23-09-2021, 12:43 PM
উত্তরণ
"বাবা? শেষ পর্যন্ত আমার বাবা?"
গত কয়েকদিনে এই প্রশ্নটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে শমিকে।
যা কোনোদিন ভাবতে পারেনি, সেটাই হয়েছে ওর সাথে। ওর বাবা... ওর বাবা... ছিঃ!
ঘটনা শুরু গত সপ্তাহে। বলা নেই কওয়া নেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি এল অফিসে যাবার জন্য বেরিয়ে যাবার পর। আর ভিজে ভিজে অফিস... অফিসে তো সেন্ট্রাল এসি... সব মিলিয়ে বিকেল হবার আগেই বুঝতে পারছিল জ্বর আসছে কাড়া নাকাড়া বাজিয়ে। সঙ্গে দোসর গা -হাত- পা ব্যথা আর মাথার যন্ত্রণা। এখন তো এইসব উপসর্গ থাকা মানেই বিপদ। তাই আর রিস্ক না নিয়ে অফিস থেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেরিয়ে গেছিল।
আর, ভাগ্যিস গেছিল!
তাই তো বুঝতে পারল ওর কাছে আর ওদের সমস্ত রিলেটিভদের কাছে যে মানুষটা 'দেবতার মতো'... ক্লাস এইটে মা চলে যাবার পর থেকে যে মানুষটা ওর ফে-ফি-গা, সে ই কিনা এমন একজন মানুষ!
বাড়িতে পৌঁছে একটানা কলিং বেল বাজাচ্ছিল ও। যাবার সময়েও বৃষ্টি, আবার আসার সময়েও তাই! বিরক্তিকর!
বেশ একটু দেরি করেই দরজা খুলেছিলেন বাবা। ওকে দেখে চমকে উঠেছিলেন। "কি রে বান্টি, এত তাড়াতাড়ি? " বলতে বলতেই শমির চোখে চোখ পড়েছিল বাবার।
"কি রে মা, তোর চোখ এত লাল কেন? জ্বর এলো নাকি?"
"বাবা... এখনও আসেনি, কিন্তু আসবে আসবে করছে। মাথাতেও প্রচন্ড ব্যথা!" কঁকিয়ে উঠেছিল ও।
"সেকি! তুই তাড়াতাড়ি চেঞ্জ কর... আমি একটু আদা চা বানাই। আগে সেটা খা... তারপর দেখছি... কিছু খেয়ে ওষুধ খাবি..." বলতে বলতে বাবা কিচেনে ঢুকে গেছিলেন। মিনতি মাসি তো সকালে রান্না করে চলে যান, বাকি টুকটাক কাজ বাবা একাই করে নেন। প্রায় আট বছরের অভ্যেস মা কে ছেড়ে থাকার! আগে তো কিচ্ছু পারতেন না। আর এখন? বাবার হাতের চা যে খেয়েছে সে আর কারো চা খাবেই না! পারফেক্ট লিকার হয় বাবার। ওর 'স্পেশাল ফ্রেন্ড' সুমন ও তাই বলে!
স্নান করে সূতির নাইটি টা পরে চুলটা ভাল করে মুছতে মুছতে রান্নাঘরে এলো ও। বাবা নুডলস বানাচ্ছেন ওর জন্য। ওকে দেখে বললেন "স্নান করলি আবার? অবশ্য তা ভাল... তোর মা বলতেন বৃষ্টি ভিজলে স্নান করে নিলে নাকি ঠান্ডা লাগে না! পাঁচ মিনিট দে, তোর প্রিয় চাউমিন রেডি হয়ে যাবে!"
একটু হেসেছিল শুনে শমি। তারপর ডাইনিং টেবিলে এসে বসেছিল।
এক্ষুণি আসছে ইয়াম্মি ইয়াম্মি খাবার!
টেবিলে বাবা ল্যাপটপটা খুলে রেখে গেছেন। শাট ডাউন করবে ভেবে সামনে এসেছিল শমি... আর... মিনিমাইজ করে রাখা ব্রাউজারে দেখেছিল বাবার সার্চ করা কিছু ছবি...
নগ্নিকাদের ছবি!
দু এক মুহূর্ত বিশ্বাস করতে পারে নি শমি। পরে বুঝেছিল... বাবা, ওর বাবা ই সার্চ করছিলেব এসব...
তাড়াতাড়ি উঠে এসেছিল ও। নিজের ঘরে ঢুকে গেছিল।
'ইয়াম্মি' খাবার বমি এনে দিয়েছিল ওর।
সেই থেকে এই এত্ত গুলো দিন... কেমন গুটিয়ে আছে ও। বাবা... এসব সার্চ করেন? কেন? ছিঃ!
আজ সুমনের সাথে দেখা করার আছে অফিসের পর। এমন কপাল, সুমনকে "চল, বিয়ে করে নিই!" বলে যে বাড়ি ছেড়ে বেরোবার সুযোগ পাবে, তাও সম্ভব না! সুমন ওর ক্লাসমেট ছিল। গ্র্যাজুয়েশানের পরে ও চাকরিতে জয়েন করেছে, সুমম এখন ইউ পি এস সি র জন্য পড়াশোনা করছে। আর বাইশ বছর বয়সে আজকাল কে বিয়ে করে!
"এই যে মহারানি! কি ভাবছেন এত? নাকি ওই কোণের টেবিলের হ্যান্ডুটাকে ঝাড়ি মারছেন?" সুমন এসে গেছে, আর এসেই হাবিজাবি বকা শুরু করেছে।
অন্যদিন হলে রেগে যেত, কিন্তু আজ রাগ উঠল না শমির। বরং গাঢ় চোখে তাকাল একবার।
পাক্কা পনেরোদিন পরে দেখা হচ্ছে ওদের। দুজনেই এত্ত ব্যস্ত এখন। শমি জানে ওর নতুন চাকরি, সুমনের পড়াশোনা... এই দুটোই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ... তাও কাছে পেতে বড্ড ইচ্ছে করে যে...!
"কি রে, কি দেখছিস?"
"তোকে?"
"কেন? আমার কি একটা এক্সট্রা লেজ গজিয়েছে?"
"ধ্যাত! কত্তদিন পরে দেখা বলতো? "
"উউফফফ, এইসব কথা শুনলে না..."
"কি?"
"না মানে... ফাঁকা জায়গা খুঁজতে ইচ্ছে করে..."
"সুমন!" বলে কুট করে একটা রামচিমটি কাটে ও, সুমনের হাতে।
তারপর 'ফাঁকা জায়গা' শব্দটা মনে পড়ে... আর মনে পড়ে ওর বাবার সার্চ হিস্ট্রিটার কথা..
"কি হলো, প্রিন্সেস? কি ভাবছেন আপনি?"
"কিচ্ছু না!"
"বললেই হলো? তিনবছর ধরে ডেট করছি, ইলেভেন থেকে পড়ছি একসাথে। তোকে আমি বোন টু বোন চিনি! বল শিগগির!"
সুমনের কথা শুনে একটু থমকাল শমি।
তারপর সব বলল।
সেদিনের কথা। বাবার কথা।
আর, সার্চ আইটেমের কথা।
"ব্যাস, এইটুকু? না আরও কিছু আছে?"
"আরও কিছু মানে? আর কি বাকি আছে?"
"কাকু কি বিয়ে করেছেন? অবশ্য করলেও কিছু বলার নেই।"
"সুমন!!!" রেগে যায় শমি।
"কাম ডাউন প্রিন্সেস! দেখ, কাকিমা যখন চলে যান, তখন তুই তো অনেক ছোট?"
"ক্লাস এইট... অ্যানুয়াল পরীক্ষার দশদিন আগে..."
"হুম। মানে, আট নয় বছর হলো, তাই না? ভাব, কাকু কত্ত একা এখন.. তুই নিজের জগৎ নিয়ে বিজি থাকিস... "
"এটা কোনো এক্সকিউজ হতে পারে না, সুমন!"
"এক্সকিউজ মানে? দিজ ইজ নর্ম্যাল। মুভি হলে 'বধাই হো' দেখে আনন্দ পেতে পারিস, সাপোর্ট দেখাতে পারিস, আর কাকু কিছু সার্চ করলেই দোষ? তাও ওনার নিজের ল্যাপটপে, নিজের ব্যক্তিগত সময়ে? এটা তো তুই প্রাইভেসি লঙ্ঘন করেছিস। আর তোকে যা চিনি, তুই কাকুর থেকে নিজেকে গুটিয়েও নিয়েছিস নিশ্চয়ই এই ক'দিনে? "
"হুম!"
"খুব অন্যায় করেছিস শমি! আজ ই কাকুর সঙ্গে ভাব করে নিবি। আর কাকুর হবু জামাইকে খাওয়া!"
"ভাগ!" কপট রাগে বলে শমি।
আজ বাবার সাথে ভাল করে গল্প করবে। এই ক'দিন চুপচাপ থাকার দোষ অফিসের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে ।
সুমন তো ঠিক ই বলেছে। ওর ও যে সুমনকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে। সেটা যেমন অন্যায় নয়, তেমনি বাবার কিছু সার্চ করাও না।
উফ! কী যে হাল্কা লাগছে শমির এখন...
"বাবা? শেষ পর্যন্ত আমার বাবা?"
গত কয়েকদিনে এই প্রশ্নটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে শমিকে।
যা কোনোদিন ভাবতে পারেনি, সেটাই হয়েছে ওর সাথে। ওর বাবা... ওর বাবা... ছিঃ!
ঘটনা শুরু গত সপ্তাহে। বলা নেই কওয়া নেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি এল অফিসে যাবার জন্য বেরিয়ে যাবার পর। আর ভিজে ভিজে অফিস... অফিসে তো সেন্ট্রাল এসি... সব মিলিয়ে বিকেল হবার আগেই বুঝতে পারছিল জ্বর আসছে কাড়া নাকাড়া বাজিয়ে। সঙ্গে দোসর গা -হাত- পা ব্যথা আর মাথার যন্ত্রণা। এখন তো এইসব উপসর্গ থাকা মানেই বিপদ। তাই আর রিস্ক না নিয়ে অফিস থেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেরিয়ে গেছিল।
আর, ভাগ্যিস গেছিল!
তাই তো বুঝতে পারল ওর কাছে আর ওদের সমস্ত রিলেটিভদের কাছে যে মানুষটা 'দেবতার মতো'... ক্লাস এইটে মা চলে যাবার পর থেকে যে মানুষটা ওর ফে-ফি-গা, সে ই কিনা এমন একজন মানুষ!
বাড়িতে পৌঁছে একটানা কলিং বেল বাজাচ্ছিল ও। যাবার সময়েও বৃষ্টি, আবার আসার সময়েও তাই! বিরক্তিকর!
বেশ একটু দেরি করেই দরজা খুলেছিলেন বাবা। ওকে দেখে চমকে উঠেছিলেন। "কি রে বান্টি, এত তাড়াতাড়ি? " বলতে বলতেই শমির চোখে চোখ পড়েছিল বাবার।
"কি রে মা, তোর চোখ এত লাল কেন? জ্বর এলো নাকি?"
"বাবা... এখনও আসেনি, কিন্তু আসবে আসবে করছে। মাথাতেও প্রচন্ড ব্যথা!" কঁকিয়ে উঠেছিল ও।
"সেকি! তুই তাড়াতাড়ি চেঞ্জ কর... আমি একটু আদা চা বানাই। আগে সেটা খা... তারপর দেখছি... কিছু খেয়ে ওষুধ খাবি..." বলতে বলতে বাবা কিচেনে ঢুকে গেছিলেন। মিনতি মাসি তো সকালে রান্না করে চলে যান, বাকি টুকটাক কাজ বাবা একাই করে নেন। প্রায় আট বছরের অভ্যেস মা কে ছেড়ে থাকার! আগে তো কিচ্ছু পারতেন না। আর এখন? বাবার হাতের চা যে খেয়েছে সে আর কারো চা খাবেই না! পারফেক্ট লিকার হয় বাবার। ওর 'স্পেশাল ফ্রেন্ড' সুমন ও তাই বলে!
স্নান করে সূতির নাইটি টা পরে চুলটা ভাল করে মুছতে মুছতে রান্নাঘরে এলো ও। বাবা নুডলস বানাচ্ছেন ওর জন্য। ওকে দেখে বললেন "স্নান করলি আবার? অবশ্য তা ভাল... তোর মা বলতেন বৃষ্টি ভিজলে স্নান করে নিলে নাকি ঠান্ডা লাগে না! পাঁচ মিনিট দে, তোর প্রিয় চাউমিন রেডি হয়ে যাবে!"
একটু হেসেছিল শুনে শমি। তারপর ডাইনিং টেবিলে এসে বসেছিল।
এক্ষুণি আসছে ইয়াম্মি ইয়াম্মি খাবার!
টেবিলে বাবা ল্যাপটপটা খুলে রেখে গেছেন। শাট ডাউন করবে ভেবে সামনে এসেছিল শমি... আর... মিনিমাইজ করে রাখা ব্রাউজারে দেখেছিল বাবার সার্চ করা কিছু ছবি...
নগ্নিকাদের ছবি!
দু এক মুহূর্ত বিশ্বাস করতে পারে নি শমি। পরে বুঝেছিল... বাবা, ওর বাবা ই সার্চ করছিলেব এসব...
তাড়াতাড়ি উঠে এসেছিল ও। নিজের ঘরে ঢুকে গেছিল।
'ইয়াম্মি' খাবার বমি এনে দিয়েছিল ওর।
সেই থেকে এই এত্ত গুলো দিন... কেমন গুটিয়ে আছে ও। বাবা... এসব সার্চ করেন? কেন? ছিঃ!
আজ সুমনের সাথে দেখা করার আছে অফিসের পর। এমন কপাল, সুমনকে "চল, বিয়ে করে নিই!" বলে যে বাড়ি ছেড়ে বেরোবার সুযোগ পাবে, তাও সম্ভব না! সুমন ওর ক্লাসমেট ছিল। গ্র্যাজুয়েশানের পরে ও চাকরিতে জয়েন করেছে, সুমম এখন ইউ পি এস সি র জন্য পড়াশোনা করছে। আর বাইশ বছর বয়সে আজকাল কে বিয়ে করে!
"এই যে মহারানি! কি ভাবছেন এত? নাকি ওই কোণের টেবিলের হ্যান্ডুটাকে ঝাড়ি মারছেন?" সুমন এসে গেছে, আর এসেই হাবিজাবি বকা শুরু করেছে।
অন্যদিন হলে রেগে যেত, কিন্তু আজ রাগ উঠল না শমির। বরং গাঢ় চোখে তাকাল একবার।
পাক্কা পনেরোদিন পরে দেখা হচ্ছে ওদের। দুজনেই এত্ত ব্যস্ত এখন। শমি জানে ওর নতুন চাকরি, সুমনের পড়াশোনা... এই দুটোই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ... তাও কাছে পেতে বড্ড ইচ্ছে করে যে...!
"কি রে, কি দেখছিস?"
"তোকে?"
"কেন? আমার কি একটা এক্সট্রা লেজ গজিয়েছে?"
"ধ্যাত! কত্তদিন পরে দেখা বলতো? "
"উউফফফ, এইসব কথা শুনলে না..."
"কি?"
"না মানে... ফাঁকা জায়গা খুঁজতে ইচ্ছে করে..."
"সুমন!" বলে কুট করে একটা রামচিমটি কাটে ও, সুমনের হাতে।
তারপর 'ফাঁকা জায়গা' শব্দটা মনে পড়ে... আর মনে পড়ে ওর বাবার সার্চ হিস্ট্রিটার কথা..
"কি হলো, প্রিন্সেস? কি ভাবছেন আপনি?"
"কিচ্ছু না!"
"বললেই হলো? তিনবছর ধরে ডেট করছি, ইলেভেন থেকে পড়ছি একসাথে। তোকে আমি বোন টু বোন চিনি! বল শিগগির!"
সুমনের কথা শুনে একটু থমকাল শমি।
তারপর সব বলল।
সেদিনের কথা। বাবার কথা।
আর, সার্চ আইটেমের কথা।
"ব্যাস, এইটুকু? না আরও কিছু আছে?"
"আরও কিছু মানে? আর কি বাকি আছে?"
"কাকু কি বিয়ে করেছেন? অবশ্য করলেও কিছু বলার নেই।"
"সুমন!!!" রেগে যায় শমি।
"কাম ডাউন প্রিন্সেস! দেখ, কাকিমা যখন চলে যান, তখন তুই তো অনেক ছোট?"
"ক্লাস এইট... অ্যানুয়াল পরীক্ষার দশদিন আগে..."
"হুম। মানে, আট নয় বছর হলো, তাই না? ভাব, কাকু কত্ত একা এখন.. তুই নিজের জগৎ নিয়ে বিজি থাকিস... "
"এটা কোনো এক্সকিউজ হতে পারে না, সুমন!"
"এক্সকিউজ মানে? দিজ ইজ নর্ম্যাল। মুভি হলে 'বধাই হো' দেখে আনন্দ পেতে পারিস, সাপোর্ট দেখাতে পারিস, আর কাকু কিছু সার্চ করলেই দোষ? তাও ওনার নিজের ল্যাপটপে, নিজের ব্যক্তিগত সময়ে? এটা তো তুই প্রাইভেসি লঙ্ঘন করেছিস। আর তোকে যা চিনি, তুই কাকুর থেকে নিজেকে গুটিয়েও নিয়েছিস নিশ্চয়ই এই ক'দিনে? "
"হুম!"
"খুব অন্যায় করেছিস শমি! আজ ই কাকুর সঙ্গে ভাব করে নিবি। আর কাকুর হবু জামাইকে খাওয়া!"
"ভাগ!" কপট রাগে বলে শমি।
আজ বাবার সাথে ভাল করে গল্প করবে। এই ক'দিন চুপচাপ থাকার দোষ অফিসের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে ।
সুমন তো ঠিক ই বলেছে। ওর ও যে সুমনকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে। সেটা যেমন অন্যায় নয়, তেমনি বাবার কিছু সার্চ করাও না।
উফ! কী যে হাল্কা লাগছে শমির এখন...