্ত্র রায় এক রিটায়ার্ড সিআইডি অফিসর কর্মসূত্রে অনেক ছদ্মনামে জীবন যাপন করতে হয়েছে এই 'সুমন্ত্র রায়' নামটাও ওর এক ছদ্মনাম যেটা ওর স্ত্রীর খুব পছন্দের ছিল তাই খুব দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অসময়ে বিপত্নীক হয়ে যাবার পর ওই নামটা সে স্ত্রীর স্মরণার্থে ধরে রেখেছে একবার স্ত্রীর মৃত্যুর পর সুমন্ত্রর ওপর এক ভয়ানক হামলা হয়েছিল অ্যাসিড অ্যাটাকে ওর মুখোশ্রী ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিলো এক অপরাধী শেষ পর্যন্ত মুখোশ্রী ফিরে পেতে ওকে প্লাস্টিক সার্জারি করতে হয়েছিলো, আর সেই সূত্রে সুমন্ত্র পেয়েছিল এক নতুন রূপ শরীরের বাকি অংশটা তাই আগের মতো থাকলেও মুখ দেখে নতুন সুমন্ত্রকে আর চেনা যায় না ওদের এক ছেলে শান্তনু সিএ শেষ করে এক বহুজাতিক সংস্থায় বিদেশে কর্মরত রিটায়ার্ড হবার এক বছর আগে মাতৃহীন ছেলের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে সুমন্ত্র, তাই অনেকটা এখন দায় মুক্ত রিটায়ার্ড হবার পর ছেলে বাবাকে নিজের কাছেই  রাখতে চেয়েছিল কিন্তু সুমন্ত্র বৃদ্ধ বয়সে বিদেশ ভূমিতে গিয়ে থাকতে চায়নি এদিকে দেশের মাটিতে একাকীত্ব কাটানোর জন্য শেষ পর্যন্ত ঠিক করে যে শান্তিনীড়ে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে থাকবে, অনেকটা ছেলের অমতেই তবে শান্তনুও বাবাকে বলে রেখেছে যে কিছুদিন পরে এসে নিয়ে যাবে, কোনো কথাই শুনবে না।।
 
সুমন্ত্রর শান্তিনীড়ে আসা কুহুর থেকে মাস তিনেক আগে আশ্রমের দুইতলায় কোণের বেশ সুন্দর ঘরটা পেয়ে মনে মনে খুব খুশী সুমন্ত্র তাকে নিয়ে তেইশ জন বাসিন্দা আছেন এই শান্তিনীড়ে আর বেশীর ভাগ অতিথিই সম্ভ্রান্ত ঘরের মানুষ মানে বৃদ্ধ বয়সে বিপাকে পড়ে  থাকার মতো কিছুদিন পরেই প্রবেশ করলো কুহু আশ্রমের চব্বিশতম অতিথি হিসেবে কুহু আসার পর থেকেই আশ্রমে যেনো বসন্ত এসে গেছে আশ্রমের অতিথিদের সেবাযত্ন করে সকলের খুব প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠেছে সে সাথে আশ্রমের বাগানে নানান প্রজাতির ফুল ফুটিয়ে আশ্রমের রূপটা যেনো বদলে দিয়েছে কুহু তার ওপর বিকেল বেলায় সকলকে নিয়ে গল্প গুজব করানো আর মিষ্টি গলায় গান শোনানো যেনো তার নিত্য দিনের কর্মসূচী হয়ে গেছে সন্ধ্যায় মন্দিরে কুহুর কন্ঠে আরতি টাও আজ আশ্রমে সমান জনপ্রিয় সব মিলিয়ে কুহু যেনো অল্প সময়ে আশ্রমের হৃদপিন্ড হয়ে উঠেছে কারুর মেয়ে কারোর বোন বা বন্ধু হয়ে বেশ হেসেখেলে সকলের সাথে নিজের দিনগুলোকে পার করে দিচ্ছে কুহু।।

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
সম্পর্কের আলোয় ---- কুন্তল ঘোষ - by ddey333 - 07-10-2021, 03:30 PM



Users browsing this thread: