Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
এই বাড়ির  ঠিক  পেছনে এখন  বিদ্যাসাগর  স্ট্রিটে ছিল বিপ্লবী পুলিন দাসের  আখড়া এখানে লাঠি খেলা শেখানো  হতো  এই বাড়িতে বিপ্লবীদের  আনাগোনা  ছিল  তাই ছিল পুলিশের  নজর ঢাকা তে অনুশীলন সমিতির দপ্তর সামলানোর পর পুলীন দাস শুধু লাঠি নয় ছোরা চালানোর শিক্ষা দিয়েছেন এখন ওখানে পৌরসভার  কমিউনিটি  হল হয়েছে 

পার্শীবাগান থেকে মিনিট খানেক  হাঁটলে যাওয়া  যায়  বিদ্যাসাগরের  বাড়ি  সে বাড়ি আজও  দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়  বাড়ির  সামনে দিয়ে আমি বহুবার  যাতায়াত  করেছি  আর ভেতরেও  বহুবার  গিয়েছি  আশি নব্বই এর দশকে এখানে গাড়ি মেরামত  করার  গ্যারাজ  ছিলসেই  সুবাদে আমি অনেক বার গিয়েছি  বাড়ি তো তীর্থ ক্ষেত্র
 
মানুষ  হয়তো বিশ্বাস  করবে না যে এই বাড়ির  সামনে দাঁড়ালে  অথবা ভেতরে গেলে আমার  একটা অদ্ভুত  অনুভূতি  হতো আমার  মনে হতো যে যেখানে আমি দাঁড়িয়ে আছি ঠিক  সেইখান দিয়ে  বিদ্যাসাগর  মশাই  যাতায়াত  করতেন  আর এখনই  বেরোবেন  ভদ্রলোক  কে নিয়ে চিরকাল  একটা ভয়  মিশ্রিত  শ্রদ্ধা  ছিল  এইখানেই  ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ  ঘোড়ার গাড়ি  করে নেমে এসে বলেছিলেনসাগর  দেখতে এলাম এইসব ভাবতে গিয়ে মন আমার  চলে যেত  কোন সুদূরে 
হঠাৎই  একদিন  নিমন্ত্রণ  পেলাম  বিয়ে উপলক্ষে  মেদিনীপুরের  বীর সিংহ  গ্রামে  চলে গিয়েছিলাম  আর দেখে এসেছিলাম মহাপুরুষের  জন্মস্থান 
সময় টা 1999  আমি তখন  বাঁধা সরকারি উকিল  হাইকোর্টের  বিভিন্ন  দপ্তরের  মামলা করতে হতো, জমি দপ্তরের  মামলার  অন্য  লোক ছিল  হঠাৎই  টেবিলে  দেখলাম  বিদ্যাসাগরের  বাড়ির  অধিগ্রহণের  মামলা  কয়েক ঘণ্টা  বাদেই  মামলা ফাইল  আনিয়ে প্রস্তুত  হয়ে নিলাম  জোর মামলা হলো দু পক্ষের  কথা শুনে জজ সাহেব  ফাইল  চেয়ে বাড়ি  নিয়ে গেলেন  পরের মামলার দিন উনি রায়  দিলেন যে অধিগ্রহণ  বৈধ  আমি জিতে গেলাম  এরপর  আপিল কোর্ট আর সুপ্রিম কোর্টে  গিয়ে  আবার  জিতেছিলাম  মামলায়  আমার  ওপর  অসম্ভব  চাপ  ছিল  সুপ্রিম কোর্টের মামলা  জিতে দিল্লি থেকে খুব  আনন্দ করে সেইদিন  বাড়ি ফিরলাম  বিদ্যাসাগরের জন্য একটা ভাল কাজ করে সেদিন  নিজেকে  খুব  ধন্য  মনে করেছিলাম জীবনে একটা ভাল কাজ তো করলাম 
বাড়ি এখন  বিদ্যাসাগর  মহিলা  কলেজের তত্ত্বাবধানে 
 
বিদ্যাসাগরের  বাড়ির  সামনেই  একসময়  ভাড়া থাকতেন  সঙ্গীত  পরিচালক  অনাদী  দস্তিদার  তার জামাই  ছিল  বিশিষ্ট  সাংবাদিক  অমিতাভ  চৌধুরী  দুজনকেই আমি দেখেছি 
বিদ্যাসাগরের  বাড়ির  ঠিক  পেছনে  ছিল  ভারতের  প্রাক্তন  অর্থ মন্ত্রী  সচিন  চৌধুরীর  বিশাল  বাড়ি  সে বাড়ি এখন  নেই  তার জায়গাতেই  দুটো নতুন  বাড়ি  হয়েছে পাশেই  ছিল একটা বিরাট  পুকুরলোকে বলত  চৌধুরী  পুকুর  সে পুকুর  এখন  বিদ্যাসাগর  সন্তরণ ক্লাব 
বাদুড় বাগান  লেনে আছে বিদ্যাসাগর  পার্ক  তারই  সামনে একসময়  একটা পুরাতন  মেস  বাড়ি  ছিল  সেই  মেস বাড়িতে  একসময়  থেকেছেন  কথা সাহিত্যিক  শরৎ  চন্দ্র  চট্টোপাধ্যায় সে বাড়ির ঠিকানা ২৭ নং বাদুড় বাগান লেন এখন সে বাড়ির জীর্ণ ভগ্ন দশা খুব বেশি দিন হয়নি মেস উঠে গেছে আর বাড়ি হাত বদল হয়েছে কালের নিয়মে এই বাড়ি ভেঙ্গে নতুন বাড়ি তৈরী হবে 
 
খোঁজ করলে এই অঞ্চলে  আরও  অনেক  বড় মানুষের  থাকার  হদিস  পাওয়া  যাবে 
বাদুড়  বাগানের  লাগোয়া  সুকিয়া  স্ট্রিট-গড়পাড় অঞ্চল  এখানেও  অনেক  ইতিহাস  উপেন্দ্র  কিশোরসুকুমারআরও পরে সত্যজিৎ  এখানে থাকতেন  ভাষাবিদ  হরিনাথ দে, ব্যায়ামাচার্য  বিষ্টু  ঘোষ, তার দাদা সাধক  যোগানন্দ  গিরি  (  Autobiography  of An Indian  Yogi  লেখক), আয়রণ  ম্যান  নীলমনি দাস পাশেই  থাকতেন  সাধু নগেন্দ্র নাথ (যাঁর নামে নগেন্দ্র মঠ) প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক রমানন্দ চট্টোপাধ্যায় এই অঞ্চলেই থাকতেন 
সবাইকার  কথা বলতে গেলে আমার লেখা সীমানা  ছাড়িয়ে  যাবে  তবে দুটো বিশেষ  বাড়ির কথা না বললেই নয় 
প্রথম  বাড়িটা  রমা প্রসাদ  রায়ের  যেটা লোকে জানে রামমোহনের  বাড়ি বলে  বাড়ি  তৈরি করেছিলেন  রামমোহনের কনিষ্ঠ  পুত্র  রমা প্রসাদ  তিনি আজীবন  বাড়িতে  থাকতেন  রমা প্রসাদ  ছিলেন খুব  গুণী  মানুষ সংস্কৃত  ফারসী  ভাষায়  তার ছিল  অগাধ পাণ্ডিত্য তিনি ছিলেন  ডেপুটি  কালেক্টর  তারপর  চাকরি ছেড়ে আইন  ব্যবসায়  নামেন  1862 সালে তিনি বাঙলার  লেজিসলেটিভ  কাউন্সিলের  সদস্য  নির্বাচিত  হন বছরেই  তিনি কলকাতা  হাইকোর্টের  প্রথম  ভারতীয়  বিচারপতি  হিসেবে  নিযুক্ত  হয়েছিলেন কিন্ত  কপালের  লিখন  বিলেত  থেকে warrant  এসে পৌঁছাবার  আগেই  তিনি দেহ  রাখলেন  পরের  বছর  প্রথম  ভারতীয়  বিচারপতি  হবার  সম্মান  পেলেন  শম্ভু  নাথ  পণ্ডিত  হাইকোর্টে  শম্ভু  বাবুর  বিশাল  ছবি টাঙানো  আছে কিন্তু  রমা প্রসাদ কে মানুষ  মনে রাখে নি তিনি বিদ্যাসাগরের  সঙ্গে বিধবা  বিবাহ  আন্দোলন  আরো জনহিতকর  আন্দোলনে  যুক্ত  ছিলেন  তার বাড়ির  উল্টো  দিকে একটা কানা গলি আছে ওনার  নামে 
এই বাড়ি  থেকে কৈলাস  বসু স্ট্রিট  দিয়ে একটু এগোলে পাবেন আজকের  48 নম্বর  বাড়ি  এই বাড়িতে  বিদ্যাসাগরের  আন্তরিক  প্রচেষ্টায়  অনুষ্ঠিত  হয়েছিল  প্রথম  বিধবা বিবাহ  এই বাড়ির  এক তলার  একটা ঘরে কিছুদিন  ছিলেন  অসুস্থ  মাইকেল মধুসূদন 
বাড়ির  বাম  দিকের  অংশ  পরে কিনে নেন  তখনকার  বিখ্যাত  ডাক্তার  শিবপদ  ভট্টাচার্য্য  ডাক্তার বাবুর  নাতি নাতবৌসৌমিত্র মৌ আমার  বাল্য বন্ধু  তাই  এই ঐতিহাসিক  বাড়িতে আমার  অনেক বার  যাওয়ার  সৌভাগ্য  হয়েছিল  এখন  আবার  হাতবদল  হয়েছে 
 
এই পুরো পার্শীবাগানবাদুড়  বাগানগড়পাড়সুকিয়া  স্ট্রিট  অঞ্চলে আরও  অনেক  বড় মানুষ  ছিলেন  আর এখানে  অনেক  ইতিহাস  আছে  অনেক  গুণী  মানুষ  আছেন  তারা ব্যাপারে  আরো আলোকপাত  করতে পারবেন 
আজ যদি একটা টাইম মেশিন  পেতাম  তাহলে তাতে আরোহণ  করে চলে যেতাম  সেই  হারিয়ে  যাওয়া  সোনালি  দিনে  আর চোখ সার্থক করে দেখে আসতাম  সেইসব  মহাপুরুষ দের  তা তো  আর সম্ভব নয়  তাই  দু কলম লিখে  সেইসব  হারিয়ে  যাওয়া  বরণীয়  স্মরণীয়  মানুষদের  স্মরণ  করছি 
 
সঞ্জীব মিশ্র 
পার্শীবাগান 
কলকাতা
২০/০৮/২০২১

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 23-09-2021, 10:20 AM



Users browsing this thread: 18 Guest(s)